#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১০ (পারফিউম ভার্সাস পাদ)
“বিবিজান আগের বারের মত কফিতে মরিচের গুঁড়া মিশিয়েছো কি? চাইলে মেশাতেও পারো। আই ডোন্ট হেভ এনি প্রবলেম। ঐসময় আমার কাছে টেস্টের জন্য মিষ্টি ছিল না। এবার তো আমার কাছে মিষ্টির চেয়েও দারুণ মিষ্টির খাবার আছে। একবার মুখে নিলেই ছাড়বো না বলে দিলাম।”
মুখ ভোঁতা হয়ে গেল নাজীবার। সে চাইছিল এতদিন কষ্টের বিনিময়ে আফরাজ কে হলুদ,জিরা গুঁড়া ও নুন মেশানো কফি খাওয়ে মজা বুঝাবে। কিন্তু এখন তো তারই উপর বারি হয়ে যাবে ব্যাপারটা। ঢোক গিলে হেহে হেসে দিয়ে বলে,
“আসলে বলছিলাম কি আমি না আরেকটা কফি বানিয়ে আনছি। আপনি বসুন,কাজ করুন কেমন?”
চটজলদি পালাতে নিলে আফরাজ গম্ভীর মুখশ্রীর ন্যায় বিবিজান এর হাতের বাহু চেপে ধরে। সন্তপর্ণে বিবিজান এর হাতে থাকা কফিটা উঠিয়ে নেয়। চোখ বড় বড় হয়ে যায় নাজীবার। আফরাজ বাঁকা হেসে যেই না কফির মগে ঠোঁট লাগাবে, তখনই আকবর এসে দরজা নক করে। আফরাজ এর ধ্যান একটুর জন্য সেদিক ঘুরে গেল। ব্যস নাজীবাকে আর পায় কে? তৎক্ষণাৎ স্বামীর হাত থেকে কফিটা নিয়ে পালিয়ে যায়। বিবিজান কে পালাতে দেখে মনে মনে আকবরের নামে বাঁশ দেয়। আকবর বেচারা খিচুড়ি চিবাতে গিয়েও পারল না। জিভ দাঁতের মধ্যে চাপা খেয়ে ব্যথা পেয়ে যায়। কুসুমা দুপুরের খাবারের জন্য প্লেটগুলো রেডি করছিল। আকবরের অসহায় মুখ দেখে সে চিন্তিত গলায় বলে,
“এই কি হলো গো আপনার? ওমনে মুখটা লটকিয়ে রাখলেন কেন? কিছু হয়েছে বলুন?”
“কি বলতাম আর? গেছিলাম ভাইরে ডাকতে। অসময়ে ডাকতে গেয়ে গা’লি খেয়ে জিভে কামড় লাগছে।”
কুসুমা মৃদু হেসে বলে,
“আপনিও কম যান না ভাইয়ের পিছে চব্বিশ ঘণ্টা লেগে থাকেন। কে ,কার ,কেমনে নেগপুল করতে পারবেন সারাক্ষণ যেনো সেই চিন্তা করেন।”
“সব কপালের ফাটা দোষ।”
“আয় তোর কপালটাই ফা’টিয়ে দেয়।”
গম্ভীর গলায় ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে বলল আফরাজ। আকবর দেখে বোকা হাসি দিয়ে বলে,
“আরে দোস্ত আসলি , আয় না দেখ খাবার কত মজা হয়েছে। আজ ভাবী রান্না করেছেন। ওয়াও মাশাআল্লাহ লা-জাবাব।”
নাজীবা খাদিজা বেগম এর কাছে দাঁড়িয়ে খাবার প্লেটে বেড়ে দিয়ে আকবরকে ‘ধন্যবাদ’ জানায়। আফরাজ এর মুখের গম্ভীরতা তবুও যায়নি। স্বামীর এরূপ আচরণে নাজীবা পড়ল বিপাকে। কেমনে রাগ ভাঙানো যায় সে ফন্দি আটকাচ্ছে! আফরাজ নিজের প্লেট নিতে গেলে নাজীবা চট করে তার হাতের উপর মৃদু চা’প’ড় মা’রে। ব্যাপারটা সবার চক্ষু আড়ালেই করল সে। কারণ নজরে এলে সেই লজ্জায় কাঁচুমাচু