ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_৪১

0
776

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪১

আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। চোখ কচলাতে কচলাতে পাশে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের চোখের ভুল মনে করে আমি বড় বড় করে চোখ উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আহিয়ান আমার গাল টেনে বলে,

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

গালে হাত দিয়ে বলি,
“এটা আসলেই আপনি।

“না ভুত আছে তোমার সামনে।

“মারলেন কেন আমায় ‌

“কি বড় অপবাদ, কখন মারলাম তোমায়!

আমি গাল হাত দিয়ে খাট থেকে নেমে বলি,
“দেখুন সকাল সকাল আপনার সাথে ঝগড়ার করার কোন ইচ্ছা নেই আমার। নাহলে সারাদিন এই ঝগড়ার মাঝেই কাটবে।

“তোমার সাথে ঝগড়া আমার এভাবেও লাগবে এর জন্য কোন দিন টিন ঠিক করতে হবে না।

“আপনি আজ ব্যায়াম করতে যান নি, বসে আছেন কেন এখনো।

“আমি বসে নেই, একটু পরেই যাবো। আজ তুমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছ।

মাথা চুলকাতে চুলকাতে ঘড়ির দিকে তাকালাম। আসলেই আমি তাড়াতাড়ি উঠেছি। গতকাল তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কারনেই আজ তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছি।

মুখ তোয়ালে দিয়ে মুছে সামনে তাকিয়ে দেখি উনি আয়ানার দিকে তাকিয়ে চুল আচড়াচ্ছেন।
“এতো সাজগোজের কি আছে, যাচ্ছেন তো ব্যায়াম করতে

“তোমার কেন জ্বলছে সেটাই বুঝতে পারছি না।

“আজব আমার কেন জ্বলবে।

“এই একটা কথা মনে পড়ল! ( অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে ) তোমার কেন জ্বলেরে বন্ধু তোমার কেন জ্বলে!

বলেই ফিক করে হেসে দিলেন। আমি বিরক্ত হয়ে উনার দিকে তোয়ালে ছুড়ে মারি। উনি হাসতে হাসতে চলে যান। আমি উঠে বেলকনির কাছে এসে দাঁড়ালাম। উনি বের হলেন। উনার সাথে আরো দুজন আছেন। একটা সবুজ রঙের হুডি আর কালো রঙের ট্রাউজার পরা তিনি। উনি দৌড়ে বাইরে চলে যাচ্ছেন। যতক্ষন উনাকে দেখা যায় ততোক্ষণ’ই দাঁড়িয়ে দেখলাম আমি উনাকে। অতঃপর কুয়াশার মাঝে মিলিয়ে গেলেন উনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে এলাম বেলকনি থেকে।

“কৃষ্ণপক্ষ” উপন্যাস টা নিয়ে বসেছি এর সাথে এক কাপ চা, সময়টা মন্দ নয়। গল্প পড়তে শুরু করেছি, কয়েক পৃষ্ঠা পরার পর’ই উনার গলার আওয়াজ পেলাম। ভূতনি ভূতনি বলে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন উনি। বইটাও শান্তিতে পড়তে দিবেন না। আমি উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে উনি ঘরে এলেন। দুই হাত বাহুতে গুঁজে বলি,

“চেঁচামেচি করছিলেন কেন?

“আহ চেঁচামেচি কোথাও করলাম তোমাকে ডাকলাম।

“ফাজলামি করছেন। এটাকে ডাক বলে, কাকে দেখেছেন এভাবে ডাকতে।

উনি উঁকি দিয়ে পেছনে তাকিয়ে বলে,
“বই পড়ছিলে নাহ! এজন্য’ই আমার ডাক শুনতে পাও নি। আমি প্রথমে খুব সুন্দর করে ডেকেছিলাম। কিন্তু তুমি সাড়া দাও নি তাই জোরে জোরে ডাকলাম।

পুরো মিথ্যে কথা। সকাল টাই শুরু করলো মিথ্যে দিয়ে। উনি মোটেও আমাকে ভালোভাবে ডাকেনি। তবুও আমি বলে উঠি,

“আচ্ছা তাই! বলুন কি বলে ডাকছিলেন।

“বউ বলে ডাকছিলাম!

