#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৪ (টুয়িস্ট)
“ওয়াও বিবিজান তুমি আমাকে আদর করতে ওয়াশরুমের ভেতর অব্দি চলে এলে। কিন্তু না বলে কেনো আসলে? আমারও লজ্জা আছে তো নাকি! তুমি শাড়ি লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছো আর আমি খালি গায়ে শুধু ট্রাউজার পরে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি চাইলে শাড়িটা খুলে ফেলতে পারো। এমনিই তোমার জিরো ফিগার দেখিনা অনেকদিন।”
“চ’ড় খেতে চাইছেন আপনি? আবুল তাবুল কথা বন্ধ করুন। এখান থেকে আমি আমার জিনিস নিতে এসেছি।”
“জিনিস? কোন জিনিস?”
আফরাজ আন্দাজ করতে পেরেও চুপ রইল। সে জানে তার বিবিজান কোন জিনিসের কথা বলছে। নাজীবা আমতা আমতা করে বলে,
“আ আ আপনাকে বলব কেনো? বের হোন একটু। আমি জিনিসটা নিয়ে যাওয়ার পর আসিয়েন প্লিজ।”
আফরাজ কথাটা শ্রবণ করেও ধীরপায়ে বিবিজান এর নিকট এগিয়ে যেতে লাগল। স্বামীকে কাছে আসতে দেখে বুক ধরফড়িয়ে উঠে নাজীবার। আজ পাঁচ দিন পর সে তাদের স্বামী-স্ত্রীর রুমের মধ্যে এসেছে। এতদিন খুব সতর্কে এড়িয়ে চলছিল আফরাজ কে। কিন্তু আজ গোসল করার সময় তার খেয়ালে এলো তার একটা গোপন জিনিস আফরাজ এর রুমের ওয়াশরুমে থেকে গিয়েছে। মনে মনে ঢোক গিলে। এতদিন আফরাজ খুব রাগারাগী করেছে একটিবার কথা বলার জন্য। সেই তাকে পাত্তা দেয়নি। আজ জিনিসটা জরুরি না হলে সে মোটেও রুমটির আশপাশেও ঘেঁষত না। কিন্তু সে এক ব্যাপারে আশ্চর্য হলো বটে। আজ তাকে দেখেও কেনো আফরাজ স্বাভাবিক?
বিবিজান এর মুখের সন্নিকটে এসে তাকে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে আফরাজ। নাজীবা চোখ বুজে অন্যদিক মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। মেয়েটা নিজেকে রোবোটিক ভাবে প্রদর্শন করছে। আফরাজ এর বুক জ্বলছে মেয়েটা তাকে ভালোবেসে পাগলামী করে বেড়ায়। অথচ ভালোবাসার মানুষটির অন্তর অব্দি বুঝতে পারে না। এই নিদারুণ কষ্টের সমীপে নিজেকে শক্ত রেখেই হাসিমাখা মুখে চেয়ে আছে তার বিবিজান এর দিকে। প্রণয়ী গলায় আওড়ায়।
“কিছু দেখা দৃশ্য সত্য হয় আবার কিছু দৃশ্য মিথ্যে হতে কতক্ষণ? সব দেখাই সত্য নয় সেটা তুমিও জানো, আমিও। জানো তুমি নিজে আমাদের মাঝে যে দূরত্ব টেনেছো না? সেটার ইতিও তুমিই টানবে। তফাৎ থাকবে ইতি টানলেও আমাকে নাও পেতে পারো।”
শেষের বাক্যে থমকানো দৃষ্টিতে চেয়ে তাকায় নাজীবা। মুহুর্তেই তার চোখজোড়ায় অশ্রু জমে গেল। কিন্তু সেই অশ্রু মুছল না আফরাজ। কখনো কখনো চোখের অশ্রু মেটাতে নেই, মনের জোরে অশ্রু ঝরিয়ে ফেলা ভালো। এতে যদি স্বস্তি মেলে তবে ক্ষতি কই! নাজীবা মুখ খুলতে নিলে আফরাজ সন্তপর্ণে তার হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দেয়। লজ্জা পেল নাজীবা। প্যাকেটটি হাতে নিয়ে কাঁচুমাচু করছে। যেনো তার স্বামীর চোখে এ প্যাকেটটি পড়ায় লজ্জার সম্মুখীন হতে হলো। ব্যাপারটা বিরক্তিকর লাগল আফরাজ এর। বিবিজান এর কাছ থেকে দূরে সরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। চিরনী দিয়ে চুল আঁচড়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“শুনো বিবিজান এমনি তো আর তোমার স্বামী হয় নেই? তুমি না হয়, না বুঝলে আমার অন্তরের কথা। আমি তো বুঝি। পাঁচদিন দূরে থেকেছো এর মানে এই নয় যে কোনো কিছুই আমার চোখে পড়েনি। গতকাল রাতে যে তোমার পেটে ব্যথা করছিল একবার জানালে কি তোমাকে পাগলাগরাদে রেখে আসতাম? যতসব ফালতু ভাবনা তোমার। থাক এখন, এখানেই ফ্রেশ হও। এই প্যাডের প্যাকেটটা নতুন। তোমার ব্যাগে থাকা প্যাডের প্যাকেটে কোনো প্যাডই ছিল না। তাই সকালে গিয়ে তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে এসেছি।”
কথাটুকু বলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায় আফরাজ। নাজীবা নিশ্চুপ রইল। হ্যা, তার পিরিয়ডের কারণেই সে তাদের রুমে এসেছিল। গতরাতে কোনো ভাবে একটা প্যাড কুসুমা ভাবীর থেকে নিয়ে ছিল। এখন আবারো চাওয়া মানে সরু দৃষ্টিতে তাকানো। তাই নিজ দায়িত্বে এসেছিল প্যাডের প্যাকেট নিতে। এসেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। কেননা সে বেডরুমে আফরাজ কে না দেখতে পেয়ে ভেবেছিল সে অফিস থেকে ফিরেনি। খোশমনে ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। যেই না সামনে তাকালো থমকে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ ওয়াশরুমের আয়নার সামনে উদাম শরীরে ট্রাউজার পরে দাঁড়িয়ে ছিল আফরাজ। হাতে তার রেজর মেশিন। যা অফ করা ছিল। বলতে গেলে তখনও সে অন করেনি। আফরাজ এর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল সে ভীষণ খুশি হলো তাকে দেখে। পরক্ষণে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ভাগ্যিস রেজর মেশিন অন করেনি। নাহলে মহারাণীর লুকোচুরি ধরতেই পারতাম না।’
শাড়ির আঁচল খামচে ধরে নাজীবা দরজার পাশে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে। তার যে, প্যাড লাগবে তা মুখ ফুটে বলতেও পারছিল না। অথচ স্বামী তার অবস্থা ঠিকই বোঝে নিল। হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে নাজীবার ধ্যান ফিরে। আফরাজ গলা ঝেড়ে বলে,
“এই যে বেগম সাহেবা যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন এটা-কে বাথরুম বলে। কষ্ট করে ফ্রেশ হয়ে বের হোন।”
নাজীবা বোকা কণ্ঠে ‘জ্বি জ্বি বের হচ্ছি’ বলে তার কাজ সারতে লাগল। আফরাজ জানে তার বিবিজান এর কাজ জলদি শেষ হবে না। তাই সে নাজীবার রুমের ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
