#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪৪
ক্লাসে ইতি’র পাশে বসে আছি। তবে ক্লাস হচ্ছে না, আমি ইতির সাথে কথা বলবো বলেই এখানে নিয়ে এলাম। কিন্তু কিভাবে কথা বলবো এটাই বুঝে উঠতে পারছি না। ভাবছি ইতি আকাশ ভাইয়া কে যদি ভালোবেসে থাকে তাহলে আমাকে কেন বললো না। আর এতো দিনে যখন বলে নি তাহলে আজও বলবে না আমি নিশ্চিত। কিন্তু পেট থেকে তো কথা বের করতেই হবে। আমি গালে হাত দিয়ে ইতির দিকে তাকিয়ে আছি। ইতিও আমাকে নকল করে সেভাবেই বসে আছে। আমার দিকে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“এতো মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছিস!
“তোকে একটা কথা বলবো কিন্তু কিভাবে বলবো সেটাই ভাবছি।
“এতো ভাবাভাবির কি আছে বলে ফেল।
“আসলে একটা ইম্পর্ট্যান্টে কথা বলতে এসেছি।
“কি ইম্পর্ট্যান্টে!
“আসলে আকাশ ভাইয়া আমাদের ক্লাসের একটা মেয়েকে ভালোবাসে।
ইতি আমার কথায় চমকে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“কি! কি বললি তুই!
আমি আশপাশ তাকিয়ে দেখি সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। ইতিকে হাত ধরিয়ে বসিয়ে বলি,
“কি করছিস!
ইতির মুখের রং ততোক্ষণে উড়ে গেছে। তার মুখচোখ কেমন জানি শুকিয়ে গেছে। আশায় আছি এখন ও বলেই ফেলবে, “আমি আকাশ ভাইয়াকে ভালোবাসি!”
কিন্তু বজ্জাত মেয়েটা তা না করে ভারী ভারী গলায় জিজ্ঞেস করে,
“কোন মেয়েটা রে
ও কথা শুনে ইচ্ছে করছিল ওর মাথায় একটা বাড়ি মারি। বেয়াদব মেয়ে একটা! ভালোবাসিস এটা বলতে সমস্যা কি! কেউ খেয়ে ফেলবে নাকি তোকে।
ইতি কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ওর গালে হালকা ভাবে চড় মেরে বলি,
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
“বল না কোন মেয়েটা।
“মেয়েটা আজ আসে নি। গতকাল দেখেছিলাম মেয়েটাকে
“নাম কি?
“আমি ক্লাসের তোর নাম ছাড়া আর কতো জনের নাম জানি বল।
ইতি কাচুমাচু হয়ে বলে,
“আচ্ছা মেয়েটা খুব সুন্দরী নাহ বল।
“আকাশ ভাইয়া যেমন তার পছন্দ করা মেয়ে কি সুন্দরী না হয়ে পারে
ইতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আমি বলে উঠি,
“আরে এত কি ভাবছিস। এখন শোন আমাদের কি করতে হবে
“কি করবো আমরা।
“আকাশ ভাইয়া ওই মেয়ে টাকে প্রপোজ করবে তো আমরা সেই ব্যবস্থা করে দেবো।
“আমরা কেন করবো।
“আমরা তার বন্ধু তাই করবো। যেভাবেই হোক মেয়েটাকে আকাশ ভাইয়ার কাছে নিয়ে আসবো। এরপর আকাশ ভাইয়া তাকে প্রোপজ করবে।
“আচ্ছা মেয়ে টা যদি না মানে।
“দেবো একটা চড়!
“কাকে? মেয়েকে?
“না তোকে!
“আমাকে! কেন?
“এতো অলুক্ষণে কথা কেন বলছিস! এজন্য..
ইতির মুখটা মলিন হয়ে গেল। বেচারি বেশ কষ্ট পাচ্ছে এটা বুঝতে পারছি। সে বির বির করে কিছু একটা বলবো। আমি সেটা শুনতে পেয়েছিলাম। কথাটা এমন ছিল যে,
“তিনি আমাকে একবারও বলল না কোন মেয়েকে তিনি ভালোবাসেন!”
