#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০২
“আপনি না আমার বিবিজান? তো আমার জন্য মরিচের গুঁড়া মেশানো কফি’টা অবশ্যই আপনার ও খেতে হবে।”
ডাইনিং টেবিলে ঘোমটা দেওয়া রমণীকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল আফরাজ। খাদিজা বেগম নাতির দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকায়। নাতবউর কাচুমাচু ব্যবহার স্পষ্ট বোঝাচ্ছে যে, সে কৌশলে কফিতে মরিচের গুঁড়া মিশিয়েছে। খাদিজা বেগম গলা কেশে নাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। আফরাজ শান্ত চোখে দাদীর দিকে তাকায়। তিনি নাতির হাতের উপর হাত রেখে বলে,
“দাদুভাই যা হয়েছে ভুলে যাহ্ না। নাতবউ আর এমনটা করবে না।”
“নো দাদী। স্বামীর কথার মান্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। সো আই ওয়ান্ট টু সি হার রেসপন্সিবিলিটি ফর মি।”
আকবরও তার বন্ধুর কথার উপর কিছু বলার মত পেল না। তার পাশে ভীতিগ্রস্থ হয়ে বসে রইল তার বউ কুসুমা। সে করুন চোখে মেয়েটির দিকে তাকায়। সে ঘোমটার আড়ালে কীরূপ আচরণ করছে তা বোঝা মুশকিল। অন্যথায় নাজীবা অপলক তার স্বামীর দিকে চেয়ে আছে। সাদা শার্ট,কালো প্যান্ট,কালো সুট এর মধ্যে শ্যামবান পুরুষ এর সৌন্দর্য যেন দেড়গুণ বেড়ে গিয়েছে। মুখশ্রীর মধ্যে রাগের ছড়ানো লাল আভা যেন সেই সৌন্দর্য কে আঁকড়ে ধরেছে। আপনমনে হেসে স্বামীর এগিয়ে দেওয়া হাতে থাকা কফির মগটি স্পর্শ করে সে। মেয়েটির স্পর্শে আফরাজ এর শরীরে অন্যরকম এক বিদ্যুৎ খেলে গেল। নাজীবা কফির মগটি নেওয়ার সাথেই আফরাজ নিজের হাত গুটিয়ে নেয় পকেটে। যা নাজীবার চক্ষু আড়াল হয় না। স্বামীর চোখদ্বয়ের মাঝে চেয়ে কফির মগে চুমুক দেয়। এক চুমুকে কফির মগ খালি করে ফেলে। ডাইনিং রুমে পিনপতন নীরবতা চলছে। কাজের খালা মিনা আপা তার খালাম্মার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
“খালাম্মার কিছু গড়েন। বড় সাহেব আর বড় বেগম দু’জনে কষ্ট পাইতাছে। দেহেন তাদের গাল দু’টো কেমনে করে লাল হইয়া আছে। বড় সাহেবের ঝাল খাওনের অভ্যাস আছে মানন যায়। বেগমের কি এমন অভ্যাস আছে?”
