#স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর
#লেখা_চাঁদনী_ইসলাম
#পর্ব_৩২
নিরু ভোর রাতে আনাস মোল্লার ঘরে গিয়ে আনাস মোল্লাকে ঘুম থেকে তুলে বেরিয়ে আসে।আনাস মোল্লা অনেক প্রশ্ন করে, নিরু কাঁদতে কাঁদতে বলে সব পরে বলবে এখনই যেন বের হয়।আনাস মোল্লা নিরুকে থামানোর চেষ্টা করে। আজিজুল হকের সাথে দেখা করে যাওয়ার কথা বলে, কিন্তু নিরু অস্থির হয়ে আনাস মোল্লাকে নিয়ে বের হয়ে আসে।
ভোরের দিকে ট্রেন থাকায় স্টেশনে এসে বসে।নিরু স্টেশনে বসে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে।আনাস মোল্লা নিরুর পাশে বসে নিরুকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?কিন্তু নিরু কোন কথা বলল না। আনাস মোল্লা বুঝতে পারছে বড়সড় কিছু হয়েছে। আনাস মোল্লার ধারণা ভুল নয়।নিরুকে পথের মধ্যে এখন আর ঘাটালো না,বাড়ি গিয়ে আনাস মোল্লা সব ঠিক করে দিবেন।নিরুর মাথায় হাত রেখে আনাস মোল্লা বসে রইলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন চলে এলো,ট্রেনে উঠবে তখনই আনাস মোল্লার ফোন বেজে উঠলো। ভোরে স্টেশনে এসে কাউন্টারে টিকিটের খোঁজ করে টিকিট পেয়েছিলো।নিজেদের সিটে গিয়ে বসে ফোন বের করে দেখে, আজিজুল হক কল দিয়েছেন।আনাস মোল্লা কল ব্যাক করতে চাইলে,নিরু কল ব্যাক করতে দিলো না। ফোনটা নিজের কাছে রেখে দিলো।তারপর সিটে পিঠ এলিয়ে দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে রইল। চোখ জোড়াতে কি ভয়ানক যন্ত্রণা, এই চোখ জোড়া আসাদ দেখলে অস্থির হয়ে যেতো।নিরু চোখের পানি মুছে নাক টেনে পা দুটো সিটে উঠিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে রইল। এখনো কথা গুলো নিরুর কানে বাজছে, ‘সংসার জ্বালিয়ে দেবো আমি, তবুও বাবা মা হারানো কপালপোড়া কোন মেয়েকে ছেলের বউ করবো না।’
‘আমি কোন এতিম মেয়েকে আমার ঘরের বউ বানিয়ে আনবো না।’
নিরু চোখের টলোমলো অশ্রুধারা নিয়ে মুখে কয়েকবার আওড়ালো, ‘এতিম!’
নিরুর অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়া এই মুহূর্তে আসাদের অবয়বটা হাতড়ে মরছে।সৃষ্টিকর্তার কাছে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, “আমাকে এতিম না বানিয়ে,আমার বাবা মাকে রেখে আমাকে কেন উঠিয়ে নিলে না।এই পৃথিবীতে সন্তান হারা বাবা মায়ের কিছু হয় না।সমাজের কথার জালে নিঃশেষ হতে হয় না। কিন্তু একজন বাবা মা হারানো সন্তান এই সমাজের বোঝা,মানুষের চোখে কপালপোড়া।”
আনাস মোল্লা বাড়ি পৌছিয়ে নিরুকে আগে গোসলে যেতে বলেন।নিরু গোসল থেকে বের হতে হতে আনাস মোল্লা হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে নেয়।নিরু বের হয়ে দেখে আনাস মোল্লা টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছেন।আনাস মোল্লা নিরুকে টেবিলে বসতে বলেন।
“দাদু আমার একদম খিদে নেই,তুমি খেয়ে নাও।”
“আমার খুব খিদে পেয়েছে,তুমি খেতে না বসলে আমার খাওয়া হবে না। ”
নিরু হাতে থাকা তোয়ালেটা চেয়ারে রেখে দাদুর পাশের চেয়ারে বসে।নিরু আনাস মোল্লাকে ভাত বেড়ে দেয়।আনাস মোল্লা নিজের প্লেটে তরকারি তুলে নিয়ে নিরুর প্লেটেও তুলে দেয়।নিরুর বুকের মধ্যে অসহ্য রকম যন্ত্রণা হচ্ছে।বুকটা ধড়ফড় করে কেপে উঠছে।ভাত মুখে তুলতে ইচ্ছে করছে না।
“খাচ্ছো না কেন দাদুভাই?”
