মেঘ বরাবর ই খুব অভিমানি। অল্পতেই কান্না করে দেয়।। রাত ১০ টা বেজে গেছে এখনও মুখ ফুলিয়ে রুমে বসে আছে মেয়েটা৷ সারাদিন খাওয়া নেই।
তড়িঘড়ি করে তানভির বাড়িতে ঢুকে৷ এসেই মাকে জিজ্ঞেস করে, “মেঘ খেয়েছে?”
হালিমা খান সহসা উত্তর দিলেন, ” সন্ধ্যার পর থেকে এত ডাকছি দরজায় তো খোলছে না।”
তানভির আর কথা বাড়ালো না তড়িৎগতিতে ছুটে গেলো বোনের দরজার সামনে, প্রথমে আস্তে করে ডাকলো৷ মেঘের সারা নেই, আচমকা চোয়াল শক্ত করে একপ্রকার চিৎকার দিলো,
‘মেঘ তুই এই মুহুর্তে দরজা না খুললে তোর কপালে শ*নি আছে বলে দিলাম।’
মেঘ শুয়া থেকে এক লাফে উঠে বসলো। কয়েক সেকেন্ডে দৌড়ে গিয়ে দরজা টা খুললো। চোখ তুলে তাকানোর সাহস নেই ভাইয়ের দিকে। আজ পর্যন্ত তানভির মেঘের গায়ে হাত তুলে নি শুধু ধ*মক ই দেয়৷
কিন্তু ভাইকে এক বিন্দু বিশ্বাস করে না মেঘ। কখন আবির ভাইয়ের মতো নাক মুখে মারবে থা*প্পড় বিশ্বাস নেই।
দরজা খুলতেই নরম স্বরে তানভির বললো, ‘খেতে যা’
“মেঘ তানভিরের এত নরম স্বর কোনোদিন শুনে নি,ভাবতেই পারছে ভাইয়া তাকে এত ভালোবেসে খেতে বলছে।”
তানভির: খাওয়া শেষ হলে তোর ফোন টা দিস, তোকে একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিব।
তানভিরের এমন কথায় মেঘ আহাম্মক বনে গেলো । তানভির ভাই বরাবর ই এরকম। নিজেই ঝাড়বে তারপর নিজেই আদর করবে, এটা সেটা কিনে আনবে মেঘের জন্য। কিন্তু আজকের বিষয় টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এত নরম স্বর কখনো শুনেনি এর আগে।
নিমিষেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো মেঘের।
খাবার টেবিলে বসে আপন মনে খাচ্ছে মেঘ, আজকে তার পছন্দের অনেক রেসিপি আছে, একটু একটু করে সব চেক করছে। কিন্তু রাগে ফুঁসফুস করছে মেঘের আম্মু হালিমা খান।
হালিমা খান: “সন্ধ্যা থেকে যে তোকে এতবার ডাকতে গেলাম বের হলি না কেন? ঠিক ই ভাইয়ের ভয়ে বের হয়ে আসলি। আমাকে কেনো কষ্ট দেস। তোকে কে কি বলে দুই দিন পর পর না খেয়ে পরে থাকিস। কিছুদিন পরে যে এডমিশন৷ না খেলে পড়বি কিভাবে, আর না পড়লে ভর্তি হবি কিভাবে।
তুই ও তোর ভাইয়ের মতো হচ্ছিস, সে সারাদিন ভন্ডের মতো টুইটুই করে ঘুরে আর তুই ও এখন তার ভাব নিচ্ছিস। খেয়ে না খেয়ে রুমে পরে থাকিস।
আর শুন মেয়ে মানুষের এত রাগ জেদ ভালো না, তোর এই রাগ জেদ সামলানোর জন্য আমরা সারাজীবন তোর পাশে থাকবো না । ”
এতটুকু বলতেই চোখ পরে ড্রয়িং রুমে দাঁড়ানো আবিরের দিকে।
আবিরের চাউনিতে পরিষ্কার রু*ষ্টতা, শ্যামবর্ণের মুখমন্ডল কালো দেখাচ্ছে, ক*ড়া কন্ঠে মামনির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কি হয়েছে?”
