#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৮ (প্রথমাংশ)
“কি হলো তাবাসসুম? তোমার প্রাক্তনকে ডেভিল রূপে দেখে চমকে গেলে হুম? কি মনে করে ছিলে আমার বিবিজান এর সাথে পাঙ্গা নিয়ে আমারই পিঠ-পিছে কলকাঠি নাড়বে আর এর খবর আমি পাবো না?
মাই ডেয়ার স্টেফ শ্যালিকা, ভাবলে কেমনে আমি শোধ না নিয়ে ছেড়ে দেবো। উহ একটা কথা মনে পড়ে গেল, নাজীবার সৎ ফুপাতো বোন রাইট? যার নানা ছন্দবেশ নিয়ে আমার বিবিজান-এর পিছে পড়ে আছে। তুমি তারই আপন নাতনী। যার র’ক্ত শুরুতে গলদ,তার আবার কিসের আপনত্ব। তুমি তো বোন নামেই কলঙ্ক।”
কথার মাঝে আয়েশে চেয়ারে বসল আফরাজ। তার পাশে আকবর মুখ ভেটকাল তাবাসসুম কে। মেয়েটার শরীর মড়মড়ে গিয়েছে। এত’টা চ’ড় সে তার জীবনে খায়নি। আফরাজ এর লেডি গার্ড একের পর এক মে’রে গিয়েছে। আফরাজ থামতে বলায় থেমেছে। লেডি গার্ড কে ইশারা করে বলে,
“আসামি কে এক গ্লাস পানি খেতে দাও। তারপর ইনভেস্টিগেশন শুরু করব।”
‘ইয়েস স্যার’ বলে লেডি গার্ড তাবাসসুম কে পানি খেতে দেয়। বেচারী একচটে পানির গ্লাস শেষ করে দেয়। নাক-মুখে পানি উঠে যাওয়ায় কাশতে লাগে। লেডি গার্ড পিঠ মালিশ করে শান্ত করল তাবাসসুম-কে। আফরাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“সত্যি করে বলো তোমার নানা কি কারণে ভার্সিটির লেকচারার পদে যোগ দিয়েছেন? তোমার বাবা-মা যে এই কাজে জড়িত তা ভালোই জানা আছে আমার। বলে দাও নাহলে জীবন মা’রা খাবে।”
তাবাসসুম আতংকে ঢোক গিলছে। কেননা তার মুখ এদিকে না খুললে চ’ড় খাবে, ঐদিকে মুখ খুলার জন্য সরাসরি খু’ন হতে হবে। তার ভাবান্তরে আফরাজ নির্লিপ্ত গলায় বলে,
“তুমি যদি আমাদের হেল্প করো! তবে আমি তোমাকে আর তোমার মা-কে ঝামেলামুক্ত করে দেবো।”
ঠোঁট চেপে আফরাজ এর মুখশ্রীর দিকে চেয়ে রইল তাবাসসুম। জানের ভয়ে সে নিশ্চুপ রইল। তপ্ত শ্বাস ফেলে উঠে পড়ে আফরাজ। বন্ধুর দিকে চেয়ে বলে,
“শ্যালিকার মুখে কসটেপ মে’রে দেহ্। তার মুখে কসটেপ বড্ড মানানসই। শেষে রুমটা অন্ধকার করে চলে আয় সবাই।”
গার্ডস নিয়ে বেরিয়ে যায় আফরাজ। আকবর তার কথামত কাজ করে গাড়িতে গিয়ে বসে। দু’জন একে অপরের দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে একসাথে ক্লাপ করল। আকবর ফোন বের করে বলে,
“জানিস আজকে ডেঞ্জারাস পা’দ মারলাম। ঐ শাকচুন্নী-রে লিফটে বেহুঁশ করার জন্যে যে, ট্রিকটা ইউজ করলাম না! উফফফ মারডালা রে দোস্ত। বাই দ্যা ওয়ে আমার পা’দের ক্রিয়াকলাপ সিসিটিভির মধ্যে ক্যাপচর হয়ছে। সেগুলো তো ক্রপ করে ফেলতে হবে রাইট?”