করতো। আফরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কোনো কথা বলল না। নাজীবা লাজ-লজ্জা ভুলে ঢোক গিলে এক লোকমা ভাত আফরাজ এর মুখের সামনে ধরে। সে দেখে বিনা বাক্যে লোকমা মুখে ফুরে নেয়। পুনরায় আরেক লোকমা খাওয়াতে নিলে নিজেরই মুখের সামনে লোকমা দেখে আশ্চর্য হলো নাজীবা। আফরাজ নিজ হাতে লোকমাটা নাজীবার মুখের ভেতর ফুরে দেয়। দু’জন দু’জনকে খাওয়ে দিচ্ছে দেখে তিনজন ব্যক্তি মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করে। খাদিজা বেগম খাওয়া শেষ করেই রুমে চলে যান। তিনি দরজা ভিড়িয়ে ফোন নিয়ে নিজ ছেলের নাম্বারে কল চাপেন। নাম্বারটা বিদেশী, তাই ম্যাসেঞ্জার মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলেন তিনি। কল রিসিভ হতে দশমিনিট সময় লাগল প্রায়। খাদিজা বেগম ফোঁসে বলেন,
“ঐ হ্যাবলা ব্যাটা বানিয়েছিস তো করলার মত ব্যাটা। তোর করলা দেশে আর তুই বিদেশে বসে কোন মুলার ফসল ফলাচ্ছিস হুম? নিজে তো গেছস আমার ঘরের লক্ষ্মীটারেও জোর করে নিয়া গেছস। বলি কি? মহা বলদ ছেলে টা দেশে আসলে খুশি হতাম। আপনাদের গণ্যমান্য ছেলে যে বিয়াত্তা ব্যাটা হয়ে গেছে। তার কোনো ধারণা আছে কি?”
এত বছর পর মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে খুশিতে চোখে পানি চলে এলো জনাব ইসমাইল ফাহিম এর। তিনি কল্পনাও করেননি তার মা কোনো দিন তাকে কল করবেন! তিনি খুশির ঠেলায় গলার থেকে আওয়াজ বের করতে পারছেন না। অন্যথায় মিসেস ফেরদৌসী স্বামীর অবস্থা দেখে ফোনটা স্বামীর হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। তিনি নিজেই সালাম দেন শ্বাশুড়ি কে। খাদিজা বেগম বউমার কণ্ঠ শুনে বেশ খুশি হলেন। বউমাকে আদেশের সুরে বলেন,
“শোনো বউমা। তোমার বদ জামাইকে একটু বলে দিও। আমি আর কোনো এক্সকিউজ শুনছি না। এবার যদি তোমার জামাই দেশে না আসে, তাহলে যেন সে ভুলে যায় যে, আমি তার মা ছিলাম। এত বছরেও যে ছেলে মায়ের খবর নেয় না। তার থেকেও বা কিসের আশা করবো? ছেলেটা নাহয় তার মাকে ভুলে গেল। তাই বলে নাতি কেও কেড়ে নিয়ে গেল। এখন বুঝতেছে তোমার জামাই? সন্তান দূরে থাকার কষ্টটা কেমন? নিজের মা’কে দেশে একা ফেলে নিজেরা বিলাসবহুল জায়গায় ঠাঁই পেয়েও লাভ নেই। সেই মায়ের কাছেই বাচ্চারা শান্তি সুখ পায়।”
শ্বাশুড়ির কথা শুনে মিসেস ফেরদৌসী কেঁদে দেন। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন,
