উজান_যমুনা #পর্বঃ৫+৬

0
196

#উজান_যমুনা

#পর্বঃ৫+৬

লেখনীতে ঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

যমুনার বাড়ন্ত পা থেমে গেলো। পিছনে ঘুরে কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে শুধালো,

“বুঝলে কি করে আমি এসেছি? তুমি তো আমায় দেখোনি।”

উজান চৌধুরী ঠোঁট প্রশারিত করে হাসলো। ধীরপায়ে এগিয়ে এসে যমুনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে শুধালো,

“আপনি আমার আশেপাশে থাকলে আমার ফিফথ সেন্স জানান দেয়, আপনি আমার কাছাকাছি। আপনার অস্তিত্ব অনুভব করতে আপনাকে আমার স্ব’চোক্ষে দেখার প্রয়োজন হয় না উপমা।”

যমুনা আর কিচ্ছুটি বললো না। পুনরায় নিচে নামার জন্য পা-বাড়ালো। উজান পিছন থেকে দ্রুত তার এক হাত ধরে ফেললো। যমুনা তা দেখে হঠাৎ করেই খুব কোমল কণ্ঠে বললো,

“আমার হাত ছাড়ো উজান। আমি নিচে যাবো। কথায় কথায় এভাবে আমাকে টাচ করবে না, আমার অস্বস্তি হয়।”

“স্যরি উপমা! আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি। আপনার অস্বস্তি বা অসম্মান হয় এমন কিছু আমি কখনো চাই না। কিন্তু, মাঝেমধ্যে আপনি করতে বাধ্য করেন। আপনি আমায় জাস্ট দশ-টা মিনিট সময় দিন, প্লিজ!”

“তোমার ওসব ছাড়া প্রয়োজনীয় কিছু বলবে?”

“বলছি ওয়েট! আপনি দোলনায় গিয়ে বসুন, না বসলে আমি কিন্তু কোলে করে নিয়ে বসাবো।”

উজানের ছেলে মানসিকতা মূলক কথা শুনে খুউব গোপনে হাসলো মেয়েটা। বিনাবাক্যে বাধ্য মেয়ের মতো দোলনায় গিয়ে বসলো। উজান ততক্ষণাৎ ছাঁদের বিপরীত পাশে গিয়ে মিনিট সময়ের মধ্যে এক হাতে যমুনার পছন্দের কাচ্চি বিরিয়ানি’র একটি প্যাকেট, অন্য হাতে কোক নিয়ে এগিয়ে আসলো। ছেলেটা জানে তার প্রেয়সী তার উপর রেগে সারাদিন কিচ্ছুটি খায়নি। তাইতো রাতে বাহির থেকে অর্ডার করে প্রেয়সীর পছন্দের খাবার নিয়ে এসেছে। যমুনা ফ্যাল-ফ্যাল করে চেয়ে দেখছে ছেলেটাকে। পরমুহূর্তে, উজান চৌধুরী দোলনায় বসা রমণীর মুখোমুখি হাঁটু মুড়ে বসে এক লোকমা বিরিয়ানি তার মুখের সামনে ধরে খুব ইনোসেন্ট ফেস করে বললো,

“খাবারটা খেয়ে নিন উপমা। আমি জানি, আমার উপর আপনি ভীষণ বিরক্ত উপমা। আজ সারাদিনটা একটু বেশীই জ্বালিয়েছি আপনাকে। তারজন্য, স্যরি! আসলে আপনাকে আমার জ্বালাতে একটু বেশীই ভাল্লাগে! আপনার রেগে যাওয়া লালচে গাল, গোল-গোল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে যে লুকটা দেন, ট্রাস্ট মি! তখন আমি জাস্ট মাতোয়ারা হয়ে যাই উপমা! ওই মুহূর্তে আপনাকে আপনাকে অপরূপ লাগে! আপনার মাঝে এই অদ্ভুত সৌন্দর্যে মোহগ্রস্ত হয়ে যাই আমি। এখানে আমার কোনো দোষ নেই বুঝলেন উপমা? সব দোষ আপনার সৌন্দর্যের। আমি জাস্ট উপভোগ করি।
তবে, আই প্রমিজ! এখন খাবারটা খেয়ে নিলে আপনাকে আপাতত আর বিরক্ত করছি না আমি।”

ছেলেটার সরল স্বীকার উক্তি, কথার ভঙ্গিমা দেখে হাসি পেলো যমুনার। কিন্তু, হাসালো না মেয়েটা। জোর করে মুখে গম্ভীরতা টেনে বললো,

“তুমি আর বড় হলে না উজান!”