মুখের ভাত উঠানোর আগেই নিরু শব্দ করে কেদে উঠলো। আনাস মোল্লা আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। চেয়ার থেকে উঠে নিরুর পাশে দাঁড়িয়ে নিরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “কি সমস্যা হয়েছে আমাকে না বললে সমাধান করবো কীভাবে দাদুভাই।”
নিরু আনাস মোল্লার পেট জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।আনাস মোল্লা নিরুর মাথায় হাত রেখেই বললেন, “খাবার সামনে নিয়ে কান্না করতে হয় না দাদুভাই।”
আনাস মোল্লা খাবার গুলো ঢেকে রেখে নিরুকে নিয়ে সোফায় বসলেন।তারপর বললেন, “আজিজুল কিছু বলেছে?”
নিরু নাক টেনে মাথা নাড়িয়ে না বলল।আনাস মোল্লা আবার বললেন, “তাহলে কি হয়েছে।আমাকে বলো,আমার টেনশন হচ্ছে দাদুভাই।”
নিরু কিছু কিছু কথা আনাস মোল্লাকে বললো,সবটা জেনে গেছে,আসাদকে মাহিয়ার সাথে বিয়ে দেবে।আনাস মোল্লা নিরুর মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “এইটুকুতে এইভাবে কেউ কান্না করে পাগলি,আমি আজিজুলের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে দিচ্ছি।”
“কিছু ঠিক হবে না দাদুভাই।এতিমদের কপালপোড়া, তাদের সঙ্গে যারা থাকবে সবার কপাল পুড়বে।তুমি এইসব নিয়ে কোন কথা বলো না।”
“নিরু এইসব কী ধরনের কথা,আমি বেঁচে থাকতে তুমি এতিম?”
“দাদুভাই আমি তো এতিম-ই!”
নিরুর চোখ দু’টো দিয়ে অনবরত জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে।গাল দুটো যত মুছছে, তত জলে ভিজে যাচ্ছে।আনাস মোল্লা বুঝতে পারছেন নিরু বড় কোন ধাক্কা পেয়েছে।তা না হলে এইভাবে ভেঙে পড়তো না।
নিরু ঘুমালে আনাস মোল্লা আজিজুল হককে অনেক রাতে ফোন দিলেন।আজিজুল হক সাথে সাথেই কল ধরলেন।
“হ্যালো আজিজুল!”
“চাচা আপনি কোথায়?আমার ফোন ধরছিলেন না কেন?”
“বাবা আমরা বাড়ি চলে এসেছি।নিরুর মানসিক অবস্থা ভালো না।কি হয়েছে বলো দেখি,আমাকে ভোর রাতেই বের করে আনলো।”
“চাচা আসাদ আসলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো, আপনি নিরু মা’কে দেখে রাখবেন।”
“আমার নাতনি আমাকে তো দেখে রাখতে হবে বাবা,কিন্তু নিরু এতো ভেঙে পড়লো কেন?তোমারাই তো নিরুকে বড় করে তুলেছো,নিরু কত নরম জানো।আমার নাতনিটাকে এইভাবে ভেঙে পড়তে দেখে আমার কেমন লাগছে বুঝতে পারছো?”
“চাচা আমি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে নিরুকে দেখতে আসবো।মেয়েটা তো আমাদেরও চাচা।”
“তোমাদের মেয়ে হলে আমার নাতনিকে আজ এই অবস্থায় দেখতে হতো না আজিজুল। নিরুকে এতিম কে বলেছে?
আজিজুল হকের বুকটা চিনচিন করে উঠলো, “নিরু কি সব কথা শুনেছিলো তাহলে?”
