অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ #লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) #পর্ব_০৭

0
522

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৭

“ডক্টর আমার বিবিজান এর মেন্টাল কন্ডিশন দেখে কি বুঝেছেন? আর তার হঠাৎ কন্ট্রোল হারানোর কারণ কি?”

ডক্টর শফিউল্লাহ চিন্তিত মুখে নাজীবার মেন্টাল কন্ডিশনের ফাইলটি এ দু’তিনেক বার চোখ বুলিয়ে নিয়েছেন। তবুও পেশেন্টের হাজবেন্ড কে কি বোঝাবেন তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না। আফরাজ হাঁসফাঁস করছে উত্তর জানার জন্যে। সে গম্ভীর দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে যায়। খাদিজা বেগম নাতিকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে তার হাত চেপে ধরেন। এমতাবস্থায় আফরাজ তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করল। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে দাদীকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।’
সে বেরিয়ে যায়। ডক্টর মৃদু হাসলেন। তিনি বুঝতে পারলেন , ইয়াংম্যানের এংগি হাই-লেভেলের।
অন্যথায় অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।
তিনি গলা ঝেড়ে বলে,

“শুনেন ম্যাম। আপনার নাতবউর কন্ডিশন খুবই নাজুক। তাকে পুরোপুরি পুষ্টিকর খাবারে রাখবেন। আর আপনার নাতিকে বলবেন এই প্রেসক্রাইপড মেডিসিন’স টাইমলি পেশেন্ট কে খাওয়াতে। যদি পেশেন্ট মেডিসিন’স না খেয়ে থাকে। তবে সে তার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবে।”

তিনি মাথা নেড়ে ডক্টরের কেবিন থেকে বেরিয়ে আফরাজ এর কাছে গেলেন। সে এতক্ষণ করিডোর এ দাঁড়িয়ে দাদী ও ডক্টরের যাবতীয় কথা শুনছিল। দাদীকে আসতে দেখে হুট করে জিজ্ঞেস করল।

“দাদী তুমি বিয়ের সময় আমাকে জোর গলায় বলে ছিলে মেয়েটা অসুস্থ। তাই আমি যেনো কবুল বলে ফেলি। এটাই তোমার শেষ ইচ্ছে ছিল। যাও তখনও মেনে নিয়ে ছিলাম। তবে তুমি আমাকে ওর অসুস্থতার ব্যাপারে জানাবে বলেও জানাওনি। কেনো? এখন দেখলে তো গর্দভ মেয়েটা কত বড় অঘটন ঘটিয়ে ফেলল ?”

“মাফ করিস দাদুভাই। নাতবুর স্বাভাবিক চালচলন দেখে ভাব ছিলাম সে সুস্থ হয়ে গিয়েছে। তাই তোকে জানিয়ে আর চিন্তায় ফেলতে চাইনি। তার উপর তুই নাতবউকে বউ হিসেবেও এতটা মান্য করিস না। যা আমি ভালোই জানি। এসবে তোকে জড়ালে শুধু শুধু বিরক্তবোধ করতি। এই আমি সহ্য করতে পারতাম না। মেয়েটা তো এখানে আমার ভরসায় এসেছে। সেই ভরসার খেয়ানত কেমনে হতে দিতাম বল আমায়?”

দাদীর কথায় আফরাজ মুখ ফিরিয়ে নেয়। হ্যা সে মানে তার কথাটি যে, সে নাজীবাকে বউ মানে না। তার মানে এই নয়, ঐ মেয়েটার প্রতি বউ হিসেবে দায়িত্ব কে দূরে সরিয়ে দেবে। গম্ভীর কণ্ঠে দাদীকে বলে,

“দাদী আমি কিছু মনে করছি না এতে। তবুও মনে রেখো মেয়েটাকে বিয়ে করে বউ না মানলেও অত্যন্ত স্পষ্টভাষী আমি নিজের প্রতি যে, আমি তার প্রতি স্বামী হিসেবে সব দায়িত্ব সুষ্ঠুতার সাথে পালন করতে পারব। আফরাজ ফাহিম তার দায়িত্বে ত্রুটি রাখে না।”

