#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১২
“বউ এই কি হয়ে গেল? ঘরের মধ্যে মায়ের খু’ন হয়ে গেল। বাবাকেও আহত করে দিয়েছে। কে ঢুকে ছিল কিছুই জানতে পারছি না। নাদিম নাজীবা তো দাদী-দাদী ভক্ত ছিল। অসময়ে মায়ের মৃত্যু মেনে নিতেও পারছি না।”
মিসেস মেহজাবিন স্বামীর কাঁধে হাত রেখে শান্ত্বনার গলায় বলেন,
“দেখুন এসব ভেবে লাভ নেই। আমরা বাবার কথাও অমান্য করতে পারছি না। চেয়ে ছিলাম মায়ের পোস্টমর্টেম হোক। কিন্তু বাবা যে ম’রাকান্না জড়িয়ে দিয়েছেন। এ দেখে আমারই কষ্ট লাগছে। তিনি বার বার কান্নার সুরে তাড়াতাড়ি উনার স্ত্রী কে কবর দেওয়ার কথা বলছেন। নাহলে যে মায়ের রুহ্ শান্তি পাবে না। এখন যদি লা’শের পোস্টমর্টেম করা হয়, তবে লা’শকে কাটবে অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে লা’শের সাথে বেধরক আচরণ করতে পারে। এর জন্য ভয়ও হয়। তাই বলছি বাদ দিন। মায়ের রুহের জন্য আমরা কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করি।”
জনাব মোবারক আলী কিছু বলতে নেওয়ার পূর্বেই কাজের ছেলের উচ্চস্বরে চিৎকার শুনতে পান তারা। এতক্ষণ যাবত বাড়ির উঠোনে বসে আলাপচারিতায় বসে ছিলেন তারা। চিৎকার শুনে গিয়ে দেখলেন। নাজীবার কোলের উপর দাহাব এহসান শরীর এলিয়ে দিয়ে আছেন। দৃশ্যটি বি’শ্রী বটে। দাদার শরীরের নিচে ছোট নাজীবার শরীরটা রেহাই পাওয়ার আশায় ছটফট করছে। অন্যথায় দাহাব এহসান নিজেকে অজ্ঞান এর ভান ধরে নাতনীর শরীরে মৃদু চাপ দিচ্ছেন। কাজের ছেলে হঠাৎ কোথার থেকে এসে দেখে ফেলায়, অজ্ঞানের নাটক করে শুয়ে রইলেন সেভাবে। নাজীবা তো ঘুমিয়ে ছিল আচমকা এমন কিছু হবে সে ভাবতেও পারেনি। সেও সমান তালে জোর গলায় বলছে,
‘দাদু উঠুন প্লিজ কি হয়েছে আপনার? আমি ব্যথা পাচ্ছি দাদু উঠুন না প্লিজ!”
ছোট মেয়ের কণ্ঠ শুনেও তিনি নির্জীব ভাবে পড়ে রইলেন নাজীবার উপরে।
জনাব মোবারক আলী মেয়েকে কষ্টে দেখে আঁতকে উঠলেন। তৎক্ষণাৎ বাবাকে আস্তে ধীরে উঠিয়ে সোফার উপর শুয়ে দিলেন। মিসেস মেহজাবিন মেয়েকে উঠিয়ে হাত-পা শরীরটা মচমচে করতে চাপ দিতে লাগলেন। আড়চোখে বাবার দিকে তাকালেন। আরেকবার মেয়ের অসহায় ব্যথাতুর চেহারার দিকে তাকালেন। মনে মনে তিনি খটকা অনুভব করেন। নাজীবা কে তিনি খাওয়ে ঘুম পাড়িয়ে গিয়ে ছিলেন। তবে এখানে বাবা কেন এসে ছিলেন? ছেলের বউয়ের রুমে না বলে প্রবেশ করাটা বেমানান লাগল তার, তিনি মেয়েকে বুকে চেপে ধরে কণ্ঠে দৃঢ়তা এনে বলেন,
“বাবার মুখে পানি ছিটিয়ে দিন তো।”
মোবারক আলী মগভর্তি পানি নিয়ে বাবার উপর ছিটিয়ে দিলেন। জ্ঞান ফেরার ভান করে নিভু নিভু চোখের পাপড়ি মেলে ধরলেন সামনে। দু’কঠোর ব্যক্তির মুখোভঙ্গি দেখে মনে মনে কিছুটা ভয়ও পেলেন তিনি। যদি তারা তার উদ্দেশ্য ধরতে পারেন,তবে তার ফাঁসি নিশ্চিত করে ছাড়বেন তারা। এই ভেবে সে পুনরায় ম’রা’কান্না জুড়ে বলে,
“ও আমার নাতনী গো , তোর দাদী চইলা গেছে রে। এহন যে তোদের আমি ছাড়া আর কেউই নেই। আমাকে কেন একলা করে গেলি ফাতেমা? তোরে ছাড়া আমি কেমনে বাঁচমু এই পৃথিবীতে। আমার আর কেউ নেই। এই আলী তোর বোনডারে খবর দেয় রে, জলদি আইতে কও । কবর দেওয়ানের আগে একবার মায়ের চেহারাডা দেখে নিক।”
বাবার অপার্থিব কথা শুনে, ভাবলেন হয়ত শোক মেটাতে নাজীবাকে আগলে ধরে ছিলেন। এর মাঝেই জ্ঞান হারায়। মোবারক আলী দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন বের করেন। ‘হিয়া বোন’ নামের নম্বরে ফোন দেন। ফোন রিসিভ হতেই তিনি বোনকে মায়ের ঘটনা বলেন। এতে তার বোনও কাঁদতে লাগলেন। তৎক্ষণাৎ স্বামী-সন্তান নিয়ে আসছেন বলেন।