আজিজুল তুমি আর আমিনা বুঝে সিদ্ধান্ত নাও,ছেলে মেয়ে দুটোকে যেন কষ্ট পেতে না দেখি।তোমার উপর প্রত্যাশা আছে।
আসাদ এই তিন মাসে অনেকবার কল দিয়েছে,নিরু দুইদিন কল রিসিভ করে আসাদের কন্ঠ শুনে কান্না করে দিয়েছে।আসাদের জন্য মন খারাপ হচ্ছে বলে কান্না করছে, এইটাই আসাদকে বুঝিয়েছে।কিন্তু আসাদ বিশ্বাস করেনি বার বার জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে?কথাও হয় খুব কম, দুই এক মিনিট করে।
তারপর থেকে নিরু আনাস মোল্লাকে দিয়েই কল গুলো ধরিয়েছে।নিরু জানে আসাদের সাথে কথা বললেই কান্না করে দিবে।আর আসাদ নিরুর কণ্ঠ শুনেই বুঝে যাবে কিছু হয়েছে।আসাদকে ট্রেনিং অবস্থায় অস্থিরতা দিবে না। তাই একেকদিন একেক কথা বলে কাটায়।কোনদিন আনাস মোল্লাকে দিয়ে বলায় নিরু বাড়ি নেই,আরেকদিন বলে নিরু বাথরুমে।নিরুর কণ্ঠটা শোনার জন্য আসাদ অস্থির হয়ে থাকে।
এইভাবেই তিন মাস কাটে,আসাদ কয়েকদিনের জন্য বাড়িতে আসছে।আনাস মোল্লাও প্রায়ই আজিজুল হকের কাছে ফোন দিয়ে এইসব নিয়ে কথা বলেন।
এর মধ্যেই একদিন আনাস মোল্লার ফোনে আমিনা বেগম কল দেন।ভাগ্যক্রমে নিরুই ফোন রিসিভ করে।নিরু ফোন রিসিভ করে বলে,
“কেমন আছো মামানি?”
“তোরা ভালো থাকতে দিচ্ছিস কই? তুই তোর দাদু সবাই উঠে পরে লেগেছিস।আমার ছেলে ছাড়া এই পৃথিবীতে কি কোন ছেলে নেই?”
“আমি কী তোমার সাথে আর কোন কথা বলেছি মামানি?”
“তোর দাদু তো ঘুমাতে দেয় না।তোর মামার ব্রেনওয়াশ করছেই।আমার কথা কি রাখবি না তুই?”
“মামানি আমি তো সব ছেড়েই চলে এসেছি।এমনকি জামাকাপড় কিছু বই খাতা নিতে গেছিলাম, ওই গুলোও নিয়ে আসিনি।আমি আর কখনো ঢাকায় যাচ্ছি না মামানি।”
“তুই আসবিনা এই কথা বলছিস,আমার ছেলে গেলে কি করবি?”
নিরু এবার একটু দৃঢ় গলায় বলল, “আপনি আপনার ছেলেকে সামলাবেন।”
“নিরু আসাদ একরোখা,অবাধ্য এই গুলো তো তুই জানিস?”
“হ্যাঁ জানি মামানি।”
“তুই আসাদের থেকে দূরত্ব তৈরি করে নিবি।”
নিরুর অনেক কথায় জোর দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না কেন? নিজে ঋণী বলে? না মামানির ভালবাসা উপেক্ষা করতে পারছে না বলে?
