#উজান_যমুনা
#পর্বঃ৭
লেখনীতে ঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
ভার্সিটির মাঠে বন্ধুদের সাথে বাইকের উপর গা এলিয়ে বসে আছে উজান চৌধুরী। তারই চারপাশে ঘিরে ঘাসের উপর বসে আছে বন্ধুরা। মাসব্যাপী দীর্ঘ সময় নিয়ে ফাইনালি এক্সাম শেষ হয়েছে তাদের। সেই খুশিতে বন্ধুরা সবাই মিলে ভার্সিটির ক্যাম্পাসের এক কর্ণারে আজ পার্টির আয়োজন করছে। এরিমধ্যে কোথা থেকে এক মেয়ে হুড়মুড়িয়ে এসে উজান চৌধুরী’র সামনে হাঁটু মুড়ে এক গুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বললো,
“উজান চৌধুরী আই লাভ ইউ! আই রিয়েলি লাভ ইউ! আপনাকে আমার খুব পছন্দ! আমি সত্যিই আস্ত আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। অনেক দিনের তিলে তিলে গড়া অনূভুতি আমার, আর চেপে রাখা সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। তাই বলে দিলাম, আপনাকে আমার প্রয়োজন। উইল ইউ মেরি মি?”
উজান চৌধুরী রিলাক্স মুডে ফোন টিপছিলো। হঠাৎ মেয়েলী কণ্ঠে এহেন কথা শুনে চোখ সরায় ফোন থেকে। তার পাশে থাকা বন্ধু মহলও হকচকিয়ে গেলো। উজান চৌধুরী সরে গিয়ে টানটান সোজা হয়ে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ালো, তার চোখ-মুখে ছড়িয়ে পড়ছে গম্ভীরতা ভাবদ। মেয়েটা এখনো উওরের আসায় সেভাবেই বসা। আশেপাশে মানুষ তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। তা দেখে উজান চৌধুরী কিছু বলার আগেই পাশ থেকে রাফসান বললো,
“এই মেয়ে উঠে দাঁড়াও তুমি। পাবলিক প্লেসে এসব কোন ধরণের অসভ্যতা?”
সামনে থাকা মেয়েটার নাম মালিহা। ফাস্ট ইয়ারে’র ছাএী। বড়লোক বাবা’র একমাত্র সুন্দরী মেয়ে। কলেজের অনেক ছেলের ক্রাশ গার্ল। অনেকের কাঙ্ক্ষিত নারী আজ নিজ থেকে প্রপোজ করছে উজান চৌধুরী’কে। আশেপাশের ছেলে-মেয়েরা শেষটুকু দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। অনেক মেয়েরা উজান চৌধুরী’র জন্য ঈর্ষায় ঝ’ল’সে যাচ্ছে।
রাফসানের কথা শুনে উঠে দাঁড়ালো মালিহা। চারপাশে একবার তাকিয়ে মৃদু হেসে মেয়েটা বললো,
“এখানের অসভ্যতার কি দেখলেন আপনি ভাইয়া? আমি তো কোনো খারাপ কাজ করিনি, শুধু নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করেছি মাএ। আপনি পারলে আমাকে আপনার ভাবি বানাতে সাহায্য করুণ। ভরপুর ট্রিট দিয়ে দিবো কিন্তু…!”
