#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ৪
‘দুই দিনের ব্যাবধানে এ্যাবর্শন করিয়ে রুমিকে গ্রামে পাঠিয়ে দিলো পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে।
‘তুমি কি মানুষ নাকি তোমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী ও ওনার ছেলের মত অ*মানুষ হয়ে গেছ?’
তুরের এমন কথায় তানিয়া বেগম রেগে যায়।জোড়ে থা*প্প*র মে*রে দেয়।তুরের ফর্সা গালটা সাথে সাথেই লাল বর্ণ ধারণ করে। পরীক্ষা শেষ হওয়ায় তুরফা গিয়েছিল তার বান্ধবীর বাসায়।আজ বাড়িতে আসতে না আসতেই ছোট বোনের গায়ে মায়ের এমন হা*ত তুলতে দেখে এগিয়ে আসে।তুরকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।মাকে প্রশ্ন করে,
‘তুর কে মা*র*ছো কেন কি করছে?’
‘এসেছিস ভালো করছিস তোর বোন কে বুঝা হাতে সময় খুব কম যতো দ্রুত সম্ভব আফসানের সাথে বিয়েটা দিয়ে দিবো।’
তুরফা বলল,
‘জোর করছো কেন? যদি বিয়েতে রাজি না থাকে তাহলে জোর করে বিয়ে দিবে নাকি?’
‘দরকার পরলে তাই দিবো।’
বলেই গটগট করে পা ফেলে চলে গেল তানিয়া বেগম।তুর বড় বোন তুরফাকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।তুরফা তুরের মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘কাদিঁস না।মা যে কেন এমন করছে বুজতে পারছি না।’
‘আপু অনেক কিছু ঘটে গেছে এই কয়দিনে।তুই নাই সেজন্য বুজতে পারছিস না।’
‘আগে ঘরে আয় সব শুনবো।’
তুরফা তুরকে নিয়ে ঘরে যায়।তুর শুরু থেকে সবকিছু বোনকে খুলে বলে।তুরফা সব শুনে রেগে যায় মায়ের উপর।তার মা এমন জঘন্য মন মানসিকতার অধিকারী কবে থেকে হলো।এতো কিছুর পরেও কোন মা নিজের মেয়েকে জোর করে এমন একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারবে।তুরফা চিন্তিত কন্ঠে বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘তুই চিন্তা করিস না।একটা বুদ্ধি বের হবেই,প্রথমে আমাদের এই বিয়েটা যেভাবেই হোক আটকাতে হবে।’
_____________
সকালে খাবার টেবিলে নিষ্প্রভ এর মুখ থেকে এতো বড় একটা নিউজ লিক হবার পর ইলিয়াস মির্জা আশা ও আফসানকে বেশ কয়বার জেরা করেছে।আশা বেগম বেশ কৌশলে সামলিয়ে নিয়েছে ব্যাবারটা। এই বুড়োকে নিয়ে বেশি চিন্তা নেই,নিজের বুদ্ধি ও রূপ দিয়ে সব সামলিয়ে নেয় ঠিক যেমন ২৪ বছর আগে নিজের রূপ দিয়ে ফাঁসিয়েছে।তবে যতো চিন্তা নিষ্প্রভকে নিয়ে।ছেলেটা গভীর জলের মাছ।তা না হলে গোপন কথা কিভাবে লিক করলো? এখন এসব কিছু বাদ দিয়ে আফসানের বিয়ের ব্যবস্থা আগে করতে হবে। নিষ্প্রভকে পড়ে দেখে নিবে।
আশা বেগম দ্রুত তানিয়া কে ফোন করে কোনো সুযোগ না দিয়েই বলল,
‘তোর মেয়ে কে রাজি করাতে পারলি?’
‘না।’
তানিয়া বেগমের এমন নির্বিকার উত্তর আশার একদম পছন্দ হয় নি।একটাও কাজের না, শুধু সে ছাড়া।সে বলল,
‘শোন একটা প্লান করেছি।’
‘কি?’
