#উজান_যমুনা
#পর্ব:১১ (অন্তিম পর্ব)
#লেখনীতেঃসুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
রাতের শেষ প্রহর। পদ্মা নদীর মাঝখানে পাল-তোলা একটি নৌকা ঢেউয়ের তালে তালে হেলেদুলে আপন গতিতে ছুটেছে। নৌকার মাঝখানে প্রেয়সী’কে বুকে জড়িয়ে বসে আছে এক যুবক।
নদীর জলের কলরবে মুখরিত পরিবেশ। চারপাশ দিয়ে হিমশীতল হাওয়া ছুঁয়ে দিচ্ছে তাদের। প্রেয়সীকে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে তার দিকে এলোমেলো দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো পুরুষটি। মিনিট দুই-এক সময় নিয়ে নিজের ডান হাত দিয়ে তার কপালখানা ছুঁয়ে মৃদু কণ্ঠে শুধালো,
“আর কত ভাবে, কত উপায়, কত সহস্র কবিতায়, বলো কবে আর কতদিন পরে তুমি বুঝবে, এই আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি!
একবার এই চোখে চোখ রেখে দেখো আমার উপমা..!
দেখো আমার অচেতন মন তোমাকে পাওয়ার জন্য কতটা ব্যাকুল।”
এই পুরুষটি আর কেউ নয়, উজান চৌধুরী। তার প্রিয় নারীকে নিয়ে করা আক্ষেপ কাঙ্খিত নারীটি শুনলো না। কেননা,বুকে থাকা নারীটি এখনো সেন্সলেস। তার কোনো হুঁশ নেই। নিরবতার মাঝে কেটে গেলো আরো কিছু সময়।
ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক সচল হতে লাগলো যমুনার। মস্তিস্ক সচল হতেই পিটপিট করে চাইলো মেয়েটা। মাথাটা কেমন জানি ভারি ভারি লাগছে, ততক্ষণাৎ নড়তে গিয়েও পাড়লো না সে। নিজেকে কারো শক্ত বাহুডোরে আবদ্ধ অনুভব করতেই তাড়াক করে চোখ মেলে তাকায় যমুনা। তার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত স্বরে হাসছে উজান চৌধুরী।
এই মুহূর্তে উজান চৌধুরী’কে নিজের কাছাকাছি দেখে বিদুৎতের ন্যায় শকট খেলো মেয়েটা। পরমুহূর্ত নিজের মনের ভ্রম ভেবে আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো একবার।
আবছা আলোয় চারপাশ স্পষ্ট। চারপাশে পানি থৈথৈ করছে, সবকিছু অচেনা অজানা পরিবেশ মনে হলো। চোখ বন্ধ করে পুনরায় সবকিছু বুঝার চেষ্টা করছে যমুনা। এরিমধ্যে উজান চৌধুরী স্বাভাবিক কণ্ঠেই শুধালো,
“আপনি যা দেখছেন সবটাই বাস্তবিক। এটা কোনো স্বপ্ন কিংবা আপনার ভ্রম নয়! এতো উওেজিত হওয়ার দরকার নেই।”
উজানের কণ্ঠ স্বর শুনতে পেয়েই তড়িৎ গতিতে সরতে চাইলো যমুনা। কিন্তু পারলো না। শক্ত হাতের বাঁধনে এখনো তাকে ধরে রেখেছে উজান চৌধুরী। যা দেখে বিচলিত কণ্ঠে যমুনা বলে উঠলো,
“উজান ছাড়ো আমায়। তুমি এখানে কেনো উজান? এ কোথায় নিয়ে আসছো আমাকে?”
“কেনো অন্য কাউকে আশা করছিলেন বুঝি? উঁহু সম্ভব নয়! উজান চৌধুরী বেঁচে থাকতে তার থেকে ইহজন্মে আপনার মুক্তি নেই উপমা।”
বলতে বলতে হাতের বাঁধন আগলা করলো উজান। যমুনা ছাড়া পেয়ে তড়িঘড়ি করে দূরে সরে দাঁড়ালো। পরমুহূর্তে ক্রোধিত কণ্ঠে শুধালো,
“এই তুমি কোথায় নিয়ে আসছো আমাকে উজান? আমি এখানে কি করে আসলাম?”