পুরুষালি কন্ঠে আঁতকে উঠে মেঘ।
হালিমা খান গলা নামিয়ে উত্তর দিলো, “খায় না ঠিক মতো, পড়াশোনা করে না কি করবো ওকে নিয়ে”
আবির পূর্বের অভিব্যক্তি বজায় রেখে উত্তর দিলো,
“ওকে কিছু বলো না, কাল থেকে মেঘ টাইম টু টাইম খাবে, একটু এদিক সেদিক হলে সেটা আমি দেখবো।”
আবিরের কথায় খুশি হয়ে গেলো হালিমা খান।।
কিন্তু মেঘ খুশি হবে নাকি ভয় পাবে তা বুঝে উঠতে পারলো না৷ এতবছরে অভিমান করে মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকলে তানভির এসে ধমকে বা বুঝিয়ে খাওয়াতো এখন সেই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে আরও একজন। ২ জন মিলে মেঘ কে শাসন করবে ভাবতেই মেঘের বুক কেঁপে উঠে আবার মনের মধ্যে অন্য রকম প্রশান্তিও কাজ করে মেঘের।। আবির ভাই এর মূল্যবান সময়ের মধ্যে ৫ মিনিট সময় যে মেঘ কে নিয়ে ভাববে এতেই খুশি খুশি লাগছে মেঘের।
তৎক্ষণাৎ মনে হয়ে গেলো তানভির ভাইয়া বলেছে ফেসবুক আইডি খুলে দিবে, তাড়াতাড়ি খেয়ে রুমের দিকে ছুটলো মেঘ৷
রুম থেকে ফোন নিয়ে ছুটে গেলো তানভির ভাইয়ার রুমে কিন্তু তানভির ভাইয়া রুমে নেই।। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো কিন্তু কোথাও নেই।
মোবাইল নিয়ে নিজের রুমে ঢুকতে যাবে হঠাৎ শুনতে পেলো তানভিরের কন্ঠ। কিন্তু কোথায় আছে
বাধ্য হয়ে মেঘ জোরে ডাক দিলো, “ভাইয়া!”
তানভির পাশের রুম থেকে উত্তর দিলো, “আবির ভাইয়ার রুমে আমি, আয়।”
আবির ভাই নাম টা শুনেই মেঘের বুকটা হুহু করে উঠে চিন্তায়, নিজেকে নিজে সাহস দেয়ার চেষ্টা করলো । তারপর গুটিগুটি পায়ে হেঁটে দরজায় দাঁড়ালো।
তানভির: ভেতরে আয়
মেঘ: মেবাইল টা দিয়ে যায়, তুমি কাজ করো।
তানভির: আরে ভেতরে আয়। বস তুই, তোকেও দরকার লাগবে।
মেঘ আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খাটের কর্ণারে বসলো।
আবির নেই রুমে, ওয়াশরুমে আছে মনে হয়৷
তানভির ফোন নিয়ে কি যেনো করছে, তখন ই ওয়াশরুম থেকে বের হলো আবির
মেঘের দৃষ্টি পরে সেদিকে,
একটা ছাই রঙের টিশার্ট আর একটা ব্ল্যাক টাওজার, ভেজা চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে। শরীরের টিশার্ট টা অনেকটায় ভিজে গেছে।৷
মেঘ টেনে হিঁচড়ে দৃষ্টি নামিয়ে আনলো, মনে মনে ভাবছে,
একটা মানুষ এত কিউট কিভাবে হয়,যদি পারতাম আমার পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখতাম, সারাদিন পড়তাম আর দেখতাম। তাহলে আমার মন কখনোই খারাপ হতো না!লোকটা ফর্সা নন, শ্যামলা গায়ের রঙ কিন্তু দেখতে মারা*ত্মক সুন্দর। সবচেয়ে মারা*ত্মক ওনার লুক, তাকানোর স্টাইল।
উফ,যতবার দেখছি ততবার ই নতুন করে ক্রাশ খাচ্ছি!
