#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৮
“কনগ্রেচুলেশন! কি এটা শুনতে চেয়েছিলেন।
“হুম থ্যাংকু!
“আজব আপনি মজা করছেন।
“আরে মজা করার কি আছে। তোমার স্বামী আমি হলেও আমার মা বাবার কাছে তো এখনো আমি সিংগেল তাই না।
“কিন্তু আপনি যে বললেন আপু আসলে আমাকে আপনার বাড়িতে নিয়ে যাবেন।
“তুমি যাবে!
উনার কথা শুনে হতচকিয়ে গেলাম। থমকে গিয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি মুচকি হেসে বলে,
“তুমি তো আমাকে স্বামী হিসেবেই মানো না, ডির্ভোস দিয়ে দিবে। তাহলে অন্য কাউকে বিয়ে করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে তোমার।
“মোটেও না, একটা না দশটা বিয়ে করুন।
বলেই উঠে চলে এলাম। রাগে পুরো শরীর জ্বলছে। এটা কি ধরনের কথা! আমি না হয় রেগে বলেই ছিলাম আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না। এটা ধরে কি বসে থাকতে হবে না কি। এতোদিন এতো কেয়ার করছিলো এগুলো কি ছিল। সব’ই কি নাটক নাকি। এখন বলছে বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছে। ভালোই করুক বিয়ে। এমন স্বামী আমার দরকার নেই। যে বুঝবে না আমি রেগে আছি না খুশি আছি। হুহ!
ঘরে এসে ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দিলাম। পুরো শরীর রাগে কাঁপছে আমার। আমি উঠে একবার রান্না ঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম। আচ্ছা উনি কি এটাও বুঝে নি আমি রেগে ওখান থেকে চলে এসেছি। নাকি ভাবছে কোন কোন মেয়ে কে বিয়ে করবে। বলেই তো এলাম ১০ টা বিয়ে করতে। নিশ্চিত মেয়ে ঠিক করছে বিয়ে করার জন্য!
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম উনি আর এলেন না। আমি উঠে বিছানায় ধপাস করে বসলাম। ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি ফোন করবো কি না। করবো ফোন নাকি করবো না। একবার নাম্বার টা ডায়াল করে আবারো কেটে দিলাম। নিজের মন কেই বোঝাতে পারছি না কি করবো। রেগে ফোনটাকেই ধপাস করে ফেলে দিলাম।
বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। সন্ধ্যা নেমে আসছে। বাইরে থেকে আজানের ধ্বনি আমার কানে আসছে। আপুরা বলেছে আজ নাইট ডিউটি করবে আসবে না। ঘরে কোন রান্না নেই কিছু করতেই মন চাইছে না। বেশ মন খারাপ লাগছে। কি করে বললেন উনি, নিতি কে বিয়ে করবেন। বেশ কান্না পাচ্ছে। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আমি কাঁদছি! কিন্তু কেন কাঁদছি? কষ্ট কেন পাচ্ছি আমি। জানি না, তবে কাঁদতে বেশ ভালো লাগছে। এসময় বৃষ্টি হলে বেশ ভালো হতো তবে এখন বৃষ্টির মৌসম নয়।
কাঁদতে কাঁদতে কখন যে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাই নি। প্রায় অনেকক্ষণ’ই ঘুমালাম আমি। ঘুম থেকে উঠি দেখি ভালোই রাত হয়েছে। এতোক্ষণ ঘুমালাম কিভাবে? মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মনে হলো মাথা ঝিম মেরে আছে। একটু চা খাওয়া দরকার। ক্ষিদেও পেয়েছে খুব!
আমি উঠে ঝিমুতে ঝিমুতে রান্না ঘরে গেলাম। ঘরে বিস্কিট আছে, চা আর বিস্কুট খেয়ে নেই। ক্ষিধেও মিটবে মাথা ব্যাথাও কমবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ঘরে চুলার পানি বসিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ঘর থেকে ফোনের টিং টিং শব্দ বাজছে। কেউ আমাকে স্মরণ করছে কিন্তু আমার এখান থেকে উঠতে মন চাইছে না। রিং বাজতে বাজতে ফোন বন্ধ হয়ে গেল।
আমি এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে, আবারো ফোনের টিং টিং শব্দ বাজতে লাগলো। আমি এবার হেঁটে ঘরে এসে ফোন হাতে নিয়ে ধপাস করে বসলাম। উনি ফোন করেছেন। ফোনটা রিসিভ করে কানে নিয়ে বলি,
“বলুন!
