#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৫
#ফারিহা_খান_নোরা
মেয়ে পা’চা’র করতে যেয়ে আফসান ধ’রা পড়েছে। পুলিশ তাকে হাতেনাতে গ্রে’ফ’তা’র করে। শুধু তাই নয় পুলিশ খবর পেয়েছে তাঁদের নারী ও শিশু পা’চা’র’কা’রী একটি চ’ক্র আছে যার সাথে বেশ কয়জন যু’ক্ত।এই চ’ক্রে’র প্রধান আ’সা’মি’কে এখনো ধরতে পারে নি। আপাতত আফসান সহ আরও দুইজন পুরুষ ও দুইজন নারীকে ধরতে পেরেছে। নারী দুজনের মধ্যে একজন অল্পবয়সী মেয়ে ও একজন মাঝবয়সী মহিলা ছিলো। জি’জ্ঞা’সাবাদে জানা যায় মহিলার নাম জবা। তাঁর স্বামী এই শহরে রিকশা চালায় নাম করিম। পুলিশ যেহেতু ইলিয়াস মির্জাকে চেনে যার জন্য সে রাতের বেলায় ফোন করে আফসানের ব্যাপারে জানিয়ে দেয়।তারপর থেকে আশা বেগম লিভিং রুমে এসে চিৎ’কা’র চেঁ’চা’মে’চি কা’ন্না’কা’টি শুরু করেছে। সোফায় ইলিয়াস মির্জা স্ত’ব্ধ হয়ে বসে আছে। তাঁর চোখ মুখ দেখে যে কেউ ই বলে দিতে পারবে, এমন আকস্মিক ঘটনা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। আশা বেগম ন্যা’কা সুরে কাঁ’দ’ছে আর বলছে,
‘আফসানের বাবা আমার ছেলে পুরোপুরি নি’র্দো’ষ সে এমন কাজ করতে পারে না। তাকে ফাঁ’সা’নো হয়েছে, কেউ ইচ্ছে করে তাকে ফাঁ’সি’য়ে’ছে।দয়া করে তুমি তাকে ছা’ড়া’নো’র ব্যাবস্থা করো।’
এবার জেনো ইলিয়াস মির্জা চেতনা ফিরে পায়।ফোন হাতে তুলে নিয়ে কাকে কাকে জেনো ফোন দিতে থাকে।উপর থেকে নিষ্প্রভ আসল ঘটনা বুজতে পেরে বাঁকা হাঁসি দিয়ে প্রস্থান করে।তার এসব নাটক দেখার সময় নেই।
সারারাত নিষ্প্রভের ঘুম হয় না।তুর এখনো তার বুকের উপর ঘাপটি মেরে অঘোরে ঘুমাচ্ছে।নিষ্প্রভ ভাবে সে চাইলেই তুরের সাথে একটা নরমাল লাইক লিড করতে পারে ।মেয়েটা সব সহ্য করার পরেও এখনে পড়ে আছে,সে ছাড়া মেয়েটার যাওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু এই পরিবেশে সে তুরকে রাখতে পারবে না।রাতের ঘটনা অবলকন করে বুজতে পারছে বাড়িতে আগুন লেগেছে,এখন সবকিছু ছা’ড়’খা’ড় করে দেওয়ার অপেক্ষা।সারারাত নিষ্প্রভের এসব ভেবে ঘুম হয়না।আর ভাবে কি হতো সবার মতো ওর একটা সুখী পরিবার থাকলে।যবে থেকে তার বাবা আশা বেগমকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে তবে থেকে তার জীবণটা অ’ত্যা’চা’রে জ’র্জ’রি’ত হয়ে গেছে।নিষ্প্রভ ডিসিশন নিয়েছে সে তুরকে নিয়ে সুন্দর একটা সুখী পরিবার গড়বে।যেখানে থাকবে একে অপরের প্রতি অফুরন্ত সুখ,সম্মান ও ভালোবাসা
সকালে তুরের জ্ব’র নেমে যায়। সে উঠে বসে চোখ ডলতে থাকে।অন্য মনস্ক হয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে চমকে উঠে।সে ভালো করে খেয়াল করে কাল ও যে থ্রীপিস পড়ে ছিলো সেটার রং ছিলো নীল আর এখন যেটা পড়ে আছে সেটা কালো।তার পোশাক কে চেঞ্জ করে দিলো কিছুতেই মনে করতে পারছে না।নিষ্প্রভ নয় তো, এই কথা ভেবে লজ্জায় তুরের মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে।
এর মধ্যে সিতারা রুমে এসে বলে,
‘নতুন ভাবি উঠে পড়ছেন।বড় ভাইজান পাঠাইলো কইলো আপনার খেয়াল রাখতে। আপনি এখন কেমন আছেন ভাবী?’