আমিনা আবারও বললেন, “নিরু একটা ছেলে তার শশুর বাড়ি থেকে কত আদর যত্ন ভক্তি পায়।তোর মামাকে নিয়েই উদাহরণ দিই শোন।তোর মামা বিয়ের পর শশুর বাড়ির ভালবাসা পেয়েছে, আদর, যত্ন পেয়েছে।আমার আম্মা তোর মামার জন্য মোটা মাছের মাথা বাটিতে তুলে রাখতো,তোর মামা পেটি খেতে পছন্দ করে বলে আম্মা মোটা মাছের পেটি গুলো আলাদা করে রাখতো।তোর মামা আমাদের বাড়ি গেলে আম্মা রান্না করে খাওয়াতো।গরুর মাংস ফ্রিজে রেখেই দিতো।মানুষটা কত খুশি হতো,সেই খুশি আমি নিজের চোখে দেখেছি।জামাই ভক্তি সব মানুষ পায় না।আম্মা আব্বা মারা যাওয়ার পর ভাইয়া ভাবি সেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন।এখন পর্যন্ত ইদে তোর মামার জন্য টাকা পাঠায়।এতে তোর মামা খুশি হয়।তোর মামার লোভ নেই,কিন্তু এমন ভালবাসা পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার!এইসব ছোট ছোট খুশি গুলো থেকে, আমার ছেলেকে আমি বঞ্চিত হতে দিতে পারিনা নিরু।”
নিরু কথাগুলো চুপচাপ শুনছে।আমিনা আবারও বললেন, “শুধু ভালবাসা থাকলেই হয় না, চারপাশের কিছু সম্পর্ক ও জীবনে থাকা লাগে।যেগুলো তে আমাদের ক্ষণে ক্ষণে সুখ আর খুশি এনে দেয়।তাই তোর কাছে আবারও অনুরোধ করছি।তুই নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে, আমার ছেলেকে সুন্দর একটা জীবন দে।আসাদ দুই একদিনের মধ্যে বাড়ি আসবে।রাজশাহী যেতে চাইলে নিষেধ করবি।তোর কথা আসাদ শুনবে।আর তোর দাদুকে নিষেধ করবি,তোর মামার সাথে এইসব বিষয়ে কথা বলতে।আমার কথা গুলো রাখিস নিরু।এতোদিন তোকে মায়ের মতো করেই জড়িয়ে রেখেছিলাম।আমাকে ফিরিয়ে দিস না নিরু,অনুরোধ করছি!”
আমিনা বেগম শেষে কেঁদে ফেললেন,নিরু চোখ মুছে মামানিকে আশ্বাস দিয়ে বলল, “তুমি কেঁদো না মামানি,আসাদ ভাইকে আমার কাছে আর আসতে দেবো না।তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।”
নিরু ফোনটা কেটে দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো।এই কষ্ট থেকে নিজেকে কীভাবে বের করবে নিরু?
আনাস মোল্লা নিরুর কান্না শুনে নিরুর ঘরে এলেন,নিরু চোখ মুখে আনাস মোল্লার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, “আমাকে একটা কথা দিতে পারবা দাদু?”
“পারবো দাদুভাই বলো।”
“তুমি আর কখনো মামার কাছে ফোন দিবা না,এমনকি আসাদের সাথেও কথা বলবা না।এই কথা গুলো যদি না রাখো,আমি এখানেও থাকবো না। যেদিকে দু’চোখ যায়,চলে যাবো।”
নিরুর এমন কঠিন কথা শুনে,আনাস মোল্লা আঁতকে উঠলেন।নিরুর কথাতেই সায় দিয়ে চুপচাপ নিজের ঘরে চলে এলেন।
বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে,হাত দিয়ে বুক ডলেও ব্যাথা কমানো যাচ্ছে না। নিরু ফ্লোরেই শুয়ে রইল।চোখের কোণ ঘেঁষে জল গড়িয়ে পরছে।নিরু সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনদিনের মাথায় আনাস মোল্লার ফোনে আসাদের নাম্বার থেকে কল এসেছে। কল এলেই নিরু ছুটে যায়।আসাদের নাম্বারটা দেখলেও শান্তি পাওয়া যায়।নিরু আজ আর ছুটে গেল না।আসাদ একেরপর এক কল দিয়ে যাচ্ছে,না পেরে আনাস মোল্লা নিরুর কাছে ফোনটা দিয়ে গেলেন।কয়েকবার রিং হওয়ার পর নিরু ফোন রিসিভ করলো,রিসিভ করেই আসাদের অস্থির কণ্ঠ শুনতে পেলো।
“আমাকে কি তোর মেরে ফেলার ধান্দা নিরু? আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি আর তোর খোঁজ নেই।আমার সাথে কি শুরু করেছিস?”
আসাদের কণ্ঠ শুনে নিরুর চোখে জল টলোমলো করছে।নিরু টানা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, “এইতো আছি,ঘুম থেকে উঠলাম।”
“আমি কাল রাত থেকে কতবার কল দিয়েছি দেখ?”
“আপনি কেমন আছেন আসাদ ভাই?”
“বুকের মধ্যে পুড়ে যাচ্ছে নিরু,আমি তোকে দেখবো।”
নিরু মুখে আওড়ালো,”আগুন জ্বলছে আমার ভিতর,আর পুড়ছে আপনার বুক?এই বুকটা কেন আমার হলো না আসাদ ভাই?”