“মা মা গো আপনি আমার শ্বাশুড়ি নন আমার নিজের মায়ের সমান। এই এতিম মেয়েকে আপনি ভালোবেসে ছিলেন বলেই বেঁচে ছিলাম। মা গো আমার ছেলেটা কোথায়? একবারও ফোন দেয়নি। যতবার ফোন দিয়েছি ততবার কেটে দিয়েছে। বাপের কারণে মায়ের সাথেও রেগে কথা বলছে না ছেলেটা। মা আপনি একটু তারে বোঝান না। আমরা কখনো তার খারাপ চাইনি। একসময়ের দুর্ঘটনায় আমরা ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম। সেই ভয়ে আমরা চলে এসে থাকতেই লাগলাম ভীনদেশে। মা আপনি ছেলেটার কাছে সত্য কথা এখন বলিয়েন না। নাহলে আমরা অপরাধী হয়ে যাবো।”
খাদিজা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। তিনি নিজেও সেই ঘটনার সাক্ষী। কিন্তু কোথাও এক খারাপ লাগা থেকেই যায়। সেই ঘটনার রেশ ধরে আজ কত বছর তার ছেলে ভীনদেশে সংসার গুছিয়ে বসবাস করছে। অথচ নিজের মায়ের কিরূপ হাল তা জানারও আক্ষেপ করেনি। অতঃপর মনটাকে নরম করে তিনি বলেন,
“বাদ দাও বউমা। ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে তোমরা রেডি হয়ে নাও। যখন মন চাই ,তখন চলে এসো। কোনো বারণ নেই। রাখি এখন ভালো থেকো।”
“আপনিও সুস্থ থাকিয়েন মা। ইন শা আল্লাহ আমরা শীঘ্রই আসছি। আল্লাহ হাফেজ।”
“ইন শা আল্লাহ্। আল্লাহ হাফেজ।”
মায়ের সাথে কথা বলবে ভেবে জনাব ইসমাইল নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিল। এতক্ষণ যাবত মায়ের অভিমানে ভরা কথাগুলো শোনছিলেন তিনি। কিছু বলার পূর্বেই বউ আর মায়ের কথার সমাপ্তি দেখে অসহায় মুখে বউয়ের দিকে তাকান তিনি। করুণ গলায় বলেন,
“বউ কখনো কি মা আমাকে আর মাফ করবেন না? উনি তো জানেন যুবরাজ আমার কত না আদরের। ঐ সময়কার মারাত্মক ঘটনায় আমি হিতা-হিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ছিলাম। তাই তো ছেলে কে নিয়ে এই দূর দেশে চলে আসতে হলো। আমি কখনো চাইনি এমনকি ভাবিওনী এতটা বছরে মায়ের সাথে দূরত্ব এতটা বেড়ে যাবে।”
কথাগুলো বলতে জনাব ইসমাইল এর চোখ থেকে পানি পড়তে লাগল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
মিসেস ফেরদৌসী স্বামীর কাঁধে হাত রেখে প্রেরণা দেন। তবুও তিনি একবার চেষ্টা করতে বলেন,
“আমাদের উচিৎ এবার ফিরে যাওয়া। ছেলেকে সত্যও বলতে হবে। নাহলে তার বৈবাহিক জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।”
“রেডি হয়ে নাও। আজ রাতের ফ্লাইটেই আমরা দেশে ফিরব। অনেক হয়েছে মায়ের অভিমান আর সহ্য হচ্ছে না।”
মিসেস ফেরদৌসী খুশি হলেন খুব। তিনি চটজলদি সাভেন্ট’স কে বেড রুমে আসতে বললেন।
____
আকবর চিন্তিত গলায় বলে,
“তাহলে তোর কথা হচ্ছে ভাবী তোকে চিনে। অথচ তুই ভাবীকে চিনিস না এমনকি আগে যে কখনো ভাবীর সাথে দেখা হয়েছে তেমন কোনো ধারণা ও নেই তোর?”