“সালাম দিতে জানো না।
“হুম জানি। আসসালামুয়ালাইকুম হয়েছে! এখন বলুন ফোন কেন করেছেন?
“ফোন ধরছিলে না কেন?
“আপনি তো খুব অসভ্য মশাই। ফোন কেন করেছেন তা জানতে চাইছি তা না বলে আবার জিজ্ঞেস করছেন..
বলার আগেই ওপাশ থেকে বলল,
“এই রাখো তোমার লেকচার! দরজা খোল ঘরের।
“দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে নক’ই করতে পারতেন। আমাকে আবার ফোন করলেন কেন?
ওপাশ থেকে লাইন কেটে দাওয়ার শব্দ এলো। ফোন কেটে দিয়েছেন। কি ঝামেলা! আমি দরজা না খুলে রান্না ঘরে গেলাম। আমার আগে চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করা দরকার। পানি ফুটে এসেছে। পানিতে চা পাতা ফেলে, বিস্কিট বের করলাম। একটা বিস্কিট মুখে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। চা হয়ে এসেছে। দু কাপে চা ঢেলে বিছানায় এসে রাখলাম। বিস্কিট খেতে খেতে দরজা খুললাম। গম্ভীর মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।
“এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে, কখন ফোন করেছি আমি।
“হিসেব করি নি। ভিতরে আসলে আসুন না হলে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছি।
“তোমাকে দেখে এমন কেন লাগছে।
“কেমন লাগছে!
“কিছু না!
বলেই ঘরে এলেন। বিছানায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন,
“কাঁদছিলে তুমি!
“আমার মুখ দেখে এটা মনে হলো।
( কিছু না বলে আবারো চায়ের কাপে মুখ দিলেন )
“মাথা ব্যাথা করছিল বলে এমন দেখাচ্ছে!
উনি কথা না বলে নিজের গায়ের জ্যাকেট খুললেন। আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বলি,
“জ্যাকেট খুলেছেন যাবার সময় মনে করে নিয়ে যাবেন। জানেন আপনার আগের জ্যাকেটের জন্য কি বিপদে পড়েছি।
“ওটা তোমার বাসায় ছিল, এদিকে ঘরে খুঁজতে খুঁজতে আমি কাহিল।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। এর মাঝেই দরজা কেউ নক করল। আমি হঠাৎ করেই চমকে উঠলাম। উনি শান্তিতে বসে বসে চা খাচ্ছেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“কে এলো এখন!
“আমি কিভাবে বলবো?
“আমি এখন কি করবো?
“কি করবে মানে! তোমার সাথে তোমার স্বামী আছে। ভয় পাওয়ার কি আছে এতো।
“আপনি বুঝতে পারছেন না।
“বুঝার কিছু নেই। যাও দরজা খুলে দিয়ে আসো।
“আমি বলছি কি?
“তুমি উঠবে নাকি আমি উঠবো।
কথা না বাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম। আপুরা আজ আসবেনা। তাহলে কে এলো? এসময় কারো তো আসার কথা না। দাদি এলো নাকি। ভয়ে আমার বুক কেঁপে উঠছে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুললাম। দরজার ওপাশে আপুদের দেখে চক্ষু আমার ছানাবড়া। আপু আমার দিকে তাকিয়ে সোজা ঘরে ঢুকে এলেন। আহিয়ান শান্ত ভাবে বসে ফোন টিপছে। তারা দুজনেই অবাক!
মুন্নি আপু বলে ওঠে,
“দেখলে আপু! আমি বলেছিলাম তোমায় এখানে কিছু চলছে। এখন দেখলে, বিশ্বাস হলো তোমায়। আমরা ঘরে না ঘরে এসব চলছে।
মিতু আপু হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মিতু আপু হয়তো আমার থেকে এমনটা আশা করে নি। মুন্নি আপু অনেক কথা বলছে। আমি সব শুনছি। উনি এক জায়গায় চুপচাপ বসে আছে। আজব তো কিছু শুনতে পাচ্ছেন না নাকি উনি। এখনো আগের মতো নেই এভাবে বসে আছে। মুন্নি আপু জানায় এটা তাদের প্ল্যান ছিল। সে নাকি আমায় সন্দেহ করছিল। আজ আমাকে হাতে নাতে ধরার জন্য’ই এমনটা করেছে সে। সেদিন শুক্রবার নাকি আহিয়ানের বাইকে করে আমাকে যেতে দেখেছে। এখন মনে পড়ছে কেন সেদিন এতো কথা জিজ্ঞেস করল। জ্যাকেট নিয়েই বা কেন এতো প্রশ্ন।
মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কিছু বলার পরিস্থিতি তে ছিলাম না আমি। আপু এবার রেগে যাচ্ছে। কারন সে অনেকক্ষণ ধরেই আহিয়ান কে কিছু বলছে কিছু আহিয়ান তা পাত্তা দিচ্ছে না। আপু রেগে আহিয়ানের সামনে দাঁড়িল। তার সামনে চুটকি বাজাল। আহিয়ান এবার ফোনের দিক থেকে মুখ সরিয়ে আপুর দিকে তাকাল। কান থেকে কিসব বের করে আপুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“কিছু বলছিলেন আমায়!
