#গল্পঃপ্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস
ইশা আহমেদ
পর্ব ৭
সব কাজিনরা মিলে গ্রাম ঘুরতে বেরিয়েছে। ধূসর অসুস্থ ছিলো বিধায় অরুনি শেখ কাউকে বের হতে দেননি। সাথে বৃষ্টি তো টানা লেগেছিলো এই তিনদিন। আজ রোদ উঠেছে। বেশ কড়া রোদ। অরিন রাফা রাহিয়া হাসাহাসি করছে কিছু নিয়ে। জাহিন রাহিয়ার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে এই হাসিতেই তো কতবার পাগল হয়েছে। ধূসর ফোনে ছবি তুলছে আশেপাশের। অরিন তাদের নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ে চলে যায়। জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর। আকাশে রোদ তো আছেই বেশ। সবাই পাড়ে ঘাসের উপর বসে পরলো। ধূসর নিজেও বসলো।
“রাফুর বিয়ের আর পনেরো দিন আছে। শপিং করতে হবে তো। আমি অনেক বেশি এক্সাইটেড। কত দিন যে বিয়ে খাই না।”
অরিনের কথা ধূসর রাফা বাদে সবাই হেসে দিলো। রাফার মনটা খারাপ। সে জাহিনকে কিছুটা পছন্দ করতো। তবে সমস্যা নেই কারণ সে জানে জাহিন তার বোনকে পছন্দ করে। সে নিজেকে সামলে নিয়েছে তখন থেকে। মন খারাপ নিজের পরিবারকে ছেড়ে যেতে হবে এই নিয়ে। অরিন সবাইকে নিয়ে নৌকায় উঠার সিদ্ধান্ত নিলো। সবাই মিলে একটা নৌকা ঠিক করলো। সবাইকে নৌকায় উঠলেও ধূসর এখনো আসেনি। অরিন এগিয়ে এসে বলে,,,
“এই যে মিস্টার ছাই আপনি কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকার পরিকল্পনা করেছেন নাকি? চলুন সবাই নৌকায় উঠে পরেছে”
ধূসর পিছনে ফিরে অরিনকে দেখে বলল,,,“হ্যাঁ চলো বোম্বায় মরিচ”
অরিন ধূসরের কথা শুনে ভেংচি কেটে ধূসরের পিছু পিছু যেতে থাকে। নৌকায় উঠে সবাই বেশ উপভোগ করছে। তবে ধূসরের একটু ভয় ভয় করছে। নদীতে ঢেউ অনেক। মৃদু বাতাস ও বইছে। সবাই মিলে ঘুরে বাড়িতে চলে আসলো। বাড়িতে সবাই মিলে বসে রাফার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। তবে ওরা সেখানে যোগ না দিয়ে ছাদে চলে আসলো। পিকনিক করবে তারা। খিচুরি রান্না করবে সবাই মিলে। ধূসরও বেশ এক্সাইটেড। মেয়েরা মিলে সব জোগাড় করছে। রান্না করবে অরিন রাহিয়া আর রাফা মিলে।
জাহিন আর ধূসর ও তাদের সাহায্য করবে। অরিন ধূসর জাহিনকে কাজ দিয়েছে কাঠ নিয়ে আসার জন্য। মাটির চুলায় রান্না করবে। ধূসর আর জাহিন মিলে বাড়ির পেছন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে নিয়ে আসছে। কিছু কাঠ আনা হয়েছে এখনো অনেক বাকি। ধূসরের মুখ লাল হয়ে গিয়েছি এতোটুকুতে। কাশছেও। অরিন তা দেখে বলে,,,
“আপনি কি আমাদের মার খাওয়াতে চাইছেন? আপনার যে ধুলো বালিতে এলার্জি আছে বললে কি আমরা আপনায় কাজ করতে দিতাম? এগুলো জানলে আম্মু আমায় কতো বকতো জানেন?”