“হুম। কিন্তু কোথাও একটা প্রশ্ন মনে জাগছে! আসলেই কি আমি মেয়েটাকে চিনি না? যদি নাই চিনতাম তাহলে কেনো মেয়েটাকে প্রথম দেখতেই ‘বিবিজান’ বলে খুশি অনুভব করে ছিলাম। এমতা তো নয় যে, তখন আমি তাকে ভালোবাসতাম। এসময় তাবাসসুম কে ছাড়া কিছু বুঝতাম না। আর আজ বিবিজান এর জীবনের রহস্য সম্পর্কে জানতে কৌতুহলে ম*রছি।”
“আরে ব্যাটা তুই সরাসরি ভাবীর মুখ থেকেই জেনে নেহ্।”
“তোর কি মনে হয় আমি চাইলেই ওর মুখ থেকে শুনতে পারতাম না ? অবশ্যই পারতাম। কিন্তু রাতে বিবিজান এর শরীরের কন্ডিশন দেখে, আইম ফুললি শকড। সি ইজ মেন্টালী ডিসপ্রেসড। আমাদের সামনে হাসিমুখে দাঁড়ালেও ভেতরে সে চিৎকার করেই কান্না করে। গতরাতে আমি এমনি এক দৃশ্যের সম্মুখীন হয়েছি। বিবিজান এর অসুস্থ সময়ে তার অতীত জানতে চাইলে সে ফুললি মেন্টাল পেশেন্ট হয়ে যাবে। তাও যতটুকু জানতে পেরেছি, এতে আমি এটুকু বুঝতে পারছি আমার সব প্রশ্নের জবাব এক জায়গায় গিয়েই পাবো।”
আকবর বন্ধুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
“কোন জায়গায়?”
আফরাজ নিজের কেবিনের জানালার নিকট এসে দাঁড়িয়ে যায়। পেন্টের পকেটে হাত গুটিয়ে বলে,
“হাউ এবাউট টেকিং আওয়ার ফাস্ট হানিমুন ট্যুর ইন ফেনী? ইট উডবি ইন্টারেস্টিং রাইট?”
আকবর কথাটা শুনে হা করে তাকায়। পরক্ষণে চিল্লিয়ে বলে,
“ওও ব্রাদার নট অনলি ইন্টারেস্টিং বাট অলসো মিস্ট্রি উইল বি রিভিলড।”
বন্ধুর কথায় আফরাজ বুকের উপর হাত গুজে ঠোঁটের মাঝে বাঁকা হাসি দেয়। জানালার সামনে থেকে সরে কেবিনের থাই গ্লাস দিয়ে কর্মরত এমপ্লয়র্স এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ইয়েস মিস্ট্রি উইল ডিফনেটলি রিভিলড।”
হঠাৎ কেবিনে নক পড়ায় আকবর পেছন ফেরে। তাবাসসুম কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে বিরবিরিয়ে বলে,
‘ডাইনির লেজ যেখান সেখানেই চলে আসা।’ সামনে টু শব্দ করল না বরং আফরাজ এর দিকে চেয়ে বলে,
“দোস্ত তোর প্রাক্তন প্রেমিকা এসেছে।”
‘তাবাসসুম’ এর কথা শুনে চোখ ঘুরিয়ে আকবর এর দিকে ত্যাড়া দৃষ্টিতে তাকায়। বেচারা হকচকিয়ে গেল। সিংহের গুহায় দাঁড়িয়ে ভুল কথা বলে ফেলল। কিন্তু তাদের চেয়ে বেশি উড়নচণ্ডী হলো স্বয়ং নাজীবা। তাবাসসুম কেবিনে এসে বলে,
“স্যার আমাকে ডেকে ছিলেন?”