উজান এ কথার বিপরীতে কথা বাড়ালো না। পুনরায় খাবার মুখের সামনে এগিয়ে ধরে খাওয়ার জন্য তাড়া দিলো। যমুনা বিনাবাক্যে উজানের হাতের খাবারটুকু মুখে পু’ড়ে নিলো। যা দেখে প্রশান্তির সুখ ছাপিয়ে গেলো ছেলেটার চোখে-মুখে। যমুনা ততক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“এতো খুশী হওয়ার কিছু নেই ছেলে। মুখের সামনের খাবার ফেলে দিতে নেই, তাই খেয়ে নিলাম। ”

উজান চৌধুরী ও উঠে দাঁড়ালো। প্রেয়সীর মুখের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললো,

“আমি এই অল্পতেই খুশী উপমা। আপনার থেকে একটুখানি সুখ পেতে হাজারটা বাহানা খুঁজি। আপনার শত অবহেলার মাঝ থেকেও আমি সবসময় সুখটুকু কুড়িয়ে নেই।”

যমুনা একথার বিপরীতে কি বলবে কথা খুঁজে পেলো না যেন। ছেলেটার জন্য তারও মাঝে মাঝে মায়া হয়। মাঝেমধ্যে তার চেপে রাখা মনটা ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে চঞ্চল ছেলেটার শত পাগলামির সঙ্গ দিতে চায়। সবকিছু ভুলে আবেগে ভেসে যেতে তারও ইচ্ছে হয়! দিনশেষে বিশ্বস্ত এক জোড়া হাতের অভাব তাকেও ঘিরে ধরে। মেয়েটা মুখে স্বীকার না করলেও বলতে বাধ্য যে, উজান চৌধুরী তাকে সবকিছু উজার করে ভালোবাসে। এই ছেলেটাকে প্রতিনিয়ত অবহেলা করতে গিয়েও মায়া হয় তার। কিন্তু, কিন্তু এসব যে অকল্পনীয়,কখনো হওয়ার নয়! তাইতো, সবকিছুতে আশকারা দিতে নেই। যমুনা খুব গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তান্মধ্যে, উজান চৌধুরী প্রেয়সীর নিকট বায়না ধরে বললো,

“আমায় একটু খাইয়ে দিবেন উপমা?”

“নিজের হাত দিয়ে খাও। আমি নিচে যাচ্ছি।”

বলতে বলতে হাঁটা দিলো যমুনা। উজান আলগোছে যমুনার হাতটা ধরে ফেললো। যমুনা নিজের হাত ছাড়াতে চাইছে, কিন্তু পারছে না। মেয়েটা যতবার ছাড়ানোর চেষ্টা করছে,উজান চৌধুরী আরো শক্ত করে ধরছে। বিরক্তিতে নাক-মুখ কুঁচকে ফেললো শ্যামময়ী নারীটি। পরমুহূর্তে শক্ত কণ্ঠে বললো,

“হাতটা ছাড়ো উজান। জলি যে-কোন সময় এখানে আসতে পারে, ও আমাদের এভাবে দেখলে কি মনে করবে বলতো? ছোট বোনের কাছে আমাকে লজ্জিত করো না।”

“ভয় নেই, জলি এখানে আসবে না উপমা। আমাকে একটুখানি খাইয়ে দিননা প্লিজ! আপনার জন্য রাতে আমিও কিচ্ছুটি খাইনি।”

কত অসহায় শুনালো সে কথা। উজান চৌধুরী’কে এতো কাকুতি-মিনতি করতে কখনো দেখেনি যমুনা। তাকে ফিরিয়ে দিতে গিয়েও দিতে পারলো না যমুনা। একটুখানিই তো আবদার।এতটুকু পূরণ করাই যায়। যমুনা একটুখানি সময় নিয়ে রাশভারী কণ্ঠে বললো,

“আচ্ছা দিচ্ছি। এবার হাত ছাড়ো।”

