#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ৩
‘ফকিন্নির বাচ্চার এতো স্পর্ধা হয় কি করে?’
বান্ধবী আশার মুখে এমন কথা শুনে তানিয়া অবাক হয়ে যায়।এই সকালে ফোন করে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে আশা এসব উল্টা পাল্টা গালি দিচ্ছে কেন বুজতেছে না তানিয়া বেগম।সে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
‘এসব কি বলছিস? রাতে *ম*দ খাইছিলি নাকি?’
এই কথা শুনে লতা জেনো আরও রেগে যায়। চিৎকার করে বলে,
‘ম*দ খাবি তুই ফকিরের বা*চ্চা,আমি কেন খাবো? আমি ড্রিংক*স করি, আমি কি তোর মতো ফকির।নিজের অবস্থান ভুলে গেছিস?’
ল্যাও ঠ্যালা এই পাগল কে এখন ম*দ আর ড্রিংক*স এর পার্থক্য কে বুঝাবে।তবে আশার কথায় এবার তানিয়া বেগম বেশ চ*টে গেল।তিনিও উচ্চস্বরে বললেন,
‘এসব তুই আমায় বলতে পারিস না।তুই নিজেও সাধু না,আগে নিজের দিকে তাকা তারপর অন্যের দিকে আঙ্গুল দেস বদমাইশ মহিলা।’
‘তোর এতো বড় সাহস তুই আমায় বদমাইশ মহিলা বললি।’
‘তা নয়তো কি বলব শুনি।সাত সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়ে তোর গা*লি”গা*লাজ শুনতে হচ্ছে।করছি টা কি আমি বলবি?’
‘তুই শুনবি না তো কে শুনবে।তোর মেয়ে কাল ভার্সিটির সামনে তার না*গ*রকে দিয়ে আমার ছেলেকে মা*র খাওয়াইছে।ভালো মনে করছিলাম তোর মেয়েকে কিন্তু আমি তো জানতাম না,যেমন মা তার তেমন মেয়েই হবে।মেয়েকে নিয়ে ব্যা*ব*সা*য় নেমেছিস নাকি?’
এসব শুনে তানিয়া বেগমের মাথা গরম হয়ে যায়।আশাকে বলে,
‘ঠিক বলছি তুই আমার কথাও শোন,যেমন মা তার তেমন ছেলে।তোর ছেলে যেমন আমার বাড়িতে এসে কাজের মেয়ের সাথে আকাম কুকাম করে বেচারি এখন প্রেগন্যান্ট।তেমনি তুই ও তো বিয়ের আগেই… থাক আর বললাম না।এতো কিছু জানার পরেও যে তোর এই ছেলের সাথে আমার ভালো মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছিলাম তোর ছেলের ভাগ্য ভালো ছিলো বলে।’
আশা ভয় পেয়ে যায়।তবুও নিজেকে ঠিক রেখে এবার সুর একটু খাদে নামিয়ে বলে,
‘রাখ তোর ফালতু কথা। ভাগ্য আমার ছেলের নয় তোর মেয়ের ভালো। বড়লোক বাড়িতে বউ হয়ে আসলে রাজরাণী হয়ে থাকবে।এই টাকার লোভেই তো তুই তোর মেয়েকে আফসানের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিস।এতো কিছু জানি না আমি সাত দিনের মধ্যে তোর মেয়েকে আমার ছেলের বউ হিসেবে এই বাড়িতে চাই।নয়তো আমার থেকে ধার নেওয়া দশ লাক্ষ টাকা তুই আজকেই ফেরত দিবি।নেহাত তোর মেয়ের রূপের তেজ আছে বলে ছেলের বউ করতে চাইছি নয়তো তোর মতো ফকিন্নির ঘরে যাইতাম না।কথা গুলো মাথায় রাখিস আর কাজে লেগে পর টাইম খুব কম।’
বলেই আশা ফোনটা কেটে দেয়।সঠিক জায়গায় হাত দিয়েছে এখন সে চুপচাপ বসে থেকে দেখবে যা করার তানিয়া নিজেই করবে।নিষ্প্রভ এতোক্ষণ সব কথাই শুনছিলো কারণ বাড়িতে কেউ না থাকায় আশা বেগম ড্রয়িং রুমে বসেই উচ্চস্বরে কথা বলছিলো। নিষ্প্রভ কাল রাত দুটাই বাড়িতে ফিরছে যার জন্য আশা বেগম জানে না।জানার কথাও না,তিনি তো নিজের স্বার্থে ডুবে থাকে আশে পাশের মানুষ সম্পর্কে তার চিন্তা ভাবনা নেই।
________________
তানিয়া বেগম হন্তদন্ত হয়ে মেয়ের ঘরের দিকে এগিয়ে আসে।তুর ঘুমে ছিলো তিনি এই অবস্থায় এক ঝটকায় তুরকে তুলে ঠা*স করে গালে থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয়।এমন আকস্মিক থা*প্প*ড়ে ঘুমের ঘোর থেকে তুর বাস্তবে ফিরে আসে।গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
‘মারছো কেন কি করেছি আমি?’
‘কি করিস নি তুই সেইটা বল!’
‘তুমি বলবে কি করেছি আমি যে, এই সকাল বেলাই তুমি আমায় ঘুমের মধ্যে এভাবে মারছো?’
