#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_20
জিসান বসে আছে হাসপাতালের করিডোরে রক্ত মাখা শার্ট পড়ে। জিসান ভাবতেও পারছে না তার জীবনে এত বড় একটা সংকটের দিন আসবে। জিসানের চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে আছে। কারো সাথে কোনো কথা বলছে না চুপচাপ বসে আছে আর নিজেকে নিজেই দোষারুপ করছে কেন আমি ইশাকে একা রেখে গিয়েছিলাম। জিসান চোখ বন্ধ করতেই কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া দৃশ্যটা জিসানের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
ইশা রাগী চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে আর জিসান গাড়ি ড্রাইভ করছে।
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে?
–তুমি আমাকে একা নিয়ে আসলে কেন??
–মানে
–মানে আবার কি?? জিসাকে একা রেখে আমরা ঘুরতে চলে যাচ্ছি কোথায় ভেবেছিলাম আমি আর ও মিলে একটু ঘুরবো তা না তুমি ওকে ওখানে একা রেখে চলে এসেছো।
–আরে জান জিসাকে তো সাঈদ নিয়ে আসবে।
–সাঈদ ভাইয়া নিয়ে আসার কি দরকার ছিল আমরা চার জন এক গাড়িতে গেলে কি এমন ক্ষতি হত শুনি।
ইশা জিসানের কানের কাছে বকবক করেই যাচ্ছে ননস্টপ। ইশার এই বকবকনির জন্য মনে হচ্ছে জিসানের কানের পোকাটা বের হয়ে যাবে। জিসান রাগে গাড়ি ব্রেক করে।
–আহহহহহহ… এটা কি করলে তুমি এভাবে ব্রেক করলে কেন? মেরে ফেলবে নাকি আমাকে কোনো কান্ডজ্ঞান নেই কি তোমার।
বুকে থুতু দিতে দিতে বলে। কিন্তু জিসান হুট করেই ইশার ঠোঁটে কি’স করে ফেলে। ইশা তো আবাক হয়ে যায় কি থেকে কি হয়ে গেল। জিসান ইশার কাছ থেকে সরে আসে। ইশা কিছুটা লজ্জা পায়।
–আর একটা কথা বললে আবার কিন্তু আমি এই কাজটা করবো বুঝলি তাই চুপচাপ বসে থাক।
–হুমমমমমমম।
______
বড় একটা মাঠের পাশে নদীর ধারে বসে আছে জিসান আর ইশা একে ওপরের হাত ধরে। ইশা জিসানের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। হঠাৎ করেই ইশার চোখ যায় আইসক্রিমের দিকে। আইসক্রিম দেখে ইশা লাফ দিয়ে ওঠে।
–কি হলো এভাবে ব্যাঙের মতো লাফ দিয়ে উঠলি কেন?
–আইসক্রিম আমি আইসক্রিম খাবো ভাইয়া প্লিজ আমাকে আইসক্রিম এনে দাও।
–পারবো না পরে তোর ঠান্ডা লাগবে পরে আমাকে তোর সেবা করতে হবে। আমি পারবো তোর ঝি’গিরি করতে আর একটা কথা তুই কি বললি আমাকে??