উজান ততক্ষণাৎ ছেড়ে দিলো তার হাত। ছেলেটার মুখে দেখে গেলো এক অমায়িক হাসি। যমুনা সেদিকে একপলক চাইলো, জিম করা বলিষ্ঠ দেহে কালো ট্রি শার্ট জড়ানো, লম্বা-চওড়া পুরুষটি’র ফর্সা গোলগাল মুখ খানায় যেন শত মায়া লেপ্টে আছে। গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়ি’র মাঝে গোলাপি ওষ্ঠদ্বয়ে ভুবন ভুলানো হাসিতে আরো আকর্ষণীয় লাগছে তাকে। মৃদু বাতাসে লম্বা লম্বা চুল গুলো উড়ছে, ফর্সা মুখটা জুড়ে আবছা চাঁদের আলো। যা তাকে আরো শতগুণ সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে, হাসির তালে তালে সাদা দাঁত গুলো চিকচিক করছে। একটা পুরুষের মাঝে এতো সৌন্দর্য সচারাচর দেখেনি যমুনা। বলতে বাধ্য, পুরুষটি অতি সুদর্শন! নজরকাঁড়া রুপ তার! না! এই পুরুষের দিক বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকা সম্ভব নয়,ঘোর লেগে যাবে।
যমুনা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো, লম্বা লম্বা পা ফেলে পুনরায় দোলায় গিয়ে বসলো। পিছনে পিছনে উজানও আসলো, দূরত্ব বজায় রেখে দোলনার অন্য পাশে বসলো সে। যমুনা বিরিয়ানির প্যাকেটটা নিজের হাতে নিয়ে এক লোকমা বিরিয়ানি কোনো বণিতা ছাড়াই তার মুখের সামনে ধরলো। উজান ততক্ষণাৎ মুখে পুড়ে নিলো। আনন্দে শিহরণ বইছে তার হৃদয় জুড়ে! এই সময়টা এতো স্নিগ্ধ কেন, এতো বেশি সুন্দর কেনো? প্রিয় নারীর কাছাকাছি বসে তার হাতের খাবার খাওয়ার মতো সৌভাগ্য তার হয়েছে! এতো বিরিয়ানি না মনে হচ্ছে অ’মৃ’ত খাচ্ছে উজান চৌধুরী।
উজান গালে হাত দিয়ে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে প্রেয়সীর মুখপানে। তার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রমণী তার কাছাকাছি। জোছনা রাতে শখের নারী’র পাশাপাশি বসে তাকেই মুগ্ধ হয়ে দেখছে উজান চৌধুরী। এই সময়টা যদি এখানেই থেমে যেত!
.
.
লুকিয়ে লুকিয়ে সিঁড়ির কাছাকাছি এসে আরো এক জোড়া চোখ দেখছে তাদের। এমন সৌন্দর্য দেখতেও ভাল্লাগে! এই চোখের মালিক আর কেউ নয়, জলি। জলির চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। তার বোনের পাশে উজান ভাইকে খুব মানিয়েছে।
তার বোনকে যে উজান ভাই ভালোবাসে তা সে আগেই ধারণা করছিলো। আজ বিকেলে যখন সরাসরি বললো উজান ভাই সে কথা, খুশীতে গদগদ হয়ে উঠলো জলি। উজান ভাই সবদিক থেকে পারফেক্ট! হয়তো একটু তার আপুর থেকে বয়সে ছোট উজান ভাই কিন্তু এটা কোনো ব্যপার না। উজান ভাই আপুর পাশাপাশি দাঁড়ালে তার বোনকে আরো পিচ্চি পিচ্চি লাগে,তার আপুর কি খুব বয়স না-কি!
জলি মনে প্রাণে চায় তার আপু সব ভুলে উজান ভাইয়ের সাথে ভালো থাকুক। তাইতো উজানের কথা মতো, কৌশলে ছাঁদে নিয়ে আসছে যমুনাকে। এতক্ষণ যা হচ্ছে, সব জলি ও উজানে’র প্ল্যান! জলি আর সেখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ালো না। রুমে এসে উপরে’র দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

“ইয়া আল্লাহ! আমার আপুকে তুমি সুন্দর একটা জীবন দান করো, তার বিষিয়ে যাওয়া জীবনটা আবারও রাঙিয়ে দেও! আর কত দুঃখ দিবে মেয়েটাকে… আমার বোনটা কতদিন প্রাণ খুলে হাসে না,যা দেখায় সব মিথ্যা লোক দেখানো! ইয়া আমার রব! তুমি তার বিষন্ন জীবনটা রাঙিয়ে দেও!”
___________