“এই নিরু কিছু বল,আমি এখনই রাজশাহী আসবো বের হচ্ছি।”
“এতোটা পথ আসতে হবে না,কাল ট্রেন নেই।আর দাদুর শরীর ভালো না ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো। মেডিকেলে ভর্তি করতে হতে পারে। ”
“দাদুর কী হয়েছে, বলিসনি কেন?”
“বলবো কখন,কথা তো হলো এখন।”
“তুই আমাকে মিস করছিস না কেন বলতো নিরু?”
“কে বলেছে মিস করিনা,আপনাকে সব সময় মিস করি।”
“আমি গাড়ি নিয়ে আসছি নিরু,একটা সেকেন্ড স্থির হয়ে থাকতে পারছি না।”
“ট্রেনিংয়ে কষ্ট হয় না?”
“তা তো একটু হয়ই।”
“বাড়ি এসেছেন বিশ্রাম নেন।ট্রেনিং শেষ করে দেখা হবে।এতো ছুটোছুটি করতে হবে না। ”
“তাহলে ভিডিও কলে আয় দেখি।আমাকে দেখে যেন বকা দিবিনা, একটু চিকন হয়ে গেছি।ট্রেনিংয়ে চাপ পড়ে যায়।আবার ঠিক হয়ে যাবো।”
“ভিডিও কল পরে দেবো আসাদ ভাই।”
“এখনই দিবি,না হয় দেখ এখনই বের হবো।”
অগত্যা আসাদের জেদের কাছে নত হয়ে ভিডিও কলে আসতে হলো।নিরুকে ফোনের স্কিনে দেখামাত্র আসাদ আধশোয়া অবস্থা থেকে তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো, “তুই নিজের কি হাল করেছিস নিরু?তোকে থাপড়াতে ইচ্ছে করছে। ট্রেনিং তুই করেছিস,না আমি করেছি বল?”
“কোন এক ক্ষণে আবার ঠিক হয়ে যাবো আসাদ ভাই।”
“চোখ মুখের কি দশা,তুই নিজের কি হাল করেছিস?আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে নিরু।আমি এখনই আসছি।”
“এসে পাবেন না, বাড়িতে থাকবো না।এতো চিন্তা করবেন না।”
“যে প্রান্তেই থাকিস আমি দেখা করে নেবো।”
“আপনাকে দেখলে আমার আরও কষ্ট হবে আসাদ ভাই।নিজেকে সামলাতে পারবো না,তারচেয়ে দূরে আছেন থাকেন।এতো পুড়তে ভালো লাগছে না।”
“তোকে মিস তো আমিও করি নিরু,তাই বলে নিজের তোর মতো দশা বানিয়েছি বল?আমি আর ট্রেনিংয়ে যাবো না নিরু,কোন ব্যবসা করবো।সীতাকুণ্ডে রেস্টুরেন্ট দিয়ে দুজন ঘর বাঁধবো চল।আমার নিরু আমার জন্য পুড়বে আর আমি নিজের ক্যারিয়ারে মজে থাকবো?”
“আসাদ ভাই আমি ঠিক আছি,আপনাকে আমি ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে দেখতে চাই।”
“মুখে হাসি নিয়ে আয় তাহলে,তোকে এইভাবে দেখতে আমার ভালো লাগছে না নিরু।”
“দাদুকে নিয়ে চিন্তায় আছি।আপনি এতো ভাববেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“তুই ঠিক থাকলে, আমার সব ঠিক থাকবে।”
“আসাদ ভাই আমি যদি না থাকি,সারাজীবন আমাকে মনে রাখবেন?”
“যেখানে আমিই থাকবো না, সেখানে তুই না থাকলে আমি মিস করবো কীভাবে?”
“আপনি অনেক পাগল।”
“এবার একটু হাস প্লিজ!বুকে খরা হয়েছে,পানি দিয়ে খরা বুকে শান্তি দে।কাছে পেলে কি যে করতাম তোকে।”
“চুমু খেতেন?”
“চুমু দিতাম?তোকে থাপড়াতাম।”
নিরু ম্লান হাসলো,দু’চোখ ভরে আসাদকে দেখলো।আসাদ নিরুকে বকতে থাকলো,আর নিরু মুগ্ধ চোখে আসাদের বকা শ্রবণ করলো।
চলবে…