স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর #লেখা_চাঁদনী_ইসলাম #পর্ব_৪১

0
463

#স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর
#লেখা_চাঁদনী_ইসলাম
#পর্ব_৪১

আসাদ আজ পঁয়তাল্লিশ দিনের ছুটিতে বাড়ি আসছে।আসাদ প্রথমে ঢাকায় যেতে চাচ্ছিলো,আমিনা বেগম একবারে সীতাকুণ্ডে আসতে বললেন।নিরু পরিকল্পনা করেছে কক্সবাজারে যাবে,সাথে মামা মামানিকেও নিয়ে যাবে।তাই আসাদ ঢাকায় গিয়ে আজিজুলকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলো।আমিনার কথায় বগুড়া থেকে একবারে সীতাকুণ্ডে আসছে।খাদিজা নিরুর কাছে দু’দিন থেকেই রাজশাহী চলে গেছে।নিরু কিছুদিন থাকার জন্য জোর করেছিলো, কিন্তু খাদিজা থাকেনি।

নিরু আজ তাড়াতাড়ি রেস্তোরাঁ থেকে চলে এসে, গোসল করে বেগুনি রঙের জামদানি শাড়ি পরেছে।আসাদ সন্ধ্যার আগেই চলে এসেছে।আমিনা বেগম রান্না ঘর থেকে বের হচ্ছিলেন,আসাদকে দেখা মাত্র আমিনার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।আসাদ আমিনার সাথে দেখা করে, নিজেদের ঘরে গিয়ে দেখে নিরু চুল গুলো গুছিয়ে নিয়ে হাত খোপা করছে।আসাদ পিছন থেকে নিরুর কোমর জড়িয়ে ধরে কাঁধে চিবুক রাখে।আসাদের স্পর্শ পেয়ে নিরু মাথা থেকে হাত নামিয়ে আসাদের দিকে ফিরে আসাদের গলা জড়িয়ে ধরে হেসে ফেলে।আসাদ নিরুর নাকের সাথে নাক ঘেঁষে দিয়ে বলল, “এবার মনে হয় তোকে আর রেখে যেতে পারবো না।”

নিরু ভ্রু উঁচিয়ে বলল, কীভাবে নিয়ে যাবেন?”

“টোপলা বেঁধে হলেও নিয়ে যেতে হবে,আমার পক্ষে আর দূরে থাকা সম্ভব না।”

“হ্যাঁ এবার ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে নিন।”

“এতো ছেড়ে দেন, বলবি না তো।”

“তো কী বলবো?”

“বলবি আরও শক্ত করে ধরে রাখেন।”

“আমি না বললেও আপনি ধরে রাখবেন জানি।”

“সব জেনে বসে আছে।”

“এবার তো ছাড়ুন, আমি রান্না বসিয়ে এসেছি,কাজ আছে।”

“আম্মু বাকিটা করে নেবে।”

“আপনি না বাইরে থেকে এলেন।তাও কতটা রাস্তা জার্নি করে,গোসল না করে এমন করে জড়িয়ে ধরছেন সিদ্ধ হয়ে গেলাম।”

“ভর্তা তো হসনি?”

“আচ্ছা নেন আর ছাড়তে বলছি না।রাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা জড়িয়ে বসে থাকুন।আপনার তো ছুটি আমার আবার ডাবল ছুটি।”

আসাদ নিরুর কাঁধে আলতো করে কামড় দিয়ে ছেড়ে দিলো। “ফ্রেশ হয়ে দেখছি দাঁড়া, পাগল করার জন্য দিন দিন এতো সুন্দরী হচ্ছিস।প্রতিটা ক্ষণে খু*ন করছিস।”