স্নিগ্ধ একটি সকাল। যমুনাদের বাড়টা এখন একেবারে নিরব। মাএই একসাথে সবাই যে যার কাজে বেরিয়েছে। যমুনাকে বেরতে দেখে পানের পিক ফেলতে ফেলতে সকাল সকাল আগমণ হলো বাড়ির পাশের নান্টু ঘটকের। এটাই মোক্ষম সুযোগ।
কেননা, যমুনা থাকলে তাকে গেইট থেকেই তাড়িয়ে দেয়। খ’বি’শ মেয়ে একটা!
তাহেরা খানম উঠানে রোদে বসে তরকারি কাটছিলেন। এরিমধ্যে নান্টু ঘটক পান চিবাতে চিবাতে বললো,

“ভাবি আপনার বড় ছেড়িডারে কি আর বিয়া-সাধি দিবেন না? এমনিতেই একবার ছাড়াইনা তার মধ্যে বয়স তো আর কম হয় নাই। ছুডু ছেড়িডার ও তো বিয়ার বয়স হইয়া গেছে। এরমধ্যে বড়ডা এহনো ঘরে বসাইয়া রাখছেন। আমার খোঁজে কিন্তু ভালা ভালা পোলা আছে।

ঘটককে দেখে তাহেরা খানম চেয়ার পেতে বসতে দিলেন। তার কথা শুনে বরাবরের মতো হাতাশ হলো তাহেরা খানম। সবাই এক কথা বলে। উনারা যা বলে তাও মিথ্যা নয়! মেয়েদের বিয়ের বয়স হয়েছে।তাদেরও বিয়ে-শাদির দরকার আছে। তাছাড়া, স্বামীর চাকরিটার রিটায়ার্ড করারও সময় হয়ে আসছে। ঘরে দুই দুটো অবিবাহিত মেয়ে। পাড়া-পড়শীরাও কানাঘুঁষা করছে আজকাল। মেয়েদের চিন্তায় রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না মায়ের।

কিন্তু, বড় মেয়েটা তার পুনরায় সংসারের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত নয়। বিয়ের কথা শুনলেই একেবারে নাকোঁচ করে দেয় সে। বার-বার বাবা-মায়ের কাছে সময় চাচ্ছে। সময় দিয়েছে তারা, কয়েকটা বছর সময় দিয়েছে। গ্রাজুয়েশনও কমপ্লিট হয়েছে গতবছর।
এরিমধ্যে ছোট মেয়ের ও বয়স বাড়ছে, বড় বোন রেখে তো আর ছোট জনকে বিয়ে দেওয়া যায় না। না! এবার একটু চেষ্টা করা দরকার। তাহেরা খানম নান্টু ঘটককে সামনে হালকা নাস্তা রেখে বিনয়ী কণ্ঠে শুধালো,

“ভাইজান। মেয়েদের বিয়ের বয়স যেহেতু হয়েছে বিয়ে তো দিতেই হবে। বড় মেয়েটার বিষয় তো সবই জানেন, তার জন্য একজন ভালো পাএ চাই। ছেলের টাকা-পয়সা একটু কম থাকলেও ছেলের স্বভাব-চরিত্র যেন ভালো হয়।”

“আইচ্ছা ভাবি চিন্তা কইরেন না। আমার খোঁজে ভালা ভালা পোলা আছে। আপনে কইলে হেগো লগে আলাপ করুম।