একজোড়া চোখের মালিক আফরাজ কে যেতে দেখে আস্তে করে তার বেডরুমে ঢুকে পড়ে। সর্বক্ষণে চেয়ে লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ শুনতে পায়। ঢোক গিলে ওয়াশরুমের দরজার পাশে একটি ডাস্টে-র বালতি খেয়াল করে। সেখানে চুলেরগুচ্ছ পড়া দেখতে পায়। চোরা-চোখে তাকিয়ে এক মিনি সাইজের পলিথিনে চুলগুচ্ছ ভরে নেয়। কোনো দিক না তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যায়। নাজীবা দরজা খুলতেই দেখল রুম শুনশান হয়ে আছে। অথচ তার মনে হচ্ছিল কে যেনো রুমের মধ্যে হাঁটাচলা করেছে। আফরাজ করেছে ভেবে, সে আর ঘাঁটল না। ধীর পায়ে চুল শুকিয়ে নেয়। অতএব, দাদীর রুমের দিকে এগিয়ে যায়। আজ সকালে তার দাদী শ্বাশুড়ি বলে ছিল, দুপুরে গোসল সেরে রেডি হয়ে থাকতে। দাদীর রুমের দরজায় নক করে। খাদিজা বেগম ফোন হাতে নিয়ে অস্থির ভাবে বসে আছেন। কবে গাড়ির শব্দ শুনতে পাবেন এই আশায়। দরজার শব্দ শুনে তিনি ‘ভেতরে আসো’ বলে অনুমতি দেন। নাজীবা শাড়ির আঁচল মাথায় টেনে সালাম দিয়ে ঢুকে পড়ে। খাদিজা বেগম নাতবউকে দেখে খুশির আহ্লাদে বলেন,
“নাতবু এদিক আয়। এই নেহ্ চাবির গুচ্ছ। ঐ আলমারির দরজা খুলে তিন নাম্বার ড্রয়ারে দেখ সোনার বক্স রাখা। এটা বের করে আমায় দেহ্।”
নাজীবা মৃদু হেসে দাদীর কথামত সোনার বক্স বের করে তার হাতে দিলেন। তিনি নাজীবা-কে ইশারায় পাশে বসতে বলেন। সে বসতেই তিনি সোনার চেইন নাজীবার গলায় পড়িয়ে দেন,হাতে সোনার একজোড়া বালা,কানে সোনার ছোট দুল পড়িয়ে দেন। এতে ভীষণ অবাক হয়ে যান নাজীবা। সে বুঝতে পারল না তার দাদী শ্বাশুড়ি হঠাৎ তড়-জড় করে সোনা কেন পড়িয়ে দিচ্ছেন। খাদিজা বেগম নাতবউয়ের নাকফুটো করা নেই দেখে আফসোস এর সুরে বলেন,
“আহারে নাতবু তোর নাক তো ফুটো করা নেই। আমি ফুটো করে দিলি কি বেশি ব্যথা পাবি?”
নাজীবা তার মা-কে নাকফুল পরতে দেখেছিল। তার মা বলতো নাকফুল সামলাতে কষ্ট হয় বেশি। কেননা নাকের ময়লা পরিষ্কার করা যায় না সহজে। কিন্তু ব্যবহার করতে করতে ঠিক হয়ে যায়। ঢোক গিলে বলে,
“দাদী বেশি ব্যথা করবে না?”
“আরে না নাতবু।”
খাদিজা বেগম আপনমনে সুঁই-সুতো বের করে নাজীবার কাছে বসেন। সুতো সুঁই এর মধ্যে ঢুকিয়ে গিঁট মে’রে নিলেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)আফরাজ বিবিজান এর খোঁজে তার দাদীর রুমে এসে দেখল। তার দাদী সুঁই দিয়ে নাজীবার নাকফুটো করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই দেখে সে দাদীর মন ঘুরাতে চটজলদি বলে উঠে।
“সতীন জলদি রেডি হয়ে নাও। বাবা-মা আসছেন।”
খাদিজা বেগম খুশি হয়ে গেলেন। তিনি নাজীবার আপাতমস্তক দেখে ‘মাশাআল্লাহ’বলেন। নাতবউ এর চিবুক ধরে বলেন,
“নাতবু আমার ছেলে আর ছেলের বউ বহুত বছর পর আইতেছে। তাই তোর নাক ফুটো করতে পারলাম না। কিন্তু পরে করে দিবো নেহ্ চিন্তা করিস না কেমন?”
নাজীবার হেসে দাঁড়িয়ে যায়। খাদিজা বেগম নিজের মত খুশির চোটে বিরবিরিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েন। নাজীবা অবাক চাহনি নিয়ে বলে,
“আপনার বাবা-মা আছেন?”