নিরু ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে হেসে আসাদের তোয়ালে বের করে দিলো।আনাস মোল্লা রেস্তোরাঁ থেকে তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন।নিরুর এখন প্রতিটা ক্ষণের পরিবর্তন এসেছে।নিরু গত তিন বছরে কল্পনাও করেনি নিরুর জীবনে আবার সুখ ধরা দিবে।প্রতিটা মুহূর্ত এতো উচ্ছ্বাস আনন্দে মুখরিত হবে,সুখ সুখ অনুভাবিত হবে।
রাত এগারোটা পর্যন্ত আনাস মোল্লা সহ নিরু,আমিনা,আসাদ লুডু খেললো।পর পর দুই গেম নিরু আর আমিনা হেরে গেল।আসাদ ঘুরেফিরে নিরুর গুটি কাটছে।নিরু আসাদের দিকে কটকট চোখে তাকালো।আসাদ হো হো করে হেসে দিলো।আনাস মোল্লাও বহুদিন পর প্রাণ খুলে হাসছেন।
আজিজুল হক কল দিয়েছেন,আমিনা বেগম উঠে গেলেন।যাওয়ার আগে খেলা ভেঙে ঘুমাতে যেতে বলে গেলেন।আনাস মোল্লাও উঠে নিজের ঘরে চলে গেলেন।আসাদ নিরুর দিকে তাকিয়ে বলল, “মুখটা পেচা পাখির মতো করে রাখিস না।তুই জিতে গেছিস।আমার জিতটা তো তোরই তাই না?”

“এই দাঁড়ান,আমার গুটি কী আপনি চিনতেন না?”

“চোখে কম দেখছিলাম।”

“আমার গুটিই বারবার কেটেছেন,না হলে আমরাই জিততাম।”

আসাদ নিরুকে কোলে তুলে নিয়ে বলল, “আমার জিতটা তো তোরই।”

নিরু আসাদের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “ড্রয়িংরুমে কোলে নিচ্ছেন কেন,কেউ দেখবে তো।”

“কেউ দেখবে তো,আপনি গলা জড়িয়ে ধরছেন কেন?”

নিরু তড়িৎ গতিতে আসাদের গলা থেকে হাত নামিয়ে নিলো, “এই নামিয়ে দিন,শুধু খোচানো কথা বলে।”

আসাদ নিজেদের রুমের দিকে এগোতে থাকে,নিরুর কথা না শোনার ভান করে বলল, “এই নিরু ওজন কী বেড়েছে নাকি রে?”

“কেন কোলে নিতে পারছেন না।”

“তুই তো এক আটি পাটখড়ির মতো, তোকে নিতে পারবো না।আর একটু মোটা হ!”

“আমি কন্ট্রোল করে রেহাই পাচ্ছি না। আর মোটা হবো তাই না।”

আসাদ নিরুকে নিয়েই নিজেদের রুমের সোফায় গিয়ে বসলো।নিরু আসাদের সামনের চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে বলল, “আপনার ফিটনেসটা আগের মতো হচ্ছে।”

“বিয়ের দিন রাতে তো ধুয়ে দিয়েছিলি।”

“এখনো আগের মতো হয়নি,এতো লাফানোর কিছু নেই।”

“আগের মতোই হয়ে যাবে দেখিস।তুই আছিস না, কোন কিছু আর অনিয়ম হবে না। আমার পুরো পৃথিবী তুই,তুই থাকলে আমার সব ঠিক।”

“এই আপনার সেই বিসিএস দেওয়ার স্বপ্নের কী হলো,যখন ইন্টার দিবেন তখন থেকে বিসিএস নিয়ে আপনার কাছে গল্প শুনতাম।আর ইচ্ছে নেই নাকি?”

“বিসিএস না দিলে হবে?টার্গেট তো আছেই।প্রস্তুতি তো আজ থেকে নিচ্ছি না।”

“অনার্সের শুরু থেকেই তো প্রস্তুতি নিতেন।”

“হুম সার্কুলার ও দিয়েছে।”

“কিহ কবে দিয়েছে?”

“আড়াই মাসের ও বেশি,আবেদন করেছি।দশ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে প্রিলিমিনারি হবে।”

“আর আমাকে কিছু জানাননি,এতো বড় একটা কথা আমি জানলাম না।”

“তোকে এইভাবে পাবো ভাবিনি নিরু,স্বপ্নের মতো দিন গুলো কাটছে।সব ভুলে বসেছি।”

“পড়াশোনার কী অবস্থা? আমি জিজ্ঞেস না করলে তো বলতেন না।”

“আমার মাথায় ছিলো।সামনা সামনি বলবো ভেবেছি,আজকে ঘুমানোর আগে বলতাম।তার আগে তুই জিজ্ঞেস করলি।”

“প্রস্তুতি কেমন?”

