সূচনা_পর্ব #উজান_যমুনা লেখনীতে ঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
553

“আপনাকে একবার ছুঁয়ে দিবো উপমা? ভালোবাসার অধিকার নিয়ে আপনার হাতটি একটিবার ছুঁইয়ে দেই। প্লিজ উপমা!”

অফিস শেষ করে রাস্তার পাশ ধরে হাঁটছিল যমুনা। তখনই নিজের থেকে বয়সে জুনিয়র একটি ছেলের মুখে আবেগ মাখা এহেন কথা শুনেও অবাক হলো না সে, যেনো এমনটাই হওয়ার ছিলো। তবে শ্যামময়ী নারীটি খানিকক্ষণ নিরব থাকলো।ছোট ছোট চোখ করে ছেলেটাকে একবার পরখ করে নিলো আলগোছে। অতঃপর গুরুগম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“বয়স কতো তোমার?”

কাঙ্খিত নারীটি তার সাথে কথা বলছে, যা শুনে সামনে থাকা সুদর্শ যুবকটি ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি হাসি দেখা গেলো। যুবকটি কোনো ভণিতা ছাড়াই চ*ট করে জবাব দিলো,

” পঁচিশ পেরিয়েছে। ”

“আমার বয়স জানো?”

“জ্বি। সাতাশ বছর, একমাস, দশদিন চলছে।”

“তুমি জানো কি? আমি ডিভোর্সী। একবছরে সংসার ছিলো আ….”

যমুনা’কে থামিয়ে দিলো । আগের ন্যায় হেসেই পুরুষটি বলে উঠলো,

“আমি সব জেনেই আপনা’কে ভালোবাসি উপমা!”

“জেনে-বুঝে বি*ষ পান করতে চাইছো ছেলে?”

“বি*ষ পানের মধ্যে যদি মানসিক শান্তি খুঁজে পাই তবে এই বি*ষ পান করতে ক্ষতি কি?”

কিঞ্চিৎ হাসলো মেয়েটা। অতঃপর শুধালো,

“বি*ষে*র প্রতিক্রিয়া সহ্য করার ক্ষমতা সবার থাকে না ছেলে।এখন আবেগ কাজ করছে তোমার। যখন মনের দরজায় বিবেক এসে কড়া নাড়বে তখন এই ভালোবাসা অবলীলায় হারিয়ে যাবে।”

“আবেগের বয়স আমার পেড়িয়েছে। এই ভালোবাসা হারাবার নয় উপমা বরং দিনদিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনাকে আমি ভালোবাসি, আপনি না বাসলেও আমি বাসি।”

ছেলেটা অন্য কেউ নয়, তার বড় মামুর একমাত্র ছেলে “আরমান আহমেদ উজান”। উজান তার কাজিন হলেও কোনো এক কারণে তাদের পারিবারিক সম্পর্কটা একেবারেই ঠুনকো। মাঝরাস্তা এমন বি’ব্র’ত পরিস্থিতিতে পড়ে মুখ কুঁচকে ফেললো মেয়েটা। হাতে থাকা ঘড়িতে একবার সময় দেখে বিরক্তিকর সুর টেনে বললেন,

“বেশ তবে বাসতেই থাকো! কিন্তু তুমি বোধহয় আমার নাম ভুলে গেছো উজান। আমার নাম যমুনা, উপমা নয়।”

“আপনি আমার ভালোবাসার উপমা! আমি ভালোবেসে না হয় আপনাকে উপমা ডাকলাম। এতে ক্ষতি কি বলুন?”

স্বল্পভাষী মেয়েটা আর কথা খুঁজে পেলো না। তপ্ত শ্বাস ছেড়ে শাড়ীর আঁচলটা আলগোছে শরীরে জড়িয়ে নিয়ে লম্বা লম্বা কদমে সামনে পা-বাড়ালো। তার পিছনে পিছনে উজানও হাঁটছে। এরিমধ্যে বার কয়েক হাঁচি দিয়েছে উজান। ঠান্ডা লেগেছে বোধহয়! পরক্ষণে যমুনাকে একটু খানি রাগাতে নাক টানতে টানতে সুর টেনে বললো,

“যমুনারে যমুনা! আপনি এই উজানেরই যমুনা! আপনার ওই শাড়ীর আঁচলে সর্দী মোছার অধিকার চাই, প্রিয় রাগিণী!”