তানিয়া বেগম রেগে যেয়ে তুরের হাত মুচড়ে ধরে বলল,
‘কলেজে পড়তে দিয়েছি তোকে আর তুই প্রেমলীলা করে বেড়াস।এর মধ্যে কোন নাগর জুটিয়ে ফেলছিস তাকে দিয়ে আফসান কে মা*র খাওয়াইছিস।’
এবার তুর আসল ব্যাপার টা বুঝতে পারল।তারমানে আশা আন্টি তার মায়ের কানে ভার্সিটির ব্যাপারটা রসিয়ে বলছে।সে নিজেকে শান্ত করে বলল,
‘মা আফসান আমার সাথে অভদ্রতা করছে।’
‘অভদ্রতার কি হলো শুনি আজ বাদে কাল যার সাথে বিয়ে হবে সে তোর সাথে কথা বলবেই তুই শুনবি।’
‘মা কথা বলা আর অভদ্রতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আফসান রাস্তায় আমার সাথে বাজে কথা ও খারাপ ব্যাবহার করেছে।যার জন্য ও মা*র খেয়েছে আসলে কি বলো তো দুনিয়াতে এখনো ভালো মানুষ আছে কিনা। যাইহোক আমি আফসানকে বিয়ে করতে পারবো না।’
তানিয়া বেগম আরও রেগে গেলেন।রাগী কন্ঠে বললেন,
‘কেন তোর অই না*গ*রকে বিয়ে করবি বুঝি। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ আফসানকেই তোর বিয়ে করতে হবে। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।’
‘মা তুমি কি শুরু করেছ বলো তো। তুমি জেনে বুঝে এমন একটা চরিত্রহীন ছেলের সাথে আমায় বিয়ে দিতে চাইছো কেন। তুমি কি অন্ধ হয়ে গেছো,আর সবচেয়ে বড় কথা আমার বড় ভাই আছে,বড় বোন আছে তাদের আগে বিয়ে দেও তা না করে আমায় নিয়ে পড়ছ কেন।নিজের ভালো ত পাগলেও বুঝে।’
‘তুরফার কথা তোর চিন্তা করতে হবে না। আমি যা বলবো ও তাই শুনবে।’
বলেই তানিয়া বেগম দ্রুত প্রস্থান করলো।তবে যাওয়ার আগে বিরবির করে বলল,
‘আমি নিজের ভালোটাই বুঝতেছি।’
___________
দুই দিন পর, আজ রবিবার!
এ দুই দিন আশা বেগম আফসান কে তাদের পুরনো রেস্ট হাউস এ রেখে এসেছেন।ওখান থেকেই চিকিৎসা হয়েছে তার।এ বাড়িতে থাকলে ইলিয়াস মির্জার কাছে ধরা পড়ত।তিনি জানেন আফসানের মতো ছেলেই হয় না।আর তার চোখে খারাপ হলো নিষ্প্রভ।
খাবার টেবিলে সবাই বসে সকালের নাস্তা খাচ্ছে।নিষ্প্রভ সচারাচর সবার সঙ্গে বসে না।ইলিয়াস মির্জা কি জেনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে বলে ডেকেছে।তাই বাধ্য হয়ে বসতে হয়ছে নয়তো কোনো ইচ্ছা ছিলো না। সম্পর্কটা বাবা ছেলের হলেও এখন আগের মত বিরাজমান করছে না।তার মা মারা যাবার পর থেকে বাবা ও পর হয়ে গেছে।জবে থেকে দ্বিতীয় বিয়ে করছে সেদিন থেকে।হবেই না কেন বুড়ো বয়সে কেউ অল্প বয়সী মেয়ে পেলে ঠিক থাকে?
ইলিয়াস মির্জা গলা খাঁকারি দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেন।আশা বেগম উচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়ছে। আফসান ও তাকিয়ে আছে শুধু নিষ্প্রভ নির্বিকারে খেয়েই যাচ্ছে। ইলিয়াস মির্জা বললেন,
‘ভবিষৎ নিয়ে ভাবছো কিছু?’
‘কোন বিষয়ে?’
‘এভাবে আর কতোদিন চলবে।নিজেদের ব্যাবসা ছেড়ে পরের অধীনে সামান্য টাকার জব করছো।’
‘টাকা সামান্য হলেও সম্মান ও স্বস্থি আছে।যা ব্যাবসাতে আমি পাই না।’
‘তা পাবে কেন ব্যাবসার ব টাও বুঝো না। কতো গুলো টাকার লস করলে আমার।তাও ভাবলাম ছেলে শিখুক কিন্তু তুমি আমার ইচ্ছাকে দাম দিলে না।’
বাবার কথায় নিষ্প্রভ মাথা তুলে আফসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘সত্যি কি টাকা গুলো লস হয়ছে নাকি আত্মসাৎ?’
আফসান ঢুক গিলে ভয় পেয়ে যায়। ইলিয়াস মির্জা রেগে বলে,
‘বেয়াদব ছেলে।’
নিষ্প্রভ ঠান্ডা গলায় বলে,
‘আগে থেকেই।’
‘চুপ করো তুমি। আফসান কে দেখো নিজের চেয়ে চার বছরের ছোট ভাই হয়ে ব্যাবসা সামলাচ্ছে দুই দিন পর বিয়ে করবে আর তুমি বড় হয়ে কি করছো।ঘুরে বেড়াচ্ছো কোনো দায়িত্ব জ্ঞান নাই।’
নিষ্প্রভ এবার বোমা ফাটার মতো কথা বলে।যার তেজ যেয়ে লাগে আশা বেগম ও আফসানের গাঁয়ে।
‘শুনলাম আপনার আদরের ছেলে ভার্সিটির রাস্তার সামনে অসভ্যতামি করার জন্য তার হবু বউ তাকে প্রেমিক দিয়ে পিটিয়ে নিয়েছে।’
‘মানে!’
চলমান।
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন লাগছে ছোট্ট করে হলেও মন্তব্য করে যাবেন।