#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২১
আমি আর আহিয়ান হারিকেন’র আলোতে তাকিয়ে আছি দুজন দুজনের দিকে! হঠাৎ করেই আকাশ ভাইয়া’র আওয়াজে আমি চোখ সরিয়ে ফেললাম। আকাশ ভাইয়া বলে উঠেন,
“নিহা তুমি এসময়!
আমি আকাশ ভাইয়ার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলি,
“আসলে ভাইয়া এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম, তাই ভাবলাম..
নাহান ভাইয়া বলে উঠে,
“তার মানে তুমি ভূত না!
“না ভাইয়া আমি জলজ্যান্ত একজন মানুষ!
আহিয়ান বলে উঠে,
“মানুষ না জলজ্যান্ত একটা ভূতনি! নাহান ঠিক’ই চিনেছি।
“কি বললেন আপনি।
“যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি। ভূতনি একটা, নাহলে এতো রাতে ভূত ছাড়া কে এভাবে ঘোরাঘুরি করে বলো।
আনাফ ভাইয়া বলে উঠে,
“এই তোরা থাম তো, কতো ঝগড়া করিস। ভালোই হয়েছে এটা নিহা, ভূত তো আর না!
“না ভাইয়া এখানে ভূত ও কিন্তু আছে!
“কককি বললে!
“হুম ভূত আছে, আর তাও মেয়ে ভুত। আর জানেন’ই তো মেয়ে ভূত সবসময় ছেলে ধরে নিয়ে যায়!
আমার কথায় নাহান আর আনাফ ভাইয়া’র মুখ দুটো কালো হয়ে গেল। বেশ ভয় পেয়েছে তারা। নাহান ভাইয়া বলে উঠে,
“কি বলছো এসব নিহা।
“হুম একদম সত্যি কথা। আমি তো শুধু আপনাদের সাবধান করতে এসেছিলাম যাতে রাতে আপনারা বাইরে না বের হন নাহলে..!
আনাফ ভাইয়া বলে,
“নাহলে!
“নাহলে আর কি ভূত ধরে নিয়ে যাবে। সংসার পাতবে আর কি আপনার সাথে।
আমি কথায় তারা দুজনেই বেশ ভয় পেয়েছে বোঝা যাচ্ছে। আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার কোন কথার তার উপর প্রভাব পড়েনি আমি জানি। তবে আকাশ ভাইয়া আমার মতোই বেশ মজা নিচ্ছে তাদের কাহিনী দেখে। সে মুখ টিপে হাসছে।
আকাশ ভাইয়া আমাকে বলে,
“তা নিহা মেয়ে ভূত গুলো দেখতে কেমন?
আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই আহিয়ান আমার কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বলে,
“তোমার সামনেই দাঁড়ানো দেখতে পাচ্ছ না। একদম ভূতনি!
বলেই আমার পাশ দিয়ে বাইরের দিকে হাঁটা ধরেন। আমি একটা মুখ ভেংচি দেই তাকে। নাহান আর আনাফ ভাইয়া তার পিছু পিছু যেতে থাকে। আকাশ ভাইয়া হো হো করে হেসে দেয়।
আমিও হাঁটতে ধরলে আকাশ ভাইয়া এসে আমাকে বলেন,
“কোথাও যাচ্ছ?
“বাসায়!
“এতো রাতে, এখন তো কারেন্ট নেই পুরো রাস্তা অন্ধকার! কারেন্ট এলে যেও।
“আমার কাছে হারিকেন আছে সমস্যা হবে না।
আহিয়ান আবারো কথায় ফোড়ন কেটে বলে,
“আরে ভূতনি দের কিছু লাগে না, তারা একাই যথেষ্ট!
আমি রেগে গিয়ে বলি,
“আচ্ছা আপনার সমস্যা টা কি বলুন তো। এভাবে আমার পিছনে কেন লেগে আছেন।
“তোমার পিছনে লাগার কোন বিশেষ কারন আছে,আর আহিয়ান চৌধুরী কখনো কারো পিছনে লাগে না বুঝলে।
“কচু!
“কি বললে!
“আপনার মাথায় এসব ঢুকবে না। ভাইয়া আমি গেলাম।
“পাগলে ধরেছে নাকি, এতো রাতে একা যেতে চাইছো।
“না পাগল ধরেনি তবে আপনাকে ধরলে বেশি খুশি হতাম!
“এমন কথা তুমি ছাড়া আর কেউ বলবে না।
“ঠিক কারন আমি আমিই! আমার ব্যক্তিত্ব কখনো কেউ নিতে পারবে না।
“এমন ভূতনি’র ব্যাক্তিত্ব কেউ নিতে চাইবে বলে আমার মনে হয় না।
আমি কিছু বলতে যাব তখন আকাশ ভাইয়া আমাদের চুপ করিয়ে দিয়ে বলেন,
“তোরা দুজন তো দেখছি পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া শুরু করলি।
আহিয়ান বলে উঠে,
“ঝগড়া ও প্রথমে ও শুরু করেছে।
“মোটেও না, আপনি শুরু করেছেন।
“ওহ তাই আচ্ছা ঝগড়া কোখান থেকে লেখেছে বলো তো।
“কোথা থেকে!
“পেয়ারা গাছ থেকে! যখন তুমি আমার মাথায় পেয়ারা ছুরে মারছিলে।
“আমি মোটেও পেয়েরা ছুড়ে মারি নি। তবে এখন আফসোস হচ্ছে পেয়ারা টা কেন পড়লো না আপনার মাথায়।
“পেটে পেটে এই ছিল তোমার তাহলে!