আপু সহ আমরা সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আহিয়ানের দিকে। আর যাই হোক এটা বুঝতে পেরেছি উনি কিছুই শুনতে পারে নি। কানে এসব লাগিয়ে বসে ছিলেন। পারেন ও উনি। আপু রেগে বলে,
“কে তুমি এখানে কি করছো? কেন এসেছ?
উনি দাঁড়িয়ে বলেন,
“ভূতনির সাথে আই মিন নিহার সাথে দেখা করতে।
“কেন নিহা কে হয় তোমার? কয়দিন ধরে চলছে এসব। কতোদিন ধরে আসো তুমি এখানে!
“আজ প্রায় ১৫ দিন।
“এই ছেলে এতো জোর গলায় তুমি এসব বলছো কোন সাহসে। দাদা দাদী জানে এসব কিছু। আমি এক্ষুনি গিয়ে তাকে জানাচ্ছি!
বলেই আপু এদিকে আসতে নেই এর আগেই পেছন থেকে কারো গলার স্বর পেয়ে পেছনে ফিরি। তাকিয়ে দেখি দাদা আর দাদি দাঁড়ানো। দাদির হাতে ট্রে। তিনি মুখের আকৃতি ভিন্ন করে বলেন,
“কি বলবি রে তুই ছেমড়ি।
মুন্নি আপু বলে উঠে,
“ভালোই হয়েছে দাদি, তুমি চলে এসেছ। আমি এক্ষুনি যেতাম তোমার কাছে।
“কেন যেতি! আর নিহা সর দেখি সামনে থেকে। এভাবে সামনে খাম্বার মত কেন দাঁড়িয়ে আছিস।
আমি আর মিতু আপু একটু সরে দাঁড়ালাম। দাদা দাদী দুজনেই ঘরে এলেন। আহিয়ান কে দেখে দু’জনের মুখেই হাসি। দাদি ট্রে টা রেখে বলে,
“তুমি ছিলে বাবা, আর বলো না এই বুড়ো কে কিচমিস আনতে পাঠিয়েছিলাম। কিচমিস আনতে গিয়ে বুড়ো নিজেই কিচমিস হয়ে গেছে। এখন বলো পায়েসে কিসমিস না দিলে কেমন লাগে খেতে।
মুন্নি আপু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“দাদী তুমি চিনো একে।
“মরণ! কথা শোন ছেমড়ির। এটা তো আমার নাত জামাই!
মিতু আপু বলে,
“তোমার কোন নাতনির
“আমার নাতনি আবার কয়টা লা। নিহা! নিহার জামাই!
দাদি’র কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ না ছাদ টাই মনে হলো ভেঙ্গে পড়ল। কি সব বলছে। মুন্নি আপু বলে,
“ও নিহার হাসবেন্ড।
“তোর কানে কি সমস্যা নাকি, একবার বলি শুনিস নি। দেখি নিহা!
বলেই আমার হাত টেনে মিতু আপুর বিছানায় বসাল। আমার হাতে পায়েসের বাটি দিয়ে বলল,
“নে পায়েস খা। এতো বড় একটা খুশির খবর মিষ্টি মুখ করতে হবে তো।
আমি দাদির মুখের দিকে তাকিয়ে বলি,
“হ্যাঁ!
“হ্যাঁ খা।
অতঃপর আরেকবাটি আহিয়ান কে দিল, দিয়ে বলল তাকে খেতে। আমার মনে হয় এতোক্ষণে আমি কিছু বুঝতে পারছি। আহিয়ান দাদা দাদী কে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছে। আর মিতু, মুন্নি আপুর এখানে আসাটা কাকতালীয় ব্যাপার। তবে দেখে মনে হচ্ছে এই বিয়েতে দাদা দাদী সবচেয়ে বেশি খুশি!
পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে আহিয়ান কে দেখছি। দাদি আমাকে একটা খোঁচা মেরে বলল, পায়েস খেতে। মুন্নি আপু এর মাঝে বলে উঠে,
“বিয়ে হয়েছে ভালো কথা, নিহা কে তাহলে ওর বাসায় কেন নিয়ে যাচ্ছে না।
মুন্নি আপুর কথায় সবাই চুপ। আহিয়ান হেসে বলে উঠে,
“আমার বউ কে আমি আজ সাথে করেই নিয়ে যাবো!
অতঃপর আহিয়ানের ফোনটা বেজে উঠে। আহিয়ান বাইরে চলে যায়। মিতু আপু আর দাদি দুজনে আমার দুই পাশে বসে। দু’জনেই বলছে আহিয়ানের কথা। মুন্নি আপু এখান থেকে চলে যায়। দাদা বসে দু’জনের কথা শুনছে। কার কথার কি উওর দেবো না ভেবে শুধু মাথা নাড়ছি।
কিছুক্ষণ বাদে একজনের প্রবেশ হলো ঘরে। আমি মাথা তুলে মেয়েটাকে দেখলাম। তাকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলাম। মেয়েটা দেখতে ভারী মিষ্টি! একটা কালো রঙের শাড়ি পড়ে আছে, শাড়ির উপরে একটা লেডিস জ্যাকেট। তবে মেয়েটাকে দেখতে খানিকটা আহিয়ানের মতো। পিছন পিছনেই প্রবেশ হলো আহিয়ানের। এখন আমি নিশ্চিত এটা আহিয়ানের বোন!
.
গাড়িতে বসে আছি আমি। আমার পাশেই আহিয়ানের বড় বোন আয়ানা। ড্রাইভিং সিটের পাশে আহিয়ান বসা। একটু আগেই সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠেছি আমি। আজ’ই আহিয়ানদের বাসায় যাবো। দাদা দাদী খুব কাঁদছিলেন আমাকে বিদায় দেবার সময়। মিতু আপুর মন ও খুব খারাপ। মুন্নি আপু কে দূর থেকেই দেখেছি। উনি আর কাছে আসে নি।
আয়ানা আপু এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এসেছে আমাকে নিতে। একটু আগেও তার ছেলে ইয়ান ফোন করেছিল। কখন আসবে, দেখা করবে বলে ছটফট করছে সে। বলা বাহুল্য আয়ানা আপুর এমন ব্যবহার আমার প্রত্যাশার বাইরে ছিল। কোনমতে তার থেকে এমন ব্যবহার আমি আশা করি নি। খুব ভালো মানুষ তিনি। আমাকে শুধু বার বার বলেই যাচ্ছে তার মা খুব ভালো। আমাকে দেখে অনেক খুশি হবে। তবে বাবা একটু রাগি। প্রথমে রেগে থাকবেন। তবে পরে তার রাগ কমে যাবে। পুরো রাস্তা জুড়েই তার এসব কথা শুনছিলাম। আয়ানা আপু নাকি বিশ্বাস’ই করে নি আহিয়ান আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে। যদিও এই কথা আমি বলি নি, আহিয়ান নিজেই বলেছে।
চৌধুরী ভবন এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর আহিয়ান। দুজনেই দরজার সামনে দাঁড়ানো। আয়ানা আপু ভেতরে গেছেন। আমি আহিয়ান কে বলি,
“আপনি আজ এতো কিছু করবেন আমাকে বলেন নি কেন?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“সারপ্রাইজ!
আমি উনার থেকে মুখ সরিয়ে নেই। উনি বলে উঠেন,
“কেন ভালো লাগে নি।
“টেনশন দিয়ে বলছেন সারপ্রাইজ!
বলেই মুখ ঘুরিয়ে নেই।
“আচ্ছা ভূতনি তোমার কি মনে হয়, তোমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিবে তো!
“আপনার কি মনে হয়?
“আজ সারারাত দু’জনকেই বাইরে রাখবে। যখন আমি ছোট ছিলাম তখন আব্বু বলেছিল আমি ভুল করলে আমাকে আর বাড়িতে ঢুকতে দিবে না।
“কতরাত ছিলেন এমন বাইরে।
“কখনো ছিলাম না।
“আপনি বলতে চান আপনি কখনো ভুল করেন নি।
“ভূতনি কোথাকার! মানুষ ভুল না করে থাকে নাকি।
“তাহলে!