খাদিজা বেগম নাতির চক্ষু আড়ালে মুচকি হাসলেন। তিনি ইচ্ছেকৃত নাতির বলা কথায় নুনের ছিটকা দিয়েছেন। যাতে সে নিজমুখে রায় দেয়। হলোও তাই। এবার তিনি নিশ্চিত, তার নাতি আর নাতবউয়ের মধ্যকার সম্পর্ক পরিপূর্ণতা পাবে। তিনি আলগোছে কৃতজ্ঞতার সুরে বলেন,

“দাদুভাই আমাকে ভুল বুঝিস না। মেয়েটা-কে তুই দেখিসনি , বুঝিসনি বলেই তার ব্যাপারে জানতে জানিস না। শোন আজ নাতবউয়ের সাথে তোর বিয়ে দেওয়ার আসল কারণটা বলি।
নাজীবা ফেনীর মেন্টাল হাসপাতালেই ভর্তি ছিল। তুই তো জানিস আমি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ফেনীতে গিয়ে সময় কাটায়। যেহেতু তোর দাদা জেলা-উপজেলা ঘুরতে পছন্দ করতেন। সেই সুবাদে আমিও তার থেকে ঘুরাঘুরির নেশাটা পেয়ে যায়। তুই যখন তোর অর্নাস থার্ড ইয়ারের স্টাডির মাঝে বাবার ব্যবসা দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লি। তখন আমার খুব একা লাগত। তোকে তো ডিস্টার্ব করতে পারতাম না। কারণ তোর একার উপর পড়াশোনা, আমার দেখভাল, তোর বাবার ব্যবসা । সব’কটা একসাথে ধসে পড়ার মতন অবস্থা। সেই কারণে আকবর কে সাথে নিয়ে ঘুরতাম। ফেনীতে তোর বিয়ের একসপ্তাহ আগে গিয়ে ছিলাম। ফেনী নদীর সৌন্দর্যতা উপভোগ করে চিটাগাং ফিরে আসতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু ঝড়-তুফানের কারণে আটকে পড়ি। কি আর করব ভেবে তোমার দাদুর আখিরাত জীবনের উদ্দেশ্য কিছু টাকা গরীব-দুঃখীকে দিয়ে হোটেল ফিরছিলাম। তখন মাঝ পথে রাস্তায় এক নার্স কে পায়। নার্স-কে খুব আতঙ্ক দেখাচ্ছিল। আমি ড্রাইভার কে বলে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ি। তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি।

“মা কি হলো তোমার মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”

নার্সটি যেনো আঁধার গগনে আশার আলো দেখল তেমনি নজরে চেয়ে একপলকে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিল। তারপর ছেড়ে দিয়ে বলে,

“আন্টি আপনাকে আমি বেশি কিছু জানাতে পারব না। নাহলে যে, আমার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। তবে আপনার থেকে আমাকে সাহায্য করতে হবে। আমার সাথে একটা রোগী আছে। সে মেন্টাল হাসপাতালের রোগী। তার দায়িত্বে আমিই আছি আন্টি। তার খেয়াল রাখিয়েন। আর এই ওষুধপত্র তারই। এগুলো টাইমমত খাওয়াবেন। মেয়েটা অসুস্থ হলেও সুস্থ। সব বুঝে, আপনি যা বলবেন, দেখবেন সর্ব জ্ঞানে করতে পারবে।”

নার্সটি হঠাৎ তার হাতঘড়ি চেক করে। টাইম লিমিটলেস হওয়ায় ভয়ে সিটিয়ে উঠে সে। আমার বাহুতে নাজীবা-কে রেখে সে পালিয়ে যায়। তার অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তায় আমিও জমে গিয়ে ছিলাম। একটা মেয়ে আমার বাহুতে! আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন ড্রাইভার এর সঙ্গে মিলে নাজীবাকে ধরে হোটেলে চলে আছি। চারদিন যাবত মেয়েটার হুঁশ ছিল না। ডক্টর দেখিয়ে আস্তে ধীরে স্বাভাবিক হয় মেয়েটা। তবে দাদুভাই জানিস? তার চিকিৎসার সময় একটা বিষয় আমার খুব আশ্চর্যজনক লেগেছিল।”

দাদীর কথা মনযোগ সহিত শোনছিল আফরাজ। শেষের বাক্যে তার আগ্রহ দ্বিগুণ হলো। দাদীকে টেনে সিটে বসিয়ে বলে,

“কি সেটা বলো দাদী?”

“মানে ডক্টর চিকিৎসা করে বলছিল মেয়েটার শরীরে রক্ত খুব ক্ষীণ পরিমাণ ছিল। যেনো কেউ বুঝি তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে ফেলতো অনেক তেমনি। একথা শুনে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আসলেই কি কারো শরীরে রক্ত ক্ষীণ থাকে? নাকি কেউ ইচ্ছেকৃত রক্ত নিয়ে নিয়েছে? তা নিয়ে আমরা আর ভাবিনী। প্রতিদিন নিয়ম করে নাজীবার হিমোগ্লোবিন লেভেল হাই করতে বিভিন্ন ফলমূল, পুষ্টিকর খাবার খাওয়েছি। এর মাঝে ভাবতে লাগলাম!
আমি চলে গেলে, যদি মেয়েটা আবারো অসহায় হয়ে পড়ে তখন? এই চিন্তা করে একদমে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার অসুস্থতার অজুহাতে হলেও তোর সাথে বিয়ে পড়িয়ে দেব নাজীবার। আলহামদুলিল্লাহ সেই সিদ্ধান্ত আমি সত্য ও করে ছিলাম। কিন্তু হ্যা, নাজীবার ব্যাপারে একটা বিষয় বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত খেয়াল করে ছিলাম। তার শরীরে র’ক্ত কম থাকায় চোখ-মুখ পুরো শরীরটায় নিস্তেজ-রোগী মনে হতো। যখন সে পরিপূর্ণ খাবার আর মেডিসিন নিচ্ছিল তার স্বাভাবিক রুপ ফিরে পায়। যা দেখে স্বয়ং তোর দাদীই নাতবুর প্রেমে পড়ে গেল। হাহাহা।”

“প্রেম না ছাই। বে’য়া’দপ মেয়ে একখান সে।”

বিরবিরিয়ে আফরাজ বলল। পরক্ষণে নাজীবার এই সত্য শুনে সে দাদীর হাতের উপর হাত রেখে বলে,

“একমাত্র তুমি আমায় দাদুর মতই ভালোবেসেছো দেখে তোমার কথার মান রাখতে বিয়ে করে ফেলেছি। তাই মুখ ফেরাবো না আমার দায়িত্ব থেকে। চেষ্টা করব সব স্বাভাবিক করার। হয়ত সময় লাগবে। কারণ তুমি তো জানতে , আমি তাবাসসুম কে কতই না ভালোবাসতাম। এখনো হৃদয়ের কোনো এক কোণায় তার নামটা উচ্চারিত হয়ে থাকে। তখন নিজেকে অসহায় লাগে ভীষণ। ঐসময় মেয়েটার দিকে দু’চোখেও তাকাতে মন চাই না। আমি নিজের দায়বদ্ধতা মেনেই কাজ করব। আশা করি তুমি নিরাশ হবে না।”

দাদুভাই এর কথায় খাদিজা বেগম মনে মনে ভেটকিয়ে বলে,

“নাতবু ঠিকই বলে তুই একবান্দা কচুর করলা। সুন্দর ডায়মন্ড রেখে পুরোনো মালের জয়গান করছিস। ব্যাটা আমার হ্যাবলা আর বানাইছে করলা‌।”

“কিছু কি বললে দাদী?”

“নাহ আমার মহামান্য দাদুভাই রে কি কিছু বলা যায় ধুর।”

দাদীর এমন ভেটকি টাইপ চেহারা দেখে মনে মনে হাসল আফরাজ। সে বুঝতে পারছে তার কথায় দাদী তিন’চারেক কথা মনেই শুনিয়ে দিয়েছে। বিধায় সে এসবে মন দিল না। ঘন্টা পাঁচেক পর জ্ঞান ফিরল নাজীবার। সচেতন হতেই প্রথমে নিজের ঘোমটা ঠিক আছে কিনা দেখল! অথচ মুখশ্রী কি তার পরণের কাপড়ের বদলে হাসপাতালের কাপড় জড়ানো দেখে চমকে গেল। সে ঢোক গিলে পাশে কাজরত নার্সকে দেখে মৃদু কণ্ঠে ডাক দেয়। নার্স পেশেন্ট এর কণ্ঠ শুনে খোশমনে পেশেন্টের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওহ মিসেস আপনার জ্ঞান ফিরেছে। এখনই সবাইকে ডাকছি।”

নাজীবা তৎক্ষণাৎ নার্স-কে থামিয়ে দেয়। নার্স ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

“জ্বী কিছু বলবেন?”