“প্রস্তুতি তো অনেক আগে থেকে নিচ্ছি।তুই তো জানিস কোন টার্গেট থাকলে আমি সব কিছুর মধ্যে থেকে সেইটা ধরে রাখি।অনার্সের চার বছর তো মোটামুটি শেষ করেছি।আর তারপর ও কন্টিনিউ করেছি।প্রস্তুতি আলহামদুলিল্লাহ! এবার শুধু বউয়ের দোআ লাগবে।”

“বউয়ের দোআ সব সময় আছে।সময় নষ্ট করেন না, এখন ডিউটির ঝামেলা নেই মনোযোগ দেন।”

“হ্যাঁ বই গুলো নিয়ে এনেছি,এইদিকের মনোযোগ ধরেই রেখেছি।সাথে বউয়ের প্রতি ডিউটিটাও করতে হবে।”

“বউয়ের প্রতি এখন কোন ডিউটি নেই।”

“কক্সবাজার কবে যাবি,আম্মুকে কিছু বলেছিস?”

“এখন আর যাবো না, রেস্তোরাঁয় কাজ আছে।”

“রেস্তোরাঁয় কাজ নেই,আমাকে বইয়ে মুখ গুজে থাকতে হবে তাই বল।”

“সব যতক্ষণ বোঝেন জিজ্ঞেস করেন কেন?অবশ্যই বইয়ে মুখ গুজে থাকতে হবে।এই সময়টা আজীবন থাকবে না, এখন পরিশ্রম করেন মনোযোগ দেন।অনেক সুন্দর সময় আসবে।তখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিবেন। আমাকে নিয়ে পুরো পৃথিবী ঘুরবেন, কোন বাঁধা থাকবে না। সব কিছুর আগে আপনার স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে হবে।মনোবল ধরে রাখতে হবে। আমি জানি আপনি পারবেন,আর অনেক বড় হবেন।”

নিরুর কথায় আসাদ মৃদু হাসলো, “নিরু তুই আমার জীবনে থেকে গেলে, মাঝের বছর গুলোতে হয়তো আমি আরও একধাপ এগিয়ে যেতাম।তোর মতো এমন করে কেউ সাহস দিতে পারবে না। তুই আমার শক্তি,আমার সাহস সঞ্চয়কারী।এতো ভালবাসি কেন তোকে?”

“আমি এতো বেশি ভালবাসি বলে।”

নিরু আসাদ দুজনে হেসে ফেললো।দুজনে সুন্দর একটা সময়ের সাক্ষী হয়ে রইলো।

এই কয়দিন নিরু আসাদকে টেবিল থেকে উঠতে দেয়নি।নিরুও রেস্তোরাঁয় যায়নি।আনাস মোল্লা রেস্তোরাঁর দিকটা সামলায়,সাথে বাহারি আর বাহারির বর সব সময় নিজের মানুষের মতো সাহায্য করে।নিরু চোখ বন্ধ করে বাহারির উপর বিশ্বাস রাখতে পারে। আনাস মোল্লা না থাকলেও বাহারি থাকা পর্যন্ত নিরুর চিন্তা থাকে না।
নিরু একদিন রেস্তোরাঁয় গেছিলো।একবেলা না যেতেই আসাদ রেস্তোরাঁয় গিয়ে হাজির।তারপর থেকে নিরু রেস্তোরাঁয় যাচ্ছে না। আসাদ উঠে নিরুর পিছনে আসলেই নিরু চোখ কটমট করে তাকাচ্ছে। “নিরু তুই যদি আরও আগে আমাকে এইভাবে গার্ড দিতিস,তাহলে দেখতিস সেই কবেই আমি ক্যাডার হয়ে যেতাম।”

“এখনও হবেন,আপনি আমার মতো পড়া চোর নয়।”

“তুই বিসিএস প্রস্তুতি নিবি না নিরু?”

“আমি আর বিসিএস প্রস্তুতি?অসম্ভব!আমি আর কখনো বই ছুয়েই দেখতে চাই না।কতো কষ্ট করে টেনেটুনে অনার্স শেষ করেছি সে আমার কপালের জোর।পড়াশোনা আমার কোন কালেই ভালো লাগতো না।আর আমি দিবো বিসিএস,এইসব থেকে মাফ চাই।”

“মাস্টার্স ভর্তি হসনি?”

“হুম হয়েছি,এই পর্যন্ত-ই শেষ। আপনার ভয় নেই বাচ্চা কাচ্চা হলে পড়াতে পারবো।এইটুকুতেই অনেক হবে।”

আসাদ হো হো করে হেসে উঠলো, “বাচ্চা গুলো তোর মতো পড়া চোর না হলেই হয়।না হলে আমার মান সম্মান সব যাবে।”

নিরু ভেংচি কেটে বলল, “বাবার মতো ব্রিলিয়ান্ট হবে।”

“অবশ্যই হবে,আমাদের সন্তান কীভাবে বড় করি দেখবি।”

নিরু আসাদকে কফি দিয়ে রান্না ঘরে গেল।আমিনা বেগমকে আজিজুল হক এসে দু’দিন আগে নিয়ে গেছেন।নিরু আর আসাদ সামনে সপ্তাহে ঢাকায় যাবে।আসাদ ঢাকায় গিয়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিবে।

এক সপ্তাহ পর আসাদ নিরুকে নিয়ে বাড়ি গেল।আজিজুল হক আর আমিনা পুরো বাড়ি কাচা ফুল দিয়ে সাজিয়েছেন।নিরুকে ফুলের তোড়া দিয়ে বাড়ির মধ্যে নিয়ে এলেন,বেশ কিছু আত্নীয় এসেছেন।ড্রয়িংরুমের দরজা থেকে গোলাপের পাপড়ি বিছিয়ে রেখেছেন, ঠিক আসাদের ঘরের পুরোটা জুড়ে।নিরু বিস্মিত চোখে আসাদের দিকে তাকালো।আসাদ মৃদু হাসলো।আমিনা নিরুকে দরজা থেকে ঘরের মধ্যে নিয়ে এলেন।নিরু ভাবেনি এমন কিছু হবে,নিরু পুরো অবাক।নিরু আসাদের ঘরে গেল।আসাদ এসে নিরুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

“এই নিরু,নিরু! দেখ তুই আমার ঘরে আমার বউ হয়ে,এই দিনটার কত স্বপ্ন দেখেছি।সীতাকুণ্ডে তোকে পেয়ে যাওয়ার পরেও এতো খুশি হয়নি।যতটা খুশি আমার নিজের ঘরে ঢুকে তোকে নিজের বলে দাবি করে জড়িয়ে ধরে হয়েছি।আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ নিরু।”

নিরু আসাদের পাগলামি দেখে,হেসে ফেললো।চোখের কোণে জল জমলো।আলগোছে চোখের কোণা মুছে আসাদকে জাপটে ধরলো।নিরু ও যে এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী নারী।আসাদের মতো একজন মানুষ জীবনে থাকতে,নিরু ভাগ্যবতী না হয়ে পারে?

মাসখানেক নিরু ঢাকাতে থাকলো।আর বেশ কিছু জায়গায় ঘুরাঘুরি করলো।আসাদ ও ঢাকা থেকে বিসিএস প্রিলিমিনারি দিলো।

আসাদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা খুবই ভালো হয়েছিলো।আজ প্রিলিমিনারি রেজাল্ট দিয়েছে।আসাদ প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।আসাদ এবার বিসিএস রিটেনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

চলবে…

আসসালামু আলাইকুম!
আমি কয়েক দিন গল্পটা দিতে পারছিনা।পরীক্ষা নিকটে চলে এসেছে।পরীক্ষার মাঝে গ্যাপ আছে তার মধ্যে কন্টিনিউ দেবো।ইনশাআল্লাহ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here