তুই_শুধু_আমার 💕 #Nusrat_Jahan_Bristy #Part_5

0
466

#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_5

–জিসান তুমি ইশাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো এভাবে আর ইশার পড়ানে হঠাৎ শাড়ি কেন? আর তুমি বা ওর হাত এভাবে ধরে আছো কেন?

জিসান পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রুহি এসেছে। রুহিকে দেখে জিসানের রা’গে’র মাত্রাটা আরো বেড়ে গেলো। জিসান চিবিয়ে চিবিয়ে বলে।

–আমি তার কৈফত দিতে তোমাকে‌ দিয়থ বাধ্য নই রুহি।

এদিকে ইশা রুহিকে দেখে যেন একটা আশার আলো খুজে পেলো জিসানের কাছ থেকে নিস্তার পাওয়ার। মনে মনে বলে।

–রুহি আপু এসেছে তাহলে তো কিছু একটা হবে এখানে। রুহি আপু যদি জানতে পারে আমার আর ভাইয়ার বিয়ের কথা তাহলে কি হবে?

জিসানের কথা শুনে রুহির রে’গে বলে‌ উঠে।

–বাধ্য নও মানে! আমি তোমার হবু বউ আর আমার সামনে তুমি অন্য একটা মেয়ের হাত তুমি এভাবে ধরে রাখবে আর আমি কিছু বলবো না।

–তুমি আমার হবু বউ। বউ তো আর নও।

–হে আমি তোমার হবু বউ কিন্তু আজ বাদে কাল তো আমাদের বিয়ে হবে নাকি।

–বিয়েটা হবে না রুহি।

রুহি অবাক হয়ে যায় জিসানের মুখে এমন কথা শুনে।

–বিয়ে হবে না মানে? তুমি কি বলছো এসব? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।

সালিহা বেগম বলেন।

–রুহি তুমি একটু বসো আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি।

–না আন্টি আমি এখনেই সব জানতে চাই জিসান এই কথা কেন বললো যে বিয়েটা হবে না? কি হলো জিসান বলো বিয়েটা কেন হবে না?

জিসান কোনো রকম সংকোচবোধ না করে বলে।

–কারন আমার বিয়ে হয়ে গেছে।

রুহির ভ্রুদ্বয় কুচ করে বলে।

–মানে তুমি কাকে বিয়ে করেছো? ও বুঝেছি তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না।

–আমি কেন তোমার সাথে মজা করতে যাবো। সেটা সত্যি সেটাই বলছি।

রুহি দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–কাকে বিয়ে করেছো তুমি? কে সে কি নাম তার?

–যার হাতটা ধরে আছি তাকেই বিয়ে করেছি আমি।

–হোয়াট? ইশা… ইশাকে তুমি বিয়ে করেছো।

–হে আমি ইশুকে বিয়ে করেছি।

রুহি গলার স্বর উচিয়ে বলে।

–তুমি কি আমার সাথে মজা করছো জিসান? আমাদের এনগেজমেন্টে ডেট পর্যন্ত ঠিক হয়ে গেছে আর তুমি কিনা ইশাকে বিয়ে করেছো কেন? তুমি আমার সাথে প্রতারণা করতে পারো না জিসান। সবাইকে ইনভাইট করা হয়ে গেছে আমাদের এনগেজমেন্টের আর তুমি।

–গলা নামিয়ে কথা বলো রুহি এটা ভদ্র লোকের বাড়ি। তাই এখানে অভদ্রতা করো না আর প্রতারণা কে করেছে সেটা তুমি ভালো করে জানো। তাই প্রতারণা কথা টা তোমার মুখে ঠিক বানাছে না।

–অভদ্র অভদ্রতার কি দেখলে তুমি জিসান এখনো তো আমি অভদ্রতা শুরু করে নি। তুমি বুঝতে পারছো জিসান সবাই জানে আমাদের এনগেজমেন্টের কথা আর আমার বাবা মার সম্মানের কি হবে আর আমার সম্মানের কি হবে?

–ঠিক আছে এনগেজমেন্টের দিন না হয় সবাইকে জানিয়ে দিবো আমার আর ইশার বিয়ের কথা।

রুহি আরো চিৎকার করে বলে উঠে।

–ফাজলামি করছো তুমি আমার সাথে!

–আমি তোমার সাথে ফাজলামি করছি না রুহি।

–যা হয়েছে সব এই‌ থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য? ও নিশ্চয় ওর রুপ‌ দেখিয়ে তোমাকে ভুলিয়েছে তাই না। ওর মতো বাপ মা মরা মেয়েরা শুধু বড় লোকের ছেলেদের নিজের রুপ দেখিয়ে ভুলায় ওরা তো বে*….

রুহি আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই রুহির গালে একটা থাপ্পড় মা’রে জিসান। রুহি ছলছল চোখে জিসানের দিকে তাকায়। জিসান রাগে বলে।

–তোমার সাহস কি করে হলো ওকে এসব কথা বলার?

