যেদিন_আমি_থাকবো_না #লেখিকা_ইভা_আক্তার এবং #লেখিকা_তাসফিয়া_জামান #পর্ব_১

0
679

#যেদিন_আমি_থাকবো_না
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
এবং
#লেখিকা_তাসফিয়া_জামান
#পর্ব_১

——————-
ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আইরিন অনবরত কাউকে কল করছে। প্রায় চার-পাঁচ বার কল করার পরও যখন কেউ ফোন রিসিভ করে না তখন আইরিন বলে,
– আর কিছুক্ষণ পরই তো ক্লাস শুরু হয়ে যাবে অথচ এই মেয়ের কোনো খবরই নেই।
কথাগুলো বলেই আইরিন রওনা দেয় ক্লাসের উদ্দেশ্যে।

——————-
ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে হাতা গোটানো কালো শার্ট এবং কালো প্যান্ট পড়ে রেডি হয়ে নেয় নীল। পুরো নাম নীল সওদাগর। জিহাদ সওদাগর এবং আফিফা সওদাগরের একমাত্র বড় ছেলে নীল সওদাগর যার একমাত্র ছোটো বোন নিতু সওদাগর। নীল অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ে।
আর নিতু ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে।

——————-
বাথরুম থেকে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বের হলো তানিশা। পুরো নাম তানিশা চৌধুরী। রাফসান চৌধুরী এবং রোজা চৌধুরীর বড় মেয়ে তানিশা চৌধুরী। তানিশার বড় ভাই তুহিন চৌধুরী এবং তার ছোট বোন তিশা চৌধুরী। তানিশার টানা টানা চোখ এবং তার ফর্সা গায়ের রং এর জন্য তাকে হুর পরীর মতো লাগে।
তানিশা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য সিড়ি দিয়ে নামতেই দেখতে পায় চৌধুরী পরিবারের সকলে নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছে। তানিশা নাস্তা না করে সকলকে এড়িয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার মা রোজা চৌধুরী বললেন,
-টেবিলে আমি নাস্তা বেড়েছি যার খাওয়ার হলে খেয়ে নেও।
– ভার্সিটির জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
তানিশা কথাটা বলেই হনহন করে বেরিয়ে পড়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। সে জানে তার খাওয়া বা না খাওয়া নিয়ে তার মা বা পরিবারের কারোই কোনো যায় আসে না।
ভার্সিটি পৌছে তানিশা তার গাড়ি পার্ক করে নামতেই দেখতে পায় সামনে একটা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে নীল। কালো শার্টে নীলকে দেখতে অত্যান্ত সুদর্শন লাগছিলো। আর তানিশা পড়ে ছিলো কালো রঙের লেগিংস আর গোলাপি রঙের টপস। তানিশাকেও কোনো অংশে কম লাগছিলো না। তানিশা নীলের সামনে গিয়ে বলে,
– কারো জন্য অপেক্ষা করছো হ্যান্ডসাম?
বলেই তানিশা তার ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসে। তানিশার কথায় নীল ওর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
– তোমার জন্য অপেক্ষা করছি সুন্দরী।
কথাটা বলেই নীল তানিশার কোমড় ধরে তাকে কাছি নিয়ে আসে।
– ওহ আচ্ছা? তাহলে চলো আমরা ডেটে যাই (তানিশা)
– রাজি আছো?তাহলে চলো এখনই যাই।
নীলের কথায় তানিশা ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে নিলে নীল চিৎকার করে বলে,
– এই যে আমার বউ। আমি কিন্তু তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবো।
তানিশা অবাক চোখে পিছে ঘুরে নীলের দিকে তাকায়। তানিশা ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সকলে ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
– কি বললি? (তানিশা)
– কি বললাম? নিজের বউকে বউ বলে ডাকাটা কি কোনো অপরাধ?
তানিশা নিজেকে সামলে রেগেমেগে বলে,
– সেট আপ।
তানিশা নীলকে ধমক দিয়ে হনহন করে ক্লাসে চলে যায়। আর এদিকে নীল মুচকি মুচকি হেসে ক্লাসে রওনা দেয়।

