#যদি_দেখার_ইচ্ছে_হয়
#আফসানা_মিমি
|পর্ব: ৫
“ দেখছিস না! বউ রোমান্স করছে!”
কলি, লায়লা বেগমের ছোট সন্তান। হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। অন্তিককে মনে প্রাণে খুব চায়। মোল্লা বাড়িতে থাকা অবস্থায় অন্তিকের ঘরকেই নিজের ঘর মনে করে সারাদিন পরে থাকতো। অন্তিকের জন্য সাজগোজ ছিল তার নিত্যকার কাজ। কখনো অন্তিককের সামনে শরীরের বিশেষ অঙ্গ পরিদর্শন করে আকৃষ্ট করতে চেয়েছে আবার কখনো অন্তিকের কাছাকাছি চলে আসারচেষ্টা করতো সে। লায়লা বেগম মেয়ের তীব্র বেহায়াপনা দেখে অন্তিককেই দোষারোপ করে। অন্তিকের দাদা নাজিমউদ্দীন ও চাচা ফিরোজের কাছে তার ব্যাপারে কুৎসা রটনা করে। বাড়ির ছেলেকে তো আর তাড়িয়ে দেওয়া যায় না। এদিকে ছোট ছেলে অসুস্থ বলে কায়েসকে তারা অগ্রাহ্য করতে পারবে না তারা। অন্তিককে বাড়ি ছাড়া করলে শেষে ছোট ছেলেকে চিরদিনের জন্য হারাতে হবে।এসব ভেবে নাজিমউদ্দীন কলিকে হোস্টেলে পাঠানোর চিন্তা করেন। এমনকি অন্তিকের বিয়ের ব্যাপারটাও খুব জলদি সেরে ফেলেন কলির অগোচরে।আশ্বিনের হঠাৎ বৃষ্টির মতো আজ কলির আগমন ঘটে মোল্লা বাড়িতে। এসেই সরাসরি অন্তিকের ঘরে প্রবেশ করে। অন্তিকের সাথে অন্য নারীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক মেনে নিতে তার কষ্ট হচ্ছে। অন্তিকের কথার প্রত্ত্যুত্তরে বলে,“ তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারো না,অন্তিক ভাই!”
অন্তিক কলিকে দেখিয়ে মিষ্টির হাত নিজোর হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রত্ত্যুত্তরে বলে,“ ঘর থেকে বের হো,কলি। তোর ভাবিকে আদর করা বাকী আছে।”
অন্তিকের কথায় কলির অন্তরে কীসের ঝড় বইছে জানা না গেলেও মিষ্টির কপালের মাঝে সূক্ষ্ম ভাঁজ স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে। অন্তিক আড়চোখে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে কলির দিকে মনোযোগ দেয়। বুদ্ধিমতি মিষ্টি ঠিকই অন্তিকের কারসাজি বুঝতে পারে। কলির সামনে লজ্জা পেয়ে আঁচলে মুখ ঢাকে এসে। বেচারা কলি এমন দৃশ্য দেখে সহ্য করতে না পেরে ঘর থেকে বের হয়ে আসে।
——————————
বৈকালীন সময়ে বসারঘরে প্রতিবেশীদের হাসিতে মোল্লার বাড়ি মেতে উঠেছে। সকলের মধ্যমণি মিষ্টি আর অন্তিক।
মিষ্টির দুষ্ট মিষ্টি কথায় আমন্ত্রিত প্রতিবেশীগন তৃপ্ত। লায়লা বেগম ও কলি অদূরে দাঁড়িয়েই সব দেখছে। দুজনের মুখই পানসেটে ভাব। একজন শত্রুর খুশিতে নাখোশ তো অপরজন প্রিয়জনের পাশে অন্য নারী দেখে নাখোশ। প্রতিবেশী একজন লায়লা বেগমকে ডেকে বলতে শুরু করে,“ সকালে বউ না দেখাইয়া ভালোই করছো লায়লা ভাবী। মাইয়াডা কী মিষ্টি একদম নামের মতো! আমগোরে যেমন মাথায় তুইলা রাখছে দেখবা একদিন মোল্লা বাড়ির সংসার খুব সুন্দর কইরা চালাইবো।”
মুখে হাসি রেখে দাঁতে দাঁত চেপে লায়লা বেগম উত্তর দেন,“ আজকালকার পুলাপান তো স্বামীর ঘরে ঢুকেই মা চাচীদের কথা শুনে না। অসম্মান করে, দেখতেই পারে না।এখন তো সব ঠিকঠাক দেখতাছি। এই মোল্লা বাড়ির বউ হওয়া এতো সহজ নয় ভাবী! দুই একদিন যাক তারপর বুঝা যাবে।”
