অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ #লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) #পর্ব_১১ (মুখোশধারী)

0
473

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১১ (মুখোশধারী)

“জামাইজান আপনার পেটে কি গ্যাস হয়েছে? না মানে আপনি আর আকবর ভাই যেমন করে কোমর ঝাঁকা ছিলেন ওমন করে তো মানুষে পেটের গ্যাস ছাড়ে। আপনার হলে বলুন পেটের গ্যাস দূর করতে আমি সাহায্য করবো। দিনে দু-তিন বার আপনার পেটে বা’রি মা’র’ব। দেখবেন গ্যাস সব ফুড়ৎ করে বেরিয়ে যাবে।”

নাজীবা ভাবীর কথায় শুনে ফিক করে হেসে দিল আকবর। আফরাজ থমথমে মুখে বিবিজান এর কথা শুনলেও আকবরের হাসি দেখে রাগান্বিত নজরে তাকায়। চুপ হয়ে যায় আকবর। তবুও নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে,

“দেখিয়েন ভাবী গ্যাস বের করতে যেয়ে কোনো আবার সিলেন্ডার ব্লাস্ট করে ফেলিয়েন না। বন্ধু আমার আপনার উপর ব্লাশ হয়ে আছে। খেয়াল রাখিয়েন, গ্যাস বের করতে গিয়ে সুপার গ্লু না চলে আসে।”

আফরাজ শুনে তেড়ে আসতে নিলে আকবর তার বউকে ধরে অন্যপাশে সরে যায়। ঢোক গিলে নিজের পাগলী বিবিজান কে বুঝ দিতে বলে,

“বিবিজান চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে যাও। আজ সকালে আকবর ছাইপাশ খেয়ে মাথা নষ্ট করে ফেলেছে। তারে ঠিক করতে গিয়ে আমারেও বিগড়ে দিল। বলদ একখান।”

মনে মনে গা’লি ছাড়ল আফরাজ। অন্যথায় আকবরও বন্ধুর শেষের কথাটুকু বিপরীতমুখে কুসুমা কে বলে দেয়। অথচ নাজীবা আর কুসুমা ঠিকই তাদের স্বামীর ভন্ডামি ধরে ফেলেছে। বেচারা-দের লজ্জায় ম’রি ম’রি অবস্থা। নাজীবা আর কুসুমা আড়চোখে নিজেদের মাঝে গোপন ইশারা ইঙ্গিত করে নেয়। নাজীবা কণ্ঠে গাম্ভীর্যতা টেনে বলে,

“আমরা এখন ক্যান্টিনে খেতে যাচ্ছি। হঠাৎ এসে আপনাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে নিজেদের খারাপ লাগছে। তাই যায়। আল্লাহ হাফেজ।”

কথার সমাপ্তি টেনে দু’জন মেয়ে যেমনে এসে ছিল ঠিক তেমনি বেরিয়ে যায়। লিফটে ঢুকে দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আকস্মিক হাসতে লাগল। দু’জন ব্যাটার মুখই দেখার মত ছিল। কুসুমা কোনো মতে নিজের হাসি থামিয়ে বলে,

“যাই বলো ভাবী দু’জনকে মজামাস্তি করতে ভালোই মানায়।”

নাজীবা তবুও হেসে যাচ্ছে। তাকে হাসি থামাতে বলে কুসুমা। কিন্তু সে থামে না। বরং ফোন বের করে একটা ভিডিও কুসুমার চোখের দিকে ধরে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)সে দেখে হতবাক। নাজীবা লুকিয়ে ফোনে ভিডিও করে ফেলেছে। কুসুমা তার হাত ধরে বলে,

“ভাবী আমারে ওয়াট’স আপে দাও প্লিজ প্লিজ! এই ভিডিও দেখায় আকবর-রে মজা বোঝাব। বিয়ে করেও অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লাটিং করার মজা চু’টিয়ে দেব একদম।”

কিন্তু নাজীবা আনমনে বিরবিরিয়ে বলে,

“জামাইজান আপনাকে এই ভিডিও ভাইরালের ভয় দেখিয়ে শাকচুন্নী কে মা’রা খাওয়াবো। খুব শখ না মেয়ে পিএ রাখার। তাও শুধু শখই না,মানবতার শরীর জনাবের। আপনার মানবতা আচ্ছামত ফলিয়ে বের করবো দেখিয়েন।”

কুসুমা নাজীবা ভাবীকে চুপ থাকতে দেখে মৃদু চা’প’ড় মা’রে। সে নড়েচড়ে বলে,

“হ্যা কি হলো?”