————————–
ক্লাসের মধ্যে তানিশার সম্পূর্ণ নজর স্যারের দিকে থাকলেও নীলের নজর ছিলো তার পাশে বসা তানিশার দিকে। তানিশা সেটা বুঝতে পেরে স্যারের দিকে তাকিয়েই তার এক হাত দিয়ে নীলের মুখটা তার দিক তেকে সরিয়ে সামনের দিকে নেয়।
– আমার দিকে না তাকিয়ে স্যারের দিকে মনোযোগ দে।
– পাশে বসা এক সুন্দরীকে না দেখে সামনে থাকা একটা বুড়োকে কেনো দেখতে যাবো আমি?
তানিশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
– সুন্দরী? তাও আবার আমি?
– কোনো সন্দেহ?
স্যারের নজরে তানিশা এবং নীল পড়তেই স্যার বলে,
– তানিশা, নীল স্ট্যান্ড আপ।
তানিশা স্যারের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে দাঁড়ালেও নীল ডোন্ট কেয়ার ভাব করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়ে।
– কি সমস্যা তোমাদের? সামনে মনোযোগ না দিয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছো কেনো?
নীল নাটক করে স্যারের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
– কিহ? আমি তো কথা বলি নি স্যার। তানিশা আমার সাথে কথা বলছিলো আর আমি আপনাকে ফলোও করছিলাম।
নীলের কথায় তানিশা অবাক চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে। স্যার তানিশার দিকে তাকিয়ে বলে,
– তোমার কাছ থেকে এটা আশা করি নি তানিশা। যাও ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও।
তানিশা চুপচাপ ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায় আর নীল অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। নীল ভাবে নি যে স্যার ওকে বিনা ওয়ার্নিং দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেবে। নীল স্যারকে বলে,
-স্যার আমিও তানিশার সাথে যাই? বলা তে যায় না যদি ও পালিয়ে টালিয়ে যায়।
স্যার কিছু বলার আগেই নীলও ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ে।
নীল ক্লাস থেকে বেরিয়ে দেখে তানিশা ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
– কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? কি করেছি আমি?
– কি করেছিস তুই? তোর দোষটা আমার উপর চাপিয়ে দিলি কেনো হ্যা? তুই আমার দিকে তাকিয়ে ছিলি। তুই আমার সাথে কথা বলেছিলি। আর স্যারের কাছে অপবাদ দিলি আমার?
– প্রমান আছে আমি এসব করেছি?
– তোকে তো আমি,,,,,,,,,,
তানিশা কিছু বলার আগেই ওদের সামনে এশা এবং ওর কিছু বান্ধবীরা এসে পড়ে। তানিশা তো এশাকে দু চোখে সহ্য করতে পারে না। আর তার কারণ মূলত নীল। এশা নীলের কাছে এসে বলে,
– হেই নীল।
নীল যদিও তানিশা ব্যতীত অন্য কোনো মেয়ের কাছে ঘেষে না তবুও তানিশাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য নীল মাঝেমধ্যে মেয়েদের সাথে একটু ফ্লার্ট করে। নীল তানিশার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে এশার সাথে ঘেষে এশাকে বলে,
– হেই এশা।
নীলের এমন কান্ডে এশা মহাখুশি হলেও তানিশা বাঁকা চোখে নীলের দিকে তাকাচ্ছিলো। এশা নীলের বুকে হাত দিয়ে বলে,
– আচ্ছা নীল তুমি কি আজ রাতে ফ্রী আছো? ফ্রী থাকলে চলো না আমরা ডিনারে যাই।
নীল তানিশার দিকে একবার তাকিয়ে এশাকে বলো,
– অবশ্যই কেনো না।
– রিয়েলি।
নীলের কথায় এশা খুশি হলেও তানিশার ধৈর্যের বাদ ভেঙে যাচ্ছিল।
তানিশা এশার কথা নকল করে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে,
– রিয়েলি।
তানিশার কথায় এশা এবং নীল দুজনেই ওর দিকে তাকালো।
– কি বললে?(এশা)
– কি বললাম? রিয়েলি (তানিশা)
তানিশার আবারো নকল করা কথায় নীল হাসলেও এশা রেগেমেগে বলে,
– তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে নকল করার?
– কোথায় নকল করলাম?
তানিশার কথায় এশা রেগেমেগে তানিশার গালে চর মারতে নিলেই তানিশা এশার হাত মুচড়ে দেয় যার ফলে এশা ব্যথায় কাতরাতে থাকে।
– তোর সাহস তো কম না তুই আমাকে চর মারার চেষ্টা করিস।
কথাটা বলে তানিশা এশার হাত আরও জোড়ে মুচরে ধরে। আর এদিকে নীল মুচকি মুচকি হেসে মনে মনে বলে,
– ফ্রীতে ড্রামা দেখার মজাই আলাদা। পপকর্ন থাকলে ড্রামাটা আরও জমে যেত।
আশেপাশে থাকা স্টুডেন্টরা তানিশার কাজে হাত তালি বাজানো শুরু করলো। ওদের কান্ডে তানিশা এশার হাত ছেড়ে দিয়ে ভাব দেখিয়ে বলতে লাগলো,
– থ্যান্ক ইউ, থ্যান্ক ইউ।
এরই মাঝে নীল তানিশার হাত ধরে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে নিয়ে যায়।