এবার সবাই মিলে চুপ করিয়ে দিল আমাদের। আমি মুখ ভেংচি কেটে বাইরে এসে পড়ালাম। কিছুক্ষণ পর’ই পিছন থেকে আকাশ ভাইয়া’র আওয়াজ পেলাম।
আমি তার দিকে ঘুরতেই দেখলাম পেছনে তারা সবাই দাঁড়ানো। আকাশ ভাইয়া জানালেন তিনি আমাকে এগিয়ে দিতে যাবেন। সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তার সাথে এই ৩ জন কি করবে।
যাই হোক এটা জেনে আমার লাভ কি? একসাথে’ই হাঁটা ধরলাম। বাড়ির কাছে আসতেই মনে হলো মা বাইরে দাঁড়ানো। আমাকে ধরে দৌড়ে সে চলে এলো আমার কাছে। অতঃপর শুরু করল এক ধাপ বকাঝকা।
আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার বকা ঝকা খাবার পর বলি,
“মা এইবার একটু থামো
“কেন থামবো শুনি! তুই জানিস কি চিন্তা হচ্ছিল আমার!
এখন আমার মা কে কে বোঝাবে পেছনে যে কারা দাঁড়ানো। আহিয়ান নির্ঘাত খুব মন দিয়ে মা’র কথা শুনেছ আমাকে পরে এসব নিয়ে কথা শুনাতে সে ছাড়বে না।
আকাশ ভাইয়া বলে,
“নিহা এনি কি তোমার মা!
আকাশ ভাইয়া’র কথায় মা চুপ হয়ে গেলেন। আমাকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলেন কে কথা বলছে। আমি মুচকি মুচকি হেসে বলি,
“হ্যাঁ ভাইয়া এটাই আমার মা। না বলে গিয়েছিলাম বলে রেগে অস্থির। আর মা এরাই হলো জমিদার বাড়ির লোকজন।
আমার কথা শুনে যেন মা আকাশ থেকে পড়লেন। থতমত খেয়ে গেলেন তিনি। অতঃপর আমি বলার পর তাদের সবাইকে ডেকে উঠোনে নিয়ে বসালেন।
চাচা মাত্র সবে ঘরে এসে বসল। এই সময় আহিয়ান দের থেকে বেশ অবাক সে। মা সবার জন্য নাড়ু আর মোয়া নিয়ে এলেন। চুলোয় পানি বসালেন চা বানানোর জন্য।
নাড়ু খেতে সবাই শুরু করল শুধু মাত্র আহিয়ান ফোনের আলোতে সেই দিকে তাকিয়ে রইল। আমি তার কান্ড দেখে হেসে প্লেট থেকে একটা নাড়ু নিয়ে নিজে মুখে দিলাম। উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর একটা নাড়ু মুখে দিলেন। তার চোখ মুখ থেকে মনে হচ্ছিল তার কাছে খুব ভালো লেগেছে
মা তাদের জন্য গরম গরম চা নিয়ে এলো। রং চা অবশ্য। চাচা তাদের নিয়ে এই বাড়ির অস্তিত্ব সম্পর্কে বলা শুরু করল। মা ও যোগ দিলেন তাদের সাথে। আমি আর বাবা বসে বসে শুধু সবার কান্ড দেখছিলাম। বলতে হবে তারা বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনলো সমস্ত কথা!
কিছুক্ষণ’র মধ্যেই চলে গেল তারা সবাই। তখন অবশ্য কারেন্ট চলে এসেছিল। চাচা তাদের সবাইকে এগিয়ে দিয়ে এলেন। আমি এসে মায়ের কোলে শুয়ে পড়লাম। মা তখন ও আমাকে এক গাদা বকা শোনালেন। বললেন,
“কতো সাহস রে তো চলে গেলি একা একা।
“আমার সাহস বুঝি কম।
“তোরে যত’ই কই বাইরে যাইস না তত’ই তুই বাইরে ঘোরাঘুরি করিস। একবারও ভেবেছিস গ্রামের মানুষ জানতে পারলে কি হইবো।
“কি হবে মা, কিছুই হবে না
“তুই জানিস না, তুই পালানোর পর খালেদ কি কি করলো। প্রত্যেকদিক আইয়া আমাদের ভয় দেখাইয়া যাইত! শুধু কি তাই, শুনেছি শহরে নাকি তোর খোঁজ ও করেছে।
“গ্রামের কি মেয়েদের অভাব নাকি।
“মেয়েদের অভাব না রে মা, তুই ওর মান সম্মানে আঘাত করেছিস তাই রেগে আছে বুঝলি! তোরে পাইলে ছাইড়া দিবো না। আর বাইরে যাইস না তুই।
“আচ্ছা ঠিক আছে যাবো না। মাথা ব্যাথা করছে টিপে দাও ঘুমাবো
অতঃপর মা মাথা টিপতে লাগল। তার কোলেই ঘুমিয়ে গেলাম এক সময়। শেষ রাতে একটা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙল আমার! খালেদ কে নিয়ে দেখা দুঃস্বপ্ন! এই স্বপ্নের কথা ভাবতেই আমার বুক কেঁপে উঠলো। পুরো শরীর কাঁপছে আমার। ঘন ঘন শ্বাস নিতে শুরু করলাম আমি!
[ সকালে এই পর্বের বর্ধিতাংশ দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]
#চলবে….