যমুনার চলন্ত পায়ে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো। পরক্ষণেই কণ্ঠে গম্ভীরতা টেনে বললো,

“নিজের লিমিট ক্রোশ করো না উজান। আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করো না কিন্তু! তুমি ভুলে যেওনা আমাদের মধ্যে থাকা সুন্দর সম্পর্কটি। নেক্সট টাইম আমার পিছনে পিছনে যেন তোমায় না দেখি। এখান থেকে চলে যাও তুমি।”

“উঁহু! এ জন্মে আমি আর আপনার পিছু ছাড়ছি না উপমা।”

“তুমি এবার বেশি বেশিই বকছো উজান।”

“বেশি হলে তাই! একবার আপনি আমায় খুব পু’ড়ি’য়ে’ছে’ন উপমা। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করার সুযোগ দেননি তার আগেই অন্যকারো হয়ে গিয়েছেন। এরপর রব আপনাকে আমার জন্য আবারোও ফিরিয়ে দিয়েছে। এই সুযোগ আর হাত ছাড়া করছি না আমি। আপনি আজন্মকাল এই উজানের যমুনা হয়ে থাকবেন, সেই ব্যবস্হাই করবো। বিয়ের জন্য প্রস্তুত হন উপমা।”

এরিমধ্যে দাঁড়িয়ে গেলো যমুনা। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো উজানের মুখোমুখি। আকস্মিক উজানের গালে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিয়ে ক্রোধিত কণ্ঠে শুধালো,

“উজান! মুখ সামলে কথা বলো। খুব বিয়ে করার শখ তোমার, তাই না? একদম চা’প’কে তোমার দাঁত ফেলে দিবো, বেয়াদব ছেলে!”

উজান হেয়ালি করে হাসলো কিঞ্চিৎ। যমুনার ডান হাতটা নিজের মুঠোয় আগলে নিয়ে মোলায়েম কণ্ঠে বললো,

“রোজ এই হাতের চ’ড় খাওয়ার নিয়ম হোক, তবুও আপনি মানুষ খান আমার হয়ে যান উপমা! ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে!”

যমুনা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললো,

“তুমি কিন্তু রিতীমত ব’খা’টে’প’না আচরণ করছো উজান। রাস্তাঘাটে মেয়েদের এভাবে ডিসটার্ব না করে বাসায় গিয়ে মামু’কে বলো, তোমার জন্য বউ এনে দিবে।”

উজান এক হাতে নিজের লম্বা চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে চোখ টিপে বললো,

“আপনাকে পাওয়ার জন্য চরম বখাটে হবো আমি, অলিতে-গলিতে আপনার নাম গাইবো। আমার বউ তো আপনাকেই করবো। আপনি চাইলে আজই আব্বুকে পাঠাবো উপমা! কি পাঠাবো?”

যমুনা একরাশ রাগ নিয়ে ছেলেটার হাতটা ঝা*ড়া মে’রে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো অবলীলায়। পরক্ষণে ধু’প-ধা’প পা ফেলে সামনে এগালো। এই ছেলের সাথে কথা বাড়ানোর মানেই হয় না। বেয়াদব ছেলে! বড় বোনের সাথে অসভ্যতা করছে আজকাল! রাস্তার লোকজন আ’ড় চোখে দেখছে তাদের। কিন্তু, উজান চৌধুরীকে কারো কিছু বলার সাহস নেই। এমপি জুনায়েদ চৌধুরী’র একমাত্র ছেলে সে। অনার্স কমপ্লিট করতে আর কিছু দিন বাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বাবা’র সাথে রাজনীতি’তে জড়িয়েছে বেশ। শহরে তার আলাদা নাম-পরিচয়ও রয়েছে। ছেলেটা নিসন্দেহে আ’ক’র্ষ’ণী’য় পুরুষ! ভার্সিটির শত মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ উজান চৌধুরী। লোকের ধারণা, বাবা’কে ছাড়িয়ে ভবিষ্যৎ মন্ত্রী হবে উজান চৌধুরী। লোকে কে কি ভাবলো, উজান চৌধুরী কাউকে পরোয়া করে চলে না।

উজান চৌধুরী প্রেয়সীর রাগী মুখখানা দেখে আলতো হাসলো। পরক্ষণেই পিছন থেকে হাঁ’ক ছেড়ে বললো,

“উপমা! হয়তো আপনি আমার নয়তো পৃথিবীর কারো নয়। আমার হৃদয়ের শহরের আজকে আপনাকে আমান্ত্রণ জানিয়ে গেলাম রা’গি’ণী কন্যা! বড্ড, ছাড় দিয়েছি আপনাকে! এবার আমার আমান্ত্রণ গ্রহন করবেন নয়তো জানে মে*রে দিবো আপনাকে।”

যমুনা শুনলো সে কথা। ছেলেটা কি তাকে হু’ম’কি দিয়ে গেলো? সেসব পাওা না দিয়ে নিজেকে ধাতস্ত করে বাসার দিকে এগোলো যমুনা।
দূর থেকে উজান তাকে ফলো করছে। মেয়েটা বাসায় পৌঁছে গেলে তবেই নিজের কাজে যাবে উজান। যমুনা চাকরি পাওয়ার পর থেকেই এমনটাই করে আসছে সে। যাতে কোনো ছেলে তার উপমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে না পারে।
.
.