“তোর কি মনে হয় ইজ্জতের ফালুদা করার জন্য সেই ফুটেজ রেখে দেবে এই আফরাজ ফাহিম? হাহ্ আমি কোনো কাঁচা কাজ করি না। করার আগেই সব রেডি করে রাখি।”
“মানে?”
“শোন, তাহলে তোকে আজ লাঞ্চে দু’প্লেট ভাত খাওয়ার সুযোগ কেনো দিয়ে ছিলাম জানিস? কারণ তরকারির মধ্যে মুলা ছিল তোর ফেভারিট ডিস। মুলা থাকলে তুই আর দুনিয়ার মায়াজালে আঁটকে থাকিস না। বুদ্ধি করে মুলার তরকারির অর্ধেক বাটি তোকে দিয়ে শেষ করিয়ে নিলাম। তারপর তোকে নিয়ে অফিসে চলে এলাম। তুই লিফটে ঢুকতে চাইছিলি না। সোজা ওয়াশরুমে যেয়ে পা’দ ছাড়ার ফন্দি আটকে ছিলি। কিন্তু মনেমন আমি ফন্দি আঁটি যে, তোর মুলার পা’দের গন্ধে তাবাসসুম কে অজ্ঞান করাবো। উইড আউট এনি ক্লোরোফর্ম। একেই তো অনেক বাঁশ পা’দ দিস। তার উপর এতটা গুলুমুলু লাড্ডু একখান ছেলে। ভাগ্যও দেখ আমাদের সঙ্গ দিল। তাবাসসুম ব্যতীত অন্য কেউই লিফটের ভেতর আসেনি। কিন্তু মেয়ের সেখানেও ছ্যাচড়ামি শুরু। হাত দিয়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করছিল। যতবার ইগনোর করার চেষ্টা করছিলাম। ততবার সে আমার পিঠে হাত লাগানোর দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছিল। আমিও কম কিসে মুখের মধ্যে মাস্ক পরে নিলাম। তোর এসবে খেয়াল নাই। তোর মন ‘ওয়াশরুম ওয়াশরুম’ করছিল। না পারতে তুই তাবাসসুম এর উম্মুক্ত নাক ডেকে দেওয়ার প্রচেষ্টায় মাস্ক এগিয়ে দিলি। কিন্তু ন্যাকারাণী তো কারো কাছে থেকে টাকা ছাড়া অন্য জিনিস নেই না। নচেৎ তুই ভালো মানব দেখে মাস্ক দিতে চেয়ে ছিলি। সে নেইনি তার দোষ। তুইও মাস্ক পরে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করিসনি। পুত*****করে লিফটের ভেতরটা পা’দের হাওয়ায় ভরে দিলি। বেচারী বুঝতে পারেনী তোর মাস্ক দেওয়ার কদর। তড়িৎ গতিতে লিফটের পাশ ঘেঁষে পা’দের গন্ধে শ্বাস হারিয়ে নেতিয়ে পড়ে সে। তারপর তোকে রাখালের গরু বানিয়ে তাবাসসুম-কে কিডনাপ করালাম। তুই তারে নিয়ে গেলি আর আমি সেই ফাঁকে ফুটেজের টান টানা টান করে দিলাম।”
“গ্রেট ব্রাদার। আজ নিজের পা’দের উপর গর্ব হচ্ছে। কি বাঁশ পা’দটাই না দিলাম। এক বারে মেয়ের সেন্স হারিয়ে গেল হাহাহা।”
আকবরের হাসি দেখে আফরাজও হাসল। তাদের অর্ধ-কাজ যে প্রায় সফল সেই কারণে। হাসার ছলে সদ্য এক প্রশ্ন করে উঠল আফরাজ-কে।
“তার মানে তুই নাজীবা ভাবীর সঙ্গে হওয়া ঘটনা এসবের ব্যাপারেও জানিস?”
