#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৬
#ফারিহা_খান_নোরা
একটা পুরুষালি হাত তুরকে পিছনে থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জ’ড়ি’য়ে ধরেছে।একটু আগে নিষ্প্রভ তুরকে গেটের সামনে নামিয়ে দেয়। তখনকার ঘটনার পর থেকে তুর নিষ্প্রভের সাথে লজ্জায় একটা কথাও বলে নি।গেটের ভেতর দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই নজর আটকায় তার দিকে তাকিয়ে থাকা আতিয়ার পানে।তার দিকে এগিয়ে যেতে নিবে তাঁর আগেই এমন একটা বিশ্রী ঘটনার সম্মুখীন হয় তুর।কলজের সবাই তুরের দিকে তাকিয়ে আছে।তুর এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পেছন ফিরে চেনা পরিচিত এক যুবকের উপর চোখ পড়ে।তুর কিছুতেই এই যুবকটির থেকে এমন ব্যাবহার আশা করে নি।এ আর কেউ না,এ হলো তাদের ভার্সিটির বড় ভাই সিফন।
সিফন তুরের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন অনেকদিন ধরে তুরকে দেখে নি,সে তুরের জন্যই অপেক্ষা করছে।সিফনের চোখে তুরের জন্য হাজার ব্যাকুলতা। মুখে একটু কথা বলার আকুতি।তুর সেসব কিছু গুরুত্ব না দিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
‘এসব কি সিফন ভাই? আপনার থেকে আমি এমনটা আশা করি নি।’
সিফন তুরের একটু কাছে যেয়ে তুরের দিয়ে তাকিয়ে চোখে আকুতি নিয়ে বলে,
‘তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে।কতো খুঁজেছি তোমায় জানো। আমি কেন এমন করছি তুমি বুজতে পারছো না?
তুর কাট কাট গলায় বলে,
‘না!’
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই সিফন তার পথ আটকায়।কাতর কন্ঠে বলে,
‘এতোদিন ভার্সিটি আসো নি কেন? রোজ তোমার জন্য এখানে আসতাম।’
তুর বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ঠান্ডা গলায় বলে,
‘আপনিই কি সেই ভাইয়া যে,আমাকে অই পিচ্ছিটার মাধ্যমে ফুল দিয়েছিলো?’
ঠোঁট কামড়ে হাসে সিফন।বলে,
‘উত্তরটা বুঝে নেও।’
‘আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে পথ ছাড়ুন।’
‘সিফন যেই রাস্তা একবার ধরে,সে তার শেষ অবধি দেখে ছাড়ে।’
সিফনের গলার স্বরে কিছু একটা ছিল যা তুরের ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়।কিছু সময় ভাবনায় মশগুল থাকে। কিছু বলতে যাবে তার আগে সিফন একটি অবাক করা কান্ড ঘটায়।প্যান্টের পকেট থেকে টুকটুকে লাল রঙের একটা গোলাপ বের করে চোখের পলকে তুরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তুরকে প্রপোজ করে বসে।
‘আই লাভ ইউ তুর।আই লাভ ইউ সো মাচ।এই ভার্সিটিতে যেদিন তুমি প্রথম এসেছিলে তোমাকে দেখার পর তোমার প্রতি আমার মনে ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছিল।সময়ের পরিবর্তনের যা ভালোবাসা নামক সুন্দর অনুভূতি মনের কোনে রোপন হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম তোমার অর্নাস শেষ করার পরে আমার মনের কথা খুলে বলবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বলে দেওয়াই ভালো।তুমি শুধু আমার ভালোবাসা গ্রহণ করো কথা দিচ্ছি আমি সারাজীবন তোমাকে অনেক সুখে রাখবো।