ধূসর কাশতে কাশতে বলে,,,“আরে তেমন সমস্যা হয় না বোম্বায় মরিচ। আমি করতে পারবো”
অরিন ধূসরের হাত থেকে কাঠ নিয়ে বলে,,,“দরকার নেই। জাহিন ভাইয়া একাই পারবে। আপনি বরং এখানে বসে রান্না করা দেখুন বাচ্চাদের সাথে”
ধূসর ভ্রু কুঁচকে বলে,,,
“আমি বাচ্চা? যে ওদের সাথে বসে রান্না করা দেখবো”
অরিন ধূসরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বলে,,,“ হা পা লম্বায় তো বিশাল, জিরাফের থেকে লম্বা তবে ব্যবহার বাচ্চাদের থেকেও খারাপ”
অরিন কথাগুলো বলে নিজের কাজে চলে গেলো। ধূসর বিরক্ত হলো। এই পুচকে মেয়ে তাকে বাচ্চা বলছে। হ্যাঁ হয়তো সে একটু লম্বা বেশি তো? কি হয়েছে কি। এই মেয়ে সব সময় তার সাথে লাগবে। ধূসর বেশ কিছুক্ষণ বসে ওদের কাজ দেখলো। তবে আর পারছে না। সে উঠে সিঁড়ি ঘরের কাছে আসতেই চিলেকোঠার রুমটা চোখে পরলো। সে সেদিকে এগিয়ে গেলো। নাহ আজ দরজায় তালা মারা না।
সে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। প্রবেশ করতেই মুগ্ধতায় ছেয়ে গেলো তার চোখ মুখ। বেশ সাজানো গোছানো একটা রুম। এক পাশে বই রাখার বড় টাক। যেখানে হরেক রকম বই দিয়ে সাজানো। সাথে ছোট ছোট লাইট, মানি প্লান্টের গাছ দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো। আর একপাশে একটা সোফা আর টেবিল। তার পাশে ছবি আকার যাবতীয় সব জিনিস পত্র রাখা। এক পাশের দেওয়ালে অনেক গুলো ছবি টানানো।
ধূসরের এক নিমেষেই মন ভালো হয়ে গেলো। এতো সুন্দর রুম সে আগে দেখেনি। সে নিঃসন্দেহে বলে দিবে অরিনের পছন্দ আছে। তখনই অরিন রুমে প্রবেশ করে। ধূসরকে দেখে ক্ষানিক অবাক হয়। তবে সে শক্ত কন্ঠে শুধায়,,
“আপনি? আপনি এখানে কি করছেন”
“রুমটা কি তোমার বোম্বায় মরিচ। এতো সুন্দর রুম আমি আগে দেখেনি। আচ্ছা জ্বানালাটা কি খোলা যায় না? আমি যতদিন আছি তুমি কি আমায় এই রুমে আসার অনুমতি দিবে?”
অরিন মৃদু কন্ঠে শুধায়,,,“দেখুন ধূসর সাহেব এটা আমার সব থেকে পছন্দের জায়গা। আমি এটা মোটেও পছন্দ করি না আমার পছন্দের জিনিসে কেউ হাত বাড়াক। এখানে কিন্তু আমার আম্মুও আসে না। এটা শুধু মাত্র আমার। এখানে আসার অনুমতি আমি দিতে পারবো না। আপনি দয়া করে বের হয়ে যান।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আমাকে কি ভাইয়া বলে ডাকা যায় না?ধূসর সাহেব কি। ফুপাতো ভাই হই আমি তোমার”
“আসলে অভ্যাস নেই তাই ধূসর সাহেব হয়ে যাচ্ছে। এখন থেকে ভাইয়া বলার চেষ্টা করবো তবে আপনি! আপনি আমার নাম ধরে ডাকবেন তাহলে আমি আর ছাই বা অন্য কিছু বলবো না। আপনার কি আমার নামটা পছন্দ না?”