———————
ক্যান্টিনে বসে নীল, তানিশা এবং বাকি বন্ধুরা বসে রয়েছে। নীল এশার সাথে করা তানিশার সেই কথাগুলো বলছিলো আর বাকি সবাই হাসছিলো। আর এদিকে তানিশা মুড অফ করে বসে রয়েছিলো। সকলের হাসির মাঝে তানিশা এই গম্ভীর মুখ দেখে আইরিন তানিশাকে বলে,
– কি হয়েছে তোর? এরকম গম্ভীর হয়ে বসে আছিস কেনো?
– তেমন কিছু না। এমনি
– আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। বল কি হয়েছে।
ওদের কথার মাঝে নীল বলে উঠে,
– আহহহহ কি হয়েছে আমার বউটার?
নীলের কথায় একে একে সকলে তাল মেলাতে শুরু করে। তানিশার বেস্ট ফ্রেন্ড আইরিম বলে ওঠে,
– আসলেই তো কি হয়েছে আমাদের ভাবির?
– মার খেতে চাস আমার হাতে? (তানিশা)
তানিশার কথায় আইরিন দাঁড়িয়ে ক্যারাটে স্টাইলে বলতে শুরু করে,
– তুই বক্সিং জানিস তাতে কি হয়েছে? আমি ক্যারাটে জানি? দেখাবো নাকি?
– এই ক্যারাটে দিয়ে তুই আমাকে মারবি?
– কেনো কি ভাবিস আমাকে?
তানিশা ব্যাগ নিয়ে চলে যেতে যেতে বলে,
– ইডিয়ট

———————————
তানিশার বাড়িতে গিয়ে প্রচন্ড খিদে লাগতে শুরু করে। রান্নাঘরে গিয়ে তানিশা দেখতে পায় তার মা দাঁড়িয়ে কাজ করছে। তানিশা ওর মাকে বলে,
– মা খুব খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দাও না।
রোজা চৌধুরী তানিশার দিকে না তাকিয়ে বলে,
– ফ্রীজে খাবার রাখা আছে গরম করে খেয়ে নাও।
তানিশা কিছু না বলে ফ্রীজ খুলতে যাবে তখনই তিশা এসে ওর মাকে বলে,
– মা কিছু খেতে দাও।
– একটু অপেক্ষা করো তিশা এক্ষনি তোমার জন্য কিছু বানিয়ে আনছি।
রোজা চৌধুরীর কথায় তিশা টেবিলে খেতে বসলেও তানিশা ফ্রীজ বন্ধ করে না খেয়েই রুমে চলে যায়।
রাতে তানিশা যখন খানিকটা দেড়ি করে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য নিচে যায় তখন সিড়িতে দাঁড়িয়ে ও শুনতে পায় তানিশার বাবা রাফসান চৌধুরী রোজা চৌধুরীকে বলছেন,
– তোমার মেয়েকে খেতে আসবে না নাকি?
– সন্ধ্যায় আমি ওকে খাবার গরম করে দেই নি বলে বোধহয় রাগ দেখাচ্ছে।
– এই বাড়ি কি রাগ দেখানোর জায়গা নাকি? তোমার বড় মেয়েকে বলে দিও এই বাড়িতে অভিমান বা রাগ দেখানো চলবে না। সেটা মানতে পারলে থাকবে না হয় নয়।
রাফসান চৌধুরির কথায় তানিশা সেখানেই টায় দাঁড়িয়ে রয়। তানিশা বুঝতে পারে না তার বাবা এবং মা তাকে কেনো এতো ঘৃণা করে। তানিশা মনের দুঃখে তার রুমে চলে আসে। রুমে এসে তানিশা তার আয়নার সমানে দাঁড়াতেই তার বাম চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি বের হয়। সে নিজেকে বলে,
– কাম অন তানিশা। যেটা তোর ভাগ্যে লেখা ছিলো সেটাই হচ্ছে। এখানে দুঃখ পাবার কিছু নেই। দেখবি একদিন তুই এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবি।
কথাগুলো নিজেকে বলেই একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বিছানায় ঘুমোতে চলে যায়।

চলবে,,,,,,,,🖤

[ #জল্লাদ_স্যার এবং #যেদিন_আমি_থাকবো_না দুটো গল্প একসাথেই চলবে । এখানে আপনারা হয়তো বা দুটো গল্প একদিন পর পর পাবেন। আর এখানে দ্বিতীয় যে লেখিকা আছেন তিমি আর আমি একসাথে মিলেই এই গল্পটা চালাচ্ছি। আশা করি সকলের ভালো লাগবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here