আমি আর ওকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। একটু বিরহে তাকে মন্দ কি! এর মাঝেই স্যারের প্রবেশ ঘটল কক্ষে। পুরো ক্লাসেই ইতির মনোযোগ ছিল না। তার মনোযোগ যে কোথায় ছিল তা আমি বেশ বুঝতে পারছি!
.
ক্লাস শেষে দুজনেই বের হলাম। দুরেই বট গাছের নিচে বসে উনারা সবাই আড্ডা দিচ্ছে। আমি আজ পর্যন্ত দেখলাম না আহিয়ান কে ভালোমত একটা ক্লাস করতে। সারাদিন শুধু আড্ডাই দেন উনি!
আমি আর ইতিও সেখানে গেলাম। ইতি কোন কথা বলছে না। আহিয়ান আমাকে ইশারা করল জিজ্ঞেস করল “কি হয়েছে? আমি ফোনটা নিয়ে উনাকে বড় একটা রচনা লেখে মেসেজ করলাম। উনি মনোযোগ দিয়ে পুরো মেসেজ টা পরে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি বলি মেসেজ টা আকাশ ভাইয়া কে পড়তে দিতে। আকাশ ভাইয়া ও মেসেজ টা পরে আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইল। এরপর তাকাল ইতির দিকে। বেচারা ইতি বিরহে গালে হাত দিয়ে আকাশ ভাইয়া’র দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি একটু হালকা কেশে বলে উঠি,
“আচ্ছা ভাইয়া মেয়ে টার নাম কি?
নিতি বলে উঠে,
“কোন মেয়ে?
“আকাশ ভাইয়া যে মেয়েকে পছন্দ করে সেই মেয়ে!
আমার কথায় সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল কিন্তু সেই শব্দ আমি পেলাম না। তার মানে কথাটা শুধু’ই আহিয়ান জানে। আর কেউ না। আমি ইতিকে দেখছিলাম, সে আকাশ ভাইয়া’র থেকে মুখ ঘুরিয়ে সামনে তাকাল। মনে মনে শুধু বলছি বোন তুই কাদিস না নাহলে’ই সব শেষ।
হঠাৎ করেই আকাশ ভাইয়া’র বিষম লেগে গেল। আহিয়ান তার পিঠে থাপ্পর মেরে বলে “শান্ত হ! বাকি সবাই চেপে ধরে তাকে। আকাশ ভাইয়া বলে,
“নাম তো জানি না।
নাহান ভাইয়া বলে উঠে,
“ওহ আচ্ছা! প্রথম দেখাতেই তাহলে ভালোবাসা।
আকাশ ভাইয়া ইতির দিকে তাকিয়ে বলে,
“হুম!
ইতি আর সইতে না পারে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
“আচ্ছা আমার লেট হচ্ছে আমি চলে যাচ্ছি।
আকাশ ভাইয়া বলে উঠে,
“কোথায় যাচ্ছ?
ইতি আকাশ ভাইয়া’র দিকে তাকিয়ে থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে আমি বলে উঠি,
“মানে তুই কোথায় যাচ্ছিস। বললাম না আমাদের সব প্ল্যান করতে হবে।
সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। কিসের আবার প্ল্যান। অতঃপর আমি আকাশ ভাইয়ার পাশে বসে বলে উঠি,
“কিসের আবার প্ল্যান, আপনার প্রোপজালের প্ল্যান। আমি আর ইতি মিলে করেছি। যদিও ইতি শুধু মাথা নাড়িয়েছে। তোমরা সবাই শোন।
সবার মনোযোগ এখন আমার উপর। এমনকি আহিয়ানের ও। প্ল্যান টা এমন ছিল যে, যেই মেয়ে কে তিনি পছন্দ করে টিনা আর নিতি মিলে তাকে নিয়ে আসবে। আর আমরা সবাই মিলে অনেক ভালো মতো একটা এ্যারেঞ্জমেন্ট করবো প্রোপজালের জন্য।
ইতি কথায় কোন মন’ই ছিল না। ওর মনোযোগ পাবার জন্য জোরে জোরে বলে উঠি,
“ভাইয়া মেয়েটার বাসা আপনি চিনেন তো
ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে বলে,
“হ্যাঁ আমি চিনি!
ইতি’র ভাবনায় মনে হয় বিস্ফোরণ হলো। সে বড় বড় চোখ করে আকাশ ভাইয়া’র দিকে তাকাল।
.
আহিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে তার পাশে বসে আমি হেসেই যাচ্ছি। আহিয়ান বলে উঠে,
“ভূতনি! আর কতোক্ষণ এভাবে হাসবে
“আপনি ইতির মুখটা দেখেছেন। ইশ দেখার মতো ছিল মেয়েটার মুখটা।
“তুমি মজা পাচ্ছো।
“সেই লেভেলের!
“তোমার না বেস্ট ফ্রেন্ড।
“কচুর বেস্ট ফ্রেন্ড! আমার থেকে এতো বড় কথা লুকিয়ে রাখল যখন তখন মনে ছিল না।
“তুমি শোধ নিচ্ছ।
“হুম হুম!
আমার কথায় আহিয়ান ও হেসে উঠে!
.
সন্ধ্যার দিকে আকাশ ভাইয়া আসে আমাদের বাসায়। বিরহে যে ইতি একা তা না আকাশ ভাইয়াও আছে। আকাশ ভাইয়া যত’ই চেষ্টা করছে ইতি’র সাথে কন্টাক্ট করার জন্য কিন্তু ইতি তার ফোন’ই তুলছে না। ভাইয়া ভয়ে আমার বাসায় আসলো। অতঃপর আমি কল করলাম ইতি কে। দুবার রিং বাজার পর ইতি আমার কল রিসিভ করল। ওকে এখন কি বলবো না ভেবে বলে উঠি,
“ইতি শোন, আমাদের প্ল্যানটা দুদিন পর কার্যকরী হবে। আর তুই তো আমাদের সাথেই থাকবি। কিভাবে কি করবো সব তোর সাথে আলোচনা করতে হবে। কাল তাড়াতাড়ি আসিস।
ইতি হুম বলে ফোন কেটে দিল। আকাশ ভাইয়া’র যেন প্রাণ ফিরে পেল। অতঃপর এখানে আমি আরেকটা প্ল্যান বানালাম! আহিয়ান আর আকাশ ভাইয়া দুজনেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ ভাইয়া বলে উঠে,
“এতো প্ল্যান কোথাও রেখেছিলে তুমি নিহা!
“আমার এই মাথায়!
উনি বলে উঠেন,
“এই মাথায় বদবুদ্ধি ছাড়া আর কিছুই নেই।
আমি চোখ ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকালাম। তবে হ্যাঁ আকাশ ভাইয়ার এই প্রেম উদ্যোগ এর জন্য দুদিন আমাদের মাঝে ঝগড়া একটু কম ছিল। সারাদিন শুধু এটা নিয়ে আলোচনা চলছিল। তবুও এর মাঝে উনি আমাকে জ্বালাতে ছাড়েন নি। এর মাঝে একবার গিয়ে দেখা করে এসেছিলাম দাদা আর দাদির সাথে। অনেকদিন দেখি না তাদের। বিকেল বেলা গিয়েছিলাম তারা রাতের খাবার খাইয়ে ছাড়ল আমাদের। ফিরত আসার সময় মিতু আর মুন্নি আপু কে দেখে এলাম। তারা দুজনেও বেশ ভালো আছে।
অতঃপর প্রোপজালের দিন..
একটা রেস্টুরেন্টে ছাদের প্রোপজের আয়োজন করেছি। যদিও রেস্টুরেন্ট টা ইতির পছন্দ করা। পুরো ছাদটাই আমরা সাজালাম, আমাদের সাথেও ইতিও। ইতি কে শুধু দিচ্ছি বেলুন ফুলাতে। সেও দিব্যি আনমনে বেলুন ফুলিয়ে যাচ্ছে। সবাই একসাথে কাজ করছে। সিফাত কেও দেখা গেল এখানে। একবার এসে আমাকে ভাবি বলে ডেকেছিল এরপর আর দেখা নেই। কিন্তু ওর কথা আমি এখনো ভুলে যায় নি কিন্তু সময় করে উঠতে পারছি না। ইতির ঝামেলা শেষ করেই এটা দেখতে হবে।
আমি বলুন গুলো বেঁধে বেঁধে কাজ করছি। ছাদে আয়োজন হবার কারনে বেলুন গুলোও বাতাসে উড়ে যাচ্ছে। আমি সব গুলো একসাথে করে বাঁধার চেষ্টা করছি। হঠাৎ এর মাঝেই আমার মাথায় বিস্ফোরণ ঘটল। আমি ফালিয়ে উঠলাম! বেলুন গুলো আবার চলে গেল। দু হাত কোমরে দিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান দাঁত বের করে হাসছে। একটু আগে উনিই আমার মাথার উপর বেলুন ফুটিয়েছে। ভয়ে আরেকটু হলেই আমি হার্ট অ্যাটাক করতাম!
“কি হলো এটা!
“কিছু না, একটু ঝগড়া করার ইচ্ছে হলো আর কি!
আমাদের কথা শুনে সবাই জোরে জোরে হাসতে লাগল। আমি উনাকে বলে উঠি,
“হাসা বন্ধ করুন, বেলুন গুলো আবার সব উড়ে গেল। এবার তুলুন সব!
“আচ্ছা ভূতনি, তুমি উড়তে পারো না।
“কেন?
“সব ভূতনি রা তো উড়তে পারে তুমি পারো না।
“আপনি..
বলার আগে তিনি দ্রুত নেমে গিয়ে বলেন,
“আমি আকাশের কাছে যাচ্ছি, ওকে মানসিক ভাবে সাহস যোগাতে!
আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। মজার ব্যাপার ছিল আকাশ আজ বেশ নার্ভাস আছে। শুধু ভাবছে কি না কি হবে। ভালোবাসলে এতো ভয় কেন পাবে। সে যখন ভালোই বাসে তাহলে বলতে সমস্যা কি। এতো ভয় নিয়ে কি ভালোবাসা হয় নাকি। আমি তাকে একটা বুদ্ধি দিয়ে এলাম। বললাম বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে। টেনশন চলে যাবে। এর এদিকে আমার বান্ধবী আছে বিরহে।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল সবকিছু ঠিক করতে। আহিয়ান ও কিছুক্ষণ আগে ফোন করে বলেছে আকাশ ভাইয়া কে নিয়ে আসছে। আমি বললাম , ভাবী কে আমি আসছি।
আমার ভাবী বলায় ইতি অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইল। সবাই চলে গেল ফ্রেস হতে। যদিও মেয়ে আনার কথা নিতি কে বলেছিলাম কিন্তু কোন মেয়ে কে আনবে তারা। তারা তো এখনো জানে না মেয়ে তাদের সামনে। তাই তাদের ফ্রেস হয়ে বলি এখানেই আবার চলে আসতে।
রেস্টুরেন্টে’র পাশেই একটা হোটেল ছিল। সেখানে রুম বুক করা ছিল। আকাশ ভাইয়া একটা ড্রেস কিনেছিল ইতির জন্য। এখন এটা পরেই তাকে নিয়ে যাবো।
রুমে ইতি কে নিয়ে এলাম। সে অনেকটা অবাক হলো। আমি বলি,
“তুই আপাতত ফ্রেস হয়ে এখানে রেস্ট নে। অনেকটা ক্লান্ত লাগছে তোকে। আমি আসছি।
“কোথায় যাচ্ছিস!
“মেয়েটাকে এখানে আসতে বলেছিলাম, দেখি এসেছে কি না। আচ্ছা এই প্যাকেট টা রেখে গেলাম দেখে রাখিস।
“কি আছে এতে?
“আকাশ ভাইয়া তার গফ এর জন্য একটা ড্রেস কিনেছে সেটাই! আচ্ছা আমি গেলাম!
বলেই বের হয়ে গেলাম। বাকি কাজ এভাবেই হয়ে যাবে। ইতি যে ড্রেস টা বার করবে আর রেগে গিয়ে সেটা পড়বে এটা আমি জানি। নিচে এসে দেখি আহিয়ান আর আকাশ ভাইয়া চলে এসেছে। আহিয়ান কে বলি আকাশ ভাইয়া কে নিয়ে চলে যেতে আমি ইতি কে নিয়ে আসছি। অতঃপর তারা চলে গেলে রুমে এসে দেখি ইতি ড্রেস টা পরে আয়নায় নিজেকে দেখছে। আমাকে দেখেই ও ঘাবড়ে গেল।
ইতি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
“আসলে ড্রেস টা অনেক সুন্দর ছিল, তাই পরে দেখছিলাম!
“বাহ বেশ মানিয়েছে তোকে।
“মানালে কি হবে? এটা তো আর আমার না!
বেচারার কথা শুনে খুব খারাপ লাগছিল। অনেকটা কষ্ট পেয়েছে সে। আমি ওর মন ভালো করার জন্য হেসে বলি,
“আচ্ছা পড়ে যখন ফেলেছিস বাদ দে।
“না আমি এক্ষুনি চেঞ্জ করে আসছি।
“না লাগবে না। দেরি হয়ে গেছে, মেয়েও চলে এসেছে। অনেক সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে এসেছে তাও আকাশ ভাইয়ার পছন্দের। আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা রাজি’ই হবেই।
“মেয়েটা মেয়েটা কি করছিস। নাম বল!
“সেটা আপাতত সাসপেন্স থাক, দেখলেই বুঝতে পারবি। চল এখন!
অতঃপর ইতি কে নিয়ে চলে এলাম। কথা ছিল আহিয়ান আকাশ ভাইয়া কে ভেতরে রেখে বাইরে চলে আসবে। বাকি সবাই ও বাইরে থাকবে। আমরা পরে ভেতরে যাবো। কিন্তু আহিয়ান কে বাইরে কোথাও দেখছি বাকি কাউকে না। তাদের আসতে এতোক্ষণ লাগে নাকি। আমি ইতি কে বলি,
“তুই একটু ভেতরে যা তো। আমি দেখে আসি উনি কোথায় গেল!
ইতি মুখ টা কাচুমাচু করে বলে,
“না গেলে হয় না।
“এতোদিন মেয়েটাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে ছিল। এখন যখন মেয়ে টা ভেতরে আছে তাহলে তুই দেখবি না।
ইতি অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইল। আমি ওকে পাত্তা না দিয়ে নিচে নেমে আসি। জানি সে ভেতরে যাবে, মেয়েটাকে দেখতে। তাই হলো! ইতি ভেতরে গেল। আমিও আবার উপরে চলে এলাম। আমার পিছনে বাকি সবাই এলো। তারা এতোক্ষণ ধরে বুঝতেই পারছিল না মেয়ে টা কে? কিন্তু এখন তারাও বুঝেছে কারন আহিয়ান ওদের সবাইকে বলেছে।
ভিতরে আসার দরজা কাঁচের তাই বাইরের সব কিছু দেখা যাচ্ছে। আকাশে সূর্য ডুবে যাচ্ছে,ইতি সামনে গিয়ে দেখল আকাশ ভাইয়া পেছন ফিরে তাকিয়ে আছে। ইতি আওয়াজ দেবার সাথে সাথে আকাশ ভাইয়া সামনে ফিরল। তাকে দেখেই ইতি একটা চমক গেল। বেশ লাগছিল তাকে দেখতে। আকাশ ভাইয়া ইতির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,
“ইতি উইল ইউ মেরি মি!
একথা শোনার পর আমরা সবাই রীতিমতো হতবাক। কারন কথা ছিল প্রোপজের কিন্তু সেটা যে বিয়ের প্রোপজাল এটা বুঝতে পারি নি। আহিয়ান কে খোঁচা মেরে বলি,
“এটা কি হলো?
উনি ফিসফিসিয়ে বলেন,
“ইতি কে দেখতে নাকি ছেলে আসছে এই ভয়ে আকাশ বিয়ের প্রোপজাল দিয়েছে।
“আপনি যেমন ভাইয়াও তেমন , এখন কি হবে?
“জানি না দেখতে থাকো!
আমি ইতির রিয়েকশন দেখছি। বেচারি না হার্ট অ্যাটাক করে। সে হা হয়ে আকাশ ভাইয়া কেই দেখছে। এর মাঝেই আমরা সবাই এলাম। সবাই হাত তালি দিচ্ছি। কি জানি ইতি কি করে? আকাশ ভাইয়া ঘামছে, কপাল বেয়ে তার ঘাম পড়ছে। আকাশ ভাইয়ার হাতে একটা আন্টি। ইতি কি এখন হাত বাড়াবে, কিন্তু মনে হচ্ছে না সে শক থেকে বের হতে পরেছে। এর মাঝেই খুব জোরে শব্দ হলো। চারপাশ থেকে কিছু উড়ে গেল। আমি রীতিমতো ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে আহিয়ানের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
যাক এতে একটা কাজ হয়েছে ইতি ঘোর থেকে বাস্তবে এসেছে। সে বিশ্বাস’ই করতে পারছে না, এই সে মুখে হাত দিয়ে হাসছে এই আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। আমি চোখের ইশারায় হাত বাড়াতে বলি। ইতি হাত বাড়ানোর সাথে আকাশ ভাইয়া তার হাতে রিং পড়িয়ে দিল। আকাশ ভাইয়া গলার টাই লুজ করতে করতে উঠে দাঁড়ালো। অনেকটা টেনশন নিয়ে ছিল সে। এর মাঝেই ইতি দৌড় জরিয়ে ধরে তাকে। আমার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। আহিয়ান আমার হাত টেনে বাইরে নিয়ে এলো।
“উফ কি করছেন।
“ওদের একা থাকতে দাও।
“একা থাকতে দেবো মানে। এতো কিছু এ্যারেঞ্জম্যান্ট করলাম!
বলেই সামনে তাকাতে দেখি সবাই হাসতে হাসতে বের হয়ে আসছে। আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি আমার হাত ধরে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এলেন।
টেবিলে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছি আর ভাবছি। আহিয়ান ফোন টিপছে আর কফি খাচ্ছে। আমি আনমনে বলে উঠি,
“আচ্ছা ওখানে এখন কি হচ্ছে!
“তুমি এখনো এইসব ভাবছো।
“কেন ভাববো না।
“এতো অ্যাকসাইন্টমেন্ট তোমার।
“না থাকার কি কারন!
হঠাৎ এর মাঝেই টিনা বলে উঠে,
“তুমি তো বিবাহিত, তুমি জানো না এখন কি হচ্ছে। এটাও খোলাসা করে বলা লাগবে।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। আহিয়ান বলল,
“আইসক্রিম খাও!
নিতি হেসে চেয়ার টেনে বসে বলল,
“যাহ নিহা তো দেখছি শরম পেয়ে গেল।
আমি নিতির দিয়ে তাকিয়ে বলে উঠি,
“না তো, শরম কেন পাবো।
আহিয়ান আমার মাথা আইসক্রিম’র দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“তোমাকে আইসক্রিম খেতে বলেছি।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে আইসক্রিম খেতে লাগলাম। এর মাঝেই সবাই হেসে উঠল। কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
#চলবে….