“পদ্মা নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি। আমি নিয়ে আসছি আপনাকে।”
“আমাকে এখানে নিয়ে আসছো কেনো উজান?”
“দেখুন উপমা, আমি সোজাসাপ্টা কথা পছন্দ করি। আপনাকে আমি ভালোবাসি!
” আপনি আমার নয়তো পৃথিবীর কারো নয়।” আমি এই নীতিবাক্যে বিশ্বাসি ।
আপনি হয় আমাকে বিয়ে করবেন নয়তো পৃথিবীর থেকে বিদায় হবেন। বেঁচে থাকতে আপনাকে আর অন্য কারো পাশে সহ্য করা সম্ভব নয়! আমি আমার শখের নারী’কে বিলিয়ে দিয়ে এতো মহান হতে চাই না। স্যরি আমি এতোটাও মহান পুরুষ নয়!
এবার আপনি ডিসিশন নিন, হয় আপনি আমার হয়ে আমার সাথে বাঁচবেন নয়তো ম’রে যাবেন।
“প্লিজ তোমার পাগলামো বন্ধ করো। আমাকে বাড়ি দিয়ে এসো উজান। আব্বু-আম্মু চিন্তা করছে। তাছাড়া, তুমি তো শুনলেই আমার বিয়ে……!”
যমুনার কথা শেষ হওয়ার আগেই চিৎকার দিয়ে উঠলো উজান চৌধুরী। পরমুহূর্তে যমুনার কোমর জড়িয়ে ধরে শাড়ী পড়া খোলা পেট খামচে ধরে উম্মদের মতো আচরণ করছে উজান চৌধুরী। এই মুহূর্তে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই তার। পুনরায় আবারো ছেলেটা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
“কি পেয়েছেন টা কি আমাকে? আমার ভালোবাসা আপনার কাছে পাগলামি মনে হয়… পাগলামি! খুব বিয়ে করার শখ আপনার তাই না? আমাকে ছেড়ে যাওয়ার খব শখ! আর একবার উচ্চারণ করুণ…
একদম জা’নে মে’রে নদীর জলে ভাসিয়ে দিবো।”
যমুনাও কম নয়। তাকে এক এখানে তুলে এনেছে,তারমধ্যে রাতারাতি মা’রা’র হুমকি দিচ্ছে। মেজাজ বিগড়ে গেলো মেয়েটার। উজান চৌধুরী’কে এক ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে শক্ত গলায় বললো,
“আমাকে তুমি মারার হুমকি দিচ্ছো? এ-সব হুমকি যমুনা তালুকদার ভয় পায় না।
জেনে রেখো, আমি মরে গেলেও তোমার মতো বেয়াদব ছেলে’কে বিয়ে করবো না। ”
“ওকে, নো প্রবলেম। তাহলে ম’রে’ই যান। তাও নিজেকে শান্তনা দিতে পারবো, মানুষটা আর বেঁচে নেই। ”
বলতে বলতে আকষ্মিক ধাক্কা দিয়ে নৌকা থেকে ফেলে দিলো অতী শখের নারী’কে। পরমুহূর্তে শব্দ করে পাগলের মতো হাসছে উজান চৌধুরী।
ছেলেটার এহেন কাজে, যমুনা হতভম্ব হয়ে গেলো! ঠাঁই হীন নদী। পরণে শাড়ী থাকার কারণে সাঁতার কাটাও সম্ভব হয়ে উঠছে না। নৌকা থেকে বেশ দূরেই ছিটকে পড়েছে যমুনা। এই অবস্থা কোনো কূল-কিনারা মিলছে না। কোথাও কোনো ঠাঁই না পেয়ে, একটা সময় পানি খেতে খেতে হা’মা’গু’ড়ি দিতে লাগলো যমুনা। কাশতে কাশতে অবস্থা নাজেহাল। তবুও নির্বাক যমুনা। বাঁচার কোনো তাড়া নেই যেন তার। মিনিট দশেক সময় পাড় হতেই অবস্থা আরো শোচনীয় হতে লাগলো তার। তীব্র কাশির শব্দে, মস্তিষ্ক সচল হলো উজান চৌধুরী’র। ততক্ষণাৎ ঝাপিয়ে পড়লো সে। যমুনাকে ধরে তুলে আনলো নৌকায়। যমুনা দম নিতে নিতে নিস্তেজ কণ্ঠে বললো,
“বাঁচালে কেনো? ম’র’তে দিলে না যে। আর একটু হলেই বোধহয় পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হতে পারতো একটা জীবন্ত লা’শ!”
উজান যমুনাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে হুট করেই জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কান্নারত ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে শুধালো,
“আপনাকে বিলুপ্ত করার আগে আমি হারিয়ে যেতে যাই। আমাকে দিয়ে আপনাকে মা’রা সম্ভব নয়!
স্যরি উপমা! খুউব কষ্ট হচ্ছিলো আপনার তাই না!”
যমুনা হুট করেই হাসলো যেন। উজান চৌধুরী ছাড়ে দিলো তাকে। সেই হাসির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে যমুনার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে আকুতিভরা এলোমেলো কণ্ঠে বললো,
“আমায় একটু ভালোবাসা দিবেন উপমা?
দেখুন,এই হৃদয় আপনার বিরহের অনলের শিখায় পুড়ে ছাঁই।
একটু কুড়িয়ে নিবেন আমায়? পু’ড়ে ছাই হওয়া হৃদয় কুড়িয়ে নিবেন উপমা?
ছাঁই হওয়া কয়লা হৃদয় আপনার স্পর্শে আবার প্রাণ পাবে, আবার আপনাকে ভালোবাসতে পারবে।”
কত অসহায়ত্ব, কত মায়া এই কণ্ঠে ! প্রিয় মানুষের থেকে এক চিমটি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আকুলতা ছিলো এই কণ্ঠে। কেঁপে উঠলো যমুনার জড়োসড়ো হওয়া দেহখানি। যমুনা এই ছেলেটাকে কি করে ফিরিয়ে দিবে? থাক না! অনেক তো হলো ঝুট-ঝামেলা। অনেক’তো ভেবেছে পরিবার কিংবা সমাজের কথা। এবার না হয় পাগল পুরুষটি সঙ্গ দিলো যমুনা। যমুনাকে তার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে হুট করেই দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটাকে। পরমুহূর্তে তার মাথা ঠেকলো উজান চৌধুরী’র চওড়া বক্ষে। উজান চৌধুরী ততক্ষণাৎ আগলে নিয়ে প্রেয়সীকে। কেঁদে উঠলো যমুনা। কাঁদো কাঁদো ভাঙা কণ্ঠে শুধালো,
“উজান বিয়ে করবে আমাকে?”
যা শুনে আনন্দে কিছুসময়ের মধ্যে উজান চৌধুরীর দম আঁটকে গেলো। ছেলেটা বাকরুদ্ধ! অতী খুশিতে কথা বলতে ভুলে গেছে, নিশ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছে!
চোখে দু’টোতে চিকচিক করছে অশ্রুকণা! এমন একটা দিনের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছে উজান চৌধুরী। বিষন্নতা কেটে’ অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসলো তার জীবনে।
.
.
