#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৩
#ফারিহা_খান_নোরা
আফসানের সাথে পাশের বাড়ির করিমের বউয়ের গ’ভী’র সম্পর্ক রয়েছে যা নিষ্প্রভ কোনো ভাবে জেনে গেছে।যার ফলে করিমের বউকে নিয়ে খোঁ’চা দিলো নিষ্প্রভ।তা নয়তো করিমের বউয়ের কথা বলবে কেন?একেই বুঝি বলে সঠিক সময়ে উচিত জবাব।
আশা বেগম সদর দরজা দিয়ে তুরকে ভিতরে আসতে দেখে ইচ্ছে মতো কথা শুনতে শুরু করে। কিন্তু পিছনে যে নিষ্প্রভ আসে সেদিকে খেয়াল করে নি।ভেবেছে তুর হয়তো একাই এসেছে।তিনি যদি কোনো ভাবে নিষ্প্রভ কে দেখতো তাহলে কিছুতেই এসব বলতো না।কারণ তিনি বুঝে গেছে নিষ্প্রভ আশা বেগমের এতো দিনের লুকিয়ে রাখা রহস্য সম্পর্কে জেনে ফেলেছে।কতোটা জেনে ফেলেছে তা এখনো বুঝতে পারে নি।তাই এখন নিষ্প্রভ কে না চেতিয়ে দেওয়াই তার জন্য ভালো। হয়েছেও তার একটা ছেলে যে তাকে সারাজীবন জ্বা’লি’য়ে খেলো।এই ছেলের জন্য আর কার না,কার কাছে ছোট হতে হয়।এই বজ্জাত ছেলের রুচির কোনো লেভেল নেই।কাজের মেয়ের থেকে শুরু করে রিকশা ওয়ালার বউ কে অবধি ছেড়ে দেয় না।তা না হলে অই করিমের বউয়ের পিছনে কি করে লেগে থাকে।একে নিয়ে যে কি করবে সে!
নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয় না,ভিতরে চলো।’
তুর কোনো কথা না বলে দাড়িয়ে থাকে।এ বাড়িতে এসে তার কম কথা শুনতে হয় নি এই মহিলার মুখ থেকে।তুরকে এমন ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিষ্প্রভ নিজ দায়িত্বে তুরের হাত ধরে নিজের সাথে করে নিয়ে যেতে ধরে। এর মধ্যে আশা বেগম পিছন থেকে চিবিয়ে চিবিয়ে তুরকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
‘স্বামীকে দেখছি হাতের মুঠোয় করে নিয়েছো।’
নিষ্প্রভ যেতে যেতে বলে,
‘ঠিক যেমন আপনি নিয়েছেন মিসেস মির্জা।’
তুর অপলক দৃষ্টিতে নিষ্প্রভ কে দেখছে।আর কতো রূপে এই মানষটাকে দেখবে সে।এই পুরুষ এক এক সময় এক এক রূপ ধারণ করছে। কখনো তুরকে সবার বিরুদ্ধে যেয়ে প্রটেক্ট করছে।তখন মনে হয় তুর নিষ্প্রভের কাছে বড্ড বেশি আপন।আবার কখনো তুরকে দূরে সরে দিচ্ছে।কোনটা তার আসল রূপ?