রুহি অবাক চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে বলে।

–তুমি আমাকে মা’র’লে জিসান।

–হে মা’র’লা’ম নেক্সট টাইম যদি আমার ইশুর নামে কিছু বলো তো এর থেকেও বেশি কিছু করবো আমি তোমার সাথে। রুহি তখন তুমি আমার আসল রুপ দেখবে বলে দিলাম।

অন্য দিকে ইশা এসব কথা সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে করতে উপরে চলে যায়। রুহি রেগে বলে।

–তুমি এটা ঠিক করলে না জিসান? এর ফল কিন্তু তোমাকে ভলগতে হবে বলে দিলাম আমি।

রুহি রাগে চৌধুরী বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। জিসানের ইশার কথা মনে পড়তেই জুটে যায় নিজের ঘরে কিন্তু ইশাকে ঘরে কোথাও দেখতে পায় না।

–কোথায় গেল ইশু ছাদে গেল না তো?

জিসান তাড়াতাড়ি করে দৌঁড়ে ছাদে যায় ছাদে উঠে দেখে ইশা দোলনাতে বসে কান্না করছে। জিসান ইশাকে দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। ইশাকে এতক্ষণ না দেখতে পেয়ে জিসানের প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। জিসান ইশার সামনে গিয়ে হাটু ঘেড়ে বসে ইশার চোখের পানি মুজে দিয়ে নরম স্বরে বলে।

–প্লিজ ইশু আর কান্না করিস না তাহলে যে অসুস্থ হয়ে যাবি।

ইশা ভাঙ্গা গলায় বলে।

–তুমি আমার সাথে কেন করছো ভাইয়া এসব? কি দোষ করেছি আমি যে এত বড় শা’স্তি দিছো আমাকে?

–শা’স্তি? কি শা’স্তি দিছি আমি তোকে?

–আমার ইচ্ছার কি কোনো দাম নেই তোমার কাছে?

জিসান ইশার কথার মানে না বুঝতে পেরে বলে।

–ও শাড়ি পড়ার জন্য যে বকা দিয়েছি তাই কান্না করছিস। আচ্ছা সরি আর বকা দিবো না তোকে। কিন্তু ইশু দেখ একবার কি হয়ে ছিল মনে আছে তোর। তুই জেদ করে শাড়ি পড়েছিলি আর শাড়ির আঁচলে আ’গু’ন লেগে গিয়েছিল। এটার জন্য আমি তোকে রেগে বকা দিয়ে ফেলেছি রা’গ’টা কন্ট্রোল করতে পারি নি। সরি জান।

ইশা দোলনা থেকে উঠে জিসানের কাছ থেকে একটু দুরে সরে দাঁড়িয়ে বলে।

–আমি এর জন্য কান্না করছি না। আজকে শুধু মাত্র তোমার কারনে আমাকে রুহি আপু আপমান করলো। শুধু মাত্র তোমার জন্য আমার মৃত বাবা মাকেও ছাড়ল না রুহি আপু। আমি তো তোমাকে বিয়ে করতে চাই নি তুমি জোর করে আমাকে বিয়ে করেছো তাহলে কেন রুহি আপু আমাকে এসব বললো কেন জবাব দাও? তুমি আমার ফোনটাও নিয়ে নিলে যাতে আমি রাহুলের সাথে কথা বলতে না পারি কেন?

জিসান ইশার কাছে এসে অস্থির কন্ঠে বলে।

–ইশু তুই প্লিজ শান্ত হ এমন করিস না।

–তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে ভাইয়া একে বারে নষ্ট করে দিলে? তুমি তো জানতে আমি রাহুলকে ভালবাসি তাহলে।

ইশার মুখে এই রাহুলের নামটা যেন বি’ষে’র কাটার মতো লাগছে। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই জিসান চিৎকার করে উঠে।

–ব্যাস ইশা অনেক বলে ফেলেছিস তুই! আমি তর জীবন নষ্ট করে দিয়েছি তাই তো আর কি বললি তুই রাহুলকে ভালোবাসিস তাই না। তুই জানিস রাহুল কে…..

জিসানের কথার মাঝেই ইশা বলে।

–আমি জানি তুমি কি বলবে এটাই তো বলবে রাহুল খা’রা’প তাই তো। রাহুলের থেকে তুমি খারাপ ভাইয়া যে নিজের বোনকে জোর করে বিয়ে করে….

জিসান ইশার দু বাহু শক্ত করে চেপে ধরে। রা’গে জিসানের কপালের রগ দুটো ফুলে গেছে। চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। ইশা জিসানের এমন রুপ দেখে ভীষন ভয় পেয়ে যায়। জিসান চিবিয়ে চিবিয়ে বলে।

–এক দম চুপ ইশা এক দম চুপ! তুই কি ভেবেছিস তুই আমাকে এসব কথা বললে আমি তোকে ওই রাহুলের কাছে দিয়ে আসবো সেটা কোনো দিনও‌ হবে না #তুই_শুধু_আমার। আর আমি বেচে থাকতে তুই অন্য কারোর হতে পারবি না। এটা তুই স্বপ্নেও কল্পনা করিস না যে আমি তোকে ছেড়ে দেবো বুঝেছিস তুই আমার কথা। তাই আমাকে এমন কিছু করতে তুই বাধ্য করিস না।

–কি করবে তুমি আমাকে নিজের পুরুষত্ব ফলাবে আমার উপর ঠিক আছে এসো ফলাও নিজের অধিকার আমার উপরে।

–ইশা?