তানিয়া বেগম বিরক্তিকর ভাবে বলল।আশা বেগম তার প্লান খুলে বলল। তানিয়া শুনেই রাজি হলো না।যতো যাই হোক মেয়েটা তো তার।মান সম্মানের প্রশ্ন,আশা বলল,
‘শোন তোর মেয়ের সম্মানের দায়িত্ব আমার। তুই শুধু তুরকে কিছু একটা বুঝিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আয়।বাকি সব দায়িত্ব আমার। আফসান আর তুরের জন্য কাল সন্ধ্যা বেলা একটা পার্টি থ্রো করেছি যেখানে আমাদের শুধু কাছের রিলেটিভরাই থাকবে বাহিরের কেউ নয়।’
‘ঠিক আছে আমি দেখছি।’
____________
নিষ্প্রভ আজকাল বেশ ব্যাস্ত সময় পার করছে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন ভালো ভালো জায়গায় ইন্টারভিউ দিচ্ছে।যদিও তার সরকারি চাকুরির বয়সসীমা আরও দুই বছর রয়েছে তবুও জান প্রান ছেড়ে দিয়ে দিন রাত খেটে যাচ্ছে বেচারা।কোনো চাকুরী ক্ষেত্রে মেধা তো অবশ্যই প্রয়োজন তবে লাকটাও থাকা দরকার।এর মধ্যে আজ সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ করেই ইলিয়াস মির্জা বলেন কাল সন্ধ্যা বেলা বাড়িতে পার্টি এ্যারেঞ্জ করেছে তাকে এ্যাটেন্ড থাকতে।বলার সময় আশা বেগম ও ছিলো।ভদ্র মহিলার মুখের এক্সপ্রেশন দেখেই বুঝা যাচ্ছে নিষ্প্রভ ইলিয়াস মির্জা কে না করে দিলো তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন কিন্তু তার সরল বাবা তো আর জানেন না।মহিলাটা একদম তার বাবাকে বশ করে নিয়েছে।বাবাও উনার কথা উঠে আর বসে, হবেই না কেন বুড়ো বয়সে অল্পবয়সী বউ বলে কথা।
____________
আজ মির্জা বাড়ির পার্টি। বান্ধবী আশার কথা অনুযায়ী তানিয়া বেগম তুরকে ওই বাড়িতে নিয়ে যেতে উঠে পড়ে লেগেছে।তুরের এক কথা সে কিছুতেই যাবে না,আর না করবে ওই আফসান নামক চরিত্রহীন ছেলেকে বিয়ে। অবশেষে তানিয়া বেগম মেয়ের কাছে হার মেনে বললেন,
‘দেখ মা আমি ওদের কথা দিয়েছি। তবুও তুই বিয়ে করতে না চাইলে আমি জোর করবো না।তবে তুই আজকে পার্টিতে চল।তুই তো একা যাবি না,আমিও যাবো।তুরফাও যেতো কিন্তু বাড়িতে একজনকে থাকতে হবে আজ তোর বাবা আসছে। আমার এই কথাটা রাখ।’
মায়ের কথায় তুরের মনে গলে যায়।সে যেতে রাজি হয় তবে শর্ত দেয় বেশিক্ষণ থাকবে না।তানিয়া বেগম ও সায় দেয় কারণ ও বাড়িতে নিয়ে যাওয়াটা তার কাজ আর বাকি সব কাজ তো আশার।
তানিয়া বেগম তুরের একটা কালো রঙের জামদানি শাড়ি পড়ে দিলেন।মুখে হালকা মেকআপ,চোখে কাজল, ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক আর কোমড় অবধি চুল গুলো ছড়িয়ে দেওয়া। মাশাআল্লাহ এতেই কি সুন্দর লাগছে তুরকে।ফর্সা গায়ে কালো রঙের শাড়িটাও বেশ মানিয়েছে।তুর শুধু বিরক্ত বোধ করছে কারণ সে শাড়ি টাড়ি পড়তে চায় নি।মা তাকে জোড় করে পড়ে দিয়েছে।যেখানে যেতেই চায় না,ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছে সেখানে এতো রঙ চঙ মেখে ঢঙ করতে যাওয়াটা তারজন্য এক প্রকার জুলুম।