–ওকে ওকে আর বলবো না তোমাকে ভাইয়া প্লিজ আমাকে আইসক্রিম এনে দাও। যদি তুমি না দাও তাহলে আমিই গিয়ে আনছি।
জিসান ইশার হাত ধরে বলে।
–তোর যেতে হবে না আমি আনছি গিয়ে তুই এখানে বসে থাক।
–ওকে।
জিসান আইসক্রিম আনতে চলে যায়।
_____
এদিকে সাঈদ আর জিসা বসে ফুচকা খাচ্ছে। সাঈদ জিসার মুখের সামনে একটা ফুচকা এগিয়ে দেয়। জিসা মুচকি হেসে সাঈদের কাছ থেকে ফুচকাটা খেয়ে নেয়। জিসাও সাঈদকে ফুচকা খাইয়ে দেয়।
জিসান আইসক্রিম নিয়ে ঘুরে ফিরতেই যা দেখে তাতে যেন জিসান পুরা পৃথিবীটা ঘুড়ে যায় জিসান আইসক্রিমটা মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৌঁড়তে শুরু করে আর চিৎকার করে।
–ইশাশাশাশাশাশুশুশু……
জিসানের চিৎকার শুনে সাঈদ আর জিসা তাকিয়ে দেখে ইশাকে কত গুলো লোক তুলে নিয়ে যেতে চাইছে।
–ভাইয়া প্লিজ বাচাও আমাকে।
জিসান আর সাঈদ তাড়াতাড়ি করে এসে সব গুন্ডাদের মারতে শুরু করে। একটা গুন্ডা হঠাৎ করেই ইশার গলাতে চুরি ধরে।
ইশা কান্না করতে করতে বলে।
–ভাইয়া।
জিসান অস্থির হয়ে বলে।
–ওই ওই এটা কি করছিস তুই? ওকে ছেড়ে দে ওর গলাতে লেগে যাবে।
–ছেড়ে দিবো ভাবলি কি করে? ওকে তো আমরা তুলে নিয়ে যেতে এসেছি তাহলে ছাড়বো কেন।
সাঈদ রেগে বলে।
–কু*র বাচ্চা ছেড়ে দে বলছি না হলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম।
–ওই একদম কাছে আসবি না তাহলে কিন্তু বসিয়ে দিবো চুরিটা ওর গলাতে।
–তাই নাকি ঠিক আছে। চুরি তাহলে বসা কি হলো বসা।
শেষের কথাটা জিসান চিৎকার করে বলে।
জিসান বুঝতে পারে ইশার কোনা ক্ষতি করার জন্য এরা আসে নি ওকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে। গুন্ডাটার হাত কাপছে জিসান ক্রমশ এগিয়ে আসছে ইশার দিকে গুন্ডাটা জিসানের এগোনো দেখে ভয় পেয়ে ইশাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। ইশা নিজের তাল সামলাতে না পেরে মাথাটা গাছের সাথে লেগে যায় আর সাথে সাথে গলগলিয়ে মাথা থেকে রক্ত পড়তে থাকে। ইশার চোখে অন্ধাকার নেমে আসে চোখ দুটো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। জিসান তাড়াতাড়ি করে ইশাকে ধরে বলে।
–ইশু এই ইশু কথা বল। দেখ তোর কিছু হবে না আমি থাকতে তোর সাথে কিছু হতে দিবো না। প্লিজ ইশু কথা বল প্লিজ।
–ভাইয়া ভাবিকে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
জিসান জিসার কথা শুনে জলদি ইশাকে কোলে তুলে গাড়িতে নিয়ে বসায়। ইশার মাথাটা জিসানের কোলে রাখে। রুমাল দিয়ে জিসান ইশার ক্ষত স্থানে চেপে ধরে রাখে যাতে রক্ত পড়াতে না পারে। সাঈদ জোরে গাড়ি ড্রাইভ করছে আর জিসা সাঈদের পাশে বসে। জিসা বাড়িতে কল করে সবটা বলে। জিসান কাতর গলায় বলে।
— ইশু প্লিজ চোখ খুল। একবার তাকা আমি তোকে আর বকবো না কোনো দিন বকবো না ইশু। সাঈদ তাড়াতাড়ি ড্রাইভ কর।
–হে করছি।
ইশাকে তাড়াতাড়ি করে অপারেশন থিয়েটার নিয়ে যাওয়া হয়। লাল বাতিটা জ্বালে উঠে। ইশার ট্রিটমেন্ট শুরু হয় যত সম্ভব তাড়াতাড়ি। কিছুক্ষন পরেই সালিহা বেগম আর সবাই হাসপাতালে চলে আসে। কিন্তু জিসানের কারো দিকে মন নিয়ে ও তো নিজের মাঝে নিজেই ডুবে আছে। প্রায় দু ঘন্টা পরে অপারেশন থিয়েটারের লাল বাতিটা নিভানো হয়।