বেডরুমে মেয়ের শিউরে বসে চিন্তিত মনে ভেবেই যাচ্ছেন মেহজাবিন সিরাত। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে খেয়াল করলেন। মেয়ের গলায় লাল হওয়া জায়গাটি। এমন চিহ্ন এক অবিবাহিত মেয়ের গলায় কেমনে এলো? ঘাবড়ে রুমের বাহিরে যান। মোবারক আলী কে কাজে ব্যস্ত দেখে কিছুটি বলার সাহস পেলেন না। চুপটি করে রুমে এসে মেয়ের পাশে শুয়ে পড়লেন। মায়ের আকস্মিক মৃত্যু তিনিও মানতে পারছেন না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ভাবতে লাগলেন ভোরের ঘটনা।
সাতসকালে উঠা মেহজাবিন সিরাত এর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আজ উঠে খেয়াল করলেন প্রধান গেটের তালা ভাঙা আর গেটের ছিটকিনি খোলা। এ দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি। তৎক্ষণাৎ দারোয়ান ডেকে চারপাশ নজরদারি চালাতে বললেন। ঘরের প্রতি রুম চেক দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় শ্বশুর-শ্বাশুড়ির রুমে এসে দরজা নক করতেই দরজা আপনাআপনি খুলে যায়। তিনি মৃদু গলায় ডাক দিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে চিৎকার করে উঠলেন। মোবারক আলীর ঘুম ছুটে গেল। তিনি তড়িঘড়ি দৌড়ে বউয়ের কাছে গেলেন। বউকে বাবা-মায়ের রুমের বাহিরে দেখতে পেয়ে চমকে গেলেন। তিনি ‘কি হয়েছে’ জিজ্ঞেস করতে নিলে বাবা-মায়ের আহত অবস্থা দেখে নিজেই বোবা হয়ে গেলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি বাবার কপালে ব্যান্ডেজ করে দেন, মায়ের শরীরে হাত ছুঁয়ে দিয়েই ধপ করে বসে পড়লেন। মেহজাবিন সিরাত স্বামীর অবাক চাহনি দেখে শ্বাশুড়ির শরীর হালকা ছুঁয়ে দিয়ে অনুভব করলেন শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। তিনি আতংকে শিটিয়ে পড়লেন। এদিকে ছেলে আর ছেলের বউকে দেখে দাহাব এহসান নিজেও কান্নার অভিনয় চালু করে দিলেন। সব তো ঠিকই চলছিল। কিন্তু কেমনে মোবারক আলী আমার সত্য জানতে পেরে আমারই বানানো কালো জাদুর মন্ত্রের তাবিজ আমারই বুকে গেঁথে খন্ডবিখন্ড করে দিল। ইশ! আমার সৎ ছেলেটা যদি আমার মন্ত্র না ভাঙত। তবে আমি কবেই গুরু তান্ত্রিক হয়ে যেতাম। তখন বছরের পর বছর নাজীবার শরীর নিয়ে মেতে থাকতে পারতাম। কিন্তু সমস্যা নেই নাজীবার কারণেই তার পরিবারকে আমার পেটের ভক্তভোগী হতে হলো ।
অতীতের কথা ভেবে হাসতে থাকে দাহাব এহসান। সে নিজের মত বলতে লাগে।
“তা কি হলো? মেয়ে তান্ত্রিক বিদ্যায় কম যোগ্যতা পেলেও বিজ্ঞান বিষয়ক বিদ্যায় সাফল্যতা পাওয়েছি। বিজ্ঞানের অপব্যবহার করেই কেমিক্যালি নিজের জোয়ান রুপ ধারণ করে রেখেছি। নাজীবা তোমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার জন্য এই যুবক রুপই আমার দরকার ছিল। এখন শুধু তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষা।”
হঠাৎ মেয়ের ডাক শুনে দাহাব এহসান গলার স্বর বাড়িয়ে মেয়েকে গোপন রুমে আসতে বলেন। মিসেস হিয়া বাবার গোপন রুমে চিনেন। তিনি কুড়িয়ে কুড়িয়ে হেঁটে রুমে আসলেন। কিছু র’ক্ত এর নতুন প্যাকেট হাতে করে এনেছেন। বাবার মিনি ফ্রিজে সেগুলো রেখে চলতে যেতে নিলে দাহাব এহসান গম্ভীর গলায় মেয়েকে ডেকে তুললেন।
মিসেস হিয়া জানেন এখন তার বাবা খোটা দিবেন। বিধেয় নিজেকে ধাতস্থ করে বাবার সামনে যেয়ে দাঁড়ান।
“মা বাবার জন্য মেয়েটারে খোঁজতে পেরেছো কি?”
নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলেন মিসেস হিয়া। দাহাব এহসান নীরবতা পছন্দ করলেন না হুংকার মে’রে দাঁড়িয়ে যান। রাগের বশে মেয়ের কাটা পায়ে জোরে লা’থি দেন। ব্যথায় চিৎকার করে বসে যান তিনি। কাঁটা পায়ে আঘাত লাগায় র’ক্ত ঝরতে লাগল। তিনি বাবার দিকে তাকিয়ে কান্নাময় গলায় শুধান।
“বাবা আপনি এমন কেন করলেন? আমার পা’টা একবারও খেয়াল করেছেন? জ্বীনটা আমার পায়ের অর্ধ মাংস নিয়ে গেল। প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে নকল জিনিস লাগিয়েছি। সেই জায়গায় এত বড় আঘাত কেনো করলেন বাবা? আমার তো দোষ ছিল না। আমি সবোর্চ্চ চেষ্টা করছি মেয়েটিকে খোঁজার। জ্বীন দিয়েও কাজ হলো না। তবে আমি আমার এক খবর পাচারকারী থেকে দারুন খবর জানতে পেরেছিলাম। তাই সেই খবর সত্য কিনা তার যাচাই করতে তাবাসসুম কে পাঠালাম।”
মেয়ের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকান তিনি। চোখের ইশারায় কোন খবর জানতে চাইলেন। মিসেস হিয়া নিজেকে সামলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ান। পায়ের মধ্যে উড়না পেঁচিয়ে নিয়েছেন। এতে র’ক্ত পড়া তাৎক্ষণিক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি মৃদু গলায় বলেন,
“আফরাজ এর কোম্পানিতে বোধ হয় নাজীবার খোঁজ পাওয়া যাবে। কারণ নাজীবার নিখোঁজ এর পর মেন্টাল হাসপাতাল থেকে জানতে পেরেছিলাম। এক বুড়ি মহিলা তাকে রক্ষা করে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে ছিল। তার পর কি হয়ে ছিল এই ব্যাপারে আমার মোটেও ধারণা নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি, মেয়েটা নাজীবাই হবে।”
শুনেই দাহাব এহসান উম্মাদের মত দাঁড়িয়ে যান। নিজের ভাড়াটে লোক নিয়ে আফরাজ এর অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েন। মিসেস হিয়া দেখে মনে মনে ‘চ’ উচ্চারণ করে গা’লি দিলেন। কোনোমতে কুড়িয়ে হেঁটে গোপন রুমের বাহিরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। নিজ রুমে এসে গলা ফাটিয়ে কাজের মেয়ে-কে ডাক দেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) মেয়ে এসে ম্যামের নাজুক অবস্থা দেখে ডক্টরকে কল দিয়ে থাকেন।
_____
তাবাসসুম এর কেবিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল নাজীবা আর কুসুমা। কুসুমা ভাবী ভয়ে তড়তড় করে কাঁপছে। কারণ তিনি কখনো ঝগড়া বিবাদ কি জিনিস চোখে অব্দি দেখেননি। সেখানে আজ নাজীবা ঝগড়া বাঁধানোর জন্য নিজ পায়ে হেঁটে এসেছে। ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল সে। নাজীবা রাগে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলল। হাত মুঠো করে সশব্দে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তার এমন কান্ডে কিছুটা হকচক খেয়ে যায় তাবাসসুম। সে ফাইল চেকিং শেষে টিকেট বুক করার প্রসেসিং করছিল। আকস্মিক কারো আগমনে সে বিব্রতবোধ করল। সামনে তাকাতেই হা হয়ে যায়। এ কোন সুন্দরী এলো? তার চেয়েও সুন্দর কাউকে দেখে তাবাসসুম দাঁতে দাঁত চেপে সম্মানের কণ্ঠে বলে,
“জ্বি আপনি কে ম্যাম আর আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি বলুন?”