“ক্যান্টিনের ফ্লোরে চলে এসেছি আসো।”

দু’জন মিলে ক্যান্টিনের ভেতর ঢুকে পড়ে। কুসুমা কে প্রায় সবাই চিনে। আকবর নিজেই বলেছিল এই তার বউ। সেজন্য তার ক্যান্টিনে আসা, না আসা একই। এই ক্ষেত্রে নাজীবা একে বারে নতুন। কখনো আফরাজ এর অফিস ঘুরে দেখেনি। আজ এসে ছিল জামাইজান এর সাথে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু দু’ব্যাটার পাগলামীপনা দেখে নিজের মত পাল্টে নেয়। ভাবল কুসুমা ভাবীর সাথে আসল, বিধায় সমস্যা নেই অফিসটা ঘুরে দেখা যাবে। সেই ভেবে দুজনে প্রথমে খেতে এসেছে। তাদের অ্যাসিস্ট করবে তাবাসসুম। আকবর ইচ্ছাকৃত বন্ধুর অগোচরে অ্যাসিসটিং এ ফাঁসিয়েছে তাকে। তাবাসসুম ক্যান্টিনে বসা ছিল। খাওয়া শেষ করে যাওয়ার আগেই ঘোমটা পরিহিত মেয়ে-কে দেখে ফেলল। চিনতে তার মোটেও ভুল হয় না যে,মেয়েটা আফরাজ এর সা’ই’কো ওয়াইফ। শ’য়’তানি বুদ্ধি করে ইচ্ছাকৃত নিজের গলায় পেঁচানো স্কাফ দিয়ে মুখ ঢেকে নেয় সে। নাজীবা তো বেখেয়ালি মুগ্ধ চোখে ক্যান্টিনের মধ্য ডিজাইন দেখ ছিল। কুসুমা কাউন্টার এ যেয়ে অর্ডার করে দেয়। তারা যে টেবিলের কাছে গিয়ে বসতে যাচ্ছিল। সবার চক্ষু অগোচরে নাজীবার চেয়ারের মধ্যে সস ঢেলে দেয় তাবাসসুম। নাজীবাও সেই চেয়ারের উপর বসে পড়ে। তার খেয়াল নেই সেদিকে। তাবাসসুম বাঁকা হেসে মনে মনে বলে,

“এবার বুঝবি আমার সাথে টক্কর নেওয়ার মজা।”

কুসুমা কফি শেষ করে নাজীবা কে বলে,

“ভাবী আপনি হালকা করে ঘোমটা সরিয়ে খান। এখানে কেউ তাকাবে না। কড়া সিকিউরিটি আছে এখানে।”

“তাও ভাবী ভয় হয়।”

“ভয় এখানে কিসের ভয়?”

নাজীবা ভুলে যে মুখ ফসকে সত্য বলতে নিচ্ছিল বুঝতে পেরে হকচকিয়ে যায়। গলা ঝেড়ে বলে,

“আব না মানে আমাকে তো চেনো। আমি একটু পর্দাটা মেইনটেইন করার চেষ্টা করি।”

কুসুমাও বুঝতে পেরে মাথা নাড়ল। তাদের খাওয়া শেষ হতে দেখে তাবাসসুম ফোন বের করে। ফোনের ফোকাস আফরাজ এর বউয়ের ব্যাকসাইড বরাবর রাখে। তারা উঠে চলে যায়। নাজীবার শাড়ির ব্যাকসাইডে লাল রং লেগে আছে যা তাবাসসুম ভিডিও করে রাখল। সস হলেও দেখতে লাগছে পিরিয়ডের র’ক্ত। ক্যান্টিনের এমপ্লয়র্স এর নজরে এলো জিনিসটা। নাজীবার শাড়িতে লাগোয়া র’ক্ত খেয়াল করে মিটমিট হাসতে থাকে। অনেকে কানাঘুষা করে বলতে লাগে।

“মেয়েটার মনে হয় ফাস্ট টাইম পিরিয়ড হচ্ছে।”

“ছিঃ এসব শাড়িতে লাগিয়ে বেশরমের মত ঘুরছে কেমনে মেয়েটা।”

“ছিঃ অফিসের মধ্যে বসও আছেন। তিনি যদি দেখতেন তবে নাক সিটকিয়ে বের করে দিতেন এসব আউল ফাউল মেয়ে-কে।”