আবির ভাই খাটের অপর পাশে মোবাইল হাতে নিয়ে বসেছেন।
তানভির ভাইয়া মোবাইলে ফেসবুক অপশনে ক্রিয়েট নিউ একাউন্ট এ ঢুকতেই তানভির ভাইয়ার ফোনে কল আসে। দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে কথা বলা শুরু করে। ওমনি মেঘের মেবাইলটা আবিরের হাতে দিয়ে বলে ভাইয়া তুমি ওরে একাউন্ট টা খুলে দাও আমার গুরুত্বপূর্ণ কল আসছে। এই বলে মোবাইল রেখে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন।
মেঘ বসে আছে চুপচাপ, মুখ তুলে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না। বুকটা এখনও ধুকপুক করছে।
আবির মেঘের মোবাইলে নিজের মতো করে ফেসবুক একাউন্ট খুলছে, জন্মতারিখ, সাল,নাম কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করছে না ওনি। সবকাজ শেষ করে ফোনটা এগিয়ে দিলেন মেঘের দিকে৷
তখনি রুমে ঢুকলো তানভির।
সহসা বলে উঠলো, শেষ?
এই বলে ফোন টা নিজের হাতে নিলো।।
ফেসবুকে ঢুকে তানভিরের আইডি টা খোঁজে রিকুয়েষ্ট পাঠালো,
আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ” ভাইয়া তোমাকে রিকুয়েষ্ট দেয়, এক্সেপ্ট করো নাকি!”
আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো, “আমায় রিকুয়েষ্ট দিতে হবে না। ”
তানভির কথায় পাত্তা না দিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর বললো, “ভাইয়া তোমায় রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছি। Accept করে নিও৷ না হলে আমার ছোট্ট বোনটা কষ্ট পাবে।”
আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানভিরের দিকে।
মেঘ মনে মনে খুশিই হলো ভাইয়ের কথায়, মেঘের তো কখনো সাহস ই হতো না আবির ভাই কে রিকু*য়েষ্ট দেয়ার বা এক্সে*প্ট করার কথা বলার।
তানভির সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে, মেঘের হাতে ফোন দিয়ে বললো, তুই এখন যা, আমি আর ভাইয়া এক্সেপ্ট করে নিবো। তুই কি করিস না করিস সব নজরে রাখবো কিন্তু।
মেঘ কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করেই রুমে চলে আসলো মোবাইল নিয়ে।
মেঘ রুমে এসে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে ঢুকতেই নজরে পরলো,
‘Sazzadul Khan Abir’ Accept your friend request.
মেঘ শুয়া থেকে উঠে বসে, মেঘের খুশি দেখে কে, Friendlist এ একমাত্র ফ্রেন্ড সেটায় আবির ভাই। তার একটা স্ক্রিনশট রেখে দিল মেঘ।
তার ৫ মিনিট পর এক্সে*প্ট করলো তানভির ভাই।
আবির ভাইয়ার আইডিতে ঢুকলো, প্রোফাইল পিকটা নতুন কেনা বাইকে বসা, “একদম ওয়াও।”
কভার ফটো সবুজ ঘাসের মাঝে বাইক টা রাখা তার সামনে বাইকে হেলান দিয়ে বসা আবির ভাই, ছবিটা “ওহ মাই গড, ওয়াও!”
সবগুলো ছবি দেখে দেখে ডাউনলোড করছে মেঘ। যত দেখছে ততই পাগ*ল হয়ে যাচ্ছে মেয়ে টা।মনে হয় পাবনা যেতে বেশিদিন লাগবে না। তারপর মোবাইল রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলো, চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে আসছে একটার পর একটা স্টাই*লিশ ছবি। কখন যেনো ঘুমিয়ে পরেছে মেয়েটা।
★★★
আজ শনিবার, আবিরের অফিসে যাওয়ার দিন। সকাল সকাল উঠে শাওয়ার নিয়ে ফিটফাট হয়ে রেডি হয়ে পরেছে আবির। ৭.৩০ বাজে মাত্র ।
নিজের রুম থেকে বের হয়ে করিডোর দিয়ে দ্রুত হাঁটছে হঠাৎ মেঘের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দরজায় ডাক দেয়,
২ বার ডাকতেই ঘুমন্ত মেঘ, ঘুমে টলতে টলতে দরজা খুলে, সামনে দাড়িয়ে আছে আবির ভাই। নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস ই করতে পারছে না, প্রথমে ভেবেছে এটা স্বপ্ন, তারপর এদিক সেদিক তাকিয়ে বুঝলো এটা বাস্তব। আচমকা এইভাবে আবিরকে দাঁড়ানো দেখে ভ্যাবাচেকা খেল মেয়েটা। মেঘের চেহারায় নিদ্রিত ভাবটা লেপ্টে আছে এখনও। আবির পূর্ণ দৃষ্টিতে পরখ করলো অষ্টাদশী রাঙা মুখবিবর তারপর চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
” ৫ মিনিটের মধ্যে খেতে আয় ”
পুনরায় দ্রুতগতিতে হাঁটা দিলো।
আবিরের অযাচিত উপস্থিতি নাড়িয়ে দিয়েছে মেঘের মস্তিষ্ক। হঠাৎ মনে পরে গেলো ৫ মিনিটে নিচে যেতে হবে। তৎক্ষনাৎ ছুটলো ওয়াশরুমে।৷ ৫ মিনিটের মধ্যে নিচে উপস্থিত হলো মেঘ৷
এই সময় মেঘকে খাবার টেবিলে দেখে অবাক হলো সকলে, ২ বছর যাবৎ মেয়েটা সকালে সবার সাথে খায় না, প্রাইভেট থাকলে আগে খায় না হয় সবাই অফিস বা স্কুলে চলে গেলে তারপর খেয়ে কলেজে যায়।
হালিমা খান ছুটে আসলেন মেয়ের দিকে,” আয় আয় বস মা, কি খাবি বল!”
টেবিলের কাছে আসতেই দেখলো একটা চেয়ার ই ফাঁকা আছে সেটা আবার আবির ভাইয়ের বিপরীতে। কিন্তু এখানে বসার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই তার। কারণ আবিরের আশেপাশে থাকলে মেঘ কেমন একটা ঘোরে থাকে। মন,মস্তিষ্ক সব যেনো আবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু কিছু করার নেই। বাধ্য হয়ে বসতে হলো এই চেয়ারে।
আবির মাথা নিচু করে মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে, মেঘ তখন ঘুমে টলতে টলতে আবির কে দেখেছিল রাজপুত্রের মতো, কিন্তু এখন আর সে তাকাতে পারছে না। শীর্ণ বক্ষ ধরফর করছে মেঘের, মনে মনে খুব করে চাচ্ছে একটু তাকিয়ে আবিরকে দেখতে। কিন্তু মনে হচ্ছে কিছু একটা মাথায় চেপে বসে আছে, মুখ টায় তুলতে পারছে না।
আলী আহমদ খান হঠাৎ বলে উঠলেন, ‘মেঘ মা আজ থেকে তোমার নতুন টিউটর আসবে। সারাদিন তে তুমি বাহিরে থাকবে তাই তাকে সন্ধ্যার পর আসতে বলেছি। ”
মেঘ চুপচাপ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করছে, বুকের ভেতর যে ঝড় তুফান চলছে তা যেনো কেউ বুঝতে না পারে।
আবির সবার আগে খাবার শেষ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে। আবিরের পেছন পেছন আলী আহমদ খান, মোজাম্মেল খান ও ইকবাল খান ও চলে গেলেন।
ইকবাল খান আগেই অফিসে জানিয়ে দিয়েছে অফিস যেনো সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে,
আবির অফিসের সামনে এসে বাইক পার্ক করে অফিসে ঢুকতে গেলে সিকিউ*রিটি গা*র্ড বলে উঠেন, স্যার আপনার একটু বসতে হবে, বড় স্যাররা না আসলে আপনি ভেতরে যেতে পারবেন না।
আবিরের পায়ের র*ক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। রা*গে কটমট করতে করতে ওয়েটিং রুমে বসে আছে সে।
১০ মিনিটের মধ্যেই অফিসে ঢুকলেন তিন ভাই। আবির তখনও বসেই আছে।
কিছুক্ষণ পর সিকিউ*রিটি গা*র্ড এসে ডাকলেন,
“স্যার আপনাকে ভেতরে যেতে বলেছে!”