তুরের সামান্য মন খা’রা’প হয় নিষ্প্রভের এমন কাজে। নিষ্প্রভ তো নিজে এসেও খোঁজ নিতে পারতো।মন খা’রা’পে’র রেশ লুকিয়ে রেখে তবুও স্বাভাবিকভাবে বলে,
‘এখন ভালো আছি।রাতে আমার কি হয়েছিল?’
সিতারা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
‘আপনে জানেন না, জ্বরে আপনি কি সব কইতাছিলেন।হুনলাম বড় ভাইজানের গায়ে বমিও কইরা দিছেন।আপনের নাকি হুশ ছিলো না।বড় ভাইজান সারারাত আপনের সেবা যত্ন করছে।’
তুর অবাক হয়ে যায় ইশ সারারাত মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।তুরকে চুপ থাকতে দেখে সিতারা বলে,
‘বড় ভাবি ফ্রেশ হয়ে নিচে আইয়া পড়েন।আমি আপনের খাওন দিমু।’
সিতারা চলে যায় তুর ফ্রেশ হয়ে আসে।নিচে যেতে বেশ লজ্জা পাচ্ছে কালকের কথা ভেবে।নিষ্প্রভ তার ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়েছে।কি লজ্জ!নিপ্রভের সামনে সে কিভাবে যাবে এখন?
নিচে এসে তুর দেখে আশা বেগম চেঁ’চা’মে’চি করছেন। তিনি বলছেন,
‘আমার সোনার টুকরা ছেলেটার কি হয়ে গেলো রে।সে মার খাচ্ছে আর তোরা বাড়ি বসে বসে গি’ল’বি। আমি মা, আমি কিভাবে এসব সহ্য করবো।ওরে আমাকে কেউ নিয়ে যা আমার ছেলের কাছে।’
তুর সিতারাকে জিজ্ঞাসা করে,
‘এই মহিলার আবার কি হয়েছে?’
সিতার ফিসফিস করে বলে,
‘আপনে জানেন না বড় ভাবি অই ভু’ত ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।হেই নাকি মেলা খা’রা’প কাম করছে। শুধু হেরে না, পাশের বাড়ির করিমের বউরেও নিয়া গেছে।আপনে এখানে না থেকে ঘরে যান। আমি আপনের খাওন ঘরে দিয়া আসি।’
তুর ভ্রু কুঁচকে সিতারাকে প্রশ্ন করে,
‘ভু’ত ভাই?’