ডক্টরের ডাকে জিসানের ধ্যান ভাঙ্গে আর উঠে দাঁড়ায়।
–জিসান।
–ডাক্তার আমার স্ত্রী ও ঠিক আছে তো।
–আসলে ওনার অনেক রক্ত ঝড়েছে তাই ২৪ ঘন্টা না যাওয়া পর্যন্ত আমার কিছুই বলতে পারছি না।
জিসান কন্ট্রোল হারিয়ে রাগে ডক্টর কলার চেপে ধরে।
–কেন বলতে পারছেন না আপনারা তো ডাক্তার তাহলে বলতে পারছেন না কেন? আমার স্ত্রীর যদি কিছু হয় ডাক্তার আমার থেকে কেউ খারাপ হবে না বলে দিলাম। আমি এই হাসপাতালে ধ্বংস করে দিবো বুঝতে পেরেছেন কথাটা আপনি।
সাঈদ তাড়াতাড়ি এসে জিসানকে সরিয়ে নিয়ে আসে। ডক্টর ভয় পেয়ে এখান থেকে চলে যায়।
–ভাইয়া প্লিজ তুমি শান্ত হও ভাবির কিছু হবে না। তুমি একটু শান্ত হও।
সালিহা বেগম করুন গলায় বলেন।
–জিসান বাবা তুই একটু শান্ত হ দেখ ইশার কিছু হবে আল্লাহ এতটা নিষ্ঠুর না ইশার কিছু হবে না।
জিসান ধপ করে চেয়ার বসে সালিহা বেগমের কোমড় ঝাপটে ধরে কান্না করতে করতে বলে।
–মা আমি কি করে শান্ত হবো তুমি বলো ইশুর যদি কিছু হয়ে যায় আমি বাচঁতে পারবো না ও যে আমার প্রাণ। আর প্রাণটা যদি না তাকে তাহলে দেহটা কি করে ঠিকে থাকবে তুমি বলো মা।
–শান্ত হ বাবা শান্ত হ কিছু হবে না ইশার কিছু না। আমাদের ভালোবাসা আর দোয়া ওর কিছু হতে দিবে না।
এদিকে…..
–তর সাহস কি করে হলো আমার ইশাকে আঘাত করার। তোর বেচে থাকার কোনো অধিকার কোনো অধিকার নেই।
–বস আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দেন।
–তুই আমার কলিজাতে হাত দিয়েছিস তোকে তো এই দুনিয়া থেকে চলে যেতেই হবে। গুড বাই।
সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ হয় গাছপালা থেকে সব পাখিরা উড়ে চলে যায় গুলির শব্দে।
–আমার ইশার খবর এক্ষুনি চাই।
–জি বস আমি এক্ষুনি এনে দিছি।
সারা ঘর ইশার ছবিতে ভরা। লোকটা ইশার ছবিতে হাত বুলিয়ে বলতে থাকে।
–সরি সোনা আমি বুঝতে পারি নাই তোমাকে ওরা আঘাত করবে। কিন্তু আমি ওকে ওর শাস্তি দিয়ে দিয়েছি সোনা। খুব শীঘ্রই আমি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। আমি তোমাকে যে ভীষন ভালোবেসে ফেলেছি কলিজা খুব ভালোবেসে ফেলেছি।
_____
প্রায় 24ঘন্টা পর ইশার জ্ঞান ফিরে। জিসান ইশার কেবিনে ঢুকে দেখে ইশা চোখ বন্ধ করে আছে। সেলাইন চলছে এক দিনেই ইশার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। জিসান একটা চেয়ারে বসে ইশার বা হাতটা ধরে। ইশা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে জিসান। ইশা জিসানকে দেখে চমকে যায় জিসানের চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। সারা রাত জিসান ঘুমাতে পারি নি ইশার টেনশনে।
–কেমন আছিস এখন???
–ভালো! তোমার চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? সারা রাত ঘুমাও নাই তাই না।
–কি করে আমি ঘুমাবো বল আমার জানটা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আর আমি শান্তিতে ঘুমাবো তুই ভাবলি কি করে?