“তা তো সম্ভব নয়। আমার অরিন নামটা ঠিক পছন্দ নয় তা নয় তবে বোম্বায় মরিচ নামটা আমার বেশি পছন্দের, আর সাথে একটু আধটু তুমিও বোম্বায় মরিচ”
কথাটা বলেই বের হয় যায় ধূসর রুম থেকে। অরিন বিষ্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলে গেলো ধূসর মাত্র। অরিন বেশ কিছুক্ষণ সেভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুমে তালা লাগিয়ে আবারও সবার কাছে চলে আসে। রাহিয়া তাকে দেখে তাড়া দেখিয়ে বলে,,
“কোথায় ছিলি এতো সময় তুই? তাড়াতাড়ি আয় রান্নার সব জিনিস আনা শেষ”
অরিন এগিয়ে এসে রান্নায় হাত লাগায়। তিনজন মিলে রান্না করছে। এর ফাঁকে অবশ্য তার চোখ জোড়া ধূসরকে খুঁজেছে। তবে ছাদের কোথাও তার দেখা মেলেনি। তবে সে সব মাথা থেকে ঝেড়ে রান্নায় মনোযোগ দিলো। অতঃপর কিছুক্ষণ পর সে বুঝতে পারলো ধূসর তাকে অস্বস্তি, ভয় পাওয়ানোর জন্য এমন করেছে। মনে মনে বেশ কয়েকটা গালি দিলো সে ধূসরকে। রান্না শেষ হয়েছে বেশ অনেকক্ষণ। সন্ধ্যাও পেরিয়েছে সেই কখন। রাহিয়া হায়াতকে দিয়ে সবাইকে ডাকতে পাঠালো। সবাই এসে ছাদে গোল হয়ে বসে পরে। তিনজন মিলে খাবার বেড়ে দিতে থাকে সবাইকে। অরিন ইচ্ছে করে ধূসরকে অনেক দেয়। যাতে খেয়ে না উঠতে।
তবে ধূসর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। নিজের মতো খেতে লাগলো। ওরা তিনজনও খেতে বসে পরলো। নাহ বেশ ভালোই হয়েছে রান্না। ধূসরের কাছেও বেশ লেগেছে। জাহিন বলে উঠে,,,
“বাহ বেশ সুন্দর তো তোমাদের রান্নার হাত। দারুন হয়েছে রান্না”
রাহিয়া লাফিয়ে উঠে বলে,,,“তুমি সত্যি বলছো জাহিন ভাইয়া?”
“হ্যাঁ সত্যি বলছি রাহিয়া দারুন হয়েছে।”
সবাই নিজের মতো খেয়ে উঠে গেলো। সবাই প্রশংসা করলেও ধূসর কিছুই বলেনি। এতে অবশ্য কিছু যায় আসে না তিনজনের। নিচে নামতেই জানতে পারলো অরিন মেঝো ফুপি আর ছোট ফুপি আগামীকালই বাড়ি চলে যাবেন। বড় ফুপি বিয়ের কয়েকদিন আগে যাবেন। এতো বছর পর এসেছেন কিছুদিন না থাকলে তো হয় না। অরিনের মন খারাপ হলো এটা ভেবে যে রাফা আর রাহিয়া জাহিন চলে যাবে। পরে সব জানতে পারলো অরিন। বিয়ের সব জিনিস কেনা বাকি আরো অনেক কিছু তার জন্য সবাই চলে যাবে। সবাই অরিনের রুমে আসে লুডু খেলার জন্য। তবে অরিনের মন খারাপ দেখে রাহিয়া বলে,,
“কি রে অরিন মন খারাপ কেনো তোর?”
“তোরা আসলিই তো তিন চারদিন হলো আবার চলে যাবি। ধূর ভাবলাম এবার অনেক ঘুরবো তবে হলো কোথায় আর”
“আরে মন খারাপ করিস না আমরা তো আবারও আসবো”
চলবে….