#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩|
#শার্লিন_হাসান
ঠাস করে দু’টো চ’ড় পরে যায় ছেলেটার গালে। শুভ্র কলার ধরে টেবিল থেকে বের করে এনে ছেলেটার গাড় বরাবর একটা লা’থি মারে।
চিৎকার করে বলে,
-আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমার কলেজে না চলবে র্যাগিং না চলবে গুন্ডামি, না চলবে রাজনীতি, না চলবে নেতাগিরি। এই কলেজে কোন রাজনীতি চলবে না। তোর নাম কী?
ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে। তখন একজন বলে,
-আকাশ।
বেশীরভাগ ছেলে সেরিনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শুভ্র আকাশকে ক্লাসের বাইরে বের করে দিয়ে বলে,
-একটু পর আমার পেছন দিয়ে আমার রুমে আসবি।
অল্প কিছু লেকচার দিয়ে শুভ্র প্রস্থান করে। ত্রস্ত পায়ে তিনতালা ছেড়ে পরের ভবনের সেকন্ড ফ্লোরে নিজের রুমে যায় শুভ্র। আকাশ তার পেছন দিয়ে আসছে। শুভ্রর সামনে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র ভণিতা ছেড়ে বলে,
-শোনলাম মেয়েদেরকে র্যাগিং করিস।
আকাশ চুপ। তখন শুভ্র পুনরায় বলে,
-নেক্সট টাইম ক্যাম্পাসে,ক্লাসে ফোন নিয়ে আসবি না। আর না কোন মেয়েকে র্যাগ দিবি। ফাস্ট টাইম দেখে ছেড়ে দিলাম। সেকন্ড টাইম হলে ছেড়ে দেবো না কিন্তু। এখন ক্লাসে যা।
আকাশ মাথা নিচু করে ক্লাসে আসে। শুভ্র বসে,বসে কিছু পেপার্স দেখছে। পেপার্সের ভেতরে একটা চিরকুট পায়। তাতে লেখা,
“শুভ্র স্যার! সারাদিন তো রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকেন। এই যে বাবুর আম্মু আপনার উত্তরের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে খেয়াল রেখেছেন? কে বলেছে আপনি ম্যারিড হুম? আমি তো শুনেছি এমপি স্যারের ছোট ছেলে আরফান চৌধুরী শুভ্র আনম্যারিড। একদম মিথ্যে বলবেন না। বাবু হলে কোলে নিতে দেবো না কিন্তু।হুম!”
শুভ্র চিঠি পড়ে ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায়। মনে প্রশ্ন জাগে চিঠিটা ভুলে তার কাছে আসছে না তো? হয়ত চিঠিটা তার ছোট ভাই আর্থর জন্য। মেয়েটা হয়ত আর্থর পুরো নাম জানে না। দুই ভাইয়ের নাম গুলিয়ে ফেলেছে। চিঠির ভাষা তো বলছে আর্থর জন্য এই চিঠি।
‘শুধু,শুধু সেরিনকে উল্টাপাল্টা বললাম। আহ্!কপাল ছোট ভাইয়ের জন্য মেয়েরা পাগ’ল। পাগ’ল হয়ে চিঠি দেয় আর সেই চিঠি ভুলে বড় ভাইয়ের কাছে আসে। মনে হচ্ছে শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে ঢুকতে হবে। যদি একটা বউ কপালে জুটে।’
শুভ্র আগের দিনের চিরকুট আর আজকের চিরকুটটা পড়ে পুনরায়। কেনো জানি বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে।
বাড়ীতে গিয়ে আর্থকে পেলে নিউজটা দিতে হবেই। শুভ্রর তর সইছে না।
*****
নিশাত, সেরিন ক্লাস শেষে বেড়িয়ে পড়ে বাড়ীর উদ্দেশ্য। গেটের সামনে থেকে রিকশায় উঠে দু’জন। চৌধুরী বাড়ীর সামনে লোকের সমাগম দেখা যাচ্ছে। তখন নিশাত বলে,
-দেখ তোর ফিউচার শশুর বাড়ীতে কী ভীড়।
-যেভাবে বলছিস বিয়েটা মনে হয় ঠিক।
-শুভ্র স্যার কিন্তু সত্যিই অনেক হ্যান্ডসাম। তার এট্টিটিউড ভাই ফিদা হওয়ার মতো। যেই ধমক দেয় পুরো কলেজ ঠান্ডা। উনার থোতমাটাও সুন্দর। ঠিক তোর ফিউচার বাবুর আব্বুর মতো।
-ওনার এসব ধমকা ধমকি আমার পছন্দ হয়না।
-বেডায় ধমক না দিলে কলেজটা এতে সুন্দর চলতো না। দেখ ওনার চৌদ্দপুরুষ রাজনীতি করে। ওনাদের কলেজ, ওনার বাবা এমপি অথচ উনি ছাত্রলীগ,রাজনীতি কলেজে ঢুকতে দেয় না।
-সেটা তাঁদের ব্যপার।
-তোর কাছে কিছু বলেও দাম পাওয়া যায় না।
-পাবি কীভাবে? চিঠি দেয় একজন আর বকা খাই আমি। চিঠিটা কে দিয়েছিলো?
-থাক আর বলিস না। যে দিয়েছে নিশ্চিত স্যারকে পছন্দ করে আর স্যারের বুঝার ভুল।
-হয়ত। যাই হোক প্রেমপত্র না দিয়েও বেডার বকাঝকা খাই। বুঝতে হবে! অনেক কিছু তালগোল পাকানোর মতো।
-ভাই নিউটন, আইনস্টাইনের সূত্র বুঝা সহজ তোদের এসব প্যাচ বুঝার থেকে।
-মাঝেমধ্যে ভাবি আমার মাথার তাড় কয়টা ছিঁড়া? আগে ভাবতাম দু একটা এখন মনে হয় দুএকটা তাড় ঠিক আছে বাকী সবই ছেঁড়া।
নিশাত তাকায় সেরিনের দিকে। সেরিন তার বাড়ীর গেটের সামনে গাড়ী থামতে নেমে পড়ে। নিশাতকে বায় দিয়ে বাড়ীতে ঢুকতে তার ছোট আম্মু তুষি শরবতের গ্লাস এগিয়ে দেয়। সেরিন শরবতের গ্লাস নিয়ে সোফায় বসতে,বসতে বলে,
-গতকাল সিরাতের সাথে চৌধুরী পরিবারের কারোর দেখা হয়নি?
-না ও আসতে,আসতে লেইট হয়ে গেছে তো তাই।
-সিরাতকে এই কলেজে দিলে কী এমন হতো? ওই কলেজে সারাদিন ধরে ক্লাস হয়।
-তখন তো এই কলেজের অবস্থা শোচনীয় ছিলো। প্রিন্সিপাল ছিলো না। একবছর হলো শুভ্র এসেছে।
-ওহ।
-হ্যাঁ যাও শাওয়ার নিয়ে আসো খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
সেরিন খালি গ্লাসটা রেখে নিজের রুমে চলে যায়।
*******
আর্থ বাড়ীতে ফিরে তার ছোট চাচ্চু আয়মান চৌধুরীর সাথে। আজকেও তারা কিছু কাজে গিয়েছিলো। তখন আয়মান চৌধুরীর ওয়াইফ সুলতানা খানম আসে শরবতের গ্লাস নিয়ে। আর্থ এবং আয়মান চৌধুরীকে দেয় শরবত। তাঁদের আসার পেছন দিয়ে শুভ্র আসে বাড়ীতে। আর্থকে দেখে শুভ্র বলে,
-ব্রো তাড়াতাড়ি রুমে আসো গুড নিউজ আছে।
তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
-কী এমন গুড নিউজ শুভ্র?
-আর্থর বাবুর আম্মুকে পাওয়া গেছে।
শুভ্রর কথায় আর্থর কাশি উঠে যায়। আয়মান চৌধুরী শরবতে চুমুক দিতে গিয়েও দেয়নি। তখন একজন সার্ভেন্ট শুভ্রর শরবতের গ্লাস নিয়ে আসে। শুভ্র সেটা নিয় সোফায় বসে পড়ে। তখন আর্থ বলে,
-ওটা তোমার বাবুর আম্মু। শুধু,শুধু আমার গাড়ে দোষ চাপাও কেন? কী জেনো নাম ভাবীর? গতকালকে বকা দিলা! উমম সেরিন পাটওয়ারী।
আর্থর কথায় শুভ্র নিজেই শরবতের গ্লাস রেখে তার চাচ্চু আর কাকীমার দিকে তাকায়। তারা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। তখন সুলতানা খানম বলেন,
-কার মুখোশ কে উন্মোচন করছে?
