#তুই_শুধু_আমার 💕
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_7
জিসান ঘরে ডুকে দেখে ইশা একটা সাদা চুড়িদার পড়ে আছে, ভেজা চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। জামার পেছনের কিছুটা অংশ ভিজে গেছে চুলের পানি দিয়ে। কপালে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। মেয়েদেরকে গোসল করার পর নাকি খুব স্নিগ্ধ আর মায়াবী লাগে। ইশাকেও জিসানের চোখে সব চেয়ে সুন্দর রমনী লাগছে এখন। ইশা নিজের মতো করে ভেজা চুল মুজছে। জিসান যে ঘরে এসেছে ইশা সেটা খেয়াল করে নাই। জিসানের কিছুটা ঘোরের মাঝে চলে যায় ইশাকে এমন ভাবে দেখে। আস্তে আস্তে করে ইশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জিসান। ইশা আয়নার ভেতরে জিসানকে দেখে চমকে যায়।
জিসানের এগোনো দেখে ইশা এক পা এক পা করে পিছুতে থাকে। এক পর্যায়ে ইশার পিট লেগে যায় দেয়ালের সাথে। জিসান ইশার মুখে পড়ে থাকা ভেজা চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে দেয়। জিসানের ছোঁয়া পেয়ে ইশা চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।জিসানের ছোঁয়াতে যেন ইশা জমে যাচ্ছে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।তারপরও ইশা অনেক কষ্ট করে বলে।
–কি করছো কি ভাইয়া?
জিসান ইশার গালে হাত রেখে শীতল কন্ঠে বলে।
–শিসসসস কথা বলবি না। তোকে একটু দেখতে দে আমায়। আচ্ছা ইশু তুই এতো কিউট কেন বলতো? ইচ্ছা করে তোর দিকে সর্বক্ষণ তাকিয়ে থাকতে। তোকে যত বার দেখি তত বারেই নিজেকে হারিয়ে ফেলি।
ইশা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে।
–ভাইয়া কি করছো কি?
ইশা এই কথাটা বলে জিসানের সামনে থেকে চলে গিয়ে বলে।
–তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
Writer : Nusrat Jahan Bristy
জিসান ইশার কথায় নিজের মাঝে ফিরে আসে। একটা মেয়েকে এভাবে দেখলে হয়তো যে কোনো ছেলেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না তার উপর যদি হয় সে তার ভালোবাসার মানুষ। জিসান জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলে।
–জিসান তুই কি করছিলি এট? তুই নিজের কাছে নিজে প্রতিক্ষা করেছিলি ইশু যত দিন না নিজের ইচ্ছাতে তোর কাছে আসতে চাইবে তত দিন তুই ইশাকে নিজের করে পেতে চাইবি না। কন্ট্রোল আন জিসান নিজের উপর কন্ট্রোল আন।
ইশা আবার বলে।
–ভাইয়া তোমাকে কিছু বলতে চাই আমি….
–হুম বল কি বলবি?
–আসলে আমি কালকে কলেজে যেতে চাই….
–কেন ???
–অনেক দিন হলো কলেজে যাই নি তাই।
–মাত্র দু দিন হয়েছে। কালকে কলেজে যাবি না তুই।
–কেন????
–আমি বলেছি তাই তুই যাবি না আর বাড়িতে বসে কি পড়া লেখা করা যায় না যে কলেজে গিয়ে তোকে পড়তে হবে।
ইশা রেগে বলে উঠে।
–সব কিছু কি তোমার কথাতে হবে নাকি। তোমার কথায় বিয়ে করলাম তোমাকে। তোমার কাছে আমার কি কোনো ইচ্ছার দাম নেই।
–তুই যদি মনে করিস সব কিছু আমার কথা মতো হবে তো ঠিক আছে আমার মতেই হবে। আর আমি বলেছি তুই কালকে কলেজে যাবি না তার মানে আমি এটা বলে নাই যে তুই কোনো দিন কলেজে যাবি না। কালকে তুই বাড়িতে থাকবি এর পরের দিন তোকে আমি নিজে কলেজে দিয়ে আসবো।
–কিন্তু…
–কোনো কিন্তু না তুই যদি কালকে কলেজে যেতেও চাস তাহলে তুই যেতে পারবি না। বাড়ির চারিদিকে গার্ড আছে আমার অনুমতি ছাড়া তুই বাড়ির বাইরে এক পাও বাড়াতে পারবি না। তাই এখন চুপচাপ ঘুমা।
ইশা মনে মনে বলে।
–আমি তো কালকে কলেজে যাবোই। যে করেই হোক আমাকে রাহুলের সাথে কালকে দেখে করতেই হবে।
জিসান সোফাতে বসে ল্যাপটপ কাজ করছে আর অন্য দিকে ইশা শুয়ে শুয়ে ভাবছে কি করে সব গার্ডদের নজর এড়িয়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া যায়। ইশা কি করে বের হবে নিজের মনের মতো করে সব প্ল্যান করে রাখে এখন শুধু সকাল হওয়ার পালা।
আর এদিকে জিসান সারা রাত ঘুমাতে পারি নি একটা টেনশনে। কি করে এতো গুলো মেয়ে দিনের পর দিন উধাও হয়ে যাচ্ছে। তার জন্যই নিজের বাড়িতে এত গার্ডের ব্যবস্থা (একটা কথা আগে বলে রাখি জিসান এক জন মাফিয়া) এসব ভাবতে ভাবতে ভোরের দিকে জিসানের চোখ লেগে আসে। সোফাতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে যায় জিসান।
____
সকালে জিসান তাড়াতাড়ি করে নাস্তা করে চলে যায়। ইশার সাথে তেমন কথা হয় নি। ইশার এতে একটু চিন্তা হয় জিসানের এমন কান্ড দেখে। সারা রাত জেগে ল্যাপটপ কি করেছে আর এখন কোনোমতে নাস্তা করে বেরিয়ে গেল তাড়াহুড়ো করে। ইশা জিসানের কান্ড দেখে মনে মনে ভাবে।
–ব্যাপারটা কি ভাইয়া আজকে এত তাড়াতাড়ি চলে গেল কেন? যাক গে ভালোই হয়েছে এই হিটলার বাড়ি থেকে চলে গেছে। না হলে আমি আজকে বাড়ি থেকে বের হতে পারতাম না। কিন্তু গার্ডদের চোখে কি আমি ফাঁকি দিয়ে বের হতে পারবো।
সালিহা বেগম ইশাকে এমন চিন্তিত দেখে বলে।
–ইশা কি ভাবছিস? খাবার তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি খা।
–হুম মা মনি…..