তাহেরা খানম সম্মতি জানালো। ঘটকের সাথে আরো টুকটাক কথা-বার্তা বলে তাকে বিদায় করলেন। আজকে বাড়িতে আসার পর এ বিষয়ে কারো কাছে কিচ্ছুটি প্রকাশ করেননি তিনি। ভালো পাএ হাতে আসলে তবেই সময় মতো জানাবেন।
.
.
আরো দু’টো দিন গতো হলো। অফিস শেষে রাস্তার পাশ ধরে হাঁটছিল যমুনা। তার চোখ জোড়া আশেপাশে তাকিয়ে পরিচিত একজনকে খুঁজছে। শত অবহেলা, বারণের পরও সারাদিন ছায়ার মতো তার পিছনে পিছনে ঘুরঘুর করা ছেলেটার দেখা নেই দু’টো দিন পাড় হতে চলছে। তাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পর আর একবারের জন্যও উজান চৌধুরী তার মুখোমুখি হয়নি। না চাইতেও চিন্তা হচ্ছে তার। ছেলেটার কিছু হলো না তো? কি হয়েছে তার? সে আসছে না কেনো? বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে।
কয়েক বছর হলো ছেলেটা তার চলার পথের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে যেন। তাকে ছাড়া কেমন পুরো রাস্তা শূন্য-শূন্য ঠেকছে!নিজেকে বড্ড একা- একা মনে হয়। যমুনা দাঁড়িয়ে আবারো একবার আশেপাশে চাইলো, যদি তাকে একবার দেখা যায় সেই আশায়। না ফলাফল শূন্য! কোথাও কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে না। হতাশ হলো মেয়েটা। পরপর নিজের এহেন বেহায়া অনুভূতি দেখে চমকালো! আসছে না ভালোই হয়েছে! সে-তো এটাই যাইতো। তবে কেন মন মানতে নারাজ? মনের বিরুদ্ধে গিয়ে পুনরায় নিজেকে শাসিয়ে হাঁটা দিলো যমুনা। মিনিট পাঁচেক পড় হঠাৎ করেই পরিচিত সেই কণ্ঠ স্বর,

“আমাকে মিস করছেন বুঝি উপমা!”

আচমকা কাঙ্ক্ষিত পুরুষটির কণ্ঠ স্বর শুনে থেমে গেলো যমুনার পা। খানিকটা চমকালো মেয়েটা! আলগোছে তার দিকে একবার চেয়ে আগাগোড়া পরখ করে নিলো অবলীলায়। ঠিকঠাক উজান চৌধুরী’কে দেখে চিন্তা মুক্ত হলো মেয়েটা।
অতঃপর নিজের মনকে শক্ত করে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,

“তোমাকে মিস করতে আমার বয়েই গেছে!”

“মুখে স্বীকার না করলেও, আপনার চোখ বলছে আপনি আমায় মিস করছেন।”

“বাহ্! আজকাল তুমি সবার চোখের ভাষাও পড়াও শিখেছো বুঝি?”

“সবার নয় আমি শুধু আপনারটা বুঝতে চাই উপমা। আমি এটাও জানি, দু’দিন আমি না আসার কারণ জানার জন্য আপনার মন আকুপাকু করছে। কিন্তু, আপনি তো পাষাণ মেয়ে! মুখে জিজ্ঞেস করবেন না। আচ্ছা আমিই বলছি, ভার্সিটিতে গিয়ে ছিলাম,জরুরী ক্লাস ছিলো। এক্সামের রুটিন দিয়েছে, আমার আগামী মাসের শুরুতেই ফাইনাল এক্সাম।”

একনাগাড়ে ছেলেটা কথা গুলো বলে যমুনার পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো। ছেলেটার কথা শুনে যমুনা মনে মনে হাসলো। ছোট্ট করে জবাব দিলো,

“ওহ্।”

উজান চৌধুরী প্রেয়সীর পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মন খারাপ করে বললো,

“এক্সাম শেষ না হওয়া অবধি আপনাকে আর জ্বালানোর সুযোগ পাবো না উপমা। আপনাকে ভীষণ মিস করবো। কিন্তু, আমার অনেক পড়া কমপ্লিট করতে হবে। আচ্ছা একটা কথা বলবো,রাখবেন? ”

“বলো?”

“এই কয়টা দিন আমার সাথে দৈনিক একটুখানি ফোনে কথা বলবেন উপমা? বেশি না, শুধু নিয়ম করে একবার আপনার কথা শুনবো। আপনাকে না শুনলে আমার দিনগুলো কেমন থমকে থাকে। কিছুতেই মন বসবে না। ট্রাস্ট মি! একদম জ্বালাবো না।”

“বুঝলাম। তবে, একদিন পরপর কল দিবে। আমাকে একদম জ্বালাবে না, কিন্তু! এখন যাও, ভালোভাবে এই কয়টা দিন পড়াশোনায় মনোযোগী হও।”

উজান চৌধুরী এই অল্পতেই খুশী। বিনাবাক্যে মেনে নিলো প্রেয়সীর সে কথা। যত যাই করুক না কেন, পড়াশোনার প্রতি ভীষণ সিরিয়াস উজান চৌধুরী।

চলবে……

(দু’দুটো দিন গল্প লেখা হয়নি তাই আজকে দুই পর্ব একসাথে দিয়েছি। সবাই রেসপন্স করবেন!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here