“সিস আমা..আমাকে কে এনেছে? আর বাহিরে কারা দাঁড়িয়ে আছে একটু বলবেন?”

“জ্বী বাহিরে আপনার হাজবেন্ড আর তার দাদী বসে আছেন। আপনাকে এনে ছিল আপনার দাদী শ্বাশুড়ি। তার পর তো আপনার হাজবেন্ড আপনাকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছেন।”

কথাটি শুনে নাজীবার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটল। তবে এখন তো তার জ্ঞান ফিরল। তার চেহারা যদি দেখে ফেলে তখন? তৎক্ষণাৎ নার্সকে বলে,

“নার্স শুনেন আমার মুখ ঢাকানোর জন্য একটা হিজাব দিন আর না হয় আমার পাতলা শাড়ির আঁচলটাই দিন।”

“কি বলছেন এসব আপনি? আপনার কন্ডিশন দেখছেন? ডক্টর রোগীর ড্রেস ছাড়া অন্য ড্রেস এখন এলাউ করবেন না।”

“প্লিজ একটা হিজাব না হয় দেন।”

“ওকে আমি ব্যবস্থা করছি।”

নার্স নিজের ব্যাগ থেকে ছোট হিজাব বের করে নাজীবাকে দেয়। নাজীবা পাতলা হিজাবটি মুখের উপর দিয়ে নার্সকে বলে,

“আচ্ছা সিস আমার জ্ঞান ফিরেছে বলে, সবাইকে এখন আসতে বলুন।”

“হুম আচ্ছা। ডক্টরকেও ডেকে আনছি।”

সকলে নাজীবার সঙ্গে কথায় মশগুল। কিন্তু তার চোখগুলো আসল মানবকে খোঁজছে। কোথাও তার চিহ্নটুকু নেই দেখে অভিমান হলো তার। কুসুমা ভাবী নাজীবার অভিমানী চেহারা দেখে বুঝল, সে তার স্বামীকে খোঁজছে। তাই সে নাজীবার হাত ধরে সব ঘটনা বলে ফেলল। শুনে লজ্জাও পেল ভীষণ। কিছুক্ষণ পরে মেডিসিন নিয়ে এসে নার্সের হাতে দিল। নার্স মেডিসিনের মধ্যে যেগুলো ইনজেকশন এ দিতে হবে সেগুলো আলাদা করে নিল। ইনজেকশন এ দুটি মেডিসিন পরিমাণমতো ভরে নিল। সেটি নিয়ে নাজীবার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সে চোখ বুজে নিজেকে স্বাভাবিক করল। তার কাছে এগুলো নরকের অস্ত্র মনে হয়। হঠাৎ হাতের উপর কারো স্পর্শে সে চোখ খুলে তাকায়। আফরাজ তার ডান হাতের মাঝে নিজের হাত ভরে দিয়ে ফোন ঘেঁটে যাচ্ছে। এমন ভান যেন সে অনিচ্ছায় স্পর্শ করেছে। তবুও নাজীবা পরম আদরে সেই হাতটা মুঠোবদ্ধ করে নেয়। কেঁপে উঠে আফরাজ। নিশ্চুপে নাজীবার মেডিসিন দেওয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেভাবে হাত মিলিয়ে রইল।

ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো নাজীবা কে। আফরাজ বাসায় এসে নাজীবা কে তার বরাদ্দকৃত রুমে শুয়ে দেয়। কাজের মহিলাকে খেয়াল রাখতে বলে সে চলে যায়। এতে বেচারী অভিমানে পুড়তে লাগল। মনে মনে তো ছ’খানেক গালিগালাজ দেওয়াও শেষ তার। কুসুমা ভাবী প্রতিনিয়ত এসে খোঁজ খবর নেয়। এভাবে সে খেয়াল করে আফরাজ তার প্রতি অদেখা ভাব দেখায়। যার কারণে সেও এড়িয়ে চলতে লাগল তাকে। দিন গড়িয়ে তিন দিন পার হওয়ার পর পুনরায় তাদের মাঝে খুনসুটির আরম্ভ হয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
____

বর্তমান…..