মাঠের সবাই তাঁদের দেখছে।তুরের হাত পা কাঁপছে সেই সাথে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এখনি সে মাথা ঘুরে প’ড়ে যাবে।সিফন এখনো তুরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। অদূরে আতিয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তুর কম্পনরত কন্ঠে স্বরে বলে,
‘আমি বিবাহিত,বিয়ে হয়েছে আমার।আমি আপনার ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারছি না।তাই রাস্তা ছেড়ে দেয়াই আপনার জন্য ভালো। আমার রাস্তা ও আপনার রাস্তা পুরোপুরি আলাদা।’
হনহনিয়ে পা ফেলে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যায় তুর।তার পিছন পিছন আতিয়াও চলে যায়।পেছনে ফেলে যায় একজোড়া বিস্মিত চোখ। পেছন থেকে সবটা লক্ষ্য করে নিষ্প্রভ।মাঝ রাস্তায় নিষ্প্রভ লক্ষ করে তুরের ফোন তার কাছেই রয়ে গেছে। দরকারি জিনিস কখন কোন সময় লাগে সে জন্য সে আবার কলেজে ব্যাক করে।আর এসেই এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হয়।সে তাহলে ঠিক ধরেছিলো তুরের বয়ফ্রেড রয়েছে। নিষ্প্রভ ফোন ফেরত না দিয়েই অফিসে চলে যায় তবে কাজে মন দিতে পারে না।অফিসের বাকিটা সময় বিষময় ঠেকে নিষ্প্রভের নিকট।
স্বন্ধ্যা নাগাদ তুর বাসায় ফেরে।আজ অনেকটা দেরি করেই ফিরেছে সে।কারণ তাঁর মন খুব একটা ভালো নেই সেজন্য নিজেকে সময় দিতে একাই নদীর পাড়ে যায় সে।আতিয়াকেও দেখে মনে হলো সে কোনো কারণে বিষন্ন হয়ে আছে।তুরের পুরো শরীর কেমন জেনো করছে তার ডাস্ট এ্যার্লাজি রয়েছে।তুর ওয়াসরুমে ঢুকে সময় নিয়ে গোসল সারে।লাল রঙের একটা কামিজ পড়ে, চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে প্যাঁচিয়ে সে বেরিয়ে আসে।ব্যালকনিতে গিয়ে চুলগুলো সামনে নিয়ে মুছতে থাকে আর ভাবতে থাকে নিজেকে নিয়ে।
রাত নয়টা! নিষ্প্রভ এখনো বাড়িতে আসে নি। ইলিয়াস মির্জা আফসান কে ছাড়াতে হন্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু আ’ই’ন তাকে ছা’ড়’বে না,কারণ কে’স’টা কো’র্টে উঠেছে। আশা বেগম হঠাৎ করেই বেশ চুপচাপ হয়ে আছে।না জানি ভেতরে ভেতরে কি ছক কষছে সে।এই মহিলার বিশ্বাস নাই !
তুর হঠাৎ করেই নিষ্প্রভের দেওয়া একটা লাল রঙের শাড়ি পরিধান করে।মুখে হালকা মেকআপ করে,চোখে গাড়ো কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।চুল গুলো ক্ষোপা করে আর্টিফেসিয়াল গাজরা লাগায়।আয়নায় নিজেকে দেখে সে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায়।আজ সে সেজেছে শুধুমাত্র নিষ্প্রভের জন্য। আজ তুর নিষ্প্রকে বলবে এই সম্পর্কটাকে সে এগিয়ে নিতে চায়।তুর অন্যপাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে আছে।
নিষ্প্রভ এসেছে তুর তা লক্ষ্য করে নি। নিষ্প্রভ এসেই সম্মুখীন হয় তুরের এমন আগুন সৌন্দর্যের।কি আবেদনময়ী লাগছে মেয়েটাকে।মেয়েটাকে কি ভীষণ মিষ্টি লাগছে! সাজগোজ করছে মেয়েটা।মেয়েলি সুবাস নিষ্প্রভকে ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত করে ফেলছে।নি’ষি’দ্ধ ইচ্ছা জানান দিচ্ছে বারবার।মন বলছে ও তোর বউ।ওর সব কিছুতেই তোর অধিকার আছে। অথচ মস্তিষ্ক বলছে, ও তোর জন্য সাজে নি,ও অন্য কাউকে ভালোবাসে। মন, মস্তিষ্কের মাঝে নিষ্প্রভ মস্তিষ্ককে জয়ী করল।পরক্ষণে তার সকালের ঘটনা মনে পড়ে গেল। তুরের পাশে গিয়ে সিগারেট ধরালো। নিষ্প্রভকে তুর পাশে দেখে স্বাভাবিক কন্ঠে শুধালো,
‘কখন এলেন?’
‘আমি কখন আসি না আসি তোমাকে বলতে হবে?’
তুর নিষ্প্রভের রাগের কারণ বুঝতে পারে না। সে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
‘সিগারেট খাচ্ছেন কেন? আগে তো কখনো খেতে দেখিনি!’
‘এই তুমি আমার ব্যাপারে নাক গলাচ্ছ কেন? তোমার ব্যাপারে তো আমি নাক গলাই না। রাস্তায় তো ভালোই ছেলেদের গায়ে ঢলে পড়। নাকি বাইরে, ঘরে দুজন লাগে তোমার।’
নিষ্প্রভের এমন কথায় রাগে, অপমানে তুরের চোখে পানি চলে আসে। সে উচ্চস্বরে বলে,
‘মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ নিষ্প্রভ। বিয়ে করেছেন বলেই এসব নোং’রা কথা আমায় বলতে পারেন না।
নিষ্প্রভ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
‘নোং’রা কে নোং’রা ও বলতে পারবো না?বাইরে গিয়ে ছেলেদের গায়ে ঢলে পড়তে পারবে,আর আমি স্বামী হয়ে কিছু বললেই দোষ। আমি তোমায় ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলাম,কিন্ত তারপর মনে হয়েছিল এই সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দেই । কিন্তু তুমি কি করলে, রাস্তার দাঁড়িয়ে ছেলেদের সঙ্গে এসব করে বেড়াচ্ছো। একদিন বাচ্চা ছেলে এসে ফুল দিচ্ছে আরেকদিন তোমার বয়ফ্রেন্ড এসে ফুল দিয়ে প্রপোজ করছে। তুমি কি মনে করছো আমি কিছু বুজতে পারি না’
‘আপনি আমায় ভুল বুঝলেন নিষ্প্রভ।আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু , আমার চরিত্রে আঙুল তুললে আমি সহ্য করতে পারি না।’
‘তুমি আমায় বাধ্য করলে।’
তুর আকুতি ভরা কন্ঠে নিপ্রভের কাছে যেয়ে হাত জোড় করে বলে,
‘আপনি আমার পুরো কথাটা আগে শুনুন সব সময় চোখের দেখা সত্তি হয় না।’
নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,
‘তোমার কোনো কথা শোনার ইচ্ছা বা আগ্রহ কোনোটাই আমার নেই।তোমাদের মতো মেয়েদের একটা দিয়ে হয় না। আমি এজন্য সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে চাইছিলাম না।কারণ তাদের এই সুন্দর চেহারার পিছনে কুৎ’সি’ত মন লুকানো থাকে। এজন্য আমি সব সময় চাইতাম যার মন সুন্দর আমি তাঁকে বিয়ে করবো কারণ আমার কাছে এসব রূপ, চেহারা,শরীর ফ্যাক্ট নয় #হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ ই সবকিছু।দুটি হৃদয়ে এর ই যদি মিল না থাকে তাহলে শরীর দিয়ে কি হবে? ভাগ্যক্রমে তোমার সাথে এই সম্পর্কে জড়িয়ে গেলাম কিন্তু তুমি কি করলে! দুঃ’চ’রি’ত্রা মেয়ে মানুষ।’
কথাটি বলার সাথে সাথেই নিষ্প্রভ তার বাম গালে চি’ন’চি’ন ব্যা’থা অনুভব করে।সে গালে হাত দিয়ে হ’ত’বা’ক হয়ে সামনে তাকিয়ে থাকে।
চলমান।
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব ১৭ পাচ্ছিনা