মালিহা নিজের কথা শেষ করে পুনরায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উজান চৌধুরী’র স্নিগ্ধ মুখপানে। মেয়েটার কথা শুনে মুখ টিপে হাসছে অনেকেই। এরিমধ্যে উজান চৌধুরী সবাই’কে ধমক দিয়ে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে গমগমে আওয়াজে বললো,
“স্যরি আপু! আমি এক নারীতে আসক্ত পুরুষ। আমার একজন শ্যামময়ী নারী রয়েছে, সে আমার ভীষণ শখের কেউ! উজান চৌধুরী তার শখের নারীকে অসম্ভব ভালোবাসে। সে ব্যতিতো অন্য সকল নারী আমার জন্য নিষিদ্ধ, উজান চৌধুরী’র অন্য নারীর প্রতি বিন্দুমাত্র ফিলিংস নেই! একজন ছাড়া আমি বাকি সবাই’কে মা-বোনের নজরে দেখি। নেক্সট টাইম পাবলিক প্লেসে আমার রেপুটেশন নষ্ট করতে আসবেন না। মাইন্ড ইট! আপনি এখন যেতে পারেন।”
কথা শেষ করেই মেয়েটার থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিলো উজান চৌধুরী। কষ্টে অপমানে মালিহার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে লোনাজল। তাকে দেখে সবাই হাসাহাসি করছে। কত ছেলে তারজন্য পাগল! সেখানে সে আজ নিজ থেকে একজনকে প্রপোজ করছে, অথচ ছেলেটা তাকে এতগুলো মানুষের সামনে অপমান করে রিজেক্ট করে দিলো। অপমানে মাথা নিচু হয়ে গেলো তার। মালিহা আর একমুহূর্তও দাঁড়াতে পারলো না এখানে, দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পড়লো।
পুনরায় উজান চৌধুরী’কে নিয়ে মেয়েদের মধ্যে আবারো কানাঘুঁষা শুরু হলো, ভার্সিটির ক্রাশ বয়ের শখের নারী রয়েছে এটা আজই প্রথম জানলো তারা। নিশ্চয়ই মেয়েটা সুন্দরী! অনেক মেয়ের সেই কাঙ্ক্ষিত নারীটিকে দেখার শখ জেগেছে।
উজান চৌধুরী’র এসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। সে গা-ছাড়া ভাব নিয়ে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে লম্বা টান দিলো। যা দেখে উজানের ক্লাসমেট হুর চাপা কণ্ঠে বললো,
“ব্যক্তিত্ববান পুরুষ তো তারা, যারা একটা মেয়ে’র জন্য শত মেয়ে’কে ইনগোর করে।
তোর পার্সোনালিটি দেখে আমি বারবার মুগ্ধ হই উজান। কোনো ছেলে একটা মেয়ে’কে একতরফা ভাবে এতোটা ভালোবাসতে পারে আমার জানা ছিলো না। যমুনা আপু খুব ভাগ্যবতী মেয়ে’রে!যাকে এক পুরুষ নিঃস্বার্থ ভাবে উ’ম্মা’দে’র মতো ভালোবাসে। আই রেসপেক্ট!”
.
.
ক্লান্ত একটি দুপুর। রান্না ঘরে ছেলের পছন্দের খাবার গুলো একে একে নিজ হাতে রান্না করছে লায়লা চৌধুরী।
কতদিন হলো পরিক্ষার জন্য ঠিকঠাক খায় না ছেলেটা। মুখটা শুকিয়ে একটু খানি হয়ে গিয়েছে তার। আজ মা নিজ হাতে খাইয়ে দিবে ছেলেকে। ব্যস্ত হাতে সবকিছু একাই সামলাচ্ছে লায়লা চৌধুরী। এরিমধ্যে বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। লায়লা চৌধুরী সাহায্যকারিনী রোকসানা’কে ডেকে বললো,
“দরজাটা খুলে দিয়ে আয়তো রুকসু। তোর ভাইজান আসছে মনেহয়।”
“আইচ্ছা খালাম্মা।” বলে রোকসানা চলে গেলো।
দরজা খুলতেই বাইকের চাবি আঙুলের মাথায় ঘুরতে ঘুরতে ভিতরে প্রবেশ করলো উজান চৌধুরী। আশেপাশে মা’কে না দেখে রোকসানা’কে জিজ্ঞেস করলো,
“আম্মু কোথায়’রে?
“খালাম্মা রান্ধা ঘরে।”
“আচ্ছা। আম্মুকে বল আমার জন্য একটা কফি বানাতে।”
রোকসানা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। উজান লম্বা লম্বা পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো।
কিয়াৎ ক্ষণ পরে রুমে প্রবেশ করলো লায়লা চৌধুরী। ছেলে’কে দেখে মৃদু হেসে বললো,
“আব্বা তুই না-কি কফি চাচ্ছিস? এখন কি কফি খাওয়া সময়? ভাত খাবি এখন,আমার রান্না কমপ্লিট। তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি টেবিলে।”
“আম্মু আমি আজ ফ্রেন্ডদের সাথে বাহিরে খেয়ে আসছি। পেটে একদম জায়গা নেই। তুমি চাইলে একটা কফি দিতে পারো এখন।”
লায়লা চৌধুরী মুখ গোমড়া করে ফেললো। ছেলের জন্য কতকিছু রান্না করছে মা। এখন শুনে ছেলে খাবে না, খেয়ে আসছে বাহিরে। কেমনটা লাগে?