ক্ষমতা ও টাকার জোরে ভোর রাতে উজানের ফ্রেন্ড সার্কেল কাজী’কে ঘুম থেকে ধরে বেঁধে তুলে নিয়ে আসছে কাজী অফিসে। যমুনা সবার মাঝে বাবা-বোনকে দেখে হকচকিয়ে গেলো। পরে জানতে পারে, তাকে কিডন্যাপ করাতে এদের হাত রয়েছে। তার বাবা-বোন সাহায্য করছে উজান চৌধুরী ও তার বন্ধুদের। জলির মাধ্যমে যমুনাকে অজ্ঞান করেই বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যার ফলে সব কিছু অজানা রইলো তার।
উজান যখন আজ রাতে কাসেম তালুকদারের পা ধরে কাকুতি-মিনতি করে ভিক্ষা চাইছিলো তার বড় মেয়েটাকে তখন তার চোখে মুখে বাবা দেখতে পেয়েছে তার মেয়ের জন্য অসীম ভালোবাসা। মেয়েটার জন্য উজানকেই সঠিক মনে হলো তার। আদরের মেয়েটা ভালো থাকবে ভেবে নিজের মানসম্মনের কথা না ভেবে মেয়েকে তুলে দিয়েছে উজানে’র হাতে। এবং উজান চৌধুরী’কে পালিয়ে যেতে সাহায্যও করেছে। অবশেষে সব ফর্মালিটি পূরণ করে, বিয়েটা হয়েই গেলো তাদের। উজানে’র ঠোঁটে লেগে আছে স্বচ্ছ হাসি।
শখের নারী’কে একান্তই নিজের করে পেয়ে উজান চৌধুরী যে কত খুশী, তা তার ঠোঁটের হাসিটাই বলে দিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে বাবা মেয়ে’কে উজানের হাতে তুলে দিয়ে বললো,
“বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলেও এখন তোমাকে হাজারো ঝড়ের মুখোমুখি হতে হবে বাবা।
তোমার উপর ভরসা করেই আমি আমার মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম উজান। তুমি কখনো তাকে অসম্মান- অমর্যাদা করো না। সারাজীবন যত্ন করে আগলে রেখো। আমার বড় আদরের মেয়ে। একবার বহু কষ্টে জর্জরিত হয়েছে মেয়েটা আমার, তুমি পুনরায় তাকে কখনো কষ্ট দিও না। এটা আমার অনুরোধ বাবা।”
“আপনি চিন্তা করবেন না ফুপা। আমি তাকে আমার সাধ্য মতো ভালো রাখবো। কখনো একটা আচঁড় ও লাগবে না তার গায়ে, কথা দিলাম। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আমি সব সামলে নিবো।”
বাবা-জলি একে একে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো যে যার বাসায়। উজান পরমুহূর্তে প্রেয়সীর হাতটি ধরে আশ্বাস দিয়ে বললো,
“ভয় পেয়ো না। আমি সব ঠিক করে দিবো।”
যমুনা ভরসা পেলো। সব ভুলে মুচকি হেসে সদ্য বিবাহিত বরের হাত ধরে, পায়ের সাথে পা মিলিয়ে নতুন জীবনের দিকে ধাবিত হলো।
.
.
বেলা বাড়ছে। ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে যমুনা ও উজানের বিয়ে’র সংবাদ। বউ নিয়ে বাড়ির দরজায় পা রাখতেই জুনায়েদ চৌধুরী ছাপ ছাপ জানিয়ে দিয়েছে,
“আমি এই বিয়ে মানি না উজান, আর না কখনো মানবো। তুমি আমার মান-সম্মান নষ্ট করেছো।
তুমি এই মেয়ে নিয়ে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। আর কক্ষণো এখানে এসো না।”
কথা শেষ করে দরজা বন্ধ করে দিলো বাবা। এমনটা হবে উজান চৌধুরী’র ধারণা ছিলো। তাই সে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, প্রিয়তমার হাত ধরে বেরিয়ে পড়লো বাড়ি থেকে। তাহেরা খানমও মেয়ের উপর বেশ রাগান্বিত। বড়া সমাজে নাক-কান কেটে দিয়েছে এই মেয়ে। তিনিও মেয়ের মুখ দেখতে চান না।
উজান চৌধুরী প্রিয়তমা’কে কালো অতীত ভুলতে এই শহর ছেড়ে পাড়ি জমালো নতুন শহরে। শুরু হলো তাদের নতুন জীবন।
__________
পাঁচ বছর পর……
বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। জুনায়েদ চৌধুরী প্রথমে ছেলের উপর রেগে থাকলেও বছর খানিক পর নিজে গিয়ে ছেলে ও পুরবধূকে নিয়ে আসে বাড়িতে। এখন নিজের বাড়িতেই থাকছে উজান-যমুনা। যমুনার মা’ও ভাইয়ের সাথে মেনে নিয়েছে এই সম্পর্ক। জলিটার ও বিয়ে হয়েছে বছর দু’য়েক আগ। বর প্রবাসী। জলিকে নিয়েই আমেরিকায় সেটেল্ড হয়েছে। বছরে একবার দেশে এসে ঘুরে যায়।
দিনগুলো সবার ভালোই যাচ্ছে। উজান চৌধুরী এখন একজন সফল বিজনেস ম্যান। পাশাপাশি রাজনীতিতেও জড়িয়ে আছে। বাবা অবসরে গেলে একেবারে আঁকড়ে ধরবে রাজনীতি’কে।
গুমরে ভিতর থেকে ম’রে যাওয়া যমুনাকে নতুন এক জীবন দিয়েছে উজান চৌধুরী। ভালোবাসা, যত্ন দিয়ে ভুলিয়ে দিয়েছে প্রথম ক্ষত। যমুনা নতুন করে বাঁচতে শিখেছে, হাসতে শিখেছে।
বিয়ের তিন বছর পর তাদের কোল আলো করে জন্ম হয় এক রাজকন্যার। লায়লা চৌধুরী শখ করে নাম রেখেছে তার ঊর্মিমালা। মেয়েটা চৌধুরী বাড়ির সবার চোখের মনি, বড্ড আদরের। লায়লা চৌধুরী যমুনাকেও মেয়ের মতো ভালোবাসে। যমুনাকে পেয়ে তার ছন্ন-ছাড়া, ভবঘুরো ছেলেটা একেবারে বদলে গিয়েছে। বাজে সঙ্গ ছেড়েছে, সিগারেট ছেড়েছে, সংসারে মনোযোগী হয়েছে। তার ছেলেটা যমুনার স্পর্শে ভীষণ ভালো আছে। এই জুটিকে তার পৃথিবীর সেরা কাপল মনে হচ্ছে। কি সুন্দর একজন আরেক-জনকে সম্মান করে, যত্ন করে। এদের স্বামী স্ত্রীর বন্ডিংটা দারুণ!
.
.
রাতে নিজের রুমে মেয়েকে ঘুম পড়ানোর চেষ্টা করছে যমুনা। মেয়েটা তার কাঁদছে। ঘুমাতে চাইছে না। নাতনী’র কান্নার আওয়াজ শুনে রুম হাজির হলো লায়লা চৌধুরী। এসেই উনি বেশ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন,
“কি হয়েছে ঊর্মিমালা’র? ও কাঁদছে কেনো?”
“কি হবে আবার। তোমার বাঁদর নাতনী ঘুমাতে চাইছে না এখন। রাত এগারোটা তাও তার চোখে ঘুম নেই।”
বলতে বলতে মেয়েকে ধমক দিলো যমুনা। দাদি আহ্লাদ করে নাতনী’র হয়ে বললেন,
“আরেহ্ থাক না। ধমকাচ্ছি কেনো দাদু মনি কে? দে আমার কাছে দে। আজ আমার কাছে থাকবে ঊর্মিমালা।”
দাদি কোলে করে নিয়ে গেলো নাতনীকে। যমুনা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। মেয়েটা দাদি আর বাবা’র বড়ো ভক্ত। এদের পেলে একদম ঠান্ডা।
যমুনা উজানের উপর অভিমান করে বিছানায় মুখ গোমড়া করে সুয়ে আছে। দু’দিন ধরে উজান চৌধুরী তাকে ইগনোর করছে। যা মেনে নিতে পারছে না যমুনা। মা- বের হতেই রুমি ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো উজান চৌধুরী।
যমুনা উজানকে দেখে কিশোরী কন্যার ন্যায় গাল ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। যা দেখে হাসলো উজান চৌধুরী। অভিমানী বউকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে অপরাধী’র ন্যায় শুধালো,
“স্যরি জান।দু’দিন অফিসের কাজে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। প্লিজ রাগ করো না বউ।”
যমুনা উজানকে ছাড়াতে ছাড়াতে অভিযোগ নিয়ে বললো,
“তুমি দিনদিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছো উজান। আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না। সারাদিন ব্যস্ততা দেখাও। বুঝি তো, এখন আর আমাকে ভালো লাগছে না।
ছাড়ো আমায়। তুমি তোমার অফিস আদাল নিয়েই থাকো। আমার কাছে একদম আসবে না।”
উজান বউয়ের অভিযোগ শুনে আলতো হেসে হাতের বাঁধন আরো শক্ত করলো। অভিমানী বউয়ের কপালে চুমু খেয়ে নেশালো কণ্ঠে শুধালো,
“তোমার প্রতি ভালোবাসা আমার একবিন্দুও কমেনি উপমা। উল্টো আমি দিনদিন তীব্র ভাবে আ’স’ক্ত হই তোমাতে।
ঠিক কিশোর বয়সের প্রথম দিনের মতো আজও আমি মুগ্ধতা খুঁজে পাই তোমার চুলের ঘ্রাণে, কপালের কালো টিপে, তোমার চোখের কাজলে, তোমার হাসিমাখা গালের টোলে। ভালোবাসি বউ! সারাদিন, ব্যস্ত সময় পাড় করে দিনশেষে তুমিই আমার গন্তব্য।”
স্বামীর কোমল স্পর্শে অভিমান গলে গেলো যমুনার। যমুনা মৃদু হেসে মাথা ঠেকালো পুরুষালী চওড়া বক্ষে। পরমুহূর্তে মৃদু হেসে রমণী’টি বলে উঠলো,
“আমিও তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি উজান চৌধুরী। তুমি নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছো আমায়। তোমাকে না পেলে হয়তো কখনে জানা হতো না, পুরুষ মানুষ কোনো মেয়ে’কে এতোটা ভালোবাসতে পারে। জীবন নিয়ে আমার আর কোনো আক্ষেপ নেই, তোমাকে পেয়ে আমার জীবন ধন্য। ভালোবাসি আমার বাচ্চার আব্বু।”
উজান চৌধুরীর বক্ষ জুড়ে প্রশান্তির সুখ ছাপিয়ে গেলো। মুচকি হেসে পরম মমতায় আগলে নিলো প্রিয়তমা’কে। দু’জন দু’জনকে নিঃশব্দে অনুভব করছে।
মিনিট পাঁচেক পড় উজান চৌধুরী তার প্রেয়সীর চুলে মুখ ডুবিয়ে ফিসফিস করে শুধালো,
“এই শুনছো?”
“হু।”
“মিশে যাও।”
“কোথায়? ”
“আমার হৃদয়ের মাঝে।”
যমুনা আলতো হেসে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো প্রিয় পুরুষটিকে। উজান চৌধুরী পুনরায় বউয়ের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো,
“এই চলো না…. হারিয়ে যাই।”
“কোথায়? ”
“কোনো এক ভালোবাসা’র রাজ্যে।”
” ইশ, এভাবে কেউ বলে! আমি ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ হই।”
“কিসে? ”
“তোমার নেশাক্ত চাহনির মাদকতায়।”
“ইশ , বুকে লাগছে! এই চলো না ডুব দেই।”
“কোথায়?”
“ভালোবাসা’র অতলে।”
যমুনা লাজুক হাসলো। উজান চৌধুরী প্রিয়তমা’কে আলগোছে বুকে জড়িয়ে ধরে আদরে-আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো। বেসামাল হয়ে তাকে সঙ্গ দিলো যমুনা। চাঁদনী রাতে প্রেমের স্রোতে আজ হারিয়ে গেলো #উজান_যমুনা।
(সমাপ্ত)
(গুটিকয়েক পাঠক নিয়েই আজ শেষ হলো গল্পটি। সব মিলিয়ে কেমন লাগেছে গল্পটি আপনাদের? আজ সবাই রেসপন্স করবেন, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে গঠন মূলক মন্তব্য করবেন। যারা এতোদিন আমার সঙ্গে ছিলেন, সবাইকে এওো গুলো ভালোবাসা!)
আমার লেখা গল্প নিয়ে আলোচনা ও আড্ডা দিতে জয়েন হন আমার গ্রুপে👇
https://facebook.com/groups/150537201352027/