“ঠিকমতো মিথ্যে বলতে শিখুন।

বলেই আবার পড়তে বসলাম। উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন,

“কতোটুকু পড়লেন।

“অল্পই পড়েছি, ওই যে বিয়ের পর নিজ বাড়িতে এসে অরু মুহিবের জন্য যে চিঠি লিখে সেটা অবদি।

“এতোক্ষণে এতোটুকু!

“আপনি কি মনে করেন, আপনি যাবার পর বসে ছিলাম।

“না শাওয়ার নিয়েছ, তোমার চুল এখনো ভেজা।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো পড়তে বসলাম। উনি ফ্রেস হবার জন্য ওয়াশরুম এ যেতে নিবেন তখন’ই বলে উঠি,

“এই গল্পটার মাঝে আপনার আর আমার একটা সূক্ষ্ম মিল আছে কিন্তু!

“কেমন?

“এই যে তারা পালিয়ে বিয়ে করে!

“আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।

“না! কিন্তু পরিবার কে না জানিয়ে করেছি তেমন..

“আর আছে?

“হ্যাঁ আরেকটা আছে, বাসর রাতের দিন মুহিব যেমন মরার মতো ঘুমায় আর অরু সারারাত জেগে থাকে এখানে আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে! আপনিও বিয়ের প্রথম রাতে ট্রেনে বসে ঘুমিয়েছিলেন আর আমি সারারাত জেগে ছিলাম।

“কিন্তু অরু তোমার মতো মুহিব কে রেখে চলে যায় নি, তুমি চলে গেছো এটা বললে না।

খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে আবারো পড়ায় মনোযোগ দিলাম। উনি ফ্রেস হয়ে এসে হুট করেই আমার বই টা কেড়ে নিলেন,

“এটা কি হলো? আমার এখনো পড়া শেষ হয় নি।

“তুমি পড়ছো না, আমাদের মাঝে মিল খোঁজার চেষ্টা করছো। এসব বাদ দাও।

“এই না দিন তো, এটা শেষ করবো।

বই নিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মেরে,
“ইস! প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কি ইন্টারেস্ট! লাস্ট কবে পড়ার বই ধরেছিলে‌

“এক সপ্তাহ, না আট দিন, নয় দিন।

“ভূতনি একটা। বই শেষ কবে ধরেছে তাও মনে নেই।

“এতো বড় বড় কথা কেন বলছেন। আপনি শেষ কবে নিজের বই ধরেছিলেন।

“এক্সামের সময়, আমার খুব ভালো মনে আছে।

“আপনি বই দিবেন না।

“না, একটু পর ভার্সিটির জন্য বের হবে তখন আমি নিচে তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না। যাও এখন থেকেই সাজগোজ করো গিয়ে।

বলেই উনি বই নিয়ে চলে গেলেন। আমিও রেগে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। উনি জানে আমি তেমন কোন সাজগোজ করি না তবুও এই কথা কেন বললেন। জ্বালানোর জন্য আর কি? হুট করেই শাড়ির আঁচল টান খেল। আমি পিছনে ফিরতে ফিরতে বলি,

“এখন তুই আবার কেন আটকালি!

অতঃপর সামনে তাকিয়ে চমকে উঠি। দেখি উনি দাঁড়ানো। বলে উঠি,

“আপনি!

“চলে যে যাচ্ছ একবারও জানতে চেয়েছিলে তখন কেন তোমাকে ডেকেছি।

“কেন?

“ডেকেছি চা আনার জন্য। ঘন লিকার করে আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসবে।

“আর কিছু জনাব।

“না এরপর ব্রেকফাস্ট করবো, যাও এবার।

“শাড়ির আঁচলটা ছাড়ুন, আচ্ছা কথাটা কি মুখে বলতে পারতেন না, শাড়ির আঁচল ধরে বলা লাগল।

“আমি তোমাকে ডাকলেই তো তোমার কাছে মনে হয় আমি চেঁচাচ্ছি তাই এখন থেকে এটাই করবো। শাড়ির আঁচল ধরে টানবো।

“বোকা বোকা বুদ্ধি যতসব!

