#স্বচ্ছ_প্রেমের_পদ্মপুকুর
#লেখা_চাঁদনী_ইসলাম
#পর্ব_৩৮
শেষ রাত থেকে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে।নিরু বিছানা থেকে নেমে জানালা খুলে দাঁড়ায়।জানালা খুলে দাঁড়াতেই বৃষ্টি আর শীতল বাতাসের ঝাপটে মৃদু কেঁপে উঠে।শেষ রাত থেকেই টিপ টিপ বৃষ্টি এখন দমকা বাতাসের সাথে মোটা মোটা ফোটের বৃষ্টি পড়ছে।নিরু পিছু ফিরে আসাদের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।এমন সুন্দর সকাল নিরু এতো বছর জীবনে দেখেনি।আজকের সকালটা যেন অন্যরকম সুখের সকাল।সাথে আছে নিরুর একান্ত নিজের হওয়া ভালবাসার মানুষ, আর খুব পছন্দের বৃষ্টি। বৃষ্টি নিরুর খুবই পছন্দ,টানা বৃষ্টি হলেও নিরুর বিরক্ত লাগে না। একটানা দশদিন বৃষ্টি হলেও নিরুর আনন্দের সীমা থাকে না।এই প্রিয় মুহূর্তের সাথে এইভাবে যে প্রিয় বৃষ্টিটাও ধরা দিবে নিরু কল্পনাও করেনি।নিরুর ইচ্ছে করছে আসাদের সাথে ভিজতে কিন্তু আসাদের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আসাদকে জাগাতে ইচ্ছে করছে না।নিরুর ঘুম ও আসছে না,বৃষ্টি ঝাপটা বেশি আসছে বলে নিরু জানালাটা বন্ধ করে দিলো।তারপর বিছানায় গিয়ে আসাদের হাতটা সোজা করে টেনে নিয়ে, আসাদের হাতের উপর মাথা রাখলো।পুরোনো দিন গুলো ভেবে কিছুটা মন খারাপও হলো।নিরু একপাশ ফিরে মুখটা উঁচু করে আসাদের গালে চুমু খেলো।আসাদ নড়ে উঠে ঘুম ঘুম চোখে ভ্রু উঁচিয়ে বলল, “সারারাত চুমু খেয়েও তোর হয়নি নিরু,এইভাবে ঘুমন্ত অবুঝ মানুষটাকে নির্যাতন করছিস।”
নিরু ফুসে উঠে বলল, “আমি আপনাকে চুমু খেয়ে নির্যাতন করছি?”
“তা নয় তো কী?সারারাত ঘুমোতে দিসনি।এখনো এতো সুন্দর আবহাওয়ায় ঘুমাতে না দিয়ে, চুমু খেয়ে খেয়ে ঘুম ভেঙে দিচ্ছিস।এইটা নির্যাতন ছাড়া কী?”
“আচ্ছা মস্তিষ্কে গেঁথে নিলাম।পরবর্তীতে আপনি আমার কাছে এসে দেখবেন।”
“এ্যাম্মা আমার বউয়ের কাছে আমি যাবো না? তুই তো দেখছি ভারি ডেঞ্জারাস, বউয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলিস।”
নিরু দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আপনার বউটা কে?”
আসাদ নিরুকে টেনে নিয়ে নিরুর গালে একটা চুমু দিয়ে বলল, “কেন তুই আমার বউ!”
নিরু এবার ক্ষেপে গেল।আসাদের বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসে বলল, “আপনার বউ আমি,চুমুও খাচ্ছি আমি,তাহলে এখানে নির্যাতনটা কে করলো?আর কীভাবেই বা নির্যাতন করা হলো?”
“সব এক সাথেই হবে,কম্বলের মধ্যে আয়।”
নিরু রেগে উঠে বিছানা থেকে নেমে যেতে চায়।তারপর বলে, “আগে যদি জানতাম এমন অসভ্য হবেন,এতো জ্বালাবেন, জীবনে বিয়ে করতাম না।”
আসাদ নিরুকে কম্বলের মধ্যে টেনে নিলো,তারপর নিরুর কাধের কাছে চিবুক রেখে নিরুর কানে ফিসফিস করে বলল, “আমার একটাই বউ,জ্বালাবো,পুড়াবো,আদর করবো,ভালবাসবো।সব আমিই করবো।”
“কিছু করতে পারবেন না আপনি..”