“আরে তার চেয়ে বড় কথা এই পাগল মেয়ে-রে নিয়ে কুসুমা ভাবী কি করছেন? মনে হয় আকবর স্যার এই পাগল মেয়ে কে সামলাতে কুসুমা ভাবীকে দায়িত্ব দিয়েছে।”

আশপাশের কটু কথায় নাজীবার যতটা না খারাপ লাগছে, তার চেয়ে ‘পাগল’ শব্দটা বেশি উত্তেজিত করছে তাকে। এখনই যদি সে ‘ড্রা’গ’ না নেয়। তবে তার শরীরে পাগলামীপনা জাগ্রত হবে। নিজেকে কোনো মতে সামলানোর চেষ্টা করছে সে। কিন্তু কিছুতে পারছে না। কুসুমা এমপ্লয়র্স এর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তার পাশে থাকা থাই গ্লাসের দিকে তাকায়। তাকে ঠিকই লাগছে। কিন্তু যখন খেয়াল করে দেখল তখন দেখে নাজীবার শাড়িতে লাল রঙের কিছু লেগে আছে। সে স্তদ্ধ হয়ে নাজীবার পেছনের গিয়ে শাড়ির আঁচল ধরে ফেলে। নাজীবার ধ্যান ফেরে সে কুসুমার স্তদ্ধ চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করে।

“কি হলো ভাবী আপনি আমার পেছনে কি দেখছেন?”

“ভাবী আপনার শাড়িতে এই লাল রঙ নাকি সস? হ্যা ভাবী আপনার পেছনের দিকে কেউ সস লাগিয়েছে। দেখুন আয়নার সামনে!”

নাজীবা থাই গ্লাসের পাশে এটার্চ আয়নার সামনে গিয়ে পরখ করে দেখে। হ্যা কুসুমা ভাবীর কথা সত্য। সে হালকা করে সসের উপর হাত ছুঁয়ে ভাবনায় পড়ে যায়। পরক্ষণে তার মাথায় আগুন ধরে যায়। কুসুমা নিজের পার্স থেকে টিস্যু বের করে মুছতে নিলে নাজীবা তার হাত ধরে ফেলে। সে বলে,

“না ভাবী যে আমার সাথে এই কাজটা করেছে তাকেই এর শোধ দিতে হবে। নাহলে আমি শান্তিতে বসতে পারব না। আপনি আমাকে বলুন অফিসের কত নং কেবিনে সিসিটিভি ফুটেজ আছে?”

“এই কেবিন নিচের গ্রাউন্ড ফ্লোরে। আর আমরা আছি ২নং ফ্লোরে এখন।”

কথাটি শুনে সে কুসুমার হাত ধরে সোজা লিফটে চলে যায়। অন্যথায় তাদের লিফটের মধ্যে যেতে দেখেও কোনো পরোয়া করে না তাবাসসুম। বরং সে নাজীবার অগোচরে যে ভিডিও করেছে, সেটার জন্য একটা ক্যাপশন ভেবে ভেবে নিজের কেবিনে চলে যায়। সে আফরাজ এর পিএ বলে কেবিনটা পেয়েছে। কেবিনে বসে সে তার মা’কে ফোন দেয়। কোনো এক অজানা কারণে তার মা ফোন তুলছে না। সে আজ দুদিন ধরে তার মা’কে ফোনে পাচ্ছে না। যত বারই কল দেয়, নট রিচেবল বলছে। বিধেয় সে আফরাজ এর দেওয়া ফাইল’স চেকিং করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

এদিকে নাজীবা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে। তার পাশেই কুসুমা ভাবী ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নাজীবার পাগলামীপনা যেন প্রকাশ্যে না আসে, মনে মনে তারই প্রার্থনা করছে সে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)নাজীবা-কে নিজের মত ভিডিও রিভাইন করতে দেখে বিরক্ত বোধ করে সিসিটিভি কন্ট্রোলার। তিনি রূঢ় গলায় নাজীবার উদ্দেশ্যে বলে,

“ম্যাম আপনি কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করছেন। এখানে অফিসের বসকে ছাড়া আর কাউকে এলাউ করা হয় না। আপনি আকবর স্যারের ওয়াইফ এর সঙ্গে এসেছেন দেখে সম্মানের সহিতে বলছি, প্লিজ! ম্যাম আপনি নিজের লিমিটেশনে থাকুন। আমাকে দিন ব্যাপারটা আমি হ্যান্ডেল করছি।”

নাজীবার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। বরং সে তার কাজ করেই যাচ্ছে। তার ষষ্ঠইন্দ্রিয় সাক্ষী , ঐ সময় তার চোখের আড়ালে কোনো না কোনো অঘটন ঘটেছে।
ম্যাম এর পাত্তা না পেয়ে কন্ট্রোলার রাগে গজগজিয়ে নাজীবার হাতে স্পর্শ করে। যা দেখে প্রতিবাদ করতে গিয়েও করল না সে। নিজেকে শক্ত রেখেই জ্বলন্ত অগ্নি চোখে তাকায় নাজীবা। তার অগ্নিশর্মা রূপ দেখে আচমকা হাতটা ছেড়ে দেয় কন্ট্রোলার। মাথা নিচু করে নেয়।
নাজীবা তার হাতের উপর আপাতত খেয়াল দিল না। ফুটেজে সে-সময়ের দৃশ্য ভেসে উঠে। বাজপাখির মত ফুটেজের দিকে তাকিয়ে আছে সে। তাবাসসুম এর কৃতকর্মের দৃশ্যপট দেখানো হচ্ছে। যা দেখে নাজীবা আর এক মুহূর্তও সিসিটিভি ফুটেজ এর কেবিনে দাঁড়াল না। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তৎক্ষণাৎ লিফটের দিকে এগিয়ে যায়। সে এখনো তার পরণের শাড়ি চেঞ্জ করেনি। কুসুমাও তার পেছনে গেলো।

_____

দাহাব এহসান আজ নিজেকে পরিপাটি করে তার মেয়ে মিসেস হিয়া কে ডাক দেন। কিন্তু সাড়া শব্দ না পেয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দেন। তিনি কটি পড়তে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলেন। গালের একপাশের চামড়া ধসে পড়বে মত লাগছে। একপ্রকার ঘাবড়ে যান তিনি। তাড়াহুড়ো করে আলমারির পেছনের দিকেই এটার্চ করা রুমে ঢুকার জন্য দাঁড়িয়ে যান। দরজায় লকার লাগানো। একটাই কোড দিলেন,’ব্লা’ড এডিকশন’। এই টাইপ করতেই দরজা খুলে যায়। চটজলদি তার টেবিলের কাছে যান। টেবিলের উপর বিভিন্ন রঙের কেমিক্যাল সলিউশন তৈরি করে রাখা। যেনো এগুলো তার জন্যে রেখেছে কেউ। সময় ব্যয় না করে তৎক্ষণাৎ এক কেমিক্যাল সলিউশন এর ভেতর টিস্যু ডুবিয়ে ভিজিয়ে নেন। পরে টিস্যুটি নিজের মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে ছিপছিপে করে নেন। টিস্যুটি ডাস্টে ফেলে টেবিল ফ্যানের সামনে বসে সুইচ অন করেন। ফ্যানটি চালু হতেই তিনি শান্তি অনুভব করেন। যে গালের চামড়া ধসে পড়-ছিল। সেই চামড়া পুনরায় লেগে গিয়েছে দেখে শয়তানি হাসি দেন। হাসা থামিয়ে পাশে থাকা মিনি ফ্রিজ থেকে র’ক্ত এর প্যাকেট বের করেন। একটা গ্লাসে র’ক্ত ঢেলে সেই গ্লাসে চুমুক দিতে লাগলেন। আপনমনে বিরবিরিয়ে বলেন,

“একমাত্র নাজীবার কারণে আমি জমিদারী প্রথার উত্তরাধিকারী হতে পারলাম না। তোর জীবিত অবস্থা আমার জন্য কাল হয়ে আছে। আজও জমিদারী প্রথার ভাগ নিতে গেলে তোর নাম উঠে আসে। তোর একার জীবনের জন্য আমি আটকে আছি। তোকে মুক্ত করতে পারলেই জমিদারী প্রথা পেয়ে যেতাম। কিন্তু তোর ঐ মৃত দাদীর খতিয়ান নামার কারণে তোকে বিয়ে না করা অব্দি প্রথা হাসিল করতে পারব না। তোকে একবার পেয়ে বিয়েটা করতে পারলেই আমার হাতের মুঠোয় পুরো আলী ভিলা ঝুঁকে পড়বে। কত বছর ধরে এই প্রথার অপেক্ষায় আছি। সেটা শুধু আমিই জানি। তোর কাছ থেকে প্রথা ছিনিয়ে নিতে আমার নিজের শরীরের যে কত ক্ষতি করেছি আমি।”