বলেই চলে এলাম। একদম যুক্তি ছাড়া কথাবার্তা। আর এমনসব যুক্তি দেন যা কোন যুক্তির কাতারেই পড়ে না।
.
ভার্সিটিতে যাবার জন্য আমার নাকি লেট হবে, না তা হলো না তবে উল্টোটা ঠিক’ই হলো। গাড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছি অথচ উনার কোন খবর নেই। এতো সাজগোজ করা লাগে উনার এমনেই তো সুন্দর। কি এতো মাখেন উনি, উনার গায়ের রং লাল ফর্সা, তবে চোখ দুটি খুব সুন্দর আমার দেখতে বেশ ভালো লাগে। এছাড়া সবার মতোই দুটি হাত আর দুটি পা আছে। বিশেষত্ব কি উনার? কেন কোন মেয়ে উনার প্রেমে পড়বে। আচ্ছা ভাবা যাক, উনার চেহারা দেখে। হ্যাঁ সেটা দেখে যে কোন মেয়েই প্রেমে পড়বে তেমনি সুদর্শন তিনি। আর! আর কি? আচ্ছা কোন মেয়ে উনার কানের নিচে ঘাড়ের কাছে তিল টা দেখে কি প্রেমে পড়বে। জানি না!

উনার স্বভাব বড়’ই অদ্ভুত! যখন কথা বলে না তো বলেই না আর যখন বলে তখন থামতেই চায় না। কোন গুরুতর বিষয় ও উনার কাছে তুচ্ছ! আর তুচ্ছ বিষয় তো আরোই তুচ্ছ! কোন মেয়ে উনার এই স্বভাবের কারনে কি উনার প্রেমে পড়বে।

অপেক্ষা করতে করতে মহারাজের দেখা পেলাম। বেশ পরিপাটি হয়েই এসেছেন। তবে হ্যাঁ আজ তার চোখে সানগ্লাস আছে। উনার এই সানগ্লাস টা নজর কাড়লো আমার। কিন্তু ব্যাপার কি আজ এতো সাজগোজ কেন?

“তাকিয়ে’ই থাকবে না গাড়িতে গিয়ে বসবে।

আমি উঠে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। একটা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়া আমি। শাড়ির কারুকাজ ও বেশ হালকা। সব সময়ের মতো আজও আমি। পার্থক্য শুধু এতো টুকু আজ আমার চোখে কাজল।

উনি গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমি হুট করে বলি উঠি,

“আজ এতো সাজগোজ কেন করেছেন?

“সাজগোজ কোথায় করলাম!

“এই যে সানগ্লাস!

“এটা তো আমিও পড়তাম, কেন দেখো নি কখনো!

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। হ্যাঁ উনি আগেও এটা পড়েছেন। তবে আমার কাছে কেন উনাকে এতো অন্যরকম লাগছে। আমি চুপ হয়ে বসে রইলাম আর কথা বললাম না।

ভার্সিটির আজ একমাত্র আকর্ষণ মনে হচ্ছে শুধু আমি আর আহিয়ান। সবাই এমন ভাবে দেখছে আমাদের যেন এই প্রথম’ই সবাই দেখল। আহিয়ান এক হাতে আমার হাত ধরেছেন আর অন্য হাতে উনার ফোন। ফোনে কি জানি ঘাঁটাঘাঁটি করছে। আচ্ছা আমি তো উনার পিছনেই আছি। উঁকি দিলেই তো হয়। সেই ভাবা সেই কাজ পেছন থেকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে গেলাম আর উনি পিছনে ফিরলেন। আমি মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগলাম। কে জানে কিছু বুঝতে পেরেছি কি না।‌ না বুঝলেই বেশি ভালো হবে।

যত সামনে যাচ্ছি ততোই আমার হার্টবিট বাড়ছে, কেন জানি না। আহিয়ান খুব শক্ত ভাবে আমার হাত ধরে আছে। অস্বস্তি লাগছে আমার। হঠাৎ সামনে যেতেই চোখে পড়ল আকাশ ভাইয়া, ইতি সবাই ওরা সেখানে! নিতি আর সিফাত কেও দেখা যাচ্ছে। তাদের সামনে গিয়েই থেমে গেল আহিয়ান। নিতি হেঁটে আসলো আমাদের কাছে। অতঃপর…

#চলবে….

[ পর্ব ছোট হবার জন্য বিশেষ ভাবে দুঃখিত। আসলে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি সব গুলিয়ে ফেলছি তাই বেশি লিখতে পারলাম না। ইনশাআল্লাহ আগামী পর্বটা সুন্দর করে দিবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here