এমপি জুনায়েদ চৌধুরী সোফায় বসে টিভি দেখছেন। এক কাপ চা হাতে তারই পাশে বসলেন স্ত্রী, লায়লা চৌধুরী। জুনায়েদ চৌধুরী চায়ে একবার চুমুক দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“তোমার গুণধর ছেলে কোথায়?”

লায়লা চৌধুরী মুখ বাঁকিয়ে বললো, ” ছেলে কি আমার একার নাকি? আপনার ছেলে কোথায় যায়, আমাকে কি বলে কয়ে যায় না-কি সে।”

দু’জন ছেলেকে নিয়ে একে অপরের সাথে তর্ক করছে। এরিমধ্যে বাসায় কলিং বেল বেজে উঠলো। লায়লা চৌধুরী উঠে দরজা খুলে দিলো। উজান এসেছে। এরিমধ্যে লায়লা চৌধুরী ছেলের কান ধরে টান দিয়ে কণ্ঠে রাগ মিশিয়ে শুধালো,

“আজকে সারাটা দিন কোথায় ছিলি তুই? দুপুরে খেতেও বাসায় আসলি না আজ। ফোনটাও বন্ধ। সারাদিন পর এখন বাসায় আসার সময় হলো তোর?”

“আহ মা! লাগছে তো ছাড়ো না।”

“লাগুক। বল কই ছিলি সারাদিন?”

উজান নিজের কান ছাড়িয়ে নিয়ে মা’কে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে হতাশ কণ্ঠে বললো,

“তোমার হবু বউমার সাথে ছিলাম মা। তার পিছনে পিছনে হাঁটতে হাঁটতেই সময় চলে যায় আমার। তবুও সে পাওা দিচ্ছে না।”

“কিহ্! তা মেয়েটা কে রে উজান? কার এতো বড় সাহস, যে আমার এতো সুন্দর ছেলেটাকেও ইগনোর করছে। নিশ্চয়ই মেয়েটার দ*ম আছে। এই মেয়েই পারবে তোকে সোজা করতে। আমাকে আজই তার সাথে পরিচয় করিয়ে দে।”
উচ্ছাসিত কণ্ঠে বললেন মা। উজান আলতো হেসে বললো,

“দিবো মা। সময় হলে ঠিকই দিবো। এখন বড্ড ক্ষুধা পেয়েছে আমার, দ্রুত খাবার দেও আমাকে।”

লায়লা চৌধুরী আর কথা বাড়ালো না। ছেলেকে নিয়ে ভিতরে এসে বললো,

“যা ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।”

উজান নিজের রুমে চলে গেলো। কিয়াৎ ক্ষণ পরে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মা। খাওয়ার মাঝে উজান হঠাৎ করেই বললো,

” মা। আমি তোমার কাছে প্রথম ও শেষবারের মতো একটি আবদার করবো। তুমি কি আমায় ফিরিয়ে দিবে মা?”

লায়লা চৌধুরী ছেলের কথা শুনে, খানিকটা অবাক হলো। কখনো এভাবে ছেলে তার আবদারের কথা বলেনি। মায়ের কাছে আজ কি এমন চাইবে সে? ছেলের সব রকমের আবদার পূরণ করবে মা। ছেলেটা তার বড়োই আদরের। উনি কিচ্ছুটি না ভেবেই গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে মৃদু কণ্ঠে বললো,

“ও মা! ফিরিয়ে দিবো কেন? তুই আমার একমাত্র ছেলে, বল কি চাই তোর?”

উজান কিছু একটা ভেবে খানিকক্ষণ পরে বললো,

“তোমার কাছে পাওনা রইলো আজ। একদিন ঠিক চেয়ে নিবো মা।”

চলবে….

#সূচনা_পর্ব

#উজান_যমুনা

লেখনীতে ঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

(কিছু সমস্যার জন্য “অপ্রত্যাশিত প্রণয়” গল্পটা আর লিখছি না আমি। এডমিন প্যানেলের অনুমতি নিয়েই গ্রুপ থেকে “সূচনা পর্ব” ডিলিট করা হয়েছে।
নতুন ভাবে আবারো শুরু করলাম। সবাই নতুন গল্পে রেসপন্স করবেন। এটা চলবে ইনশাআল্লাহ!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here