জিহান চৌধুরী বলেন।
–জিসান এভাবে কোথায় চলে গেল?
–হয়তো অফিসের কোনো জরুরি কাজ আছে।
____
সবাই নাস্তা করে যে যার ঘরে চলে গেছে আর এই দিকে জিসান সব গার্ডদের কঁড়া ভাবে বলে গেছে বাড়ি থেকে যেন একটা মাছিও না বের হয় আর বাইরে থেকেও যেন বাড়ির ভেতরে কেউ ডুকতে না পারে।
ইশা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছে চারিদিকে গার্ড বাড়ি ঘিরে আছে। ইশা এসব দেখে আফসোসের স্বরে বলে।
–আজকেই এত গার্ড রাখতে হলো তোর হিটলার। জানি তো এটা ইচ্ছা করে করেছে যাতে আমি বাড়ি থেকে বের না হতে পারি। কিন্তু আমার নামও ইশা আমি বাড়ি থেকে বের হয়েই ছাড়বো। কিন্তু যখন ওই হিটলার জানবে আমি বাড়িতে নেই তখন কি হবে? ধ্যাত তখনেরটা তখন দেখা যাবে কি করে ওই হিটলার?
ঘড়ির কাটায় এগারোটা বাজে। ইশা তখন বাড়ির সকলের চোখ এড়িয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়। নিজের মুখ ওড়না দিয়ে ভালো করে ডেকে নিয়েছে যাতে কেউ চিনতে না পারে।
–বাড়ি থেকে তো বের হলাম কিন্তু গার্ডদের চোখ এড়িয়ে কি করে গেইট পার হবে? বাড়ির পিছনের গেইট দিয়েই যেতে হবে মনে হচ্ছে।
ইশা বাড়ির পিছনের গেইটের দিকে ধীর পায়ে যেতে থাকে। এক জন গার্ড ইশাকে দেখেই ফেলার আগেই সাথে সাথে ইশা একটা গাছের পিছনে লুকায়। ইশা বুকের উপরে হাত রেখে হাপাতে হাপাতে বলেয
–উফফ বাচলাম। মন চাইছেতো সবগুলোকে কানা করে ফেলতে। যদি আমি জাদু জানতাম তাহলে সব গুলোকে কানা করে দিতাম।
ইশার নজর যায় পায়ের কাছে একটা ইট পড়ে আছে। ইটটা হাতে তুলে নিয়ে ইশা পেছনের গেইটের একটু দুরে টিল দেয়। গার্ডরা টিলের শব্দ শুনে ওই দিকে চলে যায় আর ইশা এই ফাঁকে চুপিচুপি বের হয় দৌঁড়াতে শুরু করে। বাড়ি থেকে অনেকটা দুরে চলে এসে দৌঁড় থামিয়ে পিছনে ফিরে বলে।
–ইশা তুই সাকসেসফুল হলি। এখন রাহুলের সাথে তোর যোগাযোগ করতে হবে ওকে সব কিছু জানাতে হবে। কিন্তু কি করে যোগাযোগ করবো?
ইশা আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি করে একটা রিক্সায় উঠে রিক্সাওয়ালা কে বলে।
–মামা আমি কি একটা ফোন করতে পারি আপনার ফোন দিয়ে?
–হে।
–ধন্যবাদ।
ইশা তাড়াতাড়ি করে রাহুলের নাম্বারে কল করে। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পরেই রাহুল কল ধরে বলে।
–হ্যালো !!!! কে???
–রাহুল। আমি… আমি তোমার ইশা।
রাহুল অস্থির কন্ঠে বলে।
–ইশা তুমি কোথায় দু দিন ধরে তোমার কোনো খোজ খবর নেই। কি হয়েছে তোমার আর তোমার ফোনটা অফ কেন? জানো কতটা টেনশনে ছিলাম আমি।
–রাহুল রিলেক্স আমি ঠিক আছি। তোমার সাথে আমি একটু দেখা করতে চাই তুমি কি আসতে পারবে?
–তুমি বললে আমি আসবো না এটা কি কখনও হয়েছে। আমি আসছি। কোথায় আসবো বলো?
–আমরা সবসময় যেখানে দেখা করতাম সেখান….
–ঠিক আছে এখন রাখি জান।
–হুম। তাড়াতাড়ি আসবে আমি অপেক্ষা করবো।
কল কেটে ইশা মনে মনে বলে।
–সব কিছু বলতে হবে রাহুলকে ভাইয়া আমার সাথে কি কি করেছে? ও নিশ্চয়ই আমার কথা বুঝবে।
#চলবে