#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৪
“দেখো আমার বিবি হয়েছো তো বিবির মতই থাকো। চপাট চপাট মুখ চালাইও না প্লিজ। মনে হয় বিবি না কোন না কোন বেবি-কে বিয়ে করছি।”
চোখ-মুখ কুঁচকে নাজীবা কে বলল আফরাজ। মেয়েটা একমুহুর্ত ও যেন শান্তি দিচ্ছে না। এই না বাসার জন্য চলে গিয়ে ছিল। ঠিকই জ্বীনের মত হাজির হয়ে গেল। নাজীবা ঘোমটার মোড়া চেপে ধরে হেলেদুলে বলে,
“ও আল্লাহ বলেন কি গো? আমি একাধারে আপনার সোনা,ময়না,বিবিজান,বেবি,বেইব । যেকোনো একটা ডাকতেই পারেন। আই ডোন্ট মাইন্ড। আচ্ছা শুনেন না, এসব ফাইল টাইল দেখা বাদ দিন! চলেন না আজ বিকাল বিলাস করতে যায়।”
কথাটুকু বলে নাজীবা পরণের শাড়ি নিয়ে হেলেদুলে আফরাজ এর মুখ বরাবর ঝুঁকল। আকবর কে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভীষণ লজ্জাবোধ করায় মিনমিন কণ্ঠে বলে,
“আরে দেবরজী আপনার উনিও বাহিরে সেজেগুজে এসেছেন জলদি ফুটুন এখান থেকে।”
কুসুমা এসেছে শুনে খুশিতে গদগদিয়ে উঠল আকবর। ফাইল টাইল যতটুকু চেকিং করেছে সব এক জায়গায় রেখে কেবিনের বাহিরে ছুট লাগায়। বউ না যেনো হাতের চাঁদ পেয়েছে। আকবর এর যাওয়া দেখে আফরাজ বিরক্ত হলো। অন্যথায় নাজীবার বিষয়টা ভালো লাগলো। অত্যন্ত তিনি তার বউয়ের প্রতি খুব আদরীয় মানব। আর তার স্বামী কোথাকার পাবর্তীর জন্য দেবদাস হয়ে বসে আছে। সে চোখ পাকিয়ে তাকায় তার দিকে। মেয়ের হাবভঙ্গি দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কি এদিক ফিরে কি দেখছো? তুমি যদি ভেবে থাকো আমি তোমার কথায় আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করব। তবে তুমি ভুল ভাবছো। আ…।”
“আরে ব্যস আমার কানের পোকাগুলো কে মে’রে ফেলবেন দেখতেছি। আপনাকে কি আমি সাধে বলতেছি। নিজের বন্ধুকে জেলখানায় বন্দী করে রাখছেন। নিজে তো জাম খাচ্ছেন না অন্যকেও কেন জাম খাওয়া থেকে থামাচ্ছেন হে? যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা।”
“ইউউ স্টুপিট গার্ল।”
“ওও দাদী শোনছো আপনার নাতিই এক নাম্বারের নাটকবাজ। বিয়ে করেছে কোথায় বউ কে নিয়ে ঘুরবে তা না উল্টা অফিসে বসে ফাইল খাচ্ছে থুক্কু ঘাটছে।”
আফরাজ মেয়েটির অভিযোগ দেওয়া দেখে নাজীবার হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নেয়। নাজীবা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। সে জানতো সে এখন কোনো মতেও আফরাজ কে রাজি করাতে পারবে না। তাইতো নিজের ফোনে দাদী কে কলে রেখেছিল। যাতে কথার ছলে দাদীর সাথে কথা বলিয়ে দেবে। হলোও তাই দাদীর সঙ্গে নাতির তর্ক চলছে। সে অনায়াসে দু’জনের কথা শুনছে। বেচারা তার স্বামীই বেশি বকা খাচ্ছে। অন্যথায় দাদীর সাথে কথায় না পেড়ে হ্যা বলে সায় দিল। কল কেটে মেয়েটির দিকে ফোনটি এগিয়ে দেয়। নাজীবা নড়েচড়ে ফোনটি নিয়ে আমতা আমতা করতে লাগল। আফরাজ দেখে চোখ ঘুরিয়ে বলে,
“বিবি বলে কি এখন আপনাকে যাওয়ার জন্য আলাদা মুখে বলতে হবে?
