#স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর
#লেখা_চাঁদনী_ইসলাম
#পর্ব_১৮
পরের দিন নিরু কোচিং থেকে ফিরছিলো।আজ রাহিমা সঙ্গে নেই।নিরু একা একাই হাঁটছিলো।কিছুটা পথ আসার পর আসাদের কন্ঠ শুনে পিছু ফিরে তাকালো।আসাদ নিরুকে ওখানে দাঁড়াতে বলে পাঁচ মিনিট পর নিরুর কাছে এলো।নিরু বলল, “আপনি এখানে কেন?”
“রাকিব ফোন করে ডাকলো।তোর পড়া শেষ? ”
” হ্যাঁ!”
” বাইকে উঠ।”
“বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি বাইকে উঠে কি করবো?এইটুকু হেঁটেই যাই।”
“উঠ এক জায়গায় যাবো।”
” মামানি চিন্তা করবে আমি প্রতিদিন এই সময় বাড়ি যাই।”
“আম্মুকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।”
” কি বলবেন?”
আসাদ চোখ টিপে বলল, “বলবো তোমার বউমাকে নিয়ে ডেটে যাচ্ছি।”
” মজা করেন না।”
“রিংকির জন্য একটা উপহার কিনবো চল।”
“আমি ওইসব চিনি নাকি।”
“তোকে চিনতে হবে না। আমার সাথে গেলেই হবে।”
“তাহলে আগে মামানিকে ফোন দেন।”
“আচ্ছা দিচ্ছি তুই উঠ।”
আসাদ আমিনা বেগমকে কল দিয়ে বলে দিলো নিরুকে নিয়ে মার্কেটে যাচ্ছে। আধা ঘন্টার মধ্যে বাড়ি চলে আসবে।আর কি উপহার নিলে ভালো হবে সেইটাও শুনে নিলো।
আসাদ নিরুকে নিয়ে একটা শাড়ির দোকানে গেল।জলপাই রঙের একটা শাড়ি পছন্দ হলে আমিনা বেগমকেও ভিডিও কলে দেখায় আমিনা বেগম ও শাড়িটা পছন্দ করেন এবং ওইটাই নিতে বলেন।আসাদ শাড়িটা নিয়ে নিরুর জন্য একটা আইসক্রিম নিয়ে নিরুকে দেয়।
“একটা আইসক্রিম নিলেন কেন?”
“কয়টা নিবি?”
“তিনটা নেন।”
“গলে যাবে তো এখনই তিনটা খেতে পারবি?”
“আমি একা খাবো নাকি।”
“আমি আইসক্রিম খাবো না।ঠান্ডার সমস্যা হচ্ছে।”
“আমি আর মামানি খাবো।”
“আচ্ছা তাহলে আরও কয়টা নিই?”
“আপনি না খেলে দুইটা নেন।বাড়ি গিয়ে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে দেবো তারপর মামানির সাথে বসে খাবো।”
“বাইরে লাঞ্চ করবি নিরু?”
“না বাড়ি যাবো।দেরি হলে মামানি পিটুনি দিবে।”
“আম্মুকে তো বললাম-ই।”
“মামানি একা আছে।”
আসাদ নিরুকে জোর করল না।মার্কেট থেকে সোজা বাড়ি নিয়ে গেল।বিকেলে আমিনা বেগমের সাথে নিরু ছাঁদে গেল।আমিনা বেগম ছাদ বাগানে কিছু সবজি লাগিয়েছেন।ছাদ বাগানে যত সবজি আছে তার মধ্যে পুইশাকটা নিরুর খুব পছন্দের।আমিনা বেগম টবে লাগানো মরিচ গাছ থেকে কিছু মরিচ তুললেন।তিনটা বেগুন আর চারটা টমেটো খাওয়ার উপযোগী হয়েছে।ওই গুলোও তুলে নিলেন।নিরুর হাতে লাগানো পেয়ারা গাছে এবারই প্রথম বেশ কয়েকটা পেয়ারা এসেছে।নিরু দুইটা পেয়ারাও ছিড়ে নিলো।রাতে পেয়ারা গুলো সরষে বাটা দিয়ে মাখাবে।
আসাদ কোন পরিকল্পনা ছাড়াই বাড়ি এসেছিলো।টিউশন আছে বেশিদিন থাকার ও উপায় নেই।ভেবেছিলো দু’দিন থেকেই চলে যাবে।রিংকির বিয়ের জন্য আরও দু’দিন পিছিয়ে গেল।কিন্তু আর পিছানো সম্ভব নয়।আসাদের পুরো পরিবার মিলে রিংকির বিয়ে খেতে গেছিলো।সবাই বেশ হৈ-হুল্লোড় করেছে।নিরুও বেশ মজা পেয়েছে।ওখানে রাহিমা না থাকলে হয়তো এতোটা ভালো সময় যেত না।সব মিলিয়ে দারুণ একটা দিন পার করেছে।
আসাদ আগামীকাল সকালের বাসে ঢাকা ব্যাক করবে।আজ মঙ্গলবার, বুধবারে বিকেলে গিয়ে টিউশনি ধরতে হবে।নিরু সকাল আট’টার মধ্যে কোচিংয়ে চলে যায়।নিরুর কোচিং ছুটি হওয়ার আগে আসাদ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিরুর স্কুলের একটু সামনে গিয়ে দাঁড়াল।নিরু বের হলে নিরুর সাথে হাঁটা শুরু করলো।রাহিমার সাথেও মোটামুটি গল্প করল।রাহিমা নিজের বাড়ির রাস্তায় চলে গেল।তারপর আসাদ নিরুকে বলল, “আমি কাল সকালে চলে যাবো।”
নিরু দাঁড়িয়ে পড়ল।আসাদের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল, “আবার কবে আসবেন?”
“সামনে মাসে না আসলেও পরের মাসে আসবো।”
“অনেক দেরি।”
নিরুর মনটা খারাপ হয়ে গেল।নিরু এমনিতেই কত মিস করতো আগে,এখন তো আরও মিস করবে,এইটা কিভাবে বলবে নিরু।
“অনেক দেরি না তাড়াতাড়ি আসবো।তুই প্রতিদিন এশার পর আম্মুর ফোনটা কাছে রাখবি আমি কল দেবো।”
“মামানি যদি বুঝতে পেরে যায়?”
” কি বুঝতে পারবে?বুঝলে বলবি পড়ার বিষয়ে কথা বলছিলি।”
“আচ্ছা।”
“আর আম্মু যখন কোন কাজে ব্যস্ত থাকবে বা তোর মন খারাপ হবে কল বা মেসেজ দিবি।কোন কিছু নিয়ে কখনো ভয়ে ভয়ে থাকবি না।আগের মতোই থাকবি।সুযোগ পেলে কথা বলবি না হলে না।আমি শত ছলনায় তোর সাথে ঠিক কথা বলে নেবো দেখবি।”
আসাদের বলা কথা গুলোতে নিরু মিল খুঁজে পায়।আসাদ ঢাকায় চলে গেছে একমাস হয়ে এলো।ঠিকই হাজার ছলে নিরুর সাথে প্রতিদিন কয়েকবার করে কথা বলে।আর পড়াশোনা নিয়ে মেসেজ দিতেই থাকে।ইংরেজি সাজেশন গুলো মেসেজ আকারে দিয়ে তার মধ্যে মধ্যে মনের কথা গুলো যুক্ত করে দেয়।এক ধাপ পর পর গুরুত্বপূর্ণ সাজেশনের মধ্যে লিখে রাখে, ‘তোকে ভীষণ মিস করছি রে নিরু।’ নিরু ছাড়া ওই মেসেজ বুঝে নেওয়ার সাধ্যি কারো নেই।আমিনা বেগম উপর থেকে সাজেশন লেখা দেখে নিরুকে বুঝে নিতে বলে উপর উপর দেখেও।কিন্তু আসাদের অনুভূতি গুলো একমাত্র নিরুর চোখেই পড়ে।প্রথম প্রথম নিরু ও কিছু বুঝতে পারতো না।তারপর আসাদ একদিন পুরো সাজেশনটা আরও একবার মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলে।তারপর থেকে নিরু বুঝে নিয়েছে।এবং ওই সাজেশন মেসেজ পেলেই নিরু খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়।খুব আনন্দ নিয়ে নিরু সাজেশন গুলো শেষ করে। এইভাবেই পড়াশোনা আর ছোট ছোট ভালবাসার মেসেজের মধ্যে দিয়েই দুজনের ভালবাসা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।
গতকাল নিরুর এস এস সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।এর মাঝে আসাদ দুইবার এসে ঘুরে গেছে।নিরুর দাদু এবার নিরুকে নিয়ে গিয়ে মাসখানেক নিজেদের কাছে রাখবেন।আজিজুল হক ও না করেননি।নিরুর যতদিন মন চায় থেকে আসুক।মাঝখান থেকে আসাদ একটু নারাজ, নিরুকে বলেছে এক সপ্তাহের বেশি না থাকতে।নিরুর ও ওখানে বেশিদিন মন টিকবে না।যেমন মা বাবা থাকাকালীন নিরু কোথাও গিয়ে একবেলা শান্তি পেতো না,এখনও ঠিক তাই, মামানিকে ছাড়া নিরু কোথাও গিয়ে বেশিদিন থাকতে পারে না।সবটা যেন নিজের বাড়ির মতো হয়ে গেছে।
নিরুর দাদু এসে নিরুকে নিয়ে গেছে।আসাদের সাথে যখন শেষবার কথা হয়।আসাদ তখন বলে দিয়েছে কোনভাবে যেন আয়েশাদের বাড়ি না যাওয়া হয়। এমনকি নিরুর ফুফু নিরুকে জোর করলেও যেন না যায়।আর রুমন দাদু বাসায় এলে যেন আসাদকে জানায়।নিরু ও ‘আচ্ছা বলে।’
নিরু আসাদের চিন্তার কারণটা বুঝতে পেরে আসাদকে চিন্তা করতে না করে।কোথাও যাবে না সেইটাও বলে।
দাদুবাড়ি গিয়ে আসাদের সাথে দিদার ফোন থেকে নিয়ম করে ফোনে কথা হয় এবং মেসেজ ও হয়।নিরুর ফুফু নিরুকে নিরুর দিদার সাথে যেতে বলেছে। নিরু মুখের উপর না বলতে পারেনি।পরে যাবো বলেছে।কিন্তু নিরুর পরিকল্পনা আছে এখান থেকে কোথাও যাবে না। মামাকে একদিন হঠাৎ করে আসতে বলবে তারপর সীতাকুণ্ডে চলে যাবে।
দুজনের কথা আদান প্রদান, শত স্বপ্নের ঝুড়ি বোনা সব যেন নিজের মতো করে জেগে দেখা একটা ছবির মতো সুন্দর স্বপ্ন।আসাদ নিরুকে এতটা ভালবাসে নিরু কখনো বুঝতেই পারেনি।আর এখন প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব করে যায়।ভালবাসার এই অনুভূতি বিশাল এক কারুকার্য দ্বারা নির্মিত প্রতিচ্ছবি যেন!
চলবে….