_________________________
তানিয়া বেগম চিৎকা’র চেঁ’চা’মে’চি করছে। তাঁর চিৎকা’রে সবাই যে যার রুম নিচে নেমে আসে।এখন রাত নয়টা, এই রাতের বেলা চিৎ’কা’র চেঁ’চা’মে’চি কারো ভালো লাগছে না। সারাদিন পরিশ্রম করে ক্লান্ত হয়ে সবাই নীড়ে ফিরে আসে একটু বিশ্রামের জন্য কিন্তু এই বাড়ির মানুষ গুলোর বিশ্রাম বুঝি চিরতরের জন্য উঠে গেছে তা না হলে আজ এক সপ্তাহ যাবৎ রোজ রোজ এসব অশান্তি কারো সহ্য করতে হতো না। নুরুল সাহেব এবার বেশ বি’র’ক্ত হলেন। তিনি বি’র’ক্তে’র সহিত তুরফা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘এই মহিলাকে এখুনি আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যা।’
তুরফা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে তানিয়া বেগম অসহায় ভাবে দাড়িয়ে আছে।পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তাঁর ভাই তুষারের বউ দূর্বা মেয়েটা, যার চোখে মুখে ভ’য়ে’র রেশ। তুরফা কোনো কিছু না ভেবে তার মাকে বলে,
‘কি হয়েছে মা,রাতের বেলা এমন চিৎ’কা’র চেঁ’চা’মে’চি করছো কেন।ভাগ্গিস ভাইয়া বাড়িতে নেই থাকলে আরও অ’শা’ন্তি হতো।কি হয়েছে?’
তানিয়া বেগম তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,
‘কি আর হবে সব আমার কপাল।এই বয়সে স্বামী ও আমার পাশে নেই, আমার কোনো কথাই শোনে না। আমি কি সব সময় ভুল কাজ করি,নাকি এমনি এমনি চিৎ’কা’র চেঁ’চা’মে’চি করি?’
‘আহা সব বুজলাম মা এবার আসল ঘটনা বলো।’
তানিয়া বেগম শ’ক্ত কন্ঠে বলে,
‘আছে না তোর ভাই? সারাজীবন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেরিয়ে পাহাড়ে গেল তুষারপাত করতে সেখানে থেকে ধরে নিয়ে এলো এই দূর্বা ঘাস কে। সারাদিন খায় আর ঘুমায়,আজ আমি ওকে সবার জন্য রাতের খাবার রান্না করতে বলেছিলাম সে কি করেছে জানিস?’
নুরুল সাহেব এবার আগ্রহী হোন।তুরফা উসখুশ করে, না জানি মেয়েটা কি করেছে।বলে,
‘কি করেছে ?’
তানিয়া বেগম চি’বি’য়ে চি’বি’য়ে বলে,
‘সে রাতের খাবার হিসাবে চাল,আলু,লাতা পাতা যেখানে যা পেয়েছে এক সাথে সব পানি দিয়ে সিদ্ধ করে রেখেছে।এই খাবার খেয়েছিস কখনো? এখন দেখ আমি কেন চিৎ’কা’র করছি।তোর বাপের তো আমায় নিয়ে সমস্যা, আমার কথা বলা নিয়ে সমস্যা।এক কাজ কর এই মেয়ের এসব ঘাস লতা পাতা রান্না তোর বাপকেই খাইয়ে দে।’
বলেই মুখ ঝা’ম’টা দিয়ে চলে গেল তানিয়া বেগম। নুরুল সাহেব সব কথা আগ্রহ নিয়ে শুনলেও শেষর কথা শুনে তিনি শুকনো ঢুক গিলে।তুরফা অবাক হয়ে দূর্বাকে দেখতে থাকে।দূর্বা বেচারির নিজেকে নিরীহ হরিণীর মতো মনে হচ্ছে,যে কিনা এতো কিছু এক সঙ্গে দিয়ে রান্না করেও শাশুড়ির মন পেলো না।হায় কপাল!