কাজের খালার কথা শুনে খাদিজা বেগম নাতির উপর চটে গেলেন। টেবিলের উপর জোরে থাবা মে’রে আফরাজ কে বলে,
“দাদুভাই এখনই অফিসে চলে যাহ। নাতবুর শরীর কেমনে ঘামছে দেখছিস? তোর না হয় ঝাল খাবারের অভ্যাস আছে । নাতবুরও এক অভ্যাস থাকবো বলে কথা নেই।”
আফরাজ ভেটকি টাইপ হাসি দিয়ে বাসার থেকে বেরিয়ে যায়। তার সঙ্গে আকবর বউকে ইশারা করে বন্ধুর সঙ্গে গেল। কুসুমা স্বামীকে যেতে দেখেই চটজলদি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সদ্য নববধুর কাছে গিয়ে ঘোমটা খুলে নেয়। আশ্চর্য হয়ে গেল তারা দু’জনে। তাদের সামনে মনে হচ্ছে লাল টকটকে পরী দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখশ্রী লালাক্ত হয়ে ছিটকে উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। কুসুমা তো বউকে ঘোমটার আড়ালে দেখার সুযোগ পাননি তাই অবাক হয়। কিন্তু খাদিজা বেগম এর অবাকতা আকাশচুম্বী। কেননা তিনি বিয়ের পিঁড়িতে নববধুর রুপে শ্যামা রং লক্ষ করেছেন। তবে এই কোন বধু তাদের বংশে চলে এলো? এই ফুটন্ত গোলাপের স্থান তো মাটিতে নয় হৃদয়ে বিরাজিত। খাদিজা বেগম কুসুমা কে ইশারা করে। সে ইশারা বুঝতে পেরে টেবিল থেকে রসমালাই এর বাটি নিয়ে দু’টা রসমালাই বধুর মুখে পুরে দেয়। নাজীবা মিষ্টি দু’টা চিবিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করল। এতক্ষণে যেন তার ঝালে পেট ফেটে যাচ্ছিল। খাদিজা বেগম নাতবউয়ের মাথায় চুমু খেয়ে বলে,
“মাশাআল্লাহ আমার নাতবু সেরার সেরা। তার তুলনা হয় না অন্য মেয়ের সামনে। তবুও নাতবু স্বামীর সঙ্গে মজা করতে বারণ করব না। একটু দেখেশুনে মজা করিও।”
কুসুমা মুখ ভেটকিয়ে বলে,
“কি বলেন দাদী? ঐ দামড়া পোলার লগে এখন ভেবেচিন্তে মজা করতো নাজীবা ভাবী?”
“কি করবো বলো দাদুভাইয়ের যে রাগী। আমার উপর তো রাগ দেখায় না কিন্তু বাহিরের মানুষ কিছু করলেই হলো ধুমধাম মা*রা শুরু করে দেয়।”
নাজীবা দাদী ও তার কুসুমা ভাবীর আলাপ শুনে গলা কেশে দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“দাদী আপনি চিন্তে করিয়েন না। উনার যা গোমড়ামুখো স্বভাব সেটাই আমি বদলাতে চাই। তার চেয়ে বড় ব্যাপার কোন শাকচুন্নী উনার লাইফকে হেল করছে সেটাও তো বের করতে হবে তাই না?”
দু’জনে ‘ওওও রাইট’স’ বলে সম্মতি দেয়। খাদিজা বেগম এর ওয়াশরুমে যেতে হবে। বিধায় তিনি নিজ রুমের দিকে ফিরে যায়। কুসুম নাজীবা-কে আঁকড়ে ধরে বলে,
“ভাবী বাসর রাতের এক্সপেরিয়েন্স বলো প্লিজ!”
নাজীবা চোখ ড্যাবড্যাব করে তাকায়। কি এক্সপেরিয়েন্স শুনাবে? হে চুমু দিয়েছে সে । তাও তো একপাক্ষিক চুমু। দুই পাক্ষিক হলে এনা লজ্জা টজ্জা পেত সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বলে,
“ভাবী কোথায় আর বাসর! জানোই তো আমার ঐ হিটলার স্বামী , দেবদাস হয়ে আছে তার প্রেমিকাকে না পাওয়ার শোকে। সেখানে আর আমার সঙ্গে সোহাগ করার আদৌ মানসিকতা আছে উনার। কিন্তু…।”
মাঝে থেমে দু’হাত মুখে চেপে লজ্জার ভান ধরল। কুসুমা উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাড়া দিয়ে বলে,
“বলো না নাজীবা কি হয়েছিল ? এমনেই লজ্জা পাচ্ছো নিশ্চয় চুমাচুমি হইছে?”
“হ্যা চুমুটুমু খেয়েছে বটে। কিন্তু সেটা ঘুমের ঘোরে থাকায় বুঝেননি তিনি। যদি বুঝতেন আমাকে আস্ত চিবিয়ে খেতো।”
“ধুর দেবর আমার জীবনটাই ধনেপাতা বানাইয়া রাখলেন। আমারো জানো তোমার মত অবস্থা। স্বামী আমার অথচ আচরণে লাগে বউ হই তোমার স্বামীর।”
“কিইই এসব কি বলছো ভাবী?”