নাজীবা ভাব নিয়ে বুকের উপর হাত গুজল। তাবাসসুম এর মেকআপ ভর্তি গালের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের কণ্ঠে বলে,
“আপনার হাঁটু খালি রাইট? আইমিন আপনি তো হাঁটুর উপরে কাপড় পরে থাকুন?”
“ইয়েস ইজ দেয়ার এনি প্রবলেম?”
“নো ইজ এ্যা গুড ফর মি।”
কথাটি বলে নির্দ্বিধায় গিয়ে তাবাসসুম এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। সে ভ্রু কুঁচকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই নাজীবা পেছন মোড়ে তাবাসসুম এর কোলের উপর বসে যায়। এমন দৃশ্যপটে কুসুমা দু’হাতে গাল চেপে ধরে। নাজীবা আয়েশে তার শাড়ির সসগুলো তাবাসসুম এর নগ্ন হাঁটু তে ঘেঁষে মাখিয়ে দেয়। চট করে দাঁড়িয়ে কুসুমার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এ দেখে তাবাসসুম ‘এ্যাআআআ’ চিৎকার করে উঠে। তার হাঁটুতে সস লেগে বি’শ্রী অবস্থা হয়ে গিয়েছে। ক্ষোভ নিয়ে সুন্দরী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,
“ম্যাম আপনি আমার সাথে এমন কেন করলেন? আপনার কারণে এখন বাসায় চলে যেতে হবে। এই অবস্থায় অফিসও করতে পারব না।”
নাজীবা বাঁকা হেসে বলে,
“আমার সাথে পাঙ্গা নিতে চেয়েছিলে না শাকচুন্নী কোথাকার! অন্যের জামাইয়ের দিকে কুনজর দিস শা’লী বেশরমের বস্তা। তোকে তো জানে মে’রে দিতে মন চাইছে। কিন্তু জামাই আমার আবার শোক সইতে পারবে না ভেবে ছাড় দিচ্ছি। পরের বার যদি আমার শাড়িতে সস লাগানোর চিন্তা করিস। তবে তখন আর তোর নগ্ন হাঁটুতে নয়, তোর এই আটাময়দা মাখা মুখেই মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে ভস্ম করে দেব। চিনে রাখ এই মুখের মেয়ে-কে। মিসেস নাজীবা মুসাররাত ওরফে আফরাজ ফাহিম এর ওয়াইফ।”
তাবাসসুম শুনে আর কেবিনের মধ্যে অন্যান্য এমপ্লয়র্স এর আগমনে বিরক্তসূচক মাথা নুয়ে চটজলদি বেরিয়ে চলে যায়। নাজীবা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কন্ট্রোলার এর দিকে তাকায়। সে ঢোক গিলে তৎক্ষণাৎ নাজীবার সামনে গিয়ে ক্ষমা চাইল। নাজীবা নম্র গলায় শুধায়।
“দেখুন ক্ষমা চেয়ে লজ্জা দিবেন না। আপনি আমার বাবার বয়সী তাই বলে অচেনা কোনো মেয়ের হাত স্পর্শ করার স্পর্ধা করবেন না। যতই বিরক্ত হোন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে শিখুন। এবার যান সবাই।”
“এভরিওয়ান ওয়েট এ্যা মিনিট! এখনো কিছু কথা বাকি আছে। সবাই হল রুমে আসুন।”
আকবর কেবিনের দরজা খোলে বলল। কুসুমা নাজীবার প্রতিবাদী রুপে আনন্দে জড়িয়ে ধরল। দেবরের কথায় নাজীবা হেসে কুসুমার সাথে হল রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
হল রুমে এসে নাজীবা কৌতুহলী দৃষ্টিতে আশপাশ পরখ করছে। পুরো হল রুম অন্ধকারে আচ্ছন্ন। বিধেয় তার নজরে আসছে না কিছু। আচমকা হাতে টান পড়ায় মৃদু চিৎকার করে উঠে। পরক্ষণে স্পর্শ-কারী মানবকে অনুভব করতে পেরে মুচকি হাসল। আফরাজ সন্তপর্ণে নাজীবার কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিসিয়ে বলে,
“বিবিজান রুমের ডান পাশে চেঞ্জিং রুম আছে। সেখানে গিয়ে আমার রেডি করা শাড়িটা পড়ে আসো কুইক। আই ক্যান্ট ওয়েট টু সি ইউ বিবিজান।”