_______________
তুর শুয়ে থেকে রা’গে ফুঁ’স’ছে কারণ প্রাই ত্রিশ মিনিট যাবৎ নিষ্প্রভ বারান্দায় যেয়ে কোনো মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।যার হাসির সাউন্ড তুরের কানে বাজছে।কেন রে ভাই এতো হেসে হেসে কথা বলার কি আছে! কই কোনোদিন তো তার সাথে হেসে হেসে কথা বলে না।তাহলে কি নিষ্প্রভের পছন্দ আছে।এসব উল্টা পাল্টা কথা ভাবতেই তুরের মনে এক রাশ খা’রা’প লাগায় ছেয়ে যায়।নিষ্প্রভের কথা বলা শেষ করে তুরের দিকে এগিয়ে এসে কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে একটু হেসে বলে,
‘ছোট বেলার ফ্রেন্ড অনেকদিন পর কথা হলো।’
তুর হঠাৎ করেই বেডের উপর দাঁড়িয়ে পড়ে দুই হাতে নিষ্প্রভের শার্টের কলার ধরে তে’জ নিয়ে বলে,
‘কই আমার সাথে কোনোদিন এভাবে হেসে হেসে কথা বলেন নি।’
তুরের এমন ব্যাবহার নিষ্প্রভকে বেশ ভাবায় তুর এমন মেয়ে না,সে বেশ নাজুক তাহলে হঠাৎ তার কি এমন হলো যে,এমন বিহেভ করছে।নিষ্প্রভ তুরকে শার্টের ক’লা’র ছাড়তে বলে তুর আরও শক্ত করে ধরে,সে কোন উপায় না পেয়ে তুরের হাতের উপর হাত দেয় নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে যায় ঠিক তখনি খেয়াল করে তুরের শরীর অসম্ভব গরম।এবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তুরের চোখ মুখ অসম্ভ লাল।নিষ্প্রভ তুরের কপালে হাত দিয়ে অস্থির কন্ঠে বলে,
‘তোমার তো বেশ জ্বর এসেছে।কখন থেকে এমন হলো! একটু আগেও ঠিক ছিলে।’
তুর নিষ্প্রাণ কন্ঠে বলে,
‘মনের জ্বর ই বড় জ্বর।’
বলেই জো’রে জো’রে হাসতে থাকে।নিষ্প্রভ বুজতে পারছে তুর জ্বরের ঘোরে এসব আবল তাবল ব’ক’ছে।সে তুরকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
‘তুমি এখানে থাকো তোমার ওষুধ খেতে হবে।খালি পেটে ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। আমি নিচ থেকে তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি।’
বলেই নিষ্প্রভ চলে যায়। নিচে যেয়ে দেখে সিতারা ড্রয়িং রুমে বসে মনযোগের সহিত বাংলা সিনেমা দেখছে এখনো ঘুমায় নি।নিষ্প্রভ সিতারার কাছে যেয়ে তাকে তিন থেকে চার বার ডাকলে সে তারপর জবাবা দেয়,
‘বড় ভাইজান কিছু লাগবো।’
‘তোর ভাবি অসুস্থ একটু স্যুপ করে দে।’
‘কি ভাবির কি হয়ছে?’
‘তেমন কিছু না একটু জ্বর তুই তাড়াতাড়ি স্যুপ করে দে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে।’
সিতারা রান্না ঘরে যায় তার আগে নিষ্প্রভ কে বলে যায়,
‘ভাইজান আপনি ভাবির কাছে যান আমি রুমে যেয়ে দিয়ে আসুম নি।’
নিষ্প্রভ অন্য সময় হলে যেতো কিন্তু আজ ভয়ে যেতে চাইছে না,কারণ রুমে গেলে তুর জ্বরের ঘোরে তার সাথে আর কি না কি করে।সেটা ভেবে নিষ্প্রভ দুই ঢুক গিলল।দশ মিনিট সময় নিয়ে সিতারা স্যুপ করে বোল নিষ্প্রভের হাতে তুলে দেয়।সে নিয়ে রুমে যেয়ে দেখে তুর বেডে চুপচাপ বসে আছে।নিষ্প্রভ তুরের পাশে বসে তাঁর মুখের কাছে স্পুন ধরে বলে,
‘খেয়ে নেও।’
তুর নিষ্প্রভের আরও কাছে যেয়ে তাঁর দুই হাত নিষ্প্রভের গালে রেখে নেশা মিশানো কন্ঠে বলে,
‘খা’বো তো আপনাকে।’
নিষ্প্রভ চমকে উঠে বলে,
‘হোয়াট!’
তুরের কাছে কি আর এতো কিছুর সময় আছে নাকি? সে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত কাজ করে ফেলে।নিষ্প্রভের ঠোঁ’টে নিজের ঠোঁ’ট বসিয়ে দেয়।
চলমান।
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।