“আরে হে কিন্তু তুমি যেটা ভাবছো সেটা নয়। আসলে আমার কথার মানে হলো আকবর মানে তোমার স্বামীর বন্ধু খুবই বন্ধুভুক্ত। একটু ডাক দিলেই উনি যেন স্পাইডার ম্যানের মত উড়াল দিয়ে চলে যাবে। গত রাতের কথাই বলি। একটু স্বামী আমার সোহাগ করতে লুঙ্গির ফিতা খুলতে নিচ্ছিলেন। ওমাহ তোমার স্বামীর ডাক পড়ে যায়। এবার বুঝো সোহাগের উত্তম মুহূর্তে মেজাজ কতই না গরম হয়। ইচ্ছে তো করছিল গ’লা টি’পে ধরতে দু’জনকেই।”
নাজীবা শুনে আতঙ্কিত হলো। এমন দৃষ্টি দেখে কুসুমা বলে,
“আরে সিরিয়াসলি নিও না। ওটা তো শুধু মেজাজ খারাপের টাইমেই করতে ইচ্ছে হতো। এমনি সম্মান দেয় চিন্তে করো না।”
দু’জনে হেসে দিল। লেখিকা_তামান্না(কল রাইয়ান)
হঠাৎ কুসুমা ভাবীর মনে হলো তার স্বামীর টিফিন সময়ের খাবার রেডি করতে হবে। বিধায় সে রান্নাঘরের দিকে ছুট দেয়। আকবর আবার বাহিরের খাবার কম খায়। নাজীবা ও গেল সেও আজ আকবরের সাথে তার স্বামীর অফিসে যাবে। স্বামীকে একটু পাগলামীপনার ডোজ দিতেই হবে। নিজ মনে শয়তানি হেসে সে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে। কুসুমা খিচুড়ি রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নাজীবা নিজ মনে ভেবে নেয় প্রথমে ফ্রাইড রাইস,ডিম পোস্ট,ফ্রাইড চিকেন রেডি করবে। ভেবে কাজে লেগে পড়ে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
_____
অফিসে রুমের মধ্যে রাগে ফোসচ্ছে আফরাজ। তার গলা ঝালে জ্বলছে । তবুও সে কোনো মিষ্টান্ন ছুঁয়ে ও দেখছে না। আকবর গালে হাত দিয়ে তার বন্ধুর মুখ দেখে যাচ্ছে। ছেলেটার মুখমন্ডলে ঝালের আভা ছড়িয়ে আছে। তাও জিদ্দি ছেলে মিষ্টান্ন কিছু খাচ্ছে না। আর না পারতে বলে উঠে,
“ভাই ব্যস হয়ছে তো দই থেকে হালকা করে দই খেয়ে নেহ। নিজের হাল দেখতে পাচ্ছিস? আমার তো মনে হচ্ছে একটা জ্যান্ত মানুষরুপী টমেটো আমার সামনে বসে আছে। আর তোর মাথাও বা কেমনে কাজ করছে হে? এত ঝাল তো খাওয়ার অভ্যাস তোর নাই। তাও খেলে তোর উপর ইফেক্ট হয়। মাথা চক্কর দেয়। তাহলে এখন কেমনে এতো স্বাভাবিক আছিস?”
আকবরের কথায় চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় চোখ খুলে তার দিকে তাকায়। বন্ধুর রাগমিশ্রিত চোখ দেখে বলে,
“ধুর ব্যাটা তোর ঐ সিংহের তাকানো কে ভয় পায় না বুঝছিস? চল তাড়াতাড়ি দই গিলে নেহ্।”
“তুই চুপ থাক ব্যাটা। শুধুমাত্র তোর কারণেই দাদী তার কাজে সফল হয়েছেন। আমারই ভুল ছিল তোর ফোনকল রিসিভ করা। যদি ঐদিন ফোনকল রিসিভ না করতাম । তাহলে ঐ পাগল মেয়ের জায়গায় তাবাসসুম আজ আমার সাথে হতো।”
“আরে বাঁশ আমার উপর দোষটা চাপাচ্ছিস । অথচ নিজে যে পুরো কথা না শুনেই মুখের উপর কল কেটে দিছিলেন তখন? আমি তো কলে তোকে বার বার বলার ট্রাই করছিলাম। পাশে দাদী থাকায় সরাসরি বলতে পারিনি। আর তুই তো জানিস দাদী কেমন! তোকে বিয়ে করাবে একবার যখন ভেবে নিছেন ব্যস । তার উপর আর কারো না বলার সামর্থ্য নেই। যেমনটা তুই নিজে জনাব আফরাজ ফাহিম।”
“চুপ শা’লা। তাবাসসুমের ও না জানি কি হলো? ঐ দু’টাকার কাগজ কলমের মেয়েকে টেনে নানান টুন করছে। অসহ্য লাগতেছে দিন-দুনিয়া। মন চাচ্ছে সব ছেড়ে ছুড়ে কোথাও পালায় যায়।”
“আহারে বেচারা আমার বন্ধু। কষ্ট পাস না। তোকে এক সহি তারিকা বলি শোন মন দিয়ে। তোর বিবাহিত নববধু রে নিয়ে হানিমুনে যাহ্। প্রথম রাতে প্রটেকশন ইউজ করিস না বুঝলি।”
বন্ধুর ফাজলামি কথা শুনে মুখ ফোসকে গ্লাসে থাকা অর্ধ পানি ফেলে দেয়। কাশতে কাশতে চোখ পিটপিটিয়ে আকবর এর দিকে তাকায় আফরাজ। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে বলে,
“তুই কি পাগল ব্যাটা? অফিস আওড়ারে কীসব কথা কস আবাল?”
“আবাল তুই যে গাধা। নিজের বউ ছেড়ে পরকিয়া মা’রাস হাহ্।”
কথাটি শুনে আফরাজ এর মুখশ্রীতে গম্ভীরতা চলে এলো। সে গাম্ভীর্য ভরা গলায় বলে,
“তাবাসসুম কে আমি ভালোবাসি। এতে পরকিয়ার কিছু নেই। বরং ঐ মেয়েটা তো আপদ। কোথার থেকে না কোথার থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল আমার ঘাড়ে। বিয়ে করার কথা ছিল তাবাসসুম কে হয়ে গেল গাইয়া মেয়ের সঙ্গে। সো ডিসগাস্টিং।”
“তাই তো বলছি নতুন বউকে টেস্ট করে দেখ শা’লা। একবার বউয়ের মজা বুঝলে তাবাসসুম পাদকেও ভুলি যাবি।”
দাঁত কিড়-মিড়িয়ে আফরাজ মা’রার জন্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তার অঙ্গভঙ্গি দেখে আকবরও একই কাজ করে।
“দাঁড়া তুই শা’লা হানিমুনের মজা বের করতেছি তোর পেছন থেকে।”
আকবর ছুট লাগায় কেবিনের বাহিরে। যা দেখে আফরাজ মুচকি হেসে নিজ চেয়ারে পুনরায় গা হেলিয়ে দেয়। ঝাল এখন কম লাগছে তার। গ্লাসে থাকা অল্প পানি খেয়ে ছিল। বিধায় ঝালটা সময়ের সাথে চলে গেল। কিন্তু পেটে ক্ষুধা লেগেছে তার। আউটসাইড আনহেলদি ফুড আফরাজ এর পছন্দ নয়। সকালের নাস্তায় তো রাগ-জেদ দেখিয়ে না খেয়েই বেরিয়ে গিয়ে ছিল। যার দরুণ ক্ষুদায় তার পেট ছু’ছু করছে।
সকালে…
সামনে কফির মগ পেয়ে আফরাজ মাথা থেকে মেয়েটার চুমু দেওয়ার বিষয়টা ঝেড়ে ফেলেছিল। কফির মগ নিয়ে যেই মুখে দিল , সেই সঙ্গে জোরে চিৎকার দেয়। ঝালে তার গাল লাল হয়ে যায়। তখনই সে খেয়াল করে দরজার বাহিরে দিয়ে কোনো এক মানবীর ছায়া পালিয়েছে। বোঝতে বাকি নেই যে ,এই কারসাজি কার হতে পারে।