“ইয়েস মিস পিএ। আপনি দুটো কাপলের জন্য হানিমুন টিকেট বুক করেন। আমার আর আকবরের নামে। আমরা বউ নিয়ে হানিমুনে যেতে চাই ফেনীতে। সো আপনি আপনার কাজ শেষে টিকেট ই-মেইল করে দিয়েন।”
তাবাসসুম এর চোখ বড় হয়ে যায়। তারই সামনে আফরাজ তার হানিমুনের কথা বলছে। ব্যাপারটা অসহ্যকর লাগল তার। সে গলা ঝেড়ে একটুর জন্য আকবরকে স্পেস দেওয়ার জন্য ইঙ্গিত দেয়। আকবর চোখ সরু করে তাবাসসুম এর আপাতমস্তক দেখতে থেকে বেরিয়ে যায়। আকবরকে বের হতে দেখে শান্তির শ্বাস নেয় সে। কেননা অর্ধেক ঝামেলার নাট্যমূল তো এই আকবর কেই মনে হয় তার। বাকি অর্ধেক হলো ঐ মেয়েটা। তাবাসসুম নিজেকে অসহায় ভাবে ফুটিয়ে তুলতে আফরাজ এর পায়ের উপর পড়ে যায়। নড়েচড়ে উঠল আফরাজ। পা সরিয়ে পিছিয়ে তাবাসসুম কে ধমকে উঠে। তার ধমকে কেঁপে উঠলেও ঢোক গিলে আবদার করতে লাগল।
“জান আইমিন স্যার সরি এখন তো আমি আর তোমার ভালোবাসা নেই। তাই বলে এত কষ্ট দিও না। আমি সইতে পারব না। কাল যদি তুমি আমাকে জবের এপয়নমেন্ট লেটার না পাঠাতে তাহলে আমার থেকে রাস্তার ভিখারি হয়ে ঘুরতে হতো। তবেই কি তুমি আমাকে কষ্ট দিতে এই জব দিলে? আমি সহ্য করতে পারছি না আফরু।”
‘আফরু’ শব্দটা তাবাসসুম এর মুখে শুনে বিরক্ত বোধ করে। আফরাজ নিশ্চুপ তার মধ্যে যেনো এসব কথার কোনো প্রভাব হলো না। সে নিজের মত নীরবে ফাইল’স চেক করছে। তাবাসসুম এর একেকটা বাণী বা’নো’য়া’ট মনে হচ্ছে তার। সে ফাইল’স সাইন করার মাঝে বলে,
“দেখো তাবাসসুম এসব বাচ্চামি বাদ দাও। তোমার জবের দরকার ছিল। দিয়েছি এর চেয়ে বেশি কিছু আমি করতে পারব না। আর রইল তোমাকে জব দিয়েছি মানবতার খাতিরে। আশা করি যা আদেশ করেছি তাই পালন করবে।”
তাবাসসুম মনে মনে ফোঁসছে। সে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। আফরাজ এর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
“ওকে আমি টিকেট বুক করে জানাচ্ছি।”
আফরাজ হাতের ইশারায় কেবিনের বাহিরে দিকে যেতে ইঙ্গিত করে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তাবাসসুম ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে যায়। শাকচুন্নী কে বের হতে দেখেই মুখ ভেটকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আকবর। বন্ধুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“এই ডাইনি মেয়ের হাবভাব আমার মোটেও পছন্দ না। সারাক্ষণ আমার কচি বন্ধুর সাথে চিপকে থাকতে চাই। বলি বিয়াত্তা ব্যাটার সাথে আবার চিপকানোর কি দরকার শুনি? এমনেই তো দুজনেই সেকেন্ড হ্যান্ডেড মা*ল।”
শেষের কথায় আফরাজ কিউব বলটি উঠিয়ে আকবরের দিকে ছুঁ’ড়ে মা’রে। এই দেখে চট করে সরে যায় সে। জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বলে,
“কিরে আজ তো আমারে মে’রেই ফেলতি? এটাই তোর ভালোবাসা আমার প্রতি তাই না? এই ভালোবাসলি আমাকে? আজ বুঝছি বন্ধুত্ব বলতে এই যুগে কিছু নেই নেই নেই। ধুমতানানানানা, ধুমতানানানানা।”
আফরাজ ধীরে ধীরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বন্ধুর নিকটে গিয়ে বুকের উপর হাত গুজল। পাগলের মত বিহেইভ করে বেহুদা টিউন করতে করতে আকস্মিক আফরাজ-কে এতটা কাছে দেখে স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে যায় আকবর। বোকার মত হেসে বলে,
“আরে দোস্ত আমি তো মজা করছিলাম। হেহেহহ।”
আফরাজ আকবরকে ছুঁতে নিলেই দু’জনে ধপাস করে পাশে থাকা সোফার পর ছিটকে পড়ে। আফরাজ এর নিচে আকবর ঠাস করে পড়ায়। বেচারা ব্যাকসাইডে হালকা একটু ব্যথাও পেল। আফরাজ বুঝতে পেরে উঠে বসে। আকবরের কোমরে চাপড় মে’রে বলে,
“মনে হচ্ছে এই বয়সেই তুই কিডনী হারাবি। সমস্যা নেই তুই তো আমার দোস্ত। তোর জন্য খাল কেটে কুমির এনে তার কিডনী দিয়ে হলেও তোকে বাঁচাব। হ্যা এতে একটাই সমস্যা। যেখানেই যাবি কুমিরের দলবল তোর পেছনে ঘুরবে। এমনি তো কম ফ্লাটিং করিস না। ভাবীকে দেখলেই তো তোর কলিজা ছ্যাত করে উঠে। তাই ভাবছি তোর কিডনী বেছে আইফোন ফিফটিন কিনব।”
“আজ ফকির বলে এভাবে অপবাদ দিলা বন্ধু। হ্যা হ্যা মনে থাকবে একদিন আমার কিডনীকে তুই ভীষণ মিস করবি। এই কিডনী না থাকলে তো পা*দও দিতে পারব না। তুই না আমার বন্ধু? আমার পা*দ দেওয়ার জন্যে হলেও আমার কিডনী বিক্রি করবি না বলে দেহ্ দোস্ত!”