জিসান ইশাকে চড় মারতে নিলেও চড় দেয় না। ইশা তা দেখে বলে।

–কি হলো থামলে কেন মারো আমাকে?

জিসান আর কিছু না বলে ছাদ থেকে চলে যায়। ইশা হতবাকের মতো জিসানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। জিসান চোখের আড়াল হতেই ইশা নিচে ধপ করে বসে পড়ে বলতে থাকে।

–কেন তুমি আমার সাথে এমন করলে খোদা কেন? কোন দো’ষের শা’স্তি দিচ্ছো তুমি আমাকে ছোট থেকে।

_______

অন্য দিকে রুহি বাড়িতে এসেই ড্রয়িং রুমের সব কিছু ভাঙ্গচুর করতে শুরু করে। রুহির বাবা মা রুহির এমন ভ’য়ং’ক’র চেহারা দেখে কিছু বলতে সাহসও পাচ্ছে না। কিন্তু তারপর রুহির বাবা ইমরান খান বলেন।

–রুহি মামনি তোমার কি হয়েছে? হাসি মুখে তো জিসানের বাড়িতে গিয়েছিল তাহলে এত রা’গ করে ফিরেছো কেন তুমি? কিছু কি হয়েছে?

রাগে রুহির ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে। জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে।

–বাবা জিসান আমাকে ঠকিয়েছে।

–মানে কি বলছো কি তুমি এসব মামনি?

–হে বাবা ও ওই ইশাকে বিয়ে করে নিয়েছে আমাকে ঠকিয়ে।

রুহির মা রাবেয়া খান বলেন।

–কি বলছো তুমি এসব রুহি তোমার আর জিসানের এনগেজমেন্ট দুদিন বাদে আর জিসান ইশাকে কি করে বিয়ে করতে পারে।

ইমরান খান বলেন।

–তুমি চিন্তা করো না মামনি আমি এখনেই জিহান চৌধুরীকে ফোন করে জিঙ্গাস করবো এসবের মানে কি?

–নাহ বাবা তুমি ফোন করবে না। ওদের কারো কাছে ফোন করবে না তুমি।

–কেন?

–আমি চাই জিসান নিজে আমার কাছে আসুক আর তার ব্যবস্থা আমি নিজে করবো।

রাবেয়া খান বলেন।

–কি করবে তুমি রুহি?

–সেটা আমি জানি না তবে জিসানকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি সব। জিসান শুধু আমার আর অন্য কারো না।

ইমরান খান বলেন।

–মামনি তুমি এমন কিছু করো না যাতে করে আমরা কষ্ট পাই তুমি আমাদের এক‌মাত্র সন্তান তোমার কিছু হলে আমরা কি করে বাচবো বলো।

–চিন্তা করো না বাবা আমি নিজের কোনো ক্ষতি করবো না। আমি যদি নিজেকেই শেষ করে দেই তাহলে আমি আমার জিসানকে পাবো কি করে। তাই আমাকে নিয়ে টেনশন করো না তোমরা।

রুহি এই কথাটা বলে নিজের ঘরে চলে যায়। রুহি যেতেই রাবেয়া খান বলেন।

–কি করবে তোমার মেয়ে?

–জানি না ও যে জেদি কিছু তো‌ একটা করবে।

–তুমি জিসানের সাথে কথা বলো।

–হুম।

ইমরান খান জিসানকে ফোন দিতে যাবে সাথে সাথে রুহি চিৎকার করে বলে।

–বাবা তোমাকে আমি ওদের কারো কাছে ফোন করতে মানা করেছি। কিন্তু এরপর যদি তোমরা ওদের কাছে ফোন করো তো আমি এখান থেকে লাফ দিবো।

ইমরান খান ভয়ে ভয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে বলেন।

–না মা তুই উপর থেকে লাফ দিস না আমি ফোন করবো না।

–কথাটা মনে থাকে যেন তোমাদের।

এদিকে….

সারাদিন জিসান আর বাড়িতে আসে নি অফিসেই সারাটা দিন কাটিয়ে দেয়। ভুল করে জিসান বাড়িতে ফোনটা রেখে যায়। অন্য দিকে ইশা এখনও একই জায়গাতে বসে আছে কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। জিসা আর সালিহা বেগম অনেক চেষ্টা করেছে ইশাকে ছাদ থেকে আনার জন্য কিন্তু ইশার জেদের কাছে জিসা আর সালিহা বেগমকে হার মানতে বাধ্য করলো। জিসানের সাথে কথা এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য অনেক ট্রাই করেছে কিন্তু জিসানের ফোন তো বাড়িতে। অফিসের ফোনেও কল করেছে কিন্তু অফিসের লাইনও পাচ্ছে না।

#চলবে____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here