যাও এখনই। আকবর ও ভাবীকে রেডি হয়ে গাড়ির কাছে থাকতে বলো।”
নাজীবা মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল। আফরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাতে গোনা কয়েক ফাইল গুছিয়ে নেয়। রাতে বাসায় বসে চেক করবে বলে ভেবে রাখল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
গাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে। নাজীবা ব্যাকগ্রাউন্ড মিরর গ্লাস দিয়ে কুসুমা ভাবীর হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী লক্ষ করছে। ‘মাশাআল্লাহ’ মেয়েটি তার স্বামীর কাছ থেকে আদর-সোহাগ পেয়েই এতটা খুশি তা বেশ বুঝতে পেরেছে। সেও তো তার স্বামীর নিকট থেকে এইরকম আদর-সোহাগ পাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে। তবুও কেন এত দূরত্ব। কবে মিটবে এই দূরত্ব? আদৌ মিটবে নাকি সেই দূরে চলে যাবে? অখুশি হলেও খুশি হওয়ার ভান করে তাদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠে। আফরাজ গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে বসে পড়ে। তার পাশে মেয়েটিকে নিশ্চুপে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। কিন্তু ওতটা পাত্তা দিল না। গাড়ির ইঞ্চিন চালু করে সে ড্রাইভিং এ মন দেয়। আড়চোখে স্বামীর ভ্রু কুঁচকানো খেয়াল করেছে। পরক্ষণে পাত্তা দিল না, দেখে দাঁত কিড়-মিড়িয়ে সে আফরাজ এর হাত চেপে ধরল। গাড়িতে বসা তিনজন ব্যক্তি চমকে গেল। আফরাজ রাগান্বিত কণ্ঠে বলে,
“এই মেয়ে আক্কেল জ্ঞান কি বাজারে বিক্রি করে এসেছো? হাত ছাড়ো আমার। নাহলে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।”
“ওমাহ্ আপনি বুঝি আমার স্পর্শে পাগল হয়ে যান? যদি হতেন তখন না হয় আমি স্পর্শ করতাম না। কিন্তু আপনি সুস্থ স্বাভাবিক আছেন । তাই আমি হাত সরাচ্ছি না। যদি আমাকে হাত সরাতে ফর’স করেন। তবে বুঝে নেবো আপনি হাতুড়ে মার্কা ড্রাইভার।”
“গাড়ি চালানো কে ফাজলামি পাইছো তুমি?”