“আফরু ভাইয়া আমাকে প্রেমিকা হিসেবে না মানো। এটা তো মানো তুমি ছাড়া আমার একুলে-ওকুলে আর কেউ ছিল না। তোমার কাছে হাত-ভিক্ষা করা ছাড়া আমার কাছে রাস্তা নেই। অত্যন্ত একটা জবেব ব্যবস্থা না হয় করে দাও। ওহ হ্যা?
নিউজপেপারে তোমার অফিসে পিএ জবের বিজ্ঞাপন দেখেছি। সেই জবটা কি আমাকে দেওয়া যাবে? প্লিজ!”

নাজীবা গেস্ট রুম এর বাহিরে পায়চারী করছে। সেই যে কখন থেকে দুজনে ভেতরে গেল। বের হওয়ার নামগন্ধ নেই। না, সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। আকস্মিক ভেতরে ঢুকে পড়ায় তাবাসসুম ঘাবড়ে যায়। আফরাজ স্বাভাবিক দৃষ্টি বজায় রাখে। যেন সে জানত মহারাণী জ্বলনের কারণে ভেতরে চলে আসবে। সে প্রথমেই তার বিবিজান এর আহাট বুঝে গিয়ে ছিল। তাবাসসুম আফরাজ এর হাত ধরে আছে দেখে, রাগে মাথা ফেটে যেতে লাগল নাজীবার। কোনো কথা ছাড়াই ছুটে গিয়ে তাবাসসুম কে ঠেলে ধাক্কা মা’র’ল। এক ধাক্কায় সে টাইলার্সের উপর পড়ে ব্যাকসাইডে ব্যথা পায়। নাজীবা তার স্বামীর হাত ধরে টি-টেবিলের উপর রাখা পানির জগে হাত চুবিয়ে দেয়। হতবাক হয়ে গেল আফরাজ। সে তো ভেবেছিল মহারাণী এসে তাবাসসুম এর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেবে। কিন্তু দৃশ্যপট তো উল্টে গেল। নাজীবা জগের পানিতে চুবিয়ে শান্তি পেল না। আফরাজ কে টেনে ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকে পড়ে। তাবাসসুম এর দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। তাবাসসুম দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ায়। নিজের কাপড় ঝেড়ে ওয়াশরুমের দিকে চেয়ে মনে মনে ‘চ’ উচ্চারণ করল। মুখ ঝামটা মে’রে বেরিয়ে গেল। আকবর আর তার বউ দেখে মুখ চেপে হাসতে থাকে। খাদিজা বেগম তাবাসসুম কে বেরিয়ে যেতে দেখে ‘আহেম আহেম’ গলা ঝেড়ে দৃষ্টিকার্ষণ করে । তাবাসসুম এর পা থেমে যায়। সে ভ্রু কুঁচকে আফরাজ এর দাদীর দিকে তাকায়। তিনি তাবাসসুম এর নজরধারা দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“আমাদের এখানে মেহমান কে খাবার না খেয়ে যেতে দেওয়া বারণ। তুমি চাইলে বসতে পারো। আর না চাইলে বাহিরের দরজা খোলা আছে।”

খাবারের কথা শুনে তাবাসসুম এর চোখ উৎফুল্ল হয়ে গেল। সে তৎক্ষণাৎ ‘জ্বী জ্বী কেনো নয়’ বলে চট করে ডাইনিং রুমে চলে এলো। চেয়ার টেনে নেয়। সুস্বাদু খাবার দেখে প্লেট ভর্তি করে খাবার বাড়তে লাগল। কুসুমা ভাবী আর কাজের মহিলা তাবাসসুম এর খাবার নেওয়ার ধরণ দেখে চোখ পিটপিট করে তাকায়। কাজের মহিলাটি তো মুখের উপর বলে দেয়।

“আহারে হতো দিন না খাইয়া আছে বেচারী একখানী। খাইয়া লোহ। ওমন খাওন নয়তো আর কপালে জুটব না‌।”

কুসুমা ভাবী ইশারায় চুপ করিয়ে দেয় তাকে। সেও চুপ হয়ে যায়।

অন্যদিকে, আফরাজ কে বেসিনের সামনে টেনে হাত-জোড়া দু’তিন মিনিট ধরে সাবান দিয়ে ঘষে আর ধুয়ে যাচ্ছে নাজীবা। আফরাজ নিজের হাত সরাতে চাইলে নাজীবা চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,

“ঐ ব’দ’মাই’শ ব্যাটা মেয়ে দেখলেই আপনার হাত ধরতে শরীর নিশপিশ করে তাই না?”