নিরুত্তর আফরাজ মৃদু হেসে মাথা নাড়ল। বন্ধুর কথার জবাব এড়িয়ে ড্রাইভার-কে বলে, ‘অফিসের দিকে চলো।’
আকবর দ্বিরুক্তি করল না। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা অফিসে চলে এলো। আফরাজ কেবিনে ঢুকে সর্বপ্রথম বাসার সিসিটিভি ফুটেজ অন করে। সর্বক্ষণ ঠিক আছে দেখার পর তাদের বেডরুমের ফুটেজ চেক করে। নাজীবা-কে দেখা গেল ল্যাপটপ হাতে নিয়ে বসে আছে। সেখানে জুম করল আফরাজ। ল্যাপটপে আইসিটির কোডিং ল্যাবের কাজ করছে নাজীবা। যেহেতু সে সিএসসির স্টুডেন্ট, সেহেতু কোডিং নিয়ে নানান প্রজেক্টের কাজ দক্ষতার সহিতে সম্পন্ন করতে দেওয়া হয়। নাজীবার মুখের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফাইল চেকিং এ দৃষ্টি দিল আফরাজ। হঠাৎ নাজীবার ফোনে কল আসল। আড়চোখে সিসিটিভির দিকে তাকায়। কল আসায় নাজীবা বিরক্তবোধ করে। তবুও আফরাজ কল করছে ভেবে ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পেল। স্ক্রিনে আননোন নাম্বার শো হচ্ছে। সে ধরবে কিনা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেল। কল’টা বারংবার আসছে। জরুরী কল ভেবে কল’টি রিসিভ করতে গেলে তাৎক্ষণিক ভাবে আফরাজ এর কলও স্ক্রিনের মধ্যে ভেসে উঠল। নাজীবা ভ্রু কুঁচকে আননোন নাম্বারের কল কেটে আফরাজ এর কল রিসিভ করে। সালাম বিনিময় শেষে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“কল কেন দিয়েছেন?”
“বিবিজান আমার, নাম্বার আমার, ফোনের সিমও আমার নামে রেজিস্ট্রার্ড। সো আমি যখন ইচ্ছে তখন কল দিতে পারি।”
নাজীবা ভেংচি কাটে। মুখ ভেটকিয়ে বলে,
“তাতে আমাকে ফোন কে দিতে বলছিল? আমি তো ফোন টোন ছাড়াই বিন্দাস ঘুরছিলাম। আপনার থেকে এনা মিসিং চুটানোর জন্য ফোন কিনে দিতে হলো।”
নাজীবার ঢংমার্কা চেহারা দেখে মুখ টিপে হাসল আফরাজ। তবুও কলের মধ্যে গাম্ভীর্য ভরা গলায় বলে,
“বেশি বে’য়া’দপ হয়ে গেছো দেখছি। গালের থেকে দাগ মুছে গেল মনে হচ্ছে। আবারো দাগ বসিয়ে দিতে হবে।”
“এবার দিয়ে দেখেন। ছেড়ে না অনেক দূরেই চলে যাবো। নিজেতো ভুলেও গেছিল এবারো ভুলে যাইয়েন আমাকে হুহ্।”
কল কেটে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলল সে। ফোনটা বিছানার উপর ছুঁড়ে মে’রে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আফরাজ ফুটেজে নাজীবা-কে অনুসরণ করছে। মেয়েটি অভিমানে গাল ফুলিয়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে গুটিয়ে শুয়ে পড়েছে। মিসেস ফেরদৌসী মুচকি হেসে নাজীবার মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলেন। জনাব ইসমাইল এসময় গ্রামের জমির দেখভালের জন্য গ্রামে যান। তাই নাজীবার সংকোচ হলো না শ্বাশুড়ির রুমের ভেতর ঢুকে পড়তে। আফরাজ একপলক মা আর বিবিজান এর দিকে তাকিয়ে ফোন হাতে নেয়। বাসার মধ্যে সাভেন্টের ছন্দবেশে থাকা তার সিক্রেট পিএ রাফিন-কে কল দেয়। রাফিন এর দায়িত্ব হলো সর্বদা বসের রুমের আশপাশ জুড়ে কাজ করা। এতে সহজে সে ফোন রিসিভ করে ‘ইয়েস স্যার’ বলল। ‘হুম’ শব্দ করে আফরাজ রাফিন-কে বলে,
“আমার রুমে ঢুকে তোর ম্যাডামের ফোনটা নিয়ে অফিসে আয়।”
ফোন রেখে সামনে তাকিয়ে আকবর-কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। সে ভ্রু নাচিয়ে ভেতরে আসতে ইশারা করে। আকবর এর মাথায় সব জটিল প্রশ্ন ঘুরছে। যতক্ষণ এসবের উত্তর পাবে না ততক্ষণ সে শান্তিতে বসতে পারবে না। বন্ধুর উপর চেঁচিয়ে বলে,
“দেখ দোস্ত আজ তুই পুরো কাহিনী আমাকে বলবি না হয় আমি.. আমি।”
“হ্যা বল তুই কি? কি করবি?”
“আমি আমি আইসক্রিম খেয়ে হার্টে বরফ জমিয়ে হার্টবিট নষ্ট করে ফেলব বলে দিলাম।”
“এতটুকু ব্যাপার। কোনো সমস্যা নেই বরফটা নাহয় আমি গিলিয়ে দেয় কি বলিস? আমিই তো তোর পরম বন্ধু।”
“এই দেখ পেটে কিন্তু এখনো মুলার বেগ শেষ হয় নাই। যদি ত্যাড়ামার্কা জবাব দিস। তাহলে তোর কেবিনেও আমার সুন্দর পা’দ মে’রে দেবো তখন…।”
সে তার কথা শেষ করতে পারল না। উল্টো ঢোক গিলে মুখের কথা পাল্টে বলে,
“আরে তোর যখন ইচ্ছে তখন বললেও হবে নো প্রবলেম ম্যান।”
“কি-রে তুই কেন ভয় পাচ্ছিস? গার্নটা ফর সেফটির জন্য রাখছি। কে যেনো বিরাট বড় পা’দ দেওয়ার কথা বলছিল। তারই পা’দ দেওয়ার জায়গায় বু’লে’টের ন্যায় ফুটো করে দেবো আরকি। টেক ইট ইজি ম্যান।”
ফোকলা দাঁতের হাসি দেয় আফরাজ। গা’র্ন দেখেই তার বন্ধুর মুখের রং পাল্টে গিয়ে ছিল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)বিধেয় মুখ ভেটকাল সে। দরজায় নক করার শব্দে আফরাজ প্রবেশের অনুমতি দেয়। রাফিন এসে মোবাইলটি এগিয়ে দিয়ে পুনরায় তার কর্মস্থলে চলে গেল। আকবর নাজীবা ভাবীর ফোন দেখে কিছু বলতে নিলেই কল চলে আসে ফোনে। আফরাজ বাঁকা হেসে নাজীবার ফোনের কল রিসিভ করে। অপরপাশ থেকে অস্থির গলায় দাহাব এহসান বলে উঠে।
“নাজীবা তুমি কোথায় থাকো? এতদিন স্টুডেন্ট-টিচার হিসেবে কথা বলছি। তাই বলে এতটা ইগনোর করবা? দেখো আমি জানি তুমি অন্য ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট আর আমি অন্য ডিপার্টমেন্টের টিচার। বাট ইট’স ড্যাজেন্ট ম্যাটার। আই উইল ম্যানেজ। আর দেখতে গেলে আমার তোমাকে ভীষণ পছন্দ নাজীবা। আমিও কয়েকদিনে বিয়ে করতে চাইছি। তাই বলছিলাম কি একসাথে কফি ডেইটে গেলে….।”