অন্যথায় নাজীবা রান্নাঘরের সামনে এসে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগে । কেননা সিংহকে র’ক্ত এর সাথে মরিচগুড়া মিশিয়ে দিয়েছে। সামনে পেলে তো তুলে আছাড় মারবে। তাই ভুলে ও সে ঐ লোকটার সামনে পড়বে না বলে পণ করে নিল। কিন্তু তার পণ বেশিক্ষণ টিকলো না। আফরাজ রেডি হয়ে ডাইনিং এ এসেই জোরে জোরে কুসুমা কে ডাক দেয়। কুসুমা সকলের জন্য কফি বানিয়ে যার যার রুমে পাঠিয়ে আকবরের কাছে ফিরে যায়। তাই সে দেবরের চিৎকার শুনা মাত্র ভয়ে স্বামীর হাত খামচে ধরে। আকবর ‘আহ ডাইনি’ বলে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। ‘ডাইনি’ বলায় চোখ গরম করে তাকায় কুসুমা। আকবর কি ডেকে ফেলল বুঝতে পেরে তাড়া দিয়ে বউয়ের ধ্যান ফিরিয়ে চলে যায়। খাদিজা বেগম লাঠি ভর দিয়ে এসে ডাইনিং এর চেয়ার টেনে বসে পড়ে। ঘোমটা দিয়ে নাজীবাও এসে দাদীর কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়। আফরাজ আড়চোখে মেয়েটিকে দেখে বাঁকা হেসে মনে মনে বলে,
“এবার মজা বুঝাচ্ছি তোমাকে।”
সে তার সঙ্গে নিয়ে আসা কফি’টা কুসুমা কে দেখিয়ে বলে,
“ভাবী এটা কী আপনি বানিয়ে ছিলেন?”
“জ…জ্বী ভাইয়া কে কেনো?”
“না ভাবী আসলে জানতে চেয়ে ছিলাম। আমার কফি আমার কাছে কাকে দিয়ে পাঠিয়েছেন?”
“জ্বী নাজীবা ভাবী নিজ হাতে দেওয়ার আর্জি করছিল তাই তাকেই দিয়ে পাঠিয়ে ছিলাম।”
ব্যস নাজীবা ফেঁসে গেল। আফরাজও তার শোধ তুলে ফেলল।
হঠাৎ আফরাজ এর তাবাসসুম এর কথা মনে এলো। মেয়েটার সাথে রাগ দেখিয়েছে বলে কি আর কলও দেবে না? অভিমান মিশ্রিত মন নিয়ে সে নিজেই তাবাসসুম এর নাম্বারে কল লাগায়।
তাবাসসুম পুরু সকাল তার ক্লাইন্টের সাথে মজা করে দুপুরেই নিজ ফ্লাটে চলে আসে। শরীর দুর্বল লাগায় সে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ে। ১২টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মনে মনে আফরাজ এর মান ভাঙ্গানোর পরিকল্পনা করে। ঠিক সে সময়েই আফরাজ এর কল দেখে খুশি হয়ে যায় সে। কল রিসিভ করে ন্যাকা ফুঁপানি দিতে লাগল। কান্না মিশ্রিত গলায় বলে,
“জান আমাকে মাফ করে দাও। সকাল সকাল তোমার কল দেখে খুশি লাগলেও তুমি ঐ মেয়েটার সাথে এক বেডে থেকেছো ভেবেই আমার মন পুড়ছিল। আইম সরি জান। তুমি তো জানোই তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। তোমাকে আগলে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম। সেখানে এখন একজন এসে ভাগ বসিয়ে নিল।”
তাবাসসুম এর কথা শুনে মন নরম হয়ে গেল আফরাজ এর। সে ক্লান্ত ভরা গলায় বলে,
“যাক বাদ দাও ঐ সময়ে আমারও মেয়েটার ব্যাপারে শুনে মাথা ধরে গিয়ে ছিল।”
তাবাসসুম আফরাজ এর কথায় সন্দেহজনক গলায় জিজ্ঞেস করে।
“জান তুমি এভাবে বলছো তার মানে তোমাদের মাঝে কিছু হয়নি রাইট? না মানে আমি আমার ভালোবাসার উপর বিশ্বাস করি। আমি ছাড়া তুমি কাউকেও ভালোবাসতে পারো না তাই না বলো না জান প্লিজ?”