“কেন কেন গল্পে-সিনেমায় দেখেন না? হিরো তার হিরোইন এর এক হাত বুকে চেপে ধরে ড্রাইভিং করে। আমি তো তাও আপনার উপর মেহেরবানী করে শুধু হাতের উপর হাত রাখলাম। যদি হাতের মুঠোয় হাত ভরিয়ে দিতাম , দেখা যেতো গাড়ির তিন ব্যক্তি কে কবরে পাঠিয়ে আপনি হাসপাতালের বেডে তব্দার মত শুয়ে আছেন।”
মেয়েটির কথার উত্তরে প্রতিত্তর করল না আফরাজ। কেননা কথার মাধ্যমে কথা বাড়বে। মেয়েটির এমনেও মাথার স্ক্রু ঢিলাঢালা। কথা বাড়ালে দেখা যাবে সত্যিই কবরে পাঠিয়ে দিয়েছি। মনের কথা মনে রেখে আফরাজ এর শান্ত হয়ে গেল। তার মুখ দেখে মিটমিটিয়ে হেসে নাজীবার জানালার বাহিরে তাকায়। মনে পড়ে গেল হঠাৎ তার অফিসে ছুটে আসার কারণ। বিকাল বিলাস করা তো একটা অজুহাত মাত্র।
নাজীবা রান্নাঘরের মধ্যে টিফিন বক্স গুলো ধুয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসে। টিভি চালু করতে নিলেই তার ফোনে অনাকাঙ্ক্ষিত এক মেসেজ আসে। সেই মেসেজে লিখা ছিল,
‘যদি নিজের অতীত থেকে বাঁচতে চাও। শীঘ্রই নিজের স্বামীর অফিসে যাও আর নিজের অতীতের ফাইল লুকিয়ে নাও।’
মেসেজটা সহজ মাত্রায় এলেও আতংকে বুক ভার হয়ে গেল নাজীবার। চিন্তার রেষানলে না পড়ে , তখনিই বেরিয়ে যায়। কুসুমা ভাবী পিছু ডাকলেও জানানোর সময় তার হাতে ছিল না। বিধায় সে রিকশায় চেপে বসে তার স্বামীর অফিসের ঠিকানায় যেতে লাগল। তৎপর সময়ে আফরাজ এর ধ্যান অন্যদিক ফেরানোর জন্য ভেবে নিল বিকাল বিলাস করার কথা বলবে। দেরি না করে হাতে থাকা ফোনে কুসুমা ভাবীর নাম্বারে মেসেজ করে দেয় ,’আজ আমরা বিকাল বিলাস করব
দু’কাপলই। রেডি হয়ে চলে আসুন ভাইয়ার অফিসে।’
স্বল্প কথায় যে কাজ হয়ে যাবে তা বেশ ভালোই জানতো নাজীবা। হলোও তাই আফরাজ এর হাতে নাজীবা তার অতীতের ফাইল দেখে স্বামীকে কথার ছলে ধ্যান অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফাইলটা চুরি করে নেয়। ফাইলটি কে আপাতত দৃষ্টিতে গাড়ির সিটের নিচে লুকিয়ে রেখেছে নাজীবা। বাসার সামনে এলে পুনরায় আফরাজ এর ধ্যান অন্যদিকে নিয়ে ফাইলটা নিয়ে ছুট লাগাবে।
“এই মেয়ে চপাট চপাট মুখের সাথে বেশি ভাবনায়ও পড়ও দেখছি। না জানি আর কি কি গুণ দেখাবে?”
আফরাজ এর কণ্ঠে নাজীবা তার ভাবনায় ইতি টেনে খুশ গলায় বলে,
“বিবি বলে কথা । গুণ তো নিজের সোয়ামীরেই দেখাবো।”
লজ্জার ভান নিয়ে নিজের বাহু দিয়ে আফরাজ এর বাহুতে মৃদু ধাক্কা দেয়। আকবর আর তার বউ দৃশ্যটি দেখে মিটমিট করে হাসতে লাগল। আফরাজ তিন জনের দিকে ভোঁতা মার্কা মুখ করে বেরিয়ে যায়।
_____
“স্যার একটা খবর আছে?”
“কিসের খবর?”
“স্যার আপনার বলা নিউজটি ঐ সিফাত এর মৃত্যুর পর পর টেলিকাস্ট করার কথা ছিল। । কিন্তু আজ ঐ ঘটনা পার হওয়ার পুরো একদিন শেষ। তবে কি টেলিকাস্ট করব না?”
“না কালকে ভোরের নিউজ হবে এটা। কারণ কাল খুবই স্পেশাল ডে।”
কথাটি বলে রহস্যময় হাসি দেয় লোকটি। তার ছ্যালারা কি বুঝল কে জানে। তারা লিডার এর কথা শুনে অজ্ঞাত রইল। কালকের দিনটা কিই বা এমন? লোকটি ফোন রেখে জোরে জোরে হেসে বক্সিং গ্লাভস পরে এক ব্যক্তির লা’শকে ক্রমান্বয়ে আঘাত করতে থাকে। নিথর পচনশীল লা’শকে মা’রতে দেখে মহিলাটির বমি পেয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ ওয়াশরুমে গিয়ে বমি সেরে কুলকুলি করে নেন। নিজেকে সামলে লোকটির রুমের সামনে গিয়ে দরজাটা আস্তে করে ভিড়িয়ে দেয়। কেননা লোকটির মাথা ঠান্ডা হতে এমন এক বিবশ দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হবে। যা দেখার সাধ্য মহিলাটির নেই। তিনি সন্তপর্ণে স্থান ত্যাগ করেন। অন্যথায় লোকটি বক্সিং শেষে জোরে শ্বাস নিতে লাগল।
লা’শটির অবস্থা বিকৃত হয়ে চুপছে গেছে। ক’ঙ্কাল দেখা যাচ্ছে লা’শটির।
নিশ্চুপে হাঁটু ভেঙ্গে এর সামনে বসে পড়ল সে। লা’শটির চা’রপাশ জুড়ে র’ক্তের ছড়াছড়ি। তবুও কোনো আকর্ষণ অনুভব করছে না সে। কেননা তার মস্তিষ্কজুড়ে হারানো মেয়েটির আনাগোনা। বাধ্য হয়ে লা’শটির র’ক্তের উপর শুয়ে পড়ল সে।
_____
সমুদ্রে নানান খাবারের স্টল বসানো আছে। আকবর ও কুসুমা নিজেদের কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ডের জন্য আলাদা সিটে বসেছে। নাজীবা তাদের স্পেন্ডিং মোমেন্ট দেখে চোখ ছোট ছোট করে আফরাজ এর দিকে তাকায়। শার্ট-প্যান্ট পরিহিত শ্যামপুরুষের মুখে বিকালের লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে। সৌন্দর্যের চেয়ে লোভনীয় লাগছে বেশি তার কাছে। বাক্যহীন সে তার ফোনে ফটাফট কিছু ছবি তুলে নেয়। আফরাজ মেয়েটির হাবভাব খেয়াল করে বলে,
“এই মেয়ে কি করছো হে? আমাকে না বলে ছবি তুলছো নাকি?”
ফোনটি লুকিয়ে নাজীবা ক্যাবলা মার্কা হাসি দিল। কথা বিহীন সমুদ্রে থাকা অন্যান্য কাপলদের মত জোরপূর্বক আফরাজ এর বাহুতে নিজের হাত পেঁচিয়ে স্বামীর গা ঘেঁষে দাঁড়ায় নাজীবা। মেয়েটির কাজে আফরাজ বিরক্ত সূচক গলায় বলে,
“এই মেয়ে সাপের মত পেঁচাচ্ছো কেন? দূরে সরে দাঁড়াও।”
কথার প্রেক্ষিতে নিজের হাত সরাতে নিলেই আকস্মিক নাজীবা উদাসীন গলায় বলে,
“দেখেন চুপচাপ এভাবে বসে থাকুন। নাহলে জনগণের সামনে গণধোলাই খাওয়াবো।”
আফরাজ কথাটি শুনে মুখ ভেটকিয়ে বলে,
“বিবি তুমি হয়ত ভুলে যাচ্ছো? হু আই এম? ইউ নো না আইম দ্যা বিজনেসম্যান আফরাজ ফাহিম। এক ক্ষীণ মানবেরও সাহস নেই আমার সামনে টু শব্দ করার।”
“তবে আমার সাথে কেনো বাসর রাতের পর থেকে নরমাল বিহেইভ করছেন? আমাকে কি কোনো ভাবে বউ হিসেবে মেনে নিয়েছেন?”