“রং ইউ মিস্টার দাহাব এহসান। নাজীবা ইজ অলরেডি ম্যারেড এন্ড সি ইজ দ্যা ওয়াইফ অফ আফরাজ ফাহিম। আই থিংক আপনি ইংরেজি বুঝতে পেরেছেন দাদা….জান। ওপস ভুলে ইয়াংম্যান-কে অল্ডম্যান ডেকে ফেললাম। যতই যুবক বনে যান,আপনার আসল রূপের রহস্য এই আফরাজ ফাহিম এর অজানা নয়।”
একনাগাড়ে কথার মাঝেই হঠাৎ করে থেমে যান দাহাব এহসান। তিনি ভাবতেও পারেননি তার কাজ পুনরায় অসফল হবে। ফোনটা রেখে রেগে ফুঁসে উঠলেন। তার মেয়ের জামাই-কে ডাক দিলেন। জনাব লিয়াকত গম্ভীর মুখোভঙ্গি নিয়ে শ্বশুরের রুমে এলেন। তিনি আফরাজ এর ব্যাপারে পরিপূর্ণ তথ্য বের করে রেখেছেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কেননা নাজীবার ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেয়ে ছিলেন সেদিন। সেখানে মোবারক আলীর সঙ্গে স্পষ্ট পজিটিভ ম্যাচড দেখানো হয়েছে। রিপোর্ট দেখে তিনি আর সময় ব্যয় করেননি। তৎক্ষণাৎ লোক লাগিয়ে নাজীবার স্বামী আফরাজ এর ব্যাপারে তথ্য জোগাড় করেন। তাবাসসুম এর কথার জোড়ে বুঝতে পেরে ছিলেন আফরাজ আর নাজীবার সম্পর্ক গভীরে পৌঁছে গেছে। তবুও তিনি নাজীবা-কে চান। সম্পত্তির ভোগ আর লালসা মানুষ কে নিম্নে পৌঁছায়। যার পূর্ণরূপে প্রমাণ হলো দাহাব এহসান। তিনি ক্ষোভে আফরাজ এর ছবি আর ঠিকানা মেয়ের জামাইকে দিয়ে বলেন,
“এই ছেলের লা’শ দেখতে চাই। যত শীঘ্রই পারিস এর লা’শ সামনে হাজির করবি। নাহলে তোকে আবারো গুপ্ত রুমের মধ্যে বন্দি করে রেখে দেবো। মনে রাখিস মোবারক আলীকে মা’রার কাজে তুইও কিন্তু সামিল ছিলি। এই ছেলে বেঁচে থাকলে কোনো না কোনো একদিন আমাদের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে ছাড়বে। যাহ্ এখান থেকে কাজে লেগে পড়।”
জনাব লিয়াকত মাথা নেড়ে বেরিয়ে যায়। কারণ তার জীবন তার কাছে প্রিয়।
অন্যথায়, আকবর তালি বাজিয়ে আফরাজ-কে শাবাশী দিয়ে বলে,
“ভাই এবার তো বলে ফেল কাহিনী কি?”
কষ্টময় শ্বাস ফেলে আফরাজ বলতে লাগল।
“তোর তো নাজীবার বলা কথাগুলো মনে আছে। কিন্তু তাকে প্রশ্ন করার আগে তার প্রতি প্রথম কবে আমার কৌতুহল জেগেছিল জানিস? বিয়ের সাতদিন পরে, তখনো আমি আর নাজীবা এক রুমে থাকতাম না। আলাদা রুমে থেকে সামনাসামনি দেখা হতো। কাজ থেকে রাতে ফিরে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছি ছিলাম। নাজীবার রুম পেড়িয়ে যেতