ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_৪৫

0
680

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪৫

মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি,‌ পুরো মাথা আমার ভার হয়ে আছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২ টা বাজে। এতোক্ষণে আমার ঘুমের দেশে পারি দেবার কথা কিন্তু তা না করে মেঝেতে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। মাথা ব্যাথার কারনে ঘুম ও আসছে না। সামনে তিনটি চায়ের কাপ পড়ে আছে। দেখতে দেখতে তিন কাপ চা খেয়ে ফেলেছি তবুও মাথা ব্যাথা কমছে না। বুঝলাম না মাথায় আজ কি ভর করল আমার।

আমি দু হাত দিয়ে চুল মুঠ করে খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। হঠাৎ মুখের উপর কারো গরম নিঃশ্বাস পড়াই উঠে গেলাম। তাকিয়ে দেখি আহিয়ান আমার মুখের কাছে অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,

“কি হয়েছে?

“আমার কি হবে,‌ হয়েছে তো তোমার? এভাবে পাগলের মতো বসে আছো কেন। ভূতনি কি এবার পাগলের খাতায় নাম লেখাবে।

উনার কথায় রেগে আশপাশ তাকাতে লাগলাম। চায়ের কাপ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছিল না। উনি হেসে বলে উঠে,

“ভেবো না চায়ের কাপ ছুড়ে মারবে, তাহলে চায়ের কাপ ভাঙার আওয়াজে মা আর বাবার ঘুম ভেঙ্গে যাবে।

“😒

“এমন করছো কেন?

“মাথা ব্যাথা করছো।

“এক, দুই ,তিন! তিন তিন কাপ চা খাওয়ার পরও মাথা ব্যাথা কমছে না।

“নাহ!

“তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো।

“আসছে না।

“আসবে কিভাবে? এতো চা খেলে কার ঘুম আসবে।

“এই সরুন তো, মাথা ব্যাথায় কথা বলতেও মন চাইছে না আর আপনি এলেন ঝগড়া করতে।

উনি আমার চুলে হাত দিয়ে একবার উঠিয়ে আবার নামিয়ে দিয়ে বলেন,

“তেল দিয়েছ চুলে, মাথা ব্যাথা কি করে কমবে।

“আমার এখন মন চাইছে না কিছু করতে।

“আরো নাচো!

“এই ঝগড়া করবেন না তো। এটা তো বলবেন, “দাও আমি দিয়ে দিচ্ছি তোমার মাথায় তেল, মাথা ব্যাথা কমে যাবে।” আবার আসছে ঝগড়া করতে।

“তোমার সেবা করবো আমি, অ্যাহ!

“জানি জানি করবেন না। যান তো এখান থেকে। এভাবে ছিলাম তবুও মাথা ব্যাথা একটু কমছিল।

বলেই আবারো সেভাবেই শুয়ে রইলাম। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার মাথায় কিছু ফেলেছে। আমি মাথায় হাত দিয়ে দেখি তেল! অতঃপর আয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান। যেহেতু ডেসিন টেবিলের সামনে বসা ছিলাম তাই আয়ানায় নিজেকে দেখতে পাচ্ছিলাম। তবুও বিশ্বাস হচ্ছিল না। মাথা তাকিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখি উনি খাটে বসে আমার মাথায় তেল দিচ্ছেন।

উনি আমার মাথা ধরে নিচু করে বলেন,

“চুপচাপ বসে থাকো, মাথা তুলছো কেন?

“আপনি পারেন তেল দিতে।

“হ্যাঁ পারি তো, তেলের ব্যবসা করতাম নাহ!

“আরে চেতছেন কেন?

“আজাইরা বকবক বন্ধ করো তো! চুপ থাকো, নাহলে তোমার বকবকে আমার মাথা ধরে যাবে।

অতঃপর আমি চুপচাপ বসে আছি। উনি আদৌ আমার মাথায় তেল দিচ্ছেন না কি করছেন জানি না। পুরো চুল এলোমেলো করছেন। নিজের সর্বনাশ বসে বসে আয়ানায় বেশ দেখতে পারছি। কপাল বেয়ে তেল পড়ছে আমার ঘরে। ভাগ্যিস তেলের ব্যবসা করেন নি নাহলে আমাকে তেলের মধ্যেই চুবিয়ে দিতেন।

অতঃপর উনি আমার কপালে হাত রেখে কিভাবে জানি মালিশ করতে লাগলেন। মজার ব্যাপার ছিল আমার মাথা ব্যাথা কমতে লাগলো তার সাথে ঘুম ঘুম ও পেতে লাগল। অতঃপর ঘুমের বারোটা বাজল তখন যখন উনি চুল আঁচড়াতে লাগলেন। এতো তেল দেবার কারনে জট যা পেকেছিল তা আপনা আপনি খুলে যেতে লাগল কিন্তু উনার আচড়ানোর ধরন ঠিক ছিল না।

তাও কোনমতে আচড়ালেন। অতঃপর চুল বেনুনি করতে লাগলেন কিন্তু মাথা মুন্ডু কিছুই হচ্ছে না। তবুও উনি চেষ্টা করছেন দেখতে বেশ ভালো লাগছে। আমি আয়নায় তাকিয়ে উনাকে দেখছি। বেশ টেনশনে তিনি। উনাকে দেখেই যাচ্ছি এর মাঝে উনি আয়নায় তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“কি?

“পারলেন করতে!

“ধ্যাত কিছুই হচ্ছে না।

আমি হাত দিয়ে দেখি একটু হয়েছে একটু হয় নি। অতঃপর আমি একটু ঘুরে বসে আয়নার সাইডে আসি। উনি এবার বেনুনি করছেন আর আমি আয়নায় তাকিয়ে উনাকে বলছি। অনেকটা হয়েছে যা বলা যায় বেনুনির মান সম্মান রক্ষা পেয়েছে।

বেনুনি শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। আহা বেচারা বেনি করতে করতে বেশ ক্লান্ত। আমি উনার দিকে ঘুরে বলি,

“এতো ভালো বেনুনি শিখলেন কার থেকে।

“ছোট বেলায় আম্মুর চুল নিয়ে এভাবে খেলাতাম। কে জানতো বেনি করা এতো ঝামেলার।

“চুলে তেল এভাবেই দিতাম।

“কেন দেওয়া হয় নি।

“হয়েছে তবে মনে হয়েছিল আপনি রীতিমতো যুদ্ধ করছেন।

বলতে বলতেই আমি খিলখিলিয়ে হেসে ফেললাম। উনি ভ্রু কুঁচকে বলেন,

“ভূতনি হাসি থামিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে আসো। তোমার মাথা ব্যাথা কমাতে গিয়ে আমার মাথা ধরে গেছে!

“কে বলেছিল করতে শুনি, এসেছে নিজেই এসেছেন আবার নিজেই কথা শুনাচ্ছেন।

“তোমার হেল্প করেছি, কৃতজ্ঞতা তো জানাতেই পারো

“হ্যাঁ তা ঠিক!

বলেই আমি উঠে দরজার কাছে গেলাম। উনি আমাকে আবারো খাটালেন। নিচে এসে পানি গরম করতে চুলোয় পানি বসিয়েছি। পুরো ঘর অন্ধকার, বাড়ির সবাই ঘুমে কাতর। প্রথমবার চা বানানোর সময় সার্ভেন্ট জেগে উঠে এসেছিল। আমি তাদের বলেছি চলে যেতে। এখন আওয়াজ শুনলেও আর আসবে না। কারো আসার শব্দ শুনে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি উনি নিচে নামছেন। উনি এসেই চুলোয় পাশে খালি জায়গাতে বসে পড়েন। আমি তখন সবে পানিতে চায়ের পাতা দিয়েছি। উনি বলে উঠেন,

“বিস্কিটের বয়াম টা দাও তো!

আমি বিস্কিটের বয়াম টা দিলাম। উনি বয়াম থেকে বিস্কিট মুখে দিলেন। চা ততোক্ষণে হয়ে গেছে। এর মাঝেই হঠাৎ করে উনি বলে উঠেন,

“জানো তুমি আসলেই ভূতনি, আজ আমি সেটার প্রমাণ পেয়েছে।

আমি উনার দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইলাম। উনি বিস্কিট মুখে দিয়ে বলেন,

“ভূতের মতো তোমার চুল ও অনেক বড়। ছোটবেলায় শুনেছিলাম ভূতের চুল নাকি অনেক লম্বা হয়। তোমার ও সেরকম!

আমি উনার দিকে বিরক্ত মুখে তাকিয়ে চায়ের কাপ টা উনার হাতে দিয়ে চলে এলাম। উনি “ভূতনি” বলে কয়েকবার ডাকলেন। আমি কোন পাত্তা দিলাম না। সোজা এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। মাথা ব্যাথা এখন নেই বললেই চলে বিধায় ঘুম ভালো হবে। বলতে বলতে বিছানায় না শুতে শুতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম!
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি উনি বিছানায় নেই। কি ব্যাপার গেলো কোথায়? আমি চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে উঠি। দেখি বিছানার পাশে ল্যাম্বশ্যাডের পাশে একটা চিরকুট! তাতে লেখা ছিল,

“ভূতনি! কি ঘুমটাই দিচ্ছ তুমি, যাক তুমি ঘুমাও আমি জগিং করতে গেলাম। তোমার জন্য গুড নাইট!

আমি ঘুমের চোখেই হেসে হেসে সেটা বইয়ের মাঝে রাখলাম। অতঃপর ফ্রেস হতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম!
শাওয়ার নিয়ে এসে দেখি উনি এখনো ফিরে নি। বিপদে পড়ে আজ চুল গুলো শ্যাম্পু দিতে হয়েছে। আমার বালিশে পুরো তেলে চ্যাটচ্যাটে অবস্থা! মাথা মুছতে মুছতে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম। উনি বাসায় আসছেন, দেখা যাচ্ছে উনাকে!

ভার্সিটিতে আজ ইতিকে বেশ ব্লাশ করতে দেখলাম। বাহ একদিনেই এতোদূর! ভেবে উঠতে পারছি না। তার থেকে শুনলাম কয়েকদিন পরেই আকাশ ভাইয়া তার মা আর বাবা কে ইতির বাড়িতে পাঠাবেন বিয়ের প্রস্তাব দেবার জন্য। যাহ ভালোই হবে একটা বিয়ের দাওয়াত পাওয়া যাবে।

ক্লাস শেষ হবার পর একাই এলাম সেই রুমে, যেখানে সিফাত আমার সাথে অসভ্যতামি করেছে। কিন্তু সে এখান থেকে পালালো কি ভাবে? আমি পুরো ক্লাস আজ আবারো ঘুরতে লাগলাম। ক্লাসের বাইরেও গেলাম। এই ক্লাসের পরেই ছিল বাথরুমের সাইড! বাথরুম! এই এমনও তো হতে সিফাত আমার পিছনে আসতে আসতে আহিয়ান আর আমাকে দেখে ফেলেছিল আর তখন’ই বাথরুমের দিকে চলে গেছিল। আর আমি আর আহিয়ান যখন কথা কাটাকাটি করছিলাম তখন সুযোগ বুঝে সে পালিয়ে গেছিল। ইশ খুব সহজ ছিল এটা। আমি তখন’ই বাথরুমের দিকে এলে ঘটনাটা বুঝতে পারতাম। এই সিফাত নিশ্চিত আমার আর আহিয়ানের কথা শুনেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল আহিয়ান আমাকে বিশ্বাস করছে না আর তাই সে এখনো এতো সহজ স্বাভাবিক আমাদের সাথেই আছে।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসতে লাগলাম। এতোদিনের রহস্য উদঘাটন করলাম। তখন শুধু আমার বোকামি আর ভিতুর কারনে মাথা কাজ করছিল না। তবে আজ বেশ কাজ করছে। আমি আবারো সেই রুমে এসে পুরো রুম দেখতে লাগলাম। পেছনে ঘুরতেই আবারো ভয় পেয়ে গেলাম। থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইলাম সামনের দিকে। আমার সামনে সিফাত দাঁড়ানো।

নিজেকে স্বাভাবিক করে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি,
“তুমি এখানে?

সিফাত হেসে বলে,
“আসলে ভাবী আপনাকে দেখলাম একা একা এখানে আসতে তাই চলে এলাম।

আমি হেসে বলি,
“একা দেখেই আসতে পেরেছ সেটা আমি জানি।

“কিসব বলছেন ভাবী।

“কিছু না, সরে দাঁড়াও যেতে দাও।

“আচ্ছা যান।

বলেই সিফাত সরে দাঁড়াল। আমি পাশ দিয়ে হেঁটে দরজার কাছে যেতেই সিফাত বলে উঠে,

“একটা কথা অনেক জানার ইচ্ছা ছিল ভাবী।

“কি কথা?

“এই যে কিভাবে আপনি আহিয়ান ভাইয়া কে বশ করে বিয়ে করে ফেললেন।

“তুমি এখনো আগের সেই সিফাত’ই আছো, যে কি না আমাকে এখানে একা এনে অসভ্যতামি করার চেষ্টা করছিলে কিন্তু তা না করতে পেরে পালিয়ে গেলে। চলে গেলে বাথরুমের দিকে। আহিয়ান আর আমার কথা কাটাকাটির মাঝে এখান দিয়ে চলে গেলে আর আড়িপাতা তোমার পুরনো অভ্যাস ঠিক বললাম তো।

“দূর থেকে দেখেই এতো কিছু বুঝে ফেললেন।

“মানুষের আচরণে তার পরিচয়, আর তোমার আচরণ আমি কখনো ভুলতে পারবো না।

“আহ ভুলবেন কেন, আমি তো চাই আপনি মনে রাখুন। আসলে কি বলুন তো আপনিই সেই প্রথম আর একমাত্র মেয়ে যাকে কিনা আমি নিজের করতে পারলাম না।

আমি সহজ ভাবেই বলি,
“ভাবতেও অবাক লাগে, ভাবী বলে সম্বোধন করছো আর আমাকে কামনাও করছো। যাই হোক এখন আর সেটা সম্ভব না, সেই আশা বাদ দাও!

বলেই আমি চলে যেতে নিলাম। তখন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সিফাত বলে উঠে,
“ভাগ্যে কখন কি হয় কিভাবে বলা যায় ভাবী। ভালোবাসা আর কতদিন ভালোবাসা থাকবে বলো, ছেড়ে দেবে না এর গ্যারান্টি কি! তবে হ্যাঁ সেখান দিয়ে তোমার যাবার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল এখানে এসো। রাস্তা আমি আজীবন খোলাই রাখবো তোমার জন্য!

“সিফাত! কি বলোতো,‌ মানুষ বেঁচে থাকে তার ইচ্ছা’র কারনে, শখের কারনে! তার জীবনে যদি শখ,‌ ইচ্ছা,আশা এসব না থাকতো তাহলে তার জীবন মূল্যহীন ! ভালোই তো তুমি আশা করছো, এই আশা তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। কিন্তু সে আশা পূরণ হবার নয় এটা মনে রেখো।

বলেই চলে এলাম। এমন একটা নিকৃষ্ট মানুষের সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই। সে কখনো শোধবার নয়। যেভাবেই হোক আহিয়ান কে সিফাতের এই রূপ দেখাতেই হবে। আমি আহিয়ান কে বললেই হবে না তাকে প্রমাণ ও দিতে হবে। কথায় আর কতোটুকু বিশ্বাস হবে।‌আর সেই বিশ্বাস ও ক্ষণস্থায়ী!

আমার শরীর বার বার শিউরে উঠছে। কিছু একটা বার বার আমাকে জ্বালাতন করছে। খুব ছটফট করছি আমি। উনি এই ড্রাইব করছেন এই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। একবার জিজ্ঞেস করছে “কি হয়েছে”?
আমি বলি,
“কিছু না।

“তাহলে এমন করছো কেন?

“শীত লাগছে!

“কিন্তু এসি তো বন্ধ! আচ্ছা পানি খাবে।

“না!

বলেই চোখ বন্ধ করে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসে পরি।
.
সন্ধ্যায় টেবিলে পড়তে বসে ঠিক মতো পড়তেও পাড়লাম না। চোখ সব ঘোলা হয়ে আসছিল। মাথা ঘুরতে লাগলাম। কেমন এক অস্থিরতা। তবুও গালে হাত দিয়ে টেবিলে বসে রইলাম!
রাতে সবার সাথে ডিনার করতে গিয়েও বেশি কিছু খেলাম না। অল্প খেয়েই উঠে গেলাম। মা জিজ্ঞেস করলেন,

“নিহা ঠিক আছো তো তুমি!

“জ্বি মা! খুব ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাবো আমি।

“আচ্ছা যাও!

অতঃপর আমি ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের মাঝেই কি সব আজেবাজে কতো গুলো স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। অতঃপর আবারো সেই ভয়ানক স্বপ্ন। তবে সেই স্বপ্নটা আজ আরো ভয়ানক। অন্ধকার থেকে হাত গুলো এসে আজ আমার গলা চেপে। আমি স্বপ্নের মাঝেই ঘামছি। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল আমার। আমি দ্রুত ঘুম থেকে উঠে পড়ি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি এখনো ঘামছি। পুরো রুম অন্ধকার! ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছি‌। পানি তৃষ্ণা পেয়েছে খুব। আমি অন্ধকারের মাঝেই পাশেই ল্যাম্পশ্যাডের কাছ থেকে পানির গ্লাস টা নিতে যাই কিন্তু ভয়ের কারনে সব গন্ডগোল পেকে যায়। গ্লাস টা পড়ে যায় আমার হাত থেকে। ভয়ে লাফিয়ে উঠি আমি। কাচুমাচু হয়ে বসে থাকি।

গ্লাস পড়ার আওয়াজে উনার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উনি আলো জ্বালিয়ে দ্রুত আমার কাছে এলেন। আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। উনি কাছে এসে আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,

“নিহা! নিহা তুমি ঠিক আছো।

আমি কোন কথা না বলে জরিয়ে ধরলাম উনাকে। আমার এমন কাজে উনি অবাক হলেন আবার এটাও বুঝতে পারলেন আমি ভয় পেয়ে আছি। আমার পুরো শরীর কাঁপছে! উনি আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,

“দুঃস্বপ্ন দেখেছিলে।

“হু!

“আচ্ছা শান্ত হও, এখানে আমি আছি!

আমি উনাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগলাম। অতঃপর আর কিছু মনে নেই আমার!

সকালে ঘুম ভাঙার পর নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি। উনাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেলাম না। কাল রাতের ঘটনা আমার মনে আছে। উনাকে জড়িয়ে ধরার পর সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হয়তো উনি আমাকে তখন বিছানায় রেখে দিলেন। কিন্তু এখন উনি কোথায়?

আমি উঠে বেলকনির কাছে যেতেই দেখি উনি বাগানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন। আজ অনেক দিন পর উনাকে সিগারেট খেতে দেখলাম।সচরাচর উনাকে সিগারেট খেতে দেখি না। তাহলে আজ কেন খাচ্ছেন।

আমি ফ্রেস হয়ে বাগানের দিকে গেলাম। আমাকে দেখে‌ বলেন,

“তুমি! ঘুয ভেঙেছে তোমার!

“হুম!

উনি সিগারেট ততক্ষণে সিগারেট খাওয়া শেষ করে তা ফেলে দিলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,

“আপনি এখনো এইসব খান।

“কেন? তুমি কি ভেবেছিলে?

“ভেবেছিলাম আপনি হয়তো এসব খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু না আমি ভুল আপনি এখনো এসব খান। আর আমার থেকে লুকিয়ে খান।

“না লুকিয়ে কেন খাবো, কথা হলো যখন খাই তখন তুমি থাকো না। আর বাড়িতে আমি খুব কম খাই এসব। বাবা দেখলে আমি শেষ।

“তাহলে এসব খান কেন?

“এভাবেই!

আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি, হঠাৎ উনার চোখের দিকে চোখ পড়ল। উনার চোখে এখন খুব ঘুম। আচ্ছা উনি কি সারারাত ঘুমায় নি। তা করবে কেন? আমার জন্য! একথা জিজ্ঞেস করবো বলে ঠিক করলেও জিজ্ঞেস আর করা হলো না। এর আগেই উনি ফ্রেস হবো বলে রুমে চলে। আমি রয়ে গেলাম বাগানে।

বাগান টা ঘুরে দেখতে লাগলাম, শীত চলে গেছে বসন্ত এসে গেছে। আবারো জন্মাবে নতুন কিছু পাতা, নতুন কিছু উদ্ভিদ। প্রকৃতি উন্মেচিত হবে আবার নতুন রঙে। বসন্ত তার রঙে রাঙিয়ে তুলবে সবকিছু! কতোই না মনোমুগ্ধকর হবে সেই দৃশ্য। হায় কি ভাগ্য আমার নিজের চোখে দেখতে পারবো সেই সৌন্দর্য আমি!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here