আবির নি*র্ভীক ভঙ্গিতে হেটে ভেতরে চলে গেলো।
অফিসের ভেতরে ফুল দিয়ে সাজানো, ঢুকতেই সবাই হাততালি দিয়ে কংগ্রাচুলেশন জানচ্ছে আবিরকে। দুএকজন ছবি তুলায় ব্যস্ত।
বাবা – চাচা তিন জন আর আবির মিলে একটা কেক ও কাটলো। তিন ভাইয়ের তো আজকে খুশির দিন। বংশের বড় ছেলে তাদের কোম্পানির হাল ধরতে যাচ্ছে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কি আছে। তানভিরের মতে আবির যদি মুখের উপর বলে দিতো আমি ব্যবসা সামলাবো না তখন তো কিছুই করার ছিল না। আবির যেহেতু মেনে নিয়েছে এতেই হবে।
ঘন্টাখানেক হলো আবির অফিসে এসেছে। এরমধ্যে চাচ্চু ইকবাল খান ভাতিজাকে সব কাজ কর্ম বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত। অন্যদিকে আলী আহমদ খান এবং মোজাম্মেল খান আজ আড্ডায় মগ্ন।। তাদের মাথা থেকে সব চাপ চলে গেছে। দুই ভাই মিলে চা খাচ্ছে, খুনশুটি করছে। এত বছরের ব্যবসায়িক জীবনের অবসানের সময় এসেছে এবার।
সারাদিন আবিরের ব্যস্ততায় কাটে, প্রথম দিনের অফিস, দায়িত্ব বুঝে নেওয়া বিশাল চাপ। মাঝখানে একবার সময় করে বাবা চাচাদের সাথে তুলা একটা ছবি ফেস*বুকে শেয়ার ও করেছিল। ৬ টায় বাসায় ফিরেছে আবির। এসেই সোজা রুমে চলে গেছে, শাওয়ার নিয়ে রেস্ট নিচ্ছে। হয়তো ঘুমিয়ে পরেছিল।দূর স্বপ্নই দেখলো কি না আচমকা উঠে বসলো বিছানায়।
আবিরের চোখে-মুখে উদ্বেগ স্পষ্ট। তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসলো।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক, মালিহা খান এবং হালিমা খান কাজে ব্যস্ত। আদির আম্মু আদিকে নিয়ে পড়াতে বসেছেন। মীম ও হয়তো পড়ছে নিজের রুমে । কয়েক মুহুর্ত সোফায় বসে আবার উঠে রান্নাঘরের দিকে গেলো।
হালিমা খানের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “মেঘ কোথায় মামনি?”
মেঘের টিউটর এসেছে, পড়ার ঘরে পড়াচ্ছে।
আবিরঃ ওহ আচ্ছা। আমায় একটু কফি করে দিতে পারবে?
হালিমা খান: একটু অপেক্ষা করো বাবা এখনি দিচ্ছি।
আবির ছোট বেলা থেকেই নিজের মা মালিহা খানকে আম্মু, তানভিরের আম্মুকে মামনি আর আদির আম্মু কে কাকিয়া ডেকে অভ্যস্ত। এত বছরেও তার ডাকে পূর্বের ন্যায় মিষ্টতা মিশে আছে।
সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর মোবাইল ঘাটাঘাটি করছে। ২০ মিনিট পর পড়ার রুম থেকে বের হলো একটা ছেলে বয়স হয়তো ২২-২৩ হবে। ৫.৭-৮ হবে লম্বা, চোখে চশমা। হালিমা খানকে বললো,
“আন্টি আজ আসি আবার কাল আসবো”
হালিমা খান ও হাসি মুখে বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।”
এদিকে আবিরের কোমলতা পাল্টে গেলো, চটে গেল ভীষণ, সবেগে ঘু*ষি বসাল সোফার পাশের দেয়ালে, আবিরের চোখ আগুনের মতো লাল হয়ে গেছে। একমুহূর্ত বসলে না, সোজা উঠে ধপধপ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
চলবে……
#আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে
#লেখনীতে_সালমা_চৌধুরী
#পর্বঃ০৬
📌কপি করা নিষেধ । শেয়ার করলে পেইজ ম্যানশন করবেন।