___________
সন্ধ্যায় পর্টিতে সবাই উপস্থিত। অপেক্ষায় ছিলো পার্টির আসল আর্কষণ তুরের জন্য। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তুর তানিয়া বেগমের সাথে উপস্থিত হয়। ইলিয়াস মির্জা ও আশা বেগমনের সাথে কুশল বিনিময় করেন।এক পলক তির্যক চোখে আফসানের দিকে তাকায় কিন্তু আফসান নির্বিকার ভাবে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে যা তুরের সব চেয়ে বড় সন্দেহর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আফসান কিছু একটা কারণ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।রুমে আগে থেকে তার ইশারায় কয়জন কাছের বন্ধু উপস্থিত ছিলো।আফসানের উপস্থিত বুজতে পেরেই একজন বলে উঠলো,
‘শালা মা*লটা তো দেখার মতো।’
‘আরে দেখার মতো না হলে কি আমাদের আফসান বিয়ে করতে মত দেয়।’
আফসান বন্ধুর কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
‘ঠিক বলছিস! যেমন রূপের তেজ ঠিক তেমনি শরীরের ও তেজ।এর সাথে খেলতে মজা পাবো।ইচ্ছায় কোনো জিনিস পাওয়ার থেকে জোর করে পাওয়ার মজাই আলাদা।এর এতো তেজ বলেই আমার পছন্দ নয়তো কোন দিন বেডে তুলে ছুড়ে ফেলতাম কিন্তু না একে আমার চাই যতক্ষণ অবধি তেজ না কমাতে পারি।’
‘চালিয়ে যা বন্ধু।’
‘সেটাই হোক শোন তোদের কাজ বুজিয়ে দেই।’
আফসান বলতে শুরু করল।তার বন্ধুরা সব মনযোগ সহকারে শুনে বলল কাজ হয়ে যাবে চিন্তা করিস না।তুই শুধু সঠিক সময়ে চলে আসিস।
আফসান বলল,
‘আসার আগে আমি ফোনে মেসেজ দিবো চেক করিস বুঝলি।’
‘ওকে।’
__________
তুর একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। তানিয়া বেগম বান্ধবী আশার সাথে গল্পে মশগুল। হঠাৎ করে একটা লোকের তুরের পাশ দিয়ে যাবার সময় ধাক্কা লাগে। ফলস্বরূপ লোকটার হাতে রাখা জুসের গ্লাস তুরের উপর পড়ে যায়।বুকের উপর আঁচলার কাছে বেশ খানিকটা জায়গা ভিজে যায়।লোকটি সরি বলে,তবে এতোক্ষণে যা হবার তা তো হয়েই গেছে।লোকটি বলে,
‘সরি ম্যাম! আমি বুঝতে পারি নি।আপনি বরং আমার সাথে আসুন আমি আপনাকে রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।আপনি হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নেন।’
তুর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ভেজা আঁচলটা কুঁচকে গেছে।লোকটা ঠিক বলেছে,এ অবস্থায় সবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।তুর ইতস্তত হয়ে বলল,
‘চলুন।’
লোকটি তুরকে একটা রুমে নিয়ে আসে।ড্রেসিং টেবিল দেখিয়ে দিয়ে বলে,
‘প্রয়োজনীয় জিনিস সব ওখানেই আছে।’
বলেই লোকটি চলে যায়। কিছুক্ষণ পরেই পুরো বাড়িটা অন্ধকার হয়ে যায়। তুর এভাবে অচেনা জায়গায় একা একটা রুমে বেশ ভয় পায়। সে খেয়াল করে অন্ধকার এই রুমে সে ব্যাতিত আরও একজনের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ বুঝা যাচ্ছে।এদিকে তুরের শাড়ির আঁচলটা হাতে,তুলতেও জেনো ভুলে গেছে।ঠিক তখনি রুমের দরজাটা বাহিরে থেকে লক করার শব্দ কানে আসে।এবার জেনো তুর পুরো পুরি স্তব্ধ হয়ে যায়।হাত পা কাঁপতে শুরু করে সাথে শরীর ও ঘামতে শুরু করছে।পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে মনে হচ্ছে এই বুঝি সেন্সলেস হয়ে যাবে।শরীর ছেড়ে দেওয়ার আগেই নিজের কোমড়ে পুরুষালী হাতের স্পর্শ পায়।
‘এবার কি হবে তার?’
চলমান।