মায়ের গোমড়া মুখ দেখে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো উজান। মা’কে পিছন থেকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে আহ্লাদী কণ্ঠে শুধালো,
“আরেহ্! মন খারাপ করো না আম্মু।তোমার ছেলে তো বাড়িতেই থাকছে। তুমি দুপুরে যা যা রান্না করছো সবগুলো রেখে দেও আম্মু, আমি তোমার হাতে পেটভরে রাতে খায়ে নিবো।”
লায়লা চৌধুরী হাসলো। ছেলের কপালে চুমু খেয়ে মাথায় কিয়াৎ ক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে আবারো রান্না ঘরে চলে গেলো ছেলের জন্য কফি বানাতে।
.
.
পরন্ত বিকেল। রিক্সা করে মার্কেটে যাচ্ছে যমুনা।কিছু দরকারী কেনা-কাটার প্রয়োজন, তাই অফিস টাইম শেষ হওয়ার আগেই ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে আজ। অফিসে’র গন্ডি পেরিয়ে রিক্সা কিছু দূর যেতেই চলন্ত রিক্সায় তার পাশে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো কেউ। ভয় পেয়ে হকচকিয়ে গেলো যমুনা! চোখ তুলে পাশে তাকাতেই উজান চৌধুরী’র হাসি-হাসি মুখখানা চোখে পড়লো। বিরক্তি’তে নাক-মুখ কুঁচকে ততক্ষণাৎ মেয়েটা গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“তুমি.. তুমি এখানেও? আমার রিক্সায় উঠেছো কেনো উজান? নামো বলছি। রাস্তা-ঘাটে সিনক্রিয়েট করো না। তোমার এসব অসভ্যতা আমার পছন্দ নয় উজান।”
উজান এমন একটা ভাব করলো যেন এসব শুনতেই পায়নি। জবাব দিলো না উজান চৌধুরী। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রেয়সীর মুখপানে। যা দেখে যমুনা তাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে পুনরায় আবারো বললো,
“কি হলো উজান?”
উজান চৌধুরী তার দিকে তাকিয়েই বললো, দু’দিন ধরে আমাকে ইগনোর করছেন কেনো উপমা? নাম্বারটাও ব্লক করে দিয়েছেন।”
“তো তোমাকে আশকারাও বা দিয়েছিলাম কবে। আমি কাকে ব্লক করবো কাকে করবো না, এসব আমার ব্যক্তিগত ব্যপার উজান।”
উজান দীর্ঘশ্বাস আড়াল রেখে মৃদু হাসলো। পরিক্ষা’র মধ্যে একদিন পরপর তার ফোন রিসিভ করেছে যমুনা, দুই-চার মিনিট কথাও বললেছে। এরমধ্যে একটুও তাকে বিরক্ত করেনি উজান চৌধুরী, মাঝেমধ্যে যমুনার অগোচরে দূর থেকে এক নজর দেখে গিয়েছে। কিন্তু শেষ পরিক্ষা হতেই তাকে ডিরেক্ট সব জায়গা দিয়ে ব্লক করে দিয়েছে মেয়েটা। এরপর থেকে যথেষ্ট ইগনোর করছে তাকে। মেয়েটা এতো নিষ্ঠুর কেনো? প্রিয় মানুষগুলো কি এমনই হয়! দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো উজান চৌধুরী। অসহায় মুখ করে প্রেয়সীর মুখপানে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলো,
“আপনি পাষাণ! পাষাণ! বড্ড পাষাণ উপমা! এইযে আমার হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা পেয়েও এতো অবহেলা করছেন, আপনার কলিজা কাঁপে না?”