আফরাজ বিবিজান এর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কোমরে হাত রেখে গলা উঁচিয়ে বলে,
“কেন তোমার মনের অভিযোগ বুঝি শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কে বোঝাবে? নাকি তাদের অভিযোগ দিয়ে আমাকে ধুলাই করানোর ধান্দা হুম?”
“আপনি কি সঠিক জবাব দিতে পারেন না? আমি জিজ্ঞেস করেছি কারণ আমার শ্বশুর শাশুড়ি তারা। বউ হিসেবে রান্না করার দায়িত্ব আমার।”
“বাবা-রে সাধুসাবিত্রী আমার। আগে না স্বামী কর্ম পালন করা উচিৎ ছিল তোমার। তার পর যেয়ে পরিবার কর্ম। স্বামীর ‘স’ অব্দি পালন করতে দিলে না , আসছে আমার মহারাণী রান্নার ‘র’ করতে।”
“আপনি কিন্তু আমার ইনসাল্ট করতেছেন!”
“যাই হোক বাবা-মায়ের সাথে দেখা করেই আমরা বের হবো। কুসুমা ভাবী-কে বলেছিলাম। তুমি তার সাথে মিলে ব্যাগ গুছিয়ে নাও।”
‘ব্যাগ গুছানোর’ কথা শুনে নাজীবা আহত গলায় বলে,
“আপনি বুঝি আমাকে রেখে আসবেন?”
“হুম একমাস তো শেষ বিয়ের। এবার নাহয় তোমাকে তোমার আসল অস্তিত্বের মাঝে রেখে আসা দরকার। তাই ওখানে নিয়ে যাবো। ওহ জায়গাটা হলো ফেনী।”
বুক কেঁপে উঠে নাজীবার। সে যেখান থেকে পালিয়ে আসার জন্য মৃত্যুর সমান লড়াই করেছে সেই স্থানে পুনরায় যাবে ভাবতেই তার মন-মস্তিষ্ক এ আলোড়ন সৃষ্টি হলো। সময় বিলম্ব না করে আফরাজ এর পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় সে। আফরাজ বাঁকা হেসে বিবিজান এর যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। সে জানে তার বিবিজান ড্রা’গ ভেবে মেডিসিন দিবে শরীরে। তাই নিশ্চিন্তে সে তার লাইব্রেরী রুমে চলে যায়। আকবর মাথায় হাত চেপে চোখজোড়া গোল করে পেপার্স এর দিকে তাকিয়ে আছে। আফরাজ লাইব্রেরীর দরজা লাগিয়ে আকবর এর কাছে গিয়ে তার পিঠে মৃদু চা’প’ড় মা’রে। আকবর আশ্চর্যান্বিত গলায় বলে,
“ভাই ইউ গ্রেট ভাই। তুই কেমনে এতকিছু জোগাড় করতে পারলি? আমি হলে তো ডাসামার্কা মুখ নিয়ে বসে থাকতাম। তুই তো সুপারের চেয়েও লিজেন্ড ব্রো।”
আফরাজ হাসল। বন্ধুর হাত থেকে পেপার্স নিয়ে এক ফাইলে রেডি করে রাখে। তার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার নয় বছর বয়সে যে, গেমটা শুরু করছিলেন শ্রদ্ধীয় দাদাজান সেই গেমটা শেষ করবে আমার বিবিজান। তার এই লড়াইয়ে আমি থাকব। তার আগে আরো কিছু তথ্য জানা বাকি। আমার নয় বছরের স্মৃতি সম্পর্কে জানতে হবে। নাহলে কিছু তথ্য অপূর্ণ রয়ে যাবে।”
“এসব বুঝলাম। কিন্তু তোকে একটা কথা জানানোর ছিল। ইউএসএ এর নাকিব মুনসিফ এর নাম শুনেছিস?”
“‘নাকিব মুনসিফ’ নামটা শুনা শুনা মনে হচ্ছে। কিন্তু মনে পড়ছে না ঠিক। কেন কি হয়েছে?”
“আমাদের হানিমুন স্যুট বুকিং যেই রিসোর্টে করা হয়েছে। সেই রিসোর্ট এর মেইন ওনার হলো নাকিব মুনসিফ। তার রিসোর্টেই ইউজ-ফুল কোম্পানির ওনার্স কে এওয়ার্ড দেওয়া হবে। বলতে পারিস এওয়ার্ড ফাংশন হবে। লাকিলী সেই রিসোর্টেই তুই আর আমি ইনভাইটেড। ”
আফরাজ শুনে মুচকি হাসল। ত্যাড়ামি করে বলে,
“তোর শাকচুন্নী’টা কি কাজ করতেছে নাকি সারাদিন খাবার টুসতে থাকে? পিএ হয়ে আমার বালের কাজ করতেছে।এই গাধা মেয়ের কারণে অফিসের কোনো জিনিসই সহজে হাতের কাছে পায় না। আমারে পাগল কু’ত্তা কামড়ে ছিল যে, ঐ গাধীরে পিএ বানিয়েছি। মেয়েটা কাজ সহজ না করে কঠিন করে বসে থাকে। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে নতুন কেবিনে শিফট হয়ে ছিলাম। তাই আমার পুরোনো জিনিস হারানো ভয় নেই। শোন পুরোনো রুমটা লক করেই রাখিস। যখন দরকার হবে তখনই যাবো এখানে। এখন চল আব্বু-আম্মু আসবে এয়ারপোর্টে যায়।”
দেড়ঘণ্টা পর…..
মিসেস ফেরদৌসী বাসার দরজার সামনে শ্বাশুড়ির পাশে শাড়ি পরিহিত শালীন নারী-কে দেখে চমকে গেলেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কিন্তু খুশি হয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তখনি তিনি খেয়াল করলেন,মেয়ের গালের উপর থাকা একটি তিলের উপর। যে তিল দেখে তিনি পুরো মুখশ্রীর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। আকস্মিক তার বুকে কাঁপন ধরে যায়। তিনি কাঁপা হাতে মেয়ের বাহু চেপে ধরে বলেন,
“এই মেয়ে তু তু তুই আমার বাড়ির চৌকাঠে কি করছিস হুম? তোকে এখানে কে এনেছে? এই অপয়া, শ’য়’তান কালো ছায়া কোনখান। তুই আমার বাড়ির ভেতর কেমনে?”
কথার দায়ে জট করে ধাক্কা দেয় মেয়েটিকে। মিসেস ফেরদৌসীর কাজে খাদিজা বেগম সহ সবাই অবাক হয়ে গেলেন। আফরাজ এর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল। হাত মুঠোবদ্ধ করে তৎক্ষণাৎ নাজীবা-কে উঠিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে নেয়। মায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“দেখুন কয়েক মাসের জন্য এ দেশে এসেছেন। শান্তিভাবে থেকে চলে যাইয়েন। কিন্তু প্লিজ এর মাঝে আমার বিবিজান-কে কোনো ক্ষতি করবেন না।”
‘বিবিজান’ শুনে মিসেস ফেরদৌসী হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। জনাব ইসমাইল ফাহিম বউকে আঁকড়ে ধরেন। মা-কে দেখে বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চাইল আফরাজ। ছেলের অসহায় চাহনি দেখে সহ্য হলো না তার। তিনি চোখের ইশারায় আত্মস্থ করেন যে, তিনি সামলে নিবেন বিষয়টা।
খাদিজা বেগম নাজীবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“হয়ত তোমার সাথে কোনো না কোনো সত্য জড়িয়ে আছে। যা দেখে আমার বউ-মা ওভাবে কটুকথা বলে ফেলেছে। তুই সেগুলো মনে নিস না। শ্বাশুড়ি কে মা ভেবেই আপন করে নিস। আর আমি জানি এই কাজ তুই সহজেই করতে পারবি।”