“কখনো ধরা পরি নি তাই! আপু সবসময় বাঁচিয়ে ফেলেছি।
“আজও তাই করবে বলে ভাবছেন।
“হুম!
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর’ই একজন ভদ্র মহিলা এলেন। আমি তাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলি। মহিলা টা আমার থিতুনি তে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে তুলেন। অতঃপর মুচকি হেসে দিয়ে বলেন,
“নাম কি তোমার!
আমি আহিয়ানের দিকে তাকাই। অতঃপর বলি,
“নিহা!
“বাহ বেশ সুন্দর নাম তো!
পেছন থেকে আয়ানা আপু বলে উঠে,
“সুন্দর হবে না। দেখতে হবে তো কার পছন্দ!
বলেই আহিয়ানের দিকে তাকায়। ভুল না করলে এনি আহিয়ানের মা। আয়ানা আপুর পিছনে আরো কিছু মানুষ। তাদের সবার পরনে একরকমের পোশাক। মনে হচ্ছে তার সার্ভেন্ট। আহিয়ানের মা আমাদের দুজনকে বরন করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করালেন।
.
আমাকে নিয়ে সোফায় বসানো হলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১০.১০ বাজে। অনেক বড় বাড়ি তবে পুরো বাড়িটাই শান্ত! আহিয়ান উঠে নিজের ঘরে চলে গেল। আহিয়ানের মা আয়ানা আপুর মতোই নাকি বলবো আয়ানা আপু তার মার মতো। দু’জনেই খুব মিশুকে। তাদের সাথে কথা বলতে গেলে অস্থির লাগে না। মা হেসে অস্থির এটা জেনে আহিয়ান আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে। তিনি এটা মেনেই নিতে পারছেন না। আয়ানা আপু বলে উঠে,
“দেখলে তো মা তোমার ছেলে দাদু কে ছাড়িয়ে গেছে।
“তা আর বলতে।
“কিন্তু মা, বাবা!
বাবার কথা বলতেই দুজনেই মুখ মলিন। আমি বেশ টের পাচ্ছি বাবা হয়তো তাদের মতো না। রাগি মানুষ! হঠাৎ একটা সার্ভেন্ট এসে বলল,
“ম্যাম স্যার চা দিতে বলেছেন।
মা উঠে দাঁড়ালেন। বাবা চা চেয়েছেন হয়তো। আমি চট করে উঠে দাড়িয়ে বলি,
“মা আমি চা নিয়ে যাই!
“তুমি!
“হ্যাঁ আমি! উনি তো আর আমাকে দেখতে আসবেন না। আমি বরং দেখে আসি!
আমার কথায় মা আর বাবা দুজনেই হেসে একাকার। অতঃপর আমি সার্ভেন্ট এর সাথে গেলাম রান্না ঘরের দিকে। সার্ভেন্ট আমাকে সব দেখিয়ে দিল। চা বানিয়ে নিয়ে গেলাম বাবার ঘরে। আমার পিছু পিছু মাও এলেন।
আমি দরজা নক করলাম, বাবা ভেতরে আসতে বললেন। একটা চেয়ারে বসে বই পড়ছেন তিনি। আমি পেছন থেকে চায়ের কাপ টা তার টি টেবিলের সামনে রেখে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। বাবা পিছনে না ফিরে চায়ের কাপ টা নিয়ে চুমুক দিলেন। অতঃপর বলেন,
“নাম কি তোমার!
“নিহা!
“চা তুমি বানিয়েছ!
“জ্বি, ভালো হয় নি খেতে।
“হয়েছে, কিন্তু চিনি এক চামচ দেবে।
“জ্বি।
“যাও এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। তোমার সাথে কাল সকালে কথা হবে।
“জ্বি আচ্ছা!
অতঃপর আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। মা বাইরে দাঁড়িয়েই সব শুনছিলেন। আমি বার হতেই বাবা তাকে ডাক দিলেন। তিনি রুমে চলে গেলেন। আমি হাঁটতে হাঁটতে বসার ঘরে এসে দাঁড়ালাম। এখান থেকে দাঁড়িয়ে পুরো ঘর দেখছি। হঠাৎ করেই মনে হলো আমার পায়ের কাছে কেউ আছে। আমি তার উপস্থিত পাচ্ছি। কুকুর বা বিড়াল হতে পারে। বিড়াল হলে ঠিক আছে কিন্তু কুকুর কে আমি ভয় পাই। যাই হোক, মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম আমি। এটা তো…
#চলবে….