সিতারা আগ্রহ নিয়ে বলে,
‘হু ভাবি আফসান ভাইরে ভু’ত ভাই কইছি আমি।হেই একবার পুরা শরীর ব্যান্ডেজ কইরা বাড়িতে আইয়া আমারে ভয় দেখাইছিলো। আমি অজ্ঞান ও হইয়া গেছি তারপর থেকে হেই আমার কাছে ভু’ত ভাই।
তুর হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।তবুও ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে চলে আসে।খাবার খেয়ে বিছানার উপর বসে থাকে।নিষ্প্রভের এখনো কোনো খবর নেই। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না।কেউ বলতে সে সিতারা কে বুজিয়েছে।
নিষ্প্রভ রুমে আসলে তুর কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে। নিষ্প্রভ তুরের কপাল ছুঁয়ে দেখে। না, জ্বর নেই,নিষ্প্রভের সামনে থাকতে তুরের বেশ লজ্জা করছে এই লজ্জা নিবারণ করতে সে ভার্সিটিতে যেয়ে চায়।তুর কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলে,
‘ভার্সিটি যেতে চাই।’
‘যেতে তো মানা করিনি। তবে জ্বরটা মাত্র ভালো হলো তারমধ্যে বমি করে শরীর বেশ দূর্বল তোমার।’
তুর ডাহা মি’থ্যা কথা বলে,
‘আসলে আজ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস রয়েছে।’
নিষ্প্রভ কিছু ভেবে বলে,
আচ্ছা, আমি দিয়ে আসবো। রেডি হয়ে নাও।’
তুর রেডি হয়ে নিল। নিষ্প্রভ চোখ মেলে তার বিবাহিতা বউকে দেখে। মুখে বোধহয় হালকা পাউডার মেখেছে। ঠোঁটে পিংক লিপস্টিক। অসুস্থতার জন্য মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে।ইশ! এর পরেও মেয়েটাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। ভেতরটা বেসামাল হয়ে যাচ্ছে নিষ্প্রভের।গলা শুকিয়ে আসছে।এই তৃষ্ণার্থ বুক নিয়ে সে বেশি দিন থাকতে পারবে না।তার খুব তাড়াতাড়ি তুরকে নিজের করে চাই।
তুরের হাত থেকে কিছু প’ড়া’র শব্দে নিষ্প্রভের চেতনা ফিরে আসে।তুর ঝুঁ’কে তুলতে নেয়, অসাবধানতাবশত তুরের শরীর থেকে ওড়না টা নিচে খুলে প’ড়ে।জামার গলা বড় হওয়াই ও নিচু হয়ে ঝুঁকে প’ড়া’র ফলে সামনের বেশ কিছু অংশ দৃশ্যমান হয়।যা দেখে নিষ্প্রভের চোখ কোটরে থেকে বেরিয়ে আসে।চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে যায়।সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।
নিষ্প্রভ বার বার ঢুক গিলছে।গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে,
‘ওড়নাটা ঠিক করে নাও। একটু দেখেশুনে চলবে তো!’
তুর আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখে ওড়নাটা গা থেকে প’ড়ে যেয়ে বুকের বেশ কিছু অংশ দৃশ্যমান হয়ে আছে।সে তড়িৎবেগে সোজা হয়ে যায়।তাড়াহুড়ায় ওড়নাটা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নেয়। লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয় তুর।আজ সকাল থেকে তাকে শুধু লজ্জায় পেতে হচ্ছে।নিষ্প্রভ কি তাকে খা’রা’প মেয়ে ভাবছে? সে কি মনে করছে তুর এমটা ইচ্ছে করে করছে? ভাবনার অন্তরালে নিষ্প্রভ বলে,
‘এতো ভাবতে হবে না, চলো বের হই।
তুর কিছুটা উশখুশ করে।সাহস নিয়ে বলেই ফেলে,
‘শুনন বলছিলাম কি,কাল রাতে আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করে দিয়েছিলো।’
নিষ্প্রভ বের হতে নিয়েছিলো কিন্ত তুরের কথা শুনে পিছনে ফিরে বলে,
‘কেন আমি!’
তুর অস্বস্তিতে প’ড়ে যায় তবুও ইতিউতি করে অসহায় ভঙ্গিতে বলে,
‘এতো কষ্ট করতে হতো না।সিতারাকে ডাকলেই তো পারতেন।’
নিষ্প্রভ তুরের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে,
‘বউ যখন আমার চেঞ্জ তো আমাকেই করে দিতে হবে।সিতারা কেন আসবে?’
নিষ্প্রভের কথা শুনে তুর লজ্জার সাথে অবাক হয়েও যায়। নিষ্প্রভ তার সাথে স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর মতো ব্যাবহার করছে।এসব ভাবনার মাঝে নিষ্প্রভ তুরের কাছে আসে ,তুরকে অবাক করে দিয়ে তুরের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
‘তোমার বুকের ডান পাশের একটু নিচে একটা লালচে তিল আছে।আমি কিন্তু কাল দেখি নি একটু আগে দেখেছি।’
চলমান।
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।