কথাটুকু বলে নিজের গালে হাত রাখে দাহাব এহসান। মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দেখলেন। অর্ধচুল তার হাতে চলে এসেছে। তার চেয়ে বড় কথা চুলের অর্ধেকই সাদা। এক-দুটোই কালো শুধু। আয়নায় নিজের মুখশ্রী দেখে অতীতে ডুব দেন।

অতীত……

“এই বুড়ি তুই তোর উকিল দিয়ে খতিয়াননামা আমার নামেই কর। নাহলে তোর পরিবারে কে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দেব।”

“আপনি এতো খারাপ সেটা আগেই বুঝে ছিলাম। আফসোস আমার বাবা বুঝেননি। তাই প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর পর আপনার ফাঁদে পড়ে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে ছিলেন। কিন্তু আমিও শের কাশেম এর মেয়ে ফাতেমা শেরা। আমি বেঁচে থাকতে কখনো আপনার আশা পূরণ হবে না। আপনি পা’পী, নি’কৃ’ষ্ট এক জা’নো’য়া’র। আপনার অন্তিম মুহূর্ত খুব ভয়ানক হবে মিলিয়ে নিয়েন আমার কথা।”

বুড়ি স্ত্রীর কথায় দাহাব এহসান উচ্চস্বরে হাসতে লাগল। তার হাতের তাবিজ ছুঁ’ড়ে মে’রে ‘ঠাসস’ করে চ’ড় বসিয়ে দেন স্ত্রীর গালে। স্ত্রীর গাল চেপে ধরে বলেন,

“এই বুড়ি বয়স তো কম হলো না তোর। এখন ম’রলে কেউ সন্দেহ ও করবে না। ভাববে অসুস্থতায় ভোগচ্ছিলি এর রেশ ধরেই মা’রা গেলি।”

কথার ইতি টেনে জোরে ধাক্কা দেন তিনি। ফাতেমা শেরা ফ্লোরের উপর পড়ে ব্যথা পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠেন।ঘুমন্ত নাজীবা জেগে উঠল। ভয়ে ঘুমন্ত মা’কে চেপে ধরে। জনাব মোবারক আলীও জেগে গেলেন। স্ত্রী কে ঘুমন্ত দেখে ডাকলেন না। অক্লান্ত পরিশ্রমের পর রাতে ঘুমিয়েছে তার বউ। বিধেয় ভয়ার্ত মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমাতে বলেন তিনি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)গায়ের টিশার্ট ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে যান। মায়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে বাবা-মা’র রুমে যান। দাহাব এহসান দরজা খুলেই ম’রাকান্না জড়িয়ে দিলেন। নিজের কোমর ব্যথার ভান ধরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। মা-কে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে জনাব মোবারক আলী মা-কে পাঁজাকোলা করে বিছানার উপর শুয়ে দেন। কপালে হালকা আঁচ দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন তিনি। তবুও টু শব্দ করলেন না। মায়ের জ্ঞান ফেরাতে পাশে পানি ভর্তি মগ থেকে হালকা পানি বের করে মায়ের মুখে ছিটিয়ে দেন। মিসেস ফাতেমার জ্ঞান ফেরতেই ছেলে-কে কাছে দেখে খুশি হোন। মুখ খুলতে নিলে পেছনে থাকা জা’নো’য়া’র-কে বড়সরো ফুলদানি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। শেষ বয়সে এসে ছেলের বংশ কে হারাতে চান না তিনি। অতঃপর মিথ্যা ঘটনা বলে ছেলেকে তার রুমে পাঠিয়ে দেন। মোবারক আলী রুম থেকে বের হওয়ার পর পরই ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দেন দাহাব এহসান। বাবার এরূপ আচরণে অবাক হোন তিনি। বাবাকে ছোট কাল থেকে দেখে এসেছেন তিনি। কখনো বিরূপ আচরণ করতে দেখেননি। রাত বেশি হওয়ায় মায়ের কপালে ব্যান্ডেজ করে নিজ রুমে চলে গেলেন।
অন্যথায় দাহাব এহসান নিজের স্ত্রীর শিউরে বসে তার গলার কাছে হাত রেখে মৃদু গলায় বলেন,

“আহারে বউ আমার। ব্যথা লাগছে কপালে? জানিস তোর প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তোকে কেন বিয়ে করে ছিলাম ? যাতে করে তোর রাজমহল আমি পেয়ে যায়। কিন্তু আফসোস কে জানতো আমার শ্বশুর যে এক নাম্বারের চতুর মানব বের হবে। আমার নামে ব্যবসার খতিয়াননামা লিখে জমিদারী প্রথা তার কন্যার নামে লিখে দিলেন। এতে কী? আমিও শ্বশুরের মন জয় করে তোকে বিয়ে করে নিলাম। যদিও জানতাম তুই বিধবা,এক ছেলের মা তবুও আই ডোন্ট কেয়ার। এই বুড়ো বয়সে এসেও আমার লোভ নিয়ন্ত্রণে নেই। কেনো? কারণ আমার তোকে সহ্য হয় না। তুই আমাকে ছেলে সন্তান দিস নাই। ছেলে সন্তান তো আগের জামাই-রে দিয়ে খেয়ে দিলি জামাই-রে। আমার বংশে সব কিছু নিজ ছেলেকে দিতে চেয়েছিলাম তাও হতে দিলি না। তোর আগের পক্ষের সন্তান কে তো আমি পৃথিবী ছাড়া করব দেখে নিস। শুধু সে নয় তার পরিবারও ধ্বংস হবে। কিন্তু একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলব তোকে? আমাদের নাতনী নাজীবা আছে না? ওকে না আমার মা’রতে মন চাইছে না। তাহলে কী করা যায় ভাবছি?

কথাটুকু বলে দাহাব এহসান নিজের সাদা দাড়িতে হাত বুলাতে লাগলেন। মিসেস ফাতেমার কপালে প্রচন্ড ব্যথা করছে। তিনি বহু কষ্টে উঠে বসেন। দেওয়ালে হেলান দিয়ে তার দ্বিতীয় স্বামীর নি’কৃ’ষ্ট মনের বাণী শুনছেন। যবে নাতনী-র কথা বললেন। পিলে চমকে উঠলেন। স্বামীর দিকে চেয়ে আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করেন।

“মা মানে আমার নাতনী কে দিয়ে কী করবেন আপনি ? দেখেন নাতনী আমার মাত্র সাত বছর বয়সী। আমার ছেলের পরিবারের ক্ষতি করিয়েন না। আমি আমার পক্ষের সম্পত্তি আপনার নামে করে দেব। কিন্তু আমার নাতনীর….।”

তাকে চুপ করতে ইশারা করে তিনি হাস্যজ্জ্বল গলায় বলেন,

“তোরে মে’রে ফেলার পর তোর ছেলে আর ছেলের বউকেও মে’রে দেবো। কিন্তু তোর নাতনিকে নিজের দ্বিতীয় বউ বানিয়ে রক্ষিতা করে রাখব। কি করব বউ? নাতনী আমার কচি শরীরে ভরা। ওকে না পেলে জীবনটা বৃথা মনে হবে। জোয়ান বয়সে তোর মত বিধবা-রে বিয়ে করে নিজের পায়ে কুড়াল মে’রে ছিলাম। এর প্রায়শ্চিত তোর নাতনী কে বিয়ে করে করবো। আমার শখ ছিল অবিবাহিত, কচি মেয়ে বিয়ে করার। তুই ম’রার পরই না হয় করব।”

কথার ইতি টেনে হাসতে লাগলেন তিনি। মিসেস ফাতেমা তীক্ষ্ণ কথা বলতে গিয়েও পারলেন না‌। তার গলা কেমন যেন জ্বালা পোড়া করছে। চোখে ঝাঁপসা দেখতে পাচ্ছেন। হঠাৎ গলা দিয়ে র’ক্ত ঝরতে লাগে। দাহাব এহসান রুমের বাহিরে গিয়ে মেইন দরজার ছিটকিনি খুলে দিলেন। দরজার তালা ভেঙে মাটিতে ফেলে রাখলেন। পুনরায় রুমে এসে আয়েশে রকিং চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দেন। ফ্লোরের উপর থেকে বড় সাইজের পাথর হাতে নিলেন। বউ ফাতেমা কে ছটফট করতে দেখে খোশমনে নিজের কপালে জোরেসরে আ’ঘা’ত করে বসেন। ব্যথার চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

চলবে……
(কালকে ইন শা আল্লাহ ফ্রি থাকলে বোনাস পর্ব দিতে পারি। যেহেতু আজকের পর্বে অতীতের কিছু অংশ এসেছে সেহেতু বোনাস পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করব। আল্লাহ হাফেজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here