তার কথায় আফরাজ কেমন এক জড়তা অনুভব করল। তবুও জোরপূর্বক মুখ খুলতে নিলেই কে যেন ফোনটা কেড়ে নেয়।
“এই শাকচুন্নী আমার জামাইকে ভুলভাল শুনিয়ে বশ করার চেষ্টা করছিস হে? তাইলে শুনে রাখ , আমি নাজীবা মুসাররাত আমার জামাইকে কালো কাউয়া থেকে কেমনে রক্ষা করতে হয় ভালোভাবেই জানি। আপনার সো কলড ড্রামাবাজি বন্ধ রাখুন কালা কাউয়া হুহ্। টুট টুট টুট।”
ফোনটি শক্ত করে চেপে ধরে রাগে গজগজ করতে লাগে তাবাসসুম। মেয়েটি তাকে অপমান করল আর আফরাজ ও কিছু বলল না। না সেও ছাড়বে না এখনি সে আফরাজ এর অফিস এ যাবে বলে ঠিক করে নিল। তড়িঘড়ি ড্রেস আপ করে ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে পড়ে সে।
অন্যথায় আফরাজ অবাক সহিত দৃষ্টিতে কিঞ্চিৎ ভাবনায় পড়ে গেল। পরক্ষণে ঘটনা কি হলো বুঝতে পেরে মেয়েটির হাত থেকে নিজের ফোন কেড়ে নেয়। নাজীবা ফোনের ওয়ালপেপারে অন্য মেয়ের সঙ্গে তার স্বামীর কাপল পিক দেখে মনে কষ্ট পায়। তবুও সেদিক পাত্তা না দিয়ে হাসি হাসি মুখ করে নেয়।
আফরাজ ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“এই মেয়ে তোমাকে না বলেছি আমার থেকে দূরে থাকতে। তাও কোন সাহসে আমার অফিসে এই গাইয়া সেজে চলে এলে? এখানে আমার একটা রেপুটেশন আছে সে খেয়াল আছে তোমার?”
“ওগো মিস্টার সোয়ামী। আপনার ফ্যাডের ফ্যাডের বন্ধ করুন। গলাবাজি আমিও করতে জানি। কিন্তু আমি আবার শান্তপ্রিয় মানুষ। ওতো প্যাচ ট্যাচ আমার মধ্যে নেই। যতসব আলগা পিরিতি তো আপনার মধ্যে ফাউল ব্যাটা।”
শেষ কথাটি বিরবির করে বলে । যা আফরাজ শুনতে না পাওয়ায় জিজ্ঞেস করে ‘কি বললে?’ নাজীবা হেহে হেসে ‘কিছু না’ বলে তার সঙ্গে আনা গরম গরম দুপুরের খাবার পরিবেশন করে। আফরাজ খাবারের আইটেম দেখে টেস্ট কেমন হবে খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে। সুস্বাদু ঘ্রাণে ক্ষুধার জ্বালা পাঁচগুণ বেড়ে গিয়েছে জ্বীভে যেন লালা চলে এলো তার। ঠোঁটের উপর জ্বীভ বুলিয়ে ঢোক গিলে বলে,
“এসব খাতিরদারি করে কি বোঝাতে চাইছো হে? যে যে আমি পটে যাবো। কখনো না। নিয়ে যাও এসব অখাদ্য।”
নাজীবার তো মাথা গরম হয়ে গেল। ফ্রাইড চিকেন এর রানের পিচ ছিঁড়ে সঙ্গে সঙ্গে আফরাজ এর মুখে ঢুকিয়ে গাল চেপে ধরে। হতভম্ব হয়ে গেল সে। মেয়েটি কিনা তার সঙ্গে বাজিমাত করছে। সেও পাল্টা জবাব দিতে গেল। নাজীবার হাত ছুটাতে গিয়ে উল্টো নিজের দিকে টান দেয়। এতে দু’জনের দু’জোড়া ঠোঁট প্রায় স্পর্শক হয়ে যায় যায় অবস্থা। এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশে আগুন ধরাতেই কে যেন দরজা খুলে ভেতরে চলে এলো।
চলবে……