নিরুর কথা শেষ না করতে দিয়ে,আসাদ নিরুর ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে মাথার উপরে কম্বল টেনে নেয়।
দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়ে দুপুরের পর পর মেঘ কেটে যায়।মেঘ কেটে যাওয়ার পর নিরুর চাচা, চাচি আয়েশারা বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।খাদিজা বেগম অসুস্থ বলে নিরুদের বিয়েতে আসেনি।আসাদ গিয়ে নিরুর চাচাদের বাসে তুলে দিয়ে এলো।সুমাইয়ার পরীক্ষা না হলে নিরুর চাচা,চাচী থেকে যেতো।সুমাইয়ার জন্য চলে যেতে হলো।আসাদ নিরুর চাচাদের বাসে তুলে দিয়ে এসে কম্বল মুড়ি দিয়ে আবার ঘুমালো।
বিকেলে মেঘমুক্ত ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশ! স্বচ্ছতা নীড়ের সামনের দিকের বিশাল বারান্দাটায় আজিজুল হক বসে আছেন।আমিনা বেগম দুই কাপ চা বানিয়ে এনে, আজিজুল হককে এক কাপ চা দিলেন,তারপর পাশের চেয়ারটায় বসলেন।আজিজুল হক চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, “নিরু কিন্তু বাড়িটা দুর্দান্ত জায়গায় করেছে বলো।ছুটি পেলে মাঝে মাঝেই আসবো।”
আমিনা বেগম অন্যমনস্ক হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলেন।আজিজুল হক নিজের মতো করে কথা বলে যাচ্ছেন।আমিনা বেগমের হু হ্যাঁ না শুনে, আমিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এই আমিনা তোমার শরীর খারাপ লাগছে?”
আজিজুল হকের কথায় আমিনা সংবিৎ ফিরে পেলেন।তারপর সোজা হয়ে বসে বললেন,”নাহ আমি ঠিক আছি।”
“চুপচাপ হয়ে আছো যে!”
আমিনা বেগম চায়ের কাপটা সেন্টার টেবিলে রেখে আজিজুল হকের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “নিরু কখনো আমাকে মন থেকে ক্ষমা করবে গো?”
“নিরুকে তুমি চেনো না,নিরু কেমন মেয়ে জানো তো।”
“নিরু কেমন জানি বলেই বলছি।নিরু খুবই চাপা ভিতরের কিছু বুঝতেই দিবে না।আমার প্রতি ভিতরে ঘৃণা জমিয়ে রাখেনি তো?”
“নিরু নিজের কষ্ট চাপা রাখে,অন্যের প্রতি ক্ষোভ চাপা রাখে না আমিনা।এইসব নিয়ে ভেবো না তো, গত পরশু দেখলে না কেমন নরমাল হয়ে কথা বলল।”
“নিরু আমাকে ক্ষমা করেনি আমি জানি।”
“নিরু আস্তে আস্তে সব জানবে আমিনা,তুমি অনুশোচনায় পড়ে কি না করোনি।সেই গুলো তো আমি দেখেছি তাই না?একটা সময় নিরুও সবটা জানবে।আর নিরু ভিতরে ঘৃণা আর ক্ষোভ পুষে রাখার মতো মেয়ে নয়।আমরা নিরুকে এইভাবে মানুষ করিনি আমিনা।”
“তারপরও! ”
“তুমি শেষ দেড় বছর পাগলের মতো নিরুকে খুঁজেছো আমিনা।তুমি নিরুকে খুঁজে পাওয়ার জন্য কাতর হয়ে ছিলে।তুমি যেই মানুষ একা কোথাও যাও না।সেই মানুষ ঢাকা থেকে রাজশাহী একা এসে খাদিজার হাত পর্যন্ত চেপে ধরেছো।খাদিজা তোমাকে কোন খোঁজ দেয়নি।বার বার খালি হাতে ফিরে গেছো।নিরুর চাচা চাচিদের কারো সাথে খাদিজা যোগাযোগ করার পথ খোলা রাখেনি।এর জবাব খাদিজাকে একদিন না একদিন দিতে হবে আমিনা।আমি আনাস চাচার কাছে আসার মুখ পেতাম না।তোমার উপর রেগে ছিলাম, তাই তোমার থেকেও বিছিন্ন হয়ে ছিলাম।তুমি একা উম্মাদের মতো নিরুদের কোথায় না খোঁজ করোনি।তুমি যেখানে তোমার নিজের কাছেই অনুতপ্ত! সেখানে নিরু মা কী তোমার উপরে রাগ করে থাকতে পারে বলো?”
আমিনা গুমরে কেঁদে উঠলেন।তারপর কান্না ভেজা গলায় বললেন, আমি নিরুর উপরে কখনো হিংসা করিনি।আমার ভালবাসাটা নিরুর জন্য খাঁটি ছিলো।আমার নিজের মেয়ের মতো করেই ভালবাসা দিয়ে নিরুকে বড় করেছিলাম।আমি নিরুর প্রতি এমন অবিচার কীভাবে করলাম আসাদের আব্বু,তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো তো,নিরু ক্ষমা করবে তো?”
আমিনা একভাবে কেঁদে চলেছেন।সীতাকুণ্ডে এসে বাড়ি ভর্তি মানুষ ছিলো।নিরুই আমিনাকে তখন বেশি কথা বলতে দেয়নি,এইসব বিষয় নিয়ে মানুষের সামনে আলোচনা করে আমিনাকে লোক হাসানোর সম্মুখীন করতে চায়নি।তাই আমিনাকে অল্প কথায় শান্ত করেছিলো।
আসাদ ঘুমাচ্ছে,নিরু মামা মামানির সাথে গল্প করবে বলে বারান্দায় আসছিলো।নিরু আজিজুল হক আর আমিনার আলোচনা আড়াল থেকে শুনতে চায়নি।কিন্তু এই মুহূর্তে সামনেও যেতে পারেনি।নিরুর কানে স্পষ্ট নিরুকে নিয়ে কথা গুলো আসছিলো।যা নিরুর ও জানা দরকার।তাই না চাইতেও কথা গুলো নিরু শুনলো।আমিনা বেগমের চোখ দু’টো দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।আমিনা বেগম নিরুর জন্য এতোটা আকুল হয়ে ছিলেন?এইভাবে খুঁজেছেন?নিরুর যত মন খারাপ সব নিমিষেই উধাও হয়ে গেল।
নিরু এগিয়ে এসে পিছন থেকে আমিনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি তো আমার মা,আমার মা কী কখনো অন্যায় করতে পারে বলো?
এক সন্তানের কথা ভেবে একটা সময় তার ভালোটা ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে,এখানে তোমার ভুল ছিলো না মা।পরে তুমি তোমার আরেক সন্তানের কথা ভেবে আকুল হয়ে তাকে বুকে টানার জন্য মরিয়া হয়ে খুঁজেছো।তুমি তো সেরা মা,তুমি কেনো অনুতপ্ত হবা।
আমার জ্বরে যেই মায়ের হাত আমার কপাল ছুয়ে দিলে আমার জ্বর সেরে যেতো।সেই মা কখনো খারাপ হতে পারে না মা।তুমি তোমার মমতায় বেঁধে আমাকে নতুন জীবন দিয়েছিলে।তুমি নিজের হাতে আমাকে খুন করলেও তোমার প্রতি ঘৃণা, ক্ষোভ, অভিযোগ কোনটাই থাকতো না।তুমি আজীবন আমাকে এই মমতায় বেঁধে রেখো মা।”
নিরু হাউমাউ করে কান্না করছে।আমিনা বেগম চেয়ার থেকে উঠে নিরুর দিকে ঘুরে নিরুকে বুকে জড়িয়ে নেয়।দুজনেই কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। আজিজুল হক উঠে আমিনা আর নিরুকে আগলে নিলেন।আজিজুল হকের চোখেও পানি চলে এসেছে।
আসাদ কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে উঠে এসে এই দৃশ্য দেখে আসাদের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে শান্তি অনুভব করলো।
চলবে…
[ আসসালামু আলাইকুম!
আজকের পর্বটা অনেক ছোট হয়েছে আমি জানি,আমাদের বাড়ির পাশে মাহফিল হচ্ছে। আত্নীয় এসেছে বাড়িতে,চারপাশের শব্দ অনেক।কয়েকদিন পর আমার পরীক্ষা, একাডেমি বই পড়তে হচ্ছে।সব মিলিয়ে আজকের পর্বটা বড় করতে পারলাম না।আমিও একজন পাঠিকা,অপেক্ষা করতে কেমন লাগে আমি বুঝি,তাই ছোট করে হলেও আপনাদের অপেক্ষা না করিয়ে অল্প করে লিখে দিলাম। আর হ্যাঁ পরীক্ষার জন্য সেইভাবে সময় পাচ্ছি না,পড়ার মাঝে মাঝে লিখছি।ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে আমাকে ধরিয়ে দিবেন প্লিজ! ]