“এই বলদ এত পা*দ,পা*দ করিস কেন? তোর পা*দের গন্ধে অফিসেও থাকা যায় না। কোন দিন না আবার তোর পা*দের গন্ধে ফ্রাই হয়ে যায় সেই ভয় লাগতেছে।”
“আরে দোস্ত শোকরিয়া কর আমার। আমি পা*দ দেয় বলেই তোর পারফিউমের কোম্পানি এত উঁচু পর্যায়ে গেছে। নাহলে তো মামা তুমি ব্যবসা চালাতে পারতে না। কেমনে জানিস? পা*দের শব্দে পা আছে, পারফিউম এর শব্দেও পা আছে তার মানে কি? তুই পা*দ মা*র আর পারফিউম মা*র একই কথা। যেই লাউ সেই কদু। হুদাই পারফিউম মে*রে লাভ কি সেই খানা টোসার পর তো পা*দই মা*রবে। বাই দ্যা ওয়ে দোস্ত তুই কখনো পা*দ দিস নাই কেন? শোন আজ থেকে পা*দ দিবি। তোর বউকেও পা*দ দিতে বলবি। যেখানে থাকিস পা*দ দিবি আর পেট পরিষ্কার করবি। পা*দ মা*রা ইজ সো হেলদি ওয়ার্ক ইউ নো?”
আফরাজ বন্ধুর কথায় বাঁকা হেসে উঠে দাঁড়ায়। আকবর আফরাজ এর হাবভাব দেখে বলে,
“ছিঃ ছিঃ দোস্ত আমার মুখে পা*দ দিস না। ইজ এ্যা ব্যাড ম্যানার ইউ নো?”
“হা*রামী তোর ইউ নো বের করছি। পা*দের উপর পিএইচডি করছিস তো। আসলেই একজন মানুষ কে দিনে ১৪ বার পা*দ দিতে হয়। নেহ্ বাঁশ খা পু*ত ,পু*ত,পু*ত,পু*ত….”
করে আকবরের মতই নেচে নেচে আফরাজ বন্ধুকে জ্বালাচ্ছে। আকবর নাক চেপে বলে,
“ছিঃ বন্ধু আমার নাকে পু*ত মেরে আমার পা*দ মা’রা কিডনীকে অপমান করলি। এর শোধ আমিও নেবো।”
আকবর ও সমান তালে পা*দ দেওয়ার ভান ধরে দুজনে লুঙ্গি ডান্সের মত নাচতে লাগে। কেবিনের ভেতর দুজনের পা*দের দৃশ্য দেখে তব্দা খেয়ে যায় নাজীবা আর কুসুমা।
চলবে…….
(বিঃদ্রঃ-সরি পাঠকগণ। আজকে একটু ব্যস্ত থাকবো। তাই গল্প এখনই দিয়েছি। আজকে রহস্যেটা আনতে পারলাম না। চেষ্টা করে ছিলাম আনার। কিন্তু গল্পের ভিত্তিতে গতানুগতিক কিছু কথা অবশ্যই লিখতে হবে। তাই আজকের পর্বে খুনসুটি পড়ে হাসুন। ধন্যবাদ আল্লাহ হাফেজ)