–খুব ভালোবাসো তাই না আমাকে।
–বিশ্বাস কর তুই না থাকলে আমি বাঁচতে পারব না মরেই যাবো আমি।
–এক দম মরার কথা বলবা বুঝলে আর আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।
জিসান ইশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। ইশা জিসানের পিটে আলতো হাতে চাপড় মেরে বলে।
–ওই একদম কান্না করবা তাহলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যি চলে যাবো।
–ঠিক আছে আমি আর কান্না করবো না।
ইশা সুস্থ হতে অনেক দিন কেটে যায়। এর মাঝে জিসান অনেক চেষ্টা করছে কে ইশার উপরে হামলা করেছে কিন্তু জিসান কিছুই জানতে পারলো না।
গভীর রাতে জিসান আর ইশা বেলকনির দোলনাতে একটা চাদরের নিচে একে ওপরকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।
–জান ঠান্ডা লাগছে।
–হুম একটু একটু।
–কে বলেছিল তোকে এত রাতে শাওয়ার নেওয়ার জন্য। আমার কথা তো শুনিস না এখন যদি জ্বর উঠে তাহলে আর ওয়েদারটাও কেমন ঠান্ডা চল ঘরে যাই।
ইশা জিসানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে।
–নাহ!
–নাহ কেন?
–ঘরে যেতে ভালো লাগছে না আর একটু এখানে থাকি না।
–ঠিক আছে।
হঠাৎ করেই জিসানের ফোন মেসেজ আসার শব্দ হয় জিসান মেসেজটা ওপেন করে যা দেখে তাতে জিসান খুব অবাক হয়।
–এত রাতে এমন মেসেজ কে পাঠালো?
“খুব ভালোবাসো নাকি নিজের বউকে ভেসে নাও ভেসে নাও হয়তো এটাই তোমাদের লাস্ট ভালোবাসার রাত হবে মিস্টার জিসান চৌধুরী”
জিসানের মেজজটা গরম হয়ে যায়। জিসান তাকিয়ে দেখে ইশা ঘুমিয়ে গেছে। জিসান ইশাকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে শুয়েই দেয় আর কপালে একটা কি’স করে।
জিসান তাড়াতাড়ি করে মেসেজ আসা নাম্বার কল দেয় কিন্তু ফোন বন্ধ আসে। যত বারেই কল দেয় তত বারেই বন্ধ আসে
–ড্যাম ইট! কে হতে পারে এটা কে?
জিসান বেলকনিতে গিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কি না। কিন্তু জিসান কাউকে দেখতে পায় না। জিসান চলে যেতেই গাছের আড়াল থেকে এক জন বেরিয়ে এসে আর একটা বাকা হাসি দেয়।
সকালে জিসান ঘুম থেকে উঠে ফোন চেক করে দেখে সেই একই নাম্বার দেখে মেসেজ এসেছে। মেসেজটা দেখে জিসান তাড়াতাড়ি করে উঠে ফ্রেস হয়ে বের হতে যাবে সাথে সাথে ইশা জিসানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
–এত সকালে কোথায় যাচ্ছো তুমি??
–অফিসের কাজ আছে আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো চিন্তা করিস না।
জিসান চলে যেতেই ইশার মনটা খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু জিসান আবার ফিরে এসে ইশার কপালে একটা কিস করে বলে।
–সাবধানে থাকিস।
–হুম।
সারা দিন জিসান কোনো ফোন দেয় নি ইশাকে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ইশা জিসানের ফোনে কল করে কিন্তু ফোন বন্ধ এসে। ইশা চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে জিসানের কোনো খবর পাচ্ছে না দেখে। বাড়ির সবাই জিসানকে নিয়ে চিন্তা করছে। ইশা তো ঘরে বসে বসে কখন থেকে কান্না করেই যাচ্ছে জিসানে কোনো বিপদ হলো নাতো তা ভেবে।
রাত নয়টা হঠাৎ করেই কলিংবেল বেজে উঠে। ইশা কলিংবেলের শব্দ শুনতে পেয়ে দরজা খুলতে যাবে কিন্তু তার আগেই আসমা দরজা খুলে দেয়। ইশা জিসানের পাশে এক জন মানুষকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। পা দুটো আটকে গেছে ইশার। বাড়ির সবাই জিসানের দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে।
#চলবে