তখন আর্থ বলে,
-ভাইয়া অনেকদিন ধরে ভেবেছে বাবুর আম্মুর কথা বলে দিবে তোমাদের। সাহস পাচ্ছে না তেমন। তো আজকে আমার কথা বলে বুঝাতে চেয়েছে তার কথা। কারণ বড় ভাইয়ার আগে তো ছোট ভাই বিয়ে করবে না।
তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
– শুভ্র, তোমার বাবু কী দুনিয়ায় চলে এসেছে নাকী আসবে?
-আসবে মনে হয়। বাবুর আম্মুর আবার জেদ বেশী। বলেছে বাবুর আম্মুর কথা আর বাবু আসার কথা তোমাদের না বললে এভরশান করিয়ে ফেলবে।
তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
-এটা আগে বলে দিলেই হতো। আমরা কী কিছু বলতাম নাকী? শুধু,শুধু আমাদের বংশের বাতি নেভানোর কী আছে?
তখন আর্থ শুধায়,
– এখন চাচ্চু বলো,
‘মার্কা কী?
বাবুর বাবা।
ভোট দিয়েছে কে?
সেরিন পাটওয়ারী।
বাবা হবে কে?
শুভ্র চৌধুরী।
জিতেছে কে?
শুভ্র চৌধুরীই।’
এবার শুভ্র নিজেই কাশতে থাকে। শুভ্রকে কাশতে দেখে আর্থ বলে,
-ভাইয়া বাবুর আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করায় কী শরবত গলায় আটকে গেছে?
-শরবত গলায় আটকায় না আর্থ। আর কীসব বাবুর আম্মু আসবে কোথা থেকে?
-অস্বীকার করো কেন তুমি?
আয়মান চৌধুরী এবং সুলতানা খানম শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে আছে। ঠোঁটে লাজুক হাসি। আয়মান চৌধুরী বিশ্বাস করে নেয় ব্যপারটা। সুলতাবা খানম খুশিতে শুভ্রর পাশে বসে শুভ্রর কপালে চুমু খায়৷
-বিয়ে করেছো বললেই হতো। বাবুর আম্মুকে আমরা দোয়া দিয়ে আসতাম গিফ্ট নিয়ে গিয়ে।
শুভ্র অস্বস্তি ফিল হচ্ছে। লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। তার চাচা, চাচীর সামনে এসব বিষয় তার জন্য লজ্জার। কিন্তু আর্থর জন্য কিছুই না কারণ তার আয়মান চৌধুরীর সাথে চাচা ভাতিজার আগে বন্ধুর মতো সম্পর্ক। যার সম্পূর্ণ বিপরীত শুভ্র। সে বাবা,চাচাদের বন্ধু হিসাবে না গুরুজন হিসাবেই দেখে। আয়মান চৌধুরী শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলেন,
-বাবুর আম্মু সেরিনকে তাড়াতাড়ি চৌধুরী বাড়ীতে নিয়ে আসবো। আর্থ বাবুর নাম কী?
-এখনো বাবু আসেনি তো চাচ্চু। ফ্লাশব্যাক ভালোভাবে পড়ো। বাবু আসবে আর সেরিন পাটওয়ারী ভাইয়ার বাবুর আম্মু।
শুভ্র আর্থর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে আছে। পারছে না এখানে কয়েক গা লাগিয়ে দেয়। আর্থকে বাঁশ দিতে এসে সে নিজেই কীভাবে বাঁশ খেয়ে গেলো? আরজিন চৌধুরী শুভ্রকে সবাই ভয় পায় আর এখানে তার ভাই তার সন্মান নিয়ে ফুটবল খেলে। একটুও ভয় পায়না তাকে। শুভ্রর লাজুক আর রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে প্রথমে তৃপ্তি হাসে আর্থ। পরক্ষণে রাগের কথা ভেবে একটা ঢোক গিলে। শুভ্রর রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে তার। এক সপ্তাহের জন্য শুভ্রর থেকে গা ঢাকা দিতে হবে তাকে।
#চলবে
(আজকের পার্টটা কেমন হয়েছে জানি না। নামের বিষয়টা নিয়ে আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত। হয়ত তাড়াহুড়োয় টাইপ করায় সব জগাখিচুরি হয়ে গেছে। এবার থেকে সব চরিত্র সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবো। রেসপন্স কমে যাচ্ছে যা লেখার প্রতি আমার আগ্রহ হারিয়ে দিচ্ছে। বেশী,বেশী রেসপন্স করবেন তাহলে নতুন পার্ট ও তাড়াতাড়ি পাবেন।❤️)
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/