লায়লা বেগমের কথায় প্রতিবেশীরা সায় দেন। হাসি মজার মাঝেই বিকাল পাড় হতেই সকলে বিদায় হোন।
সন্ধ্যার সময়ে বাড়ির পুরুষেরা বেশিরভাগ বাহিরেই থাকে। তাঁদের দেখা মিলে চায়ের দোকানে। চা ওয়ালা চাচাদের হাতের চায়ের স্বাদ ঘরের চায়ের কাপে খুঁজেও পাবেনা। অন্তিকও কলির ভয়ে বাড়ি ছেড়েছে। আসবে গভীররাতে। যা সে ইতিপূর্বে করে এসেছে। নব বঁধুর কথা সে ভুলেই গিয়েছে।ঐ যে বলে না! বিপদে পড়লে মানুষ আপনজন কী নিজেকেই ভুলে যায়! বাড়িতে দুইজন নারী মিলে মিষ্টির সাথে কী কী করতে পারে তা সবার কল্পনার বাহিরে।
সন্ধ্যার আলো জ্বালাতে মিষ্টি নিচে নামে। সন্ধ্যায় নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস, নতুন বাসায় কোথায় কী আছে তা অজানা বিধায় ঘুরে ঘুরেও চারপাশ অবলোকন করছে সে।
“ আমার জানের কাছ থেকে দূরে থাকবে,অসভ্য মেয়ে।”
কলি বসার ঘরে রাগে ফুসফুস করছিল। মিষ্টিকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠে। মিষ্টির কানের পোকাকে নাড়িয়ে দিয়েছে এমন একটা ভাব করে সে কানে হাত রাখে।দুই একবার কানে নাড়াচাড়া করে উত্তর দেয়, “ আমি মনে প্রাণে রূপবতী মেয়ে। আসক্তিও কেবল স্বামীর জন্য।মেয়েদের জানের পিছনে ছুটাছুটি করার কোনো কারণ দেখি না ননদিনী! তুমি নিশ্চিত থাকো,তোমার কৈ মাছের ঐ জানের পিছনে এই মিষ্টি লাগতে আসবে না।”
“ আমি আমার জানের জান, অন্তিক ভাইয়ের কথা বলছি অসভ্য মেয়ে। অন্তিক ভাই শুধুই আমার। কতো রাত অন্তিক ভাইয়ের জন্য নিজেকে তৈরী করেছি তা তুমি জানো?একদিনের মেয়ে হয়ে অন্তিকের কাছাকাছি চলে এসেছো। লজ্জা করে না? অন্তিক আমার। ওর মন,শরীর সবখানে শুধুই আমার অধিকার।”
মিষ্টি চলে যাচ্ছিল কলির শেষোক্ত কথা শুনে ফিরে আসে।কলির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলতে থাকে,“ আরেকবার তোর ঐ জবান থেকে বলে দেখ ক্যাকটাসের কলি! তোর জিভ কে’টে ফেলবো। ঐ রাক্ষসী পেত্নী তুই দেখোস নাই, আমার অন্তু আমাকে কতোটা সোহাগ করে! চাক্ষুষ দেখেও আমার জান মন প্রাণ বলিস কীভাবে? আরেকবার অন্তুকে নিজের বললে মাথার চুল একটা একটা করে ছিঁড়ে কয়েলের আ’গু’নে পু’ড়ে ফেলব। আসছে! কলি বাঁশের ফলি!”
কলি স্তব্ধ বনে যায়। মিষ্টির সাহস দেখে অবাক হয়ে যায়।সে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিতেই মিষ্টি আঁচলের নিচ থেকে রেকর্ডিং করা কলির কথাগুলো বাজায়। কলি রাগে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বে মিষ্টিকে খুব করে শাসিয়ে যায়, “ তোমাকে দেখে নিব, মেয়ে।”
মিষ্টি ভেঙ্গচি কে’টে পাকের ঘরে চলে যায়। বিড়বিড় করে বলে,“ এমন পরগাছাকে কীভাবে উপড়ে ফেলতে হয় তা এই মিষ্টির জানা আছে।”
সময় তখন রজনীর আটটা বাজে। মিষ্টির হাসির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে কায়েসের ঘর থেকে। শ্বশুর বউ মিলে মোবাইলফোনে লুডু খেলছে। খেলা একদম শেষ পর্যায়ে। দুজনেরই একটা গুটি অবশিষ্ট রয়েছে। মিষ্টি পুরোদমে খেলায় মগ্ন। সে অসহায় কণ্ঠে শ্বশুরকে বলে,“ বাবা,হেরে যান না! আপনি খুব পাকা খেলোয়াড়। পাড়ছি না তো!”