“হাহ্ একমাত্র আমার দাদীর কথায় আমি আটকে গিয়েছি। নাহলে তোমাকে দু’সেকেন্ড ও চোখের সামনে সহ্য করতাম না।”
কথাগুলো শুনতে নাজীবার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
কিশোরী বয়সের মনপুরুষ যদি নিজ মুখে অসহ্যের বাণী শোনায়। তবে সে নারী জ্যান্ত থেকেও সম’মৃ’ত কষ্ট পায়। ঘোমটার আড়ালে চোখের পানি আফরাজ এর নজরে আসছে না। যদি নজরে আসতো তবে বুঝত তার কথায় কারো বক্ষ ভেদ করে নিদারুণ কষ্টের অশ্রু নির্গত হচ্ছে। চোখ মুছে নিজেকে সামলে আফরাজ এর হাতের বাহু খানেক শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলে,
“জানেন আমার যে আপনি নামক মানুষটির সঙ্গে কখনো বিয়ে হবে কল্পনাও করিনি। যখন সামনে দেখলাম এক-মুহুর্ত এর জন্যে মনে হলো জীবনের সর্বসুখ হয়তো এবার পেতে চলেছি। পরক্ষণে সেই ভাবনা মুছে গেল আপনার প্রাক্তন এর কথা শুনে। আর যাই হোক কারো হৃদয়ে জোরপূর্বক স্থান পাওয়া যায় না এ কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আচ্ছা শুনেন না সব ভুলে আমাকে বউ হিসেবে আপন করে নেওয়া যায় না? আমাকে না দেখেই কি আপনার এত অনীহা আমার প্রতি? যদি কখনো দেখেও যদি হারিয়ে ফেলেন তখন কি করবেন? তখন কি আমার জন্য আপনি চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলবেন? বলুন ?”
মেয়েটির কথায় কেমন এক অসীম গভীরতা লক্ষ করছে আফরাজ। তবুও তার ইগোর কাছে মেয়েটির কথাগুলো নিছক বা’নো’য়া’ট মনে হচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের হাত সরিয়ে ধাক্কা দেয় নাজীবা কে। সে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকায় আফরাজ এর দিকে। মেয়েটির নিশ্চুপ রুপ দেখে সে বলে,
“জাস্ট সেটআপ গার্ল। তুমি কি ভেবেছো? আমাকে সকাল থেকে ইম্প্রেস করার জন্য স্বামী-স্ত্রীর খুনসুটি দেখাবে আর আমিও গলে যাবো? তা হচ্ছে না বিবিজান। এই ড্রামাটা বন্ধ করো। তুমি এমনি এমনি আমাকে বিয়ে করোনি তা আমার বেশ জানা আছে। বাসর রাতে আমার কপাল ফা’টিয়ে ফাস্টেই তুমি আমার ইগো হার্ট করেছো। সেকেন্ড আমার বাবার অফিসে যে ড্রামা দেখালে কতই না বিব্রতবোধ করেছি জানো? অনেকে তো কানাঘুষা করে বলছে, আমি গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ওয়াইফ ও রেখেছি। যেনো বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি প্রডাক্ট। সো এক কথা কান খুলে শুনে রাখো এই যে ভালো ব্যবহার তোমার সাথে করছি তা শুধুই লোক দেখানো। এতক্ষণ পাশে মানুষ ছিল তোমাকে নিজ থেকে দূরে সরাইনি। আর যখন…।”
“মানুষ যাওয়ার সাথেই আমাকে দূরে সরিয়ে দিলেন এই তো?”