যমুনা এক নজর উজানের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। এই ঘোরলাগা চোখের দিকে তাকানোর সাহস হলো না তার। পরমুহূর্তে কণ্ঠে গম্ভীরতা টেনে বললো,
“হ্যাঁ আমি পাষাণ নারী উজান। ভালোবাসা আমাকে পাথরে পরিণত করেছে। সবকিছুতে বিতৃষ্ণা লাগে। এসব আবেগ ভালোবাসা এখন আর আমার ভিতর কাজ করে না।”
“এই পাথর হৃদয়ে আমি ভালোবাসার ফুল ফুটাবোই উপমা। আই প্রমিজ! আপনিও একদিন আমাকে ভালোবাসবেন, বাধ্য হবেন।
উজান চৌধুরী হারতে শিখেনি,আমি এতো সহজে ছাড়ছি না আপনাকে।”
“এই তোমার কোনো কাজ নেই এছাড়া? সারাদিন শুধু গুন্ডামী করো আর আমায় বিরক্ত করে যাচ্ছো। বয়স তো কম হয়নি এসব রেখে নিজের লাইফে ফোকাস করো উজান। নিজের যোগ্যতা দিয়ে কিছু একটা করো।”
“উজান চৌধুরী’র কাজই হচ্ছে তার বাচ্চার আম্মুকে আগলে রাখা। তবে এর পাশাপাশি আপনি বললে এছাড়াও আরো কিছু করা যেতে পারে। আপনি বলছেন?”
“হ্যাঁ আমিই বললাম। দেখি কি করো তুমি।”
“ইয়েস, হয়ে যাবে চিন্তা করবেন না। আপনি বললে উজান চৌধুরী তার জা’ন’টা’ও দিতে পারে।”
“আচ্ছা বুঝলাম। এবার নামো রিক্সা থেকে নয়তো একদম ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো তোমায়।”
“উঁহু, নামছি না। আপনি মার্কেটে যাচ্ছেন আমি আপনার ব্যাগ টানার দায়িত্ব নিবো উপমা। ভয় পাবেন না,আমাকে তার জন্য টাকা-পয়সা দিতে হবে না।”
যমুনা কপাল চাঁড়াল। এই ছেলের সাথে পারবে না সে,তাই আর কথা বাড়ালো না। রাগে দুঃখে থম মে’রে বসে আছে যমুনা। যা দেখে বাঁকা হাসলো উজান চৌধুরী।
.
.
এক সপ্তাহ পর।
অফিসে নিজের নিদিষ্ট আসনে বসে আছে যমুনা। আজকে অফিসের মেয়েরা বেশ এক্সাইটেড। অফিসেও বেশ চাপা হৈহল্লা চলছে। আজ তাদের অফিসে নতুন বস এসেছে। নতুন বস না-কি দেখতে দারুণ!কাজের প্রতিও ভীষণ সিরিয়াস, অফিসের রুলসের বাইরে যাওয়া বারণ।
মেয়েরা নিজেদের কাজের পাশাপাশি একজন আরেকজন বসকে নিয়ে আলোচনা করছে। যমুনা এখন অবধি তাকে দেখেনি। নতুন স্যার এসেছে অফিসে অথচ আজ অফিসে আসতেই তার দেরি হয়ে গিয়েছে। যার জন্য একটুখানি ভয়েই আছে যমুনা। নতুন বস না জানি কেমন! এরিমধ্যে কেয়ারটেকার এসে যমুনা’কে নোটিশ করলো,
“আপনাকে বস তার ক্যাবিনে ডেকেছে ম্যাডাম।”
ভয় বাড়লো যমুনার। তবুও নিজেকে ধাতস্ত করে বসের ক্যাবিনে গিয়ে দরজায় টোকা মে’রে বললো,
“মে আই কামিং স্যার?”
“ইয়েস কামিং।”
গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠ স্বর কেমন পরিচিত মনে হলো যমুনার। অনুমতি পেয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে আসলো যমুনা। সামনের চেয়ারে থাকা বসের মুখে ফাইল ধরা যার ফলে চেহারাটা এখনো দেখা গেলো না। যমুনা আসতেই লোকটা আবারো গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“বসুন মিস নওশিন আরা যমুনা?”