কায়েস উত্তর দেয়, “ আজ তোমার শাশুড়ির কথা খুব মনে পড়ছে। তার সাথেও লুডু খেলতাম। এভাবেই না পারলে বলতো। রেনু থাকলে তোমাকে মাথায় তুলে রাখতো।”
মিষ্টি এবার নড়েচড়ে বসে।এ বাড়িতে আসার পর থেকে শাশুড়ি নামক মানুষটাকে দেখা হয়নি শাশুড়ি নামক মানুষটির আচরণ কেমন তা উপলব্ধি করতে পারেনি। সত্যিই কী সব শাশুড়িরা খারাপ হয়? মিষ্টি উৎসাহের সাথে জিজ্ঞেস করে, “ উনি কী পৃথিবীতে নেই বাবা?”
“ জানিনারে মা! আমার উপর অভিমান করে অনেক আগে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে কেউ জানিনা। তোমার শাশুড়ি এমন একজন জেদি মানুষ ছিলেন যদি সে না চায় তাহলে তাকে কেউ খুঁজে পাবে না।”
“আপনাকে কিছুই বলেনি কেন চলে গিয়েছে?”
“না, আমার এখনো মনে আছে চলে যাওয়ার আগেরদিন রাতেও একসাথে খাবার খেয়েছিলাম।কতো খুশি ছিলাম আমরা! কিন্তু এর পরদিন সকালেই তার সকল প্রয়োজনীয় বস্তু বাসায় পড়ে থাকলেও মানুষটা ছিলনা।”
“আপনি কখনো খুঁজতে চেষ্টা করেননি বাবা?”
কায়েস লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করে অসহায়ের স্বরে বলে,“ না আমি তাকে খুঁজিনি।মোল্লা বাড়িতে এই ঘরে পড়ে আছি। আমি জানি সে একদিন আসবে কারো মাধ্যমে হোক বা নিজে হোক সে আসবে।”
মিষ্টি শ্বশুরের বিশ্বাস দেখে আরো কিছু বলতে নেবে তার আগেই মোল্লাবাড়ির প্রধান ফটকে শব্দ হয়।মিষ্টি শ্বশুরকে বলে বাহিরে শব্দের উৎস খুঁজতে বের হয়ে আসে।
অন্তিক এসেছে প্রবেশ দ্বারে চোরের মত মাথা ঢুকিয়ে আশেপাশে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে সে। এমন সময় মিষ্টি ঘর থেকে বের হয়ে আসে অন্তিকের এই অবস্থা দেখে দুষ্ট হেসে এগোতে থাকে। উদ্দেশ্যে অন্তিককে ভয় দেখানো। অন্তিক পা আগাতে নিতেই তাকে কেউ জাপটে ধরে গালে চুমু বসিয়ে দেয়। অন্তিক ভেবেছিল কাজটা কলির কিন্তু পর মুহূর্তে মিষ্টির খিলখিল হাসিতে সে বুঝতে পারে এটা তার নব বঁধুর কাজ।মিষ্টি হেসে বলে,“ ভিটামিন-এ পেতে কেমন লাগে, অন্তু?”
অন্ত স্তব্ধ সাথে চমকায়িত। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন। সে ভাবছে, এই মেয়ের লজ্জা শরমের বালা নেই নাকি! ঘরের কাজ বাহিরেও কীভাবে করে যাচ্ছে সে! ভদ্র অন্তিক মিষ্টির সান্নিধ্যে এসে নিজ সত্তাকে হারিয়ে ফেলে। মিষ্টির মিষ্টি হাসির মায়ায় পড়ে বাঁকা হেসে মিষ্টির দিকে ঠোঁট এগোয়। লজ্জায় আড়ষ্টতায় মিষ্টি নুয়ে যায়।গালগুলো গোলাপের পাপড়ির ন্যায় গোলাপি হতে থাকে।অন্তিক ঐ লাল গোলাপি গালে জোরে কামড় বসায়। মিষ্টি তৎক্ষনাৎ গগনবিদারী চিৎকার করে ওঠে। লায়লা বেগম ঘর থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করে,“ কেউ মরে গেল নাকি?”
মিষ্টি লায়লা বেগমের ন্যায় উচ্চস্বরে শুধায়,“ আপনাদের ছেলে কামড়ে দিয়েছে।”
লায়লা বেগম নির্লজ্জ বলে চলে যায়। অন্তিকের তখন চোখ যায় দোতলায় দাঁড়িয়ে থাকা কলির দিকে বিড়বিড় করে অন্তিক তখন বলে উঠে, “ এ বিপদ থেকে এই মেয়ে কীভাবে রক্ষা পাবে? ”
অন্তিক রাগান্বিত চোখে মিষ্টির দিকে তাকায়। মিষ্টির হাত ধরে মেল্লা বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।
চলবে……………