আফরাজ এর বাকি কথা সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই নাজীবা বলে উঠে কথাটি। সে শুনে বাঁকা হেসে সমুদ্রের দিকে একপলক তাকায়। স্বামীর কথাগুলো শুনে রাগে গা জ্বলছে নাজীবার।
“খচ্চর করলা কোথাকার। এতক্ষণ আপনার মোহে আটকে প্রেম প্রেম পাচ্ছিল মনে। নিমিষেই স্বাদ মিটিয়ে দিলেন তো এবার এর শাস্তি ভোগ করুন।”
শয়তানি হেসেই নাজীবা ঘোমটা উপরে তুলে চারপাশ ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয়। মানুষজন তাদের সাইড থেকে বহু দূরে দাঁড়ানো। এ সময়টি কে কাজে লাগিয়ে জোরালো এক ধাক্কা দেয় আফরাজ কে। আকস্মিক ধাক্কায় চিৎকার করে উঠে সে। ব্রিজের উপর থেকে সমুদ্রের বালির কাছ ঘেঁষে পড়ল। তার স্বামী পানিতে পড়ে গেছে । তাই অসহায় এর ভান ধরে চিৎকার করে বলে,
“ওওও সোয়ামী আপনি চিন্তে করিয়েন না। আমি আপনাকে ম’রতে দেব না না না।”
আকবর ও কুসুমা ভাবী ও চলে এলো। তারা মানুষ জনের হৈচৈ শুনে কাহিনী কি দেখতে এসেই আশ্চর্য হয়ে গেল। কেননা নাজীবা একলা দাঁড়িয়ে কান্না করছে। কুসুমা ভাবী নাজীবা কে আগলে শান্ত্বনা দিচ্ছে। আকবর তাড়াতাড়ি গার্ড’স নিয়ে সমুদ্রের কিনারায় গেল। আফরাজ পানিতে বার কয়েক ডুব খেয়ে আগুনের জ্বলসানো চোখে ব্রিজের উপর নাজীবার দিকে তাকায়। নাজীবা স্বামীর তাকানো দেখে পাত্তাই দিল না। মনে মনে বলে,
“হাহ্ লোক দেখানো ভালোবাসা রাইট? বুঝবেন পাগলামীপনায় লোক দেখানো ভালোবাসা কত প্রকার ও কি কি?”
কুসুমা ভাবীর কাধে মাথা হেলিয়ে অসহায় হওয়ার ভান ধরে গাড়ির কাছে চলে যায় তারা। আকবরও গরম তোয়ালে আফরাজ কে পেঁচিয়ে নেয়। কেননা ঠান্ডার মৌসুমে সমুদ্রের পানি ঠান্ডা বটে। তবুও সূর্যের উষ্ণতায় কিঞ্চিৎ কমই বটে।
ঠকঠক ঠান্ডায় কাঁপতে থেকে গায়ের উপর তোয়াল লেপ্টে পেছনের সিটে বসে যায় আফরাজ। আকবর বন্ধুর নাজুক অবস্থা দেখে স্বেচ্ছায় গাড়ি চালানোর দায় সাড়ে। ঠান্ডার প্রখরতায় ঘুম ঘুম পেয়ে যায় আফরাজ এর। সে সিটের মধ্যে মাথা হেলিয়ে ঘুমাতে গেলেই চঞ্চল হাতে স্বামীর মাথাটি নিজ কোলের উপর নিয়ে নেয় নাজীবা। আফরাজ এর সিল্কি চুল অন্য গরম তোয়াল দিয়ে মুছে নেয় ভালোমত। চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে ঘুমন্ত শ্যামপুরুষের গালে দু’ মানব-মানবীর চক্ষু আড়ালে চুমু দেয়। মনপ্রান্তরে ভাবে,
“আপনার আমাকে ভালো বাসতেই হবে। আপনাকে না পাওয়া অব্দি যে আমার মন শান্তিতে ঠাঁই নিবে না। আপনার আগুনময় উষ্ণতার জন্য আমি সবকিছুই করব। যত কষ্টই হোক পাগলামী করে হলেও আপনার ভালোবাসা আদায় করবই আমি। হক যেহেতু আমার, সেই হকের আশপাশেও কাউকে ঘেঁষতে দেব না।”
শাড়ির আঁচল দিয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা আফরাজকে পেঁচিয়ে নেয় নাজীবা। মানবীর শরীরের উষ্ণতা পেয়ে ঘুমে মগ্ন রইল আফরাজ।
চলবে…….