যমুনা সামনে থাকা চেয়ারে বসলো। মিনিট পাঁচেক পাড় হলো, তাকে সামনে বসিয়ে ফাইল দেখছে বস। লোকটাকে তার কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে, মুখটা দেখার জন্য উসখুস করছে যমুনা। একটু সময় নিয়ে বিনয়ী কণ্ঠে শুধালো,
“আপমাকে ডেকে ছিলেন স্যার?”
“আপনার অফিস শুরু নয়টায়। এখন বাজে নয়টা পঁচিশ, এতো দেরী হওয়ার কারণ?”
বলতে বলতে ফাইল রেখে যমুনার দিকে তাকালো বস। বসকে দেখে চমকালো, ভড়কে গেলো মেয়েটা। ফরমালিন ড্রেসআপে উজান চৌধুরী’কে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তার।
কিয়াৎ ক্ষণ সময় নিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে শুধালো,
“উজান…. তুমি তুমি এখানে?”
” আমি এখানে নিজের যোগ্যতায় এসেছি মিস নওশিন আরা যমুনা। “আপনি ভুলে যাবেন না এটা অফিস। এখানে শুধুমাত্র আমি আপনার বস। ডোন্ট কল মি উজান। কল মি স্যার।”
যমুনা নড়েচড়ে বসে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো, ” ইয়েস! স্যরি স্যার।”
উজান চৌধুরী পুনরায় ফাইলে মুখ গুঁজে দিলো। একরাশ ক্রোধ নিয়ে তার সামনে বসে আছে যমুনা। মিনিট দশেক হতে চললো বসে আছে সে, অথচ কিচ্ছুটি বলছে না তার বস আবার যেতেও বলছে না। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে যমুনা। উজানকে তার বস হিসেবে একদমই আশা করেনি যমুনা।
একটা সময় মেয়েটা অধৈর্য হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে মৃদু কণ্ঠে বললো,
“আমি কি এখন যেতে পারি স্যার?”
“উঁহু! আমি কি যেতে বলছি আপনাকে?”
“না মানে কিছু বলছেন না যে, তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
“আচ্ছা যান আমার জন্য একটা কফি করে নিয়ে আসুন। ”
“মানে? আমি কেন কফি করতে যাবো? চা-কফি বানানোর জন্য আলাদা লোক আছে, আপনি কফি খেতে চাইলে তাদের বলুন।”
উজান আয়েশি ভঙ্গিতে নিজের চেয়ারে বসে বরাবরের মতো গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“আমি আপনাকে বলছি না অর্ডার করছি। ভুলে যাবেন না আমি আপনার বস। আপনি আমার আন্ডারে কাজ করছেন। ইভেন আমার কথা শুনতে বাধ্য আপনি।”
রাগে ফুঁসছে যমুনা। উজান যে ইচ্ছে করে এগুলো করছে তা সে ভালো করেই জানে। ছেলেটা এখানেও এসেছে তাকে জ্বালাতে। কোন পাপের দায়ে যে, এই ছেলেটাকে উস্কে দিতে গিয়ে ছিলো। এখন নিজেই ফেঁসে গেছে। বাঁদর ছেলে একটা! আসছে তার বস হতে। যমুনা তবুও বাধ্য। মানতে না পারলেও উজান চৌধুরী এখন থেকে তার বস।
রাগের চোটে ধুপধাপ পা ফেলে উঠে দাঁড়ালো যমুনা। কিছুক্ষণ পর এক কাপ কফি বানিয়ে এনে উজানের সামনে রাখলো। যমুনা আসতেই এক গা’ধা ফাইল ধরিয়ে দিয়ে তার সামনে বসিয়ে দিলো। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে আসছে যমুনার।
উজান চৌধুরী বাঁকা হেসে, ফুউ দিয়ে লম্বা চুমুক দিলো কফিতে।
চলবে……
(রিচেক করিনি ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্প কেমন লাগছে আপনাদের? যারা পড়েন সবাই রেসপন্স করবেন। ভালোবাসা সবাইকে!)