শ্বাশুড়ির আক্রমণে খারাপ-কষ্ট লাগলেও, পরক্ষণে দাদী শ্বাশুড়ির কথায় সেও বুঝতে পারল হয়ত কোনো কারণেই তিনি এরুপ আচরণ করে ছিলেন। খাদিজা বেগম বউমার কাছে চলে যান। আফরাজ চারপাশে কাউকে দাঁড়ানো না দেখে বিবিজান কে চেপে ধরে। নাজীবা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছাড়তে ইশারা করে। আফরাজ ছাড়ার বদলে উল্টো চুমু দিতে ইঙ্গিত করে, নিজের চোখজোড়া বন্ধ করে আমন্ত্রণ জানায়। নাজীবা ব্যঙ্গ করে হেসে আফরাজ এর গালে চা’প’ড় মা’রে। বিরক্তের চটে গরম চোখে তাকিয়ে ইশারা করে বোঝায় ‘কি?’ নাজীবা কালো পোশাক পরিহিত গার্ড’স এর দিকে ইশারা করে। আফরাজ এর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা তালবাহানা করে চুমুটা নিতে দিচ্ছে না। গরম চোখে গার্ড’স এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি রে ভাই? তোরা কি গদর্ভ নাকি? দেখতেছিস তোদের বস, তোদের ম্যামকে পটাচ্ছে। লজ্জা কেন দিচ্ছিস আমার বউটারে? এখন কি তোদের চোখ বন্ধ করতে আমন্ত্রণ জানাতে হবে?”
বলতে না বলতে নিজের পকেটের গা’র্নের উপর হাত রাখে আফরাজ। গার্ড’স সব পেছনের দিকে ফেরে যায়। নাজীবা হা করে তাকিয়ে রইল। কি হলো ব্যাপারটা? সেও নাছোড়বান্দা আফরাজ এর গলায় ব্যান্ডেজ দেখে সেই জায়গায় দাঁত বসাতে নেয়। কিন্তু পারল না। কারণ এবার নাজীবার মত করেই আফরাজ তার বিবিজান এর ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে চেপে ধরে। ‘আহহহ’ নাজীবা অস্পষ্ট চিৎকার করতে নিলে, আফরাজ তার মুখ চেপে টেনে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। আকবর দেখে শিস বাজিয়ে বলে,
“আজকালের জেনারেশনের লাজ-লজ্জা ক্ষয়ে গেছে। অলিতে-গলিতে চুমাচুমি,কামড়া-কামড়ি চলছে। কবে যে দেশের উন্নতি হবে কে জানে?”
বিবিজান-কে আগলে রেখে নিজ কার্য সাধন করতেই থাকে আফরাজ। বন্ধুর কথায় জট করে পকেটের গা’র্ন বের করে তার দিকে নিশানা করে ট্রিগার নাড়ল। বেচারা আকবর গা’র্ন দেখেই বোকার মত হেসে বলে,
“আ আরে বন্ধু কনটিনিউ, কনটিনিউ। চুমু খেয়ে রাগকে কমাও। এখন থেকে আমি সাইনবোর্ড নিয়ে ঘুরব, বউয়ের চুমু খাও আর রাগের চৌদ্দগোষ্ঠি-কে উড়িয়ে দাও। সুন্দর না?”
আফরাজ গার্নের হ্যান্ডেল বরাবর আঙ্গুল চাপে। আকবর ঢোক গিলে বলে,
“আরে আমার ও তো একগ্লাস চুমুর শরবত খেতে হতো। খেয়ে আসতেছি। ইউ দোস্ত কনটিনিউ।”
পালিয়ে যায় আকবর। অন্যথায় আফরাজ নাজীবা কে কামড়ে ধরে রেখে পাঁজাকোলা করে রুমে নিয়ে যায়। তন্মধ্যে নাজীবার মুখ চেপে রাখায় বেচারী ‘উম উম উম’ করতে থাকে। কোনো ফায়দা হয় না। নাজীবা-কে নিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। সাভেন্ট’স, গার্ড’স সব যার যার মত কাজে ধ্যান দেয়।
চলবে…….