“বিবিজান তুমি। কিন্তু আবারো আমার সাথে বে’য়া’দপের মত কথা বলছো। সাবধান নাহয় চ’ড়ে গাল লাল করে দেব।”

এক আঙ্গুল দেখিয়ে সতর্ক করে আফরাজ। নাজীবা তার কথা শুনলে তো। সে একচটে ঘোমটার ভেতর আঙ্গুলটা মুখে পুরে নেয়। আফরাজ চোখ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
নাজীবা দাঁত দিয়ে চেপে ধরল আঙ্গুলটা। আফরাজ “আহ আহ” করে চেঁচাচ্ছে। গেস্ট রুম ডাইনিং রুমের কাছে হওয়ায়, তাদের চিৎকার শুনে চটজলদি চলে আসে বাকিরা। তাবাসসুম মুখে অর্ধমুঠো বিরিয়ানি নিয়ে চিবাতে গিয়েও পারল না। সে তো আফরাজ এর চিৎকার শুনে চলে আসে। আকবর গেস্ট রুমে থাকা ওয়াশরুম থেকে আফরাজ এর “আহ আহ” চিৎকার শুনে উল্টো অর্থ বুঝে নেয়। সেটারই সুযোগ তুলল।
দরজার কাছে গিয়ে আফরাজ কে সাবধান করতে বলে,

“ঐ ব্যাটা সুখের ঠেলায় আস্তে চিল্লা। তোর সুখের চিল্লানিতে আমার বউ আর তোর দাদীও চলে এসেছে।”

খাদিজা বেগম আকবরের কথা বুঝতে পেরে লাঠি নিজের রুমের দিকে ঘুরিয়ে কথাহীন বেরিয়ে যায়। কুসুমা ভাবী তো মিটমিট করে হাসছিল। আকবর বউয়ের হাসি দেখে বলে,

“হায় হায় বউ আমার। আমরাও ওদের মত ওয়াশরুমে চিৎকার করবো কেমন?”

কুসুমা ভাবী তার স্বামীর কথা শুনে রুম থেকেই পালিয়ে যায়। তাবাসসুম বেহায়ার মত ওয়াশরুমের দরজার দিকে চেয়ে আছে। তার আফরু-কে খেয়ে দিচ্ছে ভেবে সে তৎক্ষণাৎ দরজায় জোরে জোরে বারি দিতে লাগে। আকবর বিরক্তিকর দৃষ্টি দেয়। কর্কশ গলায় বলে,

“আপু আপনার কি সেন্স অফ হিউম্যান বলতে কিছু আছে? শুনতে পাচ্ছেন না আমার জ’ল্লা’দ বন্ধু কত বছর পরে সুখের চিৎকার দিচ্ছে। বিয়ের পর সুখের চিৎকার দেওয়া হলো মহামান্য কর্ম।”

আফরাজ রাগে না পারতে নিজেও নাজীবার এক হাতের আঙ্গুল দাঁত দিয়ে চেপে ধরল। নাজীবার নাজুক হাতে চাপ পড়ায় সেও চিৎকার দিয়ে উঠে।
তার ঠোঁটের মধ্যেও আফরাজ এর আঙ্গুল। সে আঙ্গুল চেপে ধরেই গোঙাতে লাগল।

“আহ আহ ছাড়েন।”

তাবাসসুম এর চোখ তো আরো বড় হয়ে গেল। আকবর তার নাজীবা ভাবীর চিৎকার শুনে পালাতে নেওয়ার পূর্বেই তাবাসসুম এর কাঁটা ঘায়ে নুন ছিটকে দিয়ে বলে,

“আরে বাহ! আমার জ’ল্লা’দ বন্ধুও দেখি বউয়ের চিৎকার বের করতে পারে। ব্রাভো ম্যান! ব্রাভো ! ক্যারি অন ব্রো। ”

আকবর কে আর পায় কে? সে তো রুম থেকে একপ্রকার ছুটে নিজের রুমে চলে যায়।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here