স্বামীর আবদার সূচক কথা শুনে নাজীবা মুচকি হেসে চেঞ্জিং রুমের দিকে গেলো। কুসুমা অন্ধকারে এদিক ওদিক দেওয়াল হাতড়ে কিছু ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কেননা সে একটু হলেও আফরাজ এর কণ্ঠ শুনতে পেয়েছে। তাহলে নিশ্চয় নাজীবার সঙ্গে হবে সে। তাদের স্পেস দিয়ে নীরবে সরে যায় কুসুমা। আকবর অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে চট করে কুসুমা কে আকড়ে ধরে। দেওয়ালের কোণায় ঘেঁষে দাঁড় করায় বউকে সে। কুসুমা কাঁচুমাচু করে নিজেকে সরানোর চেষ্টা করছে। কারণ কিছুক্ষণ পর বাতি জ্বালানো হলে তারা বেকায়দায় পড়বে। বউয়ের মোচড়ানো দেখে আকবর বিরক্তকর গলায় বলে,
“কি বউ এভাবে মোচড়াচ্ছো কেন? একটা চুমু খেতে চাইছি খেতে দাও না প্লিজ! লাইট অন করে দিলে মিষ্টি আর পাবো না। তাই বলে দিলাম, যদি এই মিষ্টি খেতে না পারি। তাহলে আজই সুগার মার্কা মিষ্টি খেয়ে ডায়বেটিস রোগী হয়ে যাবো।”
জামাই এর আবদার রাখতে কুসুমা তার কথামত কাজ করে।
কিছুক্ষণ পর….
একটি লাইট জ্বালানো হলো তার আলো পড়ে নাজীবার উপর। কালো-সাদা জর্জেট শাড়ীতে নাজীবাকে পরিপূর্ণ পরী মনে হচ্ছে। মুখেও হালকা সাজ সেজেছে , তার উপর ডিজাইনিং মাস্ক পরিহিত রুপ। সুশ্রী সৌন্দর্যে রাঙা তার নারী হেঁটে আসছে তার দিকে। আফরাজও নিজেকে রেডি করে ফেলেছিল। তার পরণেও সাদা-কালো সুটসেট। নাজীবার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় আফরাজ। লাজুক হেসে স্বামীর হাত ধরে স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। সে জানে না এই আয়োজন কিসের জন্য? শুধু জানে তার স্বামী হয়ত কোনো কারণে ভীষণ খুশি। নিশ্চুপে দেখতে লাগল নাজীবা। স্বামীর হাত ধরে স্টেজের উপর উঠে পড়ে। আফরাজ টেবিলে রাখা ফুলের বুকি নাজীবার হাতে দেয়। বুকি নিয়ে সে আফরাজ এর বাহু শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। সে কখনো এত মানুষের সামনে এসে দাঁড়ায়নি। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে। তার শরীরও মৃদু কাঁপছে। একসময় এত মানুষের সামনেই সে লাঞ্ছিত হয়ে ছিল। তার চেয়ে বড় কথা ‘পাগলী’ নামক তর্কমা নিয়ে বদ্ধ রুমে গলাফা’টা কান্না করে ছিল। বিবিজান কে ভয় পেতে দেখে ভরসার সহিতে আগলে নেয় আফরাজ। তাকে জড়িয়ে ধরে বিবিজান এর বাঁ-হাতের অনামিকা আঙ্গুলে ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দেয়। নাজীবার ভয় কমলেও হঠাৎ তার নজর পড়লো জানালার বাহিরে গেটের দিকে। সাইকোপ্যাথ এম্বুলেন্স ভ্যান দেখে তার চোখজোড়া বড় হয়ে যায়। স্তদ্ধ দৃষ্টিতে আফরাজ এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনি এভাবে বেইমানি করতে পারলেন?”
চলবে……
(আন্তরিক ভাবে দুঃখিত আমার প্রিয় পাঠকগণ। আপনাদের বোনাস পর্ব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ বাসায় একটা দাওয়াত পড়ায় গল্প লেখার সময় পায়নি। এই যে একঘণ্টা আগেই ফ্রি হলাম। তার পর গল্প লিখে চেকিং করার সময়ও পায়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। তাড়াতাড়ি আপনাদের জন্য পোস্ট করলাম। আর নতুন বছরের শুভেচ্ছা ইন শা আল্লাহ আল্লাহ হাফেজ।)