স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর #লেখা_চাঁদনী_ইসলাম #পর্ব_১৭

0
606

#স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর
#লেখা_চাঁদনী_ইসলাম
#পর্ব_১৭

আসাদকে বাড়ির সামনে থেকে অন্য কর্ণারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দারোয়ান মামা এগিয়ে এসে আসাদের পিঠে হাত দিয়ে ডেকে বললেন, “বাবা বাড়ির মধ্যে না গিয়ে এই কর্ণারে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
আসাদ প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলো।তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল, “অনেকটা রাত হয়েছে আম্মু ঘুমিয়ে গেছে।তাই ভাবলাম আম্মুর ঘুম নষ্ট না করে এখান থেকে নিরুকে ডাকি।নিরু তো অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে জেগেই থাকে।তাই এইদিকে আসলাম মামা।”

“নিরু মামনি হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে।তুমি কলিংবেল চাপো।”

“আচ্ছা মামা আপনি যান।”

আসাদ অগত্যা বাড়ির সামনে এসে কোলিংবেল সুইচ চাপলো।নিরু জেগেই ছিলো কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে নিরু উঠে বসল।মনে মনে ভাবলো, “মামার তো আজ আসার কথা না।মামানিও তো কিছু বলল না।” বিছানা থেকে নেমে এলো।ততক্ষণে আমিনার ঘুম ভেঙে গেছে।আমিনা বেগম হাই তুলে বললেন, “তোর মামার তো আসার কথা না। না বলেই চলে এলো নাকি?”
নিরু বলল, “দাঁড়াও গিয়ে দেখি।”
আমিনা বেগম বললেন, “আগেই দরজা খুলে ফেলবি না।দেখে নিবি কে এলো।”

“আচ্ছা মামানি।”

নিরু দরজার ফুটো দিয়ে কে এসেছে দেখতে গিয়ে তব্দা খেয়ে গেল।ভূত দেখছে নাকি?না ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছে?নিরু পিছন ফিরে মামানির ঘরের দরজার দিকে আবার তাকালো।নাহ মামানির ঘরে লাইট জ্বলছে।

আমিনা বেগম বিছানা থেকে উঠে আসতে আসতে বললেন,”কিরে নিরু কে এলো?”

নিরুর দরজা খোলার আগে আসাদ আবার কলিংবেল চাপলো।নিরু তখনই দরজা খুলে দাঁড়ালো।আসাদ নিরুকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।চোখে মুখে রাগ রাগ ভাব।নিরুর বুকের ভিতরটা হাঁসফাঁস করছে।আসাদ কিছু বলতে যাবে তখনই আমিনা সামনে চলে এলেন।

“তুই আসবি আমাকে ফোন দিবি না বান্দর?”

“সারপ্রাইজ আম্মু।”

“মাইর দেবো।বলে না আসলে সকাল সকাল বের হবি রাত যেন না হয়।”

“হঠাৎ করে চলে এলাম পরিকল্পনা ছিলো না। ”

“হাত মুখ ধুয়ে নে।খাবার গরম করে আনি।”

আমিনা বেগম খাবার গরম করতে রান্না ঘরে গেলেন।নিরু ওখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চুলের বিনুনি কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।চোখে উৎসুক চাহনি,চোখে মুখে চুল এসে পড়ছে।’নিরু কি চুল গুলোর উপরে বিরক্ত হচ্ছে না?’ আসাদের গাঢ় মোহময় দৃষ্টির দিকে একবার তাকিয়ে নিরু চোখ ফিরিয়ে নিলো।নিরু ওই চোখে একদম চোখ রাখতে পারে না। মুখে যা মন চায় বলে জ্বালালেও চোখে অদ্ভুত এক দুষ্ট হাসি নিয়ে মহাশয় ঘুরে বেড়ায়।নিরু এতদিন ওই হাসির কারণ জানতো না, বুঝতো না। এখন নিরুর সব জানা।আসাদের ওই দৃষ্টি সম্মন্ধেও নিরু এখন অবগত।
নিরু দরজা বন্ধ করে রান্না ঘরে চলে গেল।আসাদ নিজের ঘরে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলো।নিরুকে দেখে আমিনা বেগম বললেন, “অনেক রাত হয়েছে তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড় নিরু।”

“তোমার সাথে গিয়ে ঘুমাবো মামানি।কিছু করতে হলে বলো।”

“আমার তো গরম করা হয়ে গেছে।বাবুকে খেতে দেবো।বাবুর খাওয়া শেষ হলে আসছি।তুই ঘুমিয়ে পড় বেশি রাত জাগা ভালো না।”

নিরু খাবার গুলো ডাইনিংয়ে রেখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল।আসাদ এসে খেতে বসল।আসাদ খেতে খেতে বলল, “আম্মু এই লাউ দিয়ে চিংড়ি মাছ রান্নাটা তো তোমার না।”

“মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ মুখে লেগেই থাকে তাই না?”

“তা তো থাকবেই।তোমার রান্নার স্বাদ ভিন্ন,এইটাও তোমার রান্নার কাছাকাছি হয়েছে।কিন্তু তোমার রান্না না আমি শিওর।”

“গত পরশু শেখার জন্য নিরু রান্না করেছিলো।তুই পছন্দ করিস বলে ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করে দিলাম।”

“নিরামিষ তো ভালোই রান্না শিখেছে।”

“নিরামিষ কি ধরনের কথা বাবু?”

” নিরামিষ-ই তো দেখো না হাসে না কথা বলে না।”

“কথা বলে কিনা একদিন আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনবি কত কথা বলে।”

আসাদ একটা চিংড়ি মাছ মুখে পুড়ে চিবাতে চিবাতে বলল, “তুমি তার প্রিয় মামানি তোমার সাথে সক্ষতা ভালো বলতেই পারে।”

“সারাদিন দুজন-ই তো থাকি।দুজন মিলে কত কিছু করি।”

“তো সে কি ঘুমিয়ে পরেছে?”

“হ্যাঁ ছোট মানুষ ঘুমাতে বললাম।”

আসাদ বিড়বিড় করে বলল, “কুম্ভকর্ণ একটা।”

“রিংকির বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছে না?”

“তা তো দিয়েছেই আম্মু।”

“যাবি না?”

” ইচ্ছে ছিলো না দেখি।”

“দাওয়াত কবুল করতে হয়।আমাদের বাড়িতে এসে সবাইকে দাওয়াত করে গেছে।”

“ওহ আচ্ছা রিংকি বলছিলো।আম্মু আমার খাওয়া শেষ তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”

আসাদ বহুদিন পর নিশ্চিন্তে ঘুমাবে।এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয় অবশ্য! তারপরও অনেকটা হালকা লাগছে।নিরুকে দেখার পর শান্তি অনুভব হচ্ছে।

আজ শুক্রবার নিরুর স্কুল কোচিং ছুটি।আমিনা বেগম নাস্তা বানাচ্ছেন, নিরু ডাইনিংয়ে বসে সবজি কাটতে কাটতে গুনগুন করে গান গাইছে।

বুকেরই মাঝে যে তোর আনাগোনা,
কান পেতে দেখ না তুই যায় কি শোনা।
ছায়া হয়ে তোকে আমি রবো যে ঘিরে,
যত দূরে যাস রবি চোখেরই নীড়ে।

কি মায়া তোর চোখে
ঘোর মাখা পলকে,
দেখে যাই আমি শুধু তোকে।

আসাদ এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে নিরু খেয়াল করেনি।একমনে সবজি কেটে যাচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাইছে।আসাদ পিছন থেকেই মুখটা নিরুর কানের কাছে নিয়ে নিচুস্বরে বলল, “সব মায়া তো তোর স্বচ্ছ এই টলমলে চোখে বন্দী।”
তারপর মাথাটা উচু করে উচ্চস্বরে বলল, “আম্মু খেতে দাও।”
নিরু ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষণ আসাদের দিকে তাকিয়ে রইল। আসাদ ফিচেল হেসে রান্না ঘর থেকে লুচি এনে মুখে পুরল।

আসাদ নাস্তা করে বের হয়েছিলো।দুপুরের পর বাড়ি এলো। ততক্ষণে আমিনা বেগমের দুপুরের রান্না শেষ হয়েছে।আসাদ এসে আমিনা বেগমকে বলল, “আম্মু আজ বিকেলে বন্ধুরা মিলে গুলিয়াখালী বিচে যেতে চাচ্ছি।রাকিব তানজিলা আপু সামিয়া আমাদের আরও অনেক বন্ধুবান্ধবরা যাচ্ছে।আমাদের সাথে তুমিও কি যাবে? ”

“তোরা বন্ধুবান্ধবরা মিলে যাবি ওখানে আমি গিয়ে কি করবো?”

“আমাদের সাথে ঘুরবে।”

“না বাবু আমি যাবো না।তানজিলা গেলে নিরুকে সঙ্গে নিস।অনেকদিন হলো ওকে নিয়ে বের হওয়া হইনা।”

“ঠিক আছে।”

বিকেলের দিকে বাইক বের করে নিরুকে নিয়ে গুলিয়াখালী বিচে গেল।নিরু ভেবেছিলো তানজিলা আপুরা আগে চলে এসেছে।কিন্তু চারপাশ খুঁজেও পরিচিত কারো দেখা পেল না।গুলিয়াখালী সি বিচের মেইন জায়গায় দাঁড়িয়ে আরও একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।তারপর কয়েকটা সিঁড়ি থাকায় সিঁড়ি গুলোতে উঠতে উঠতে আসাদকে জিজ্ঞেস করল, “আসাদ ভাই তানজিলা আপুরা কোথায়?”

আসাদ গা ছাড়া ভাব করে বলল, “আসবে না।”

নিরু বলল,”আসবে না কেন?”

“ওদের ভয় বেশি।বিচে জোয়ার উঠবে তাই আসবে না।”

নিরু আর কিছু বলল না।মন্দ লাগছে না।সামনে হাঁটতে থাকলো।হাঁটতে হাঁটতে আসাদ বলল, “সমুদ্রের গর্জন শুনবি নিরু?”

নিরু বলল, “হ্যাঁ শুনবো।”

“সমুদ্রের মাঝে যেতে ভয় লাগবে না তো?”

“কিসে করে যাবেন?”

“ট্রলারে।”

“এখন তো তেমন মানুষ নেই।১৫ জন না হলে তো যাবে না শুনেছি।”

“রিজার্ভ করবো চল।অনেকদিন সমুদ্রের গর্জন অনুভব করা হয়নি।”

আসাদ একটা ট্রলার রিজার্ভ করলো।নিরুকে ট্রলারে তুলে নিয়ে চালককে যেতে বলল।চারপাশে জলরাশি আর জলরাশির মাঝে মাঝে মাথা খাড়া করে আদুরে ভাবে গাছ দাঁড়িয়ে আছে।দমকা হাওয়ায় নিরুর ঝুটি করা চুল গুলো চোখে মুখে চলে আসছিলো।নিরু ঝুটিটা ধরে হাত খোপা করে নিলো।ট্রলারের শেষ মাথায় নিরু বসে আছে।নিচু হয়ে হাত বাড়িয়ে একবার সমুদ্রের জল ছুয়ে দিচ্ছে তো আরেকবার সোজা হয়ে বসে সমুদ্র উপভোগ করছে।আর ওইদিকে আসাদ মুগ্ধ হয়ে নিরুর মুগ্ধতা দেখছে।সমুদ্রের মাঝ বরাবর আসতেই আসাদ নিরুর কাছাকাছি এসে দাঁড়াল।সমুদ্রের গর্জন বেড়ে চলেছে।নিরু চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করছে।এই সমুদ্রের মাঝে শীতল বাতাসে নিরু প্রাণ ভরে শ্বাস নিলো।আসাদ নিরুর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “নিরু চোখ খোল।”
নিরু চোখ খুলে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।আসাদ নিরুর হাত দুটো ধরে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দৃষ্টিতে বলল,

“মোহিত কোথায় হতে হয় জানিনা।
তবে এইটুকু জানি,
মোহিত করা মানুষটা অসম্ভব রকমের সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে পারে।
যেই সৃষ্টিতে সৃষ্টিত হয়,
অন্য একটা প্রাণের খুশি,
যেই খুশিতে অন্যরকম একটা প্রশান্তি পাওয়া যায়।
আমি তোর মাঝে প্রশান্তি পাই নিরু।তোকে দেখে প্রতিটা মুহূর্ত মুগ্ধ হই।তুই কি আমার আজীবনের মুগ্ধতা হবি? ‘আমি তোকে ভীষণ ভালবাসি’ তুই কি আজীবন আমাকে এইভাবে মুগ্ধ করার জন্য পাশে রবি নিরু?”

সমুদ্রের গর্জনে শো শো বাতাসে কথা গুলো যেন সমুদ্রের ঢেউ হয়ে নিরুর কানে বার বার ফিরে ফিরে আসছিলো।নিরু বলার মতো কোন কথাই খুঁজে পেল না।আনন্দে আবেগে কেমন জমে গেল।আসাদ নিরুর হাত দুটো আরও শক্ত করে ধরে বলল, “নিরু কিছু বল,আমার খুব অস্থির লাগছে।আমাকে শান্তি দে, তুই আমারই বল?”

“নিরু কোনরকম মাথা মাথা নিচু করে সায় দিলো। আসাদ নিরুর হাত দুটো ধরেই অগুনতি চুমু খেল।নিরুর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।তারপর পকেট থেকে একটা বক্স বের করে হাটু গেড়ে নিরুর সামনে বসল।নিরুর হাতটা ধরে বলল,

“এই আংটিটা অনেক দিন আগে কিনেছি।এই ডিজাইনটা আমার খুব পছন্দের, যেদিন আমি অনেক টাকা রোজগার করবো। সেদিন ঠিক এই ডিজাইনের একটা আংটি বানিয়ে তোর হাতে আবার পড়াবো।আজ এইটা পড়বি নিরু?”
নিরুও তখন আসাদের হাতটা শক্ত করে ধরল।আসাদ অভয় পেয়ে নিরুর হাতে আংটিটা পরিয়ে দিলো।নিরু শক্ত করে আসাদের হাতটা ধরে সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। নিরু স্বপ্নেও এমন একটা দিনের কথা কল্পনা করেনি।কল্পনার চেয়ে অধিক কিছু পেলে সেই জিনিসের প্রতি কতটা ভালোলাগা আর খুশি যে কাজ করে সেইটা বোঝানো যায় না। নিরুর শক্ত করে হাত ধরে থাকাটা আসাদ উপভোগ করছে।আর নিরুর দিকে বারবার তাকাচ্ছে।নিরু অদূরে চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছে।

ট্রলার মাঝ সমুদ্র থেকে তীরে এসে ভিড়েছে।আসাদ নিরুর হাত ধরে নামিয়ে নিলো।গুলিয়াখালীর এখনো অনেক কিছু নিরুকে দেখানো বাকি,নিরু প্রকৃতি অনেক পছন্দ করে।আসাদ ও প্রকৃতি প্রেমী। দুজন সামনে হেঁটে চলেছে।আসাদ বলল, “তোকে তো কখনো আম্মুর ঘরে ঘুমাতে দেখিনি।ইদানীং কি আব্বু না থাকলে আম্মুর কাছে ঘুমাস?”

” নাহ! কাল যেই ভূতে ধরেছিলো।”

“মানে?”

“ভেবেছিলাম আপনি মেসেজ দিবেন।মামানি যদি দেখে নিতো সেই ভয়ে সারাদিন মামানির পিছু পিছু ছিলাম এমনকি রাতেও মামানির কাছে শুয়ে ছিলাম।”

” আমার পরিকল্পনা সব জলে মিশিয়ে মামানির কাছে ছিলো।”

“কিসের পরিকল্পনা? ”

“কাল রাতেই প্রপোজ করতাম।”

আসাদ গত কালকের পুরো ঘটনাটা নিরুকে বলল।নিরু পুরো কাহিনি শুনে খিলখিল করে হেসে উঠল।আসাদ মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখল।সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, “সমুদ্র তুমি কি জানো?তোমার থেকে আমার নিরুর হাসি বেশি সুন্দর।” তারপর নিজেই আনমনে হেসে উঠল।

কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ধ্যা নামবে।নিরু বাশবাড়িয়া সি বিচেও গিয়েছে।কিন্তু এই গুলিয়াখালী সি বিচটা একদম অন্যরকম লাগলো।শুধু আসাদের কাছ থেকে এখানে এসে ভালবাসি শোনার জন্য না।নিরুর আসলেই এই জায়গাটা ভিন্ন আর খুবই ভালো লেগেছে।এই বিচের বিশেষত্ব হলো গুলিয়াখালীতে অসংখ্য নালা আছে।আর নালা ভর্তি জল আর সাথে সবুজের সমারোহ।নালার জল সাথে দূর্বাঘাসে ভেসে থাকা উচু ঢিবি।সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।একেকটা ঢিবি থেকে লাফ দিয়ে অন্য ঢিবিতে যাওয়াটা নিরুর জন্য রিস্ক ছিলো।তাই নিরু একটা ঢিবির উপরেই দাঁড়িয়ে রইল।আর আসাদ এক ঢিবি থেকে অন্য ঢিবিতে গিয়ে নিরুকে দেখাচ্ছিলো।
নিরু চারপাশটা মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো।একদিকে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়াবন।আসাদ নিরুকে ঢিবি থেকে একটু দূরে নিয়ে আসছিলো।তারপর আসাদ নিরুকে বলল, “সাবধানে শ্বাসমূল বের হয়ে আছে লাগবে।”

ওখান থেকে একটু দূরে এসে নিরুকে বলল, “এখান থেকে দাঁড়িয়ে দেখ।”
নিরু প্রথমে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে দেখল জলরাশি। তারপর পূর্বদিকে তাকিয়ে দেখল পাহাড়ের মেঘালয়।সাথে সমুদ্রের পাশে সবুজ গালিচা।বিচিত্র জলরাশির পাশে সবুজ গালিচার সাথে কেওড়াগাছ।নিরু মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল।মুগ্ধ হয়ে জলরাশির দিকে চোখ রেখেই বলল, “সমুদ্র সৈকতটা অনেক বড়।”

আসাদ বলল, “হুম ২৫৯.১০ একর জায়গার উপরে এই গুলিয়াখালী বড় তো হবেই।”

“জায়গাটা অনেক সুন্দর।আপনি গত বছরে এডমিশনের সময় বলেছিলেন নিয়ে আসবেন।”

“তখনই নিয়ে আসতাম।পরিস্থিতি ঘোলাটে ছিলো।”

বাড়ির উদ্দেশ্যে আসাদ নিরুকে নিয়ে হাঁটা ধরেছে।নিরু আসাদকে বলল, “আপনি এতদিন কিভাবে দূরে থাকলেন আসাদ ভাই?আমাকে কি আপনার একবারও দেখতে ইচ্ছে করতো না?”

” আমার অসহনীয় দিন গুলো নিয়ে একদিন গল্প শোনাবো।যেদিন তোর ভীষণ মন খারাপ থাকবে সেদিন শোনাবো।”

“এইটা কেমন কথা মন খারাপের সময় কেউ মন খারাপের কথা শোনায়? ”

“আমি শোনাবো।”

“কেন?”

“কারণ আমার মন খারাপের কথা শুনে তোর মন খারাপটা দূর হয়ে যাবে।আমার মন খারাপের গল্প শুনতে শুনতে তোর মন খারাপের কথা ভুলে যাবি তাই।”

“এইটা কিন্তু অন্যায় আসাদ ভাই।”

“আচ্ছা বল তো তোর নিরু নামটা কে রেখেছিলো?”

“অনিমা নামটা আব্বু রেখেছিলো।কিন্তু নিরু নামটা কে রেখেছে শোনা হয়নি।কে রেখেছিলো আপনি জানেন?”

” আমি! ”

“কি আপনি?”

” আমি রেখেছিলাম।”

নিরু অবাক হয়ে ভ্রু জোড়া বাঁকিয়ে বলল, “সত্যিই কি আপনি রেখেছিলেন?”

” কেন বিশ্বাস হয় না?”

” আপনি তো আমাকে নিরু বলে ডাকেন না।অনিমা বলে ডাকেন।নিজে নাম রেখেও ডাকেন না কেন? তাই সন্দেহ হচ্ছে।”

” লম্বা কাহিনি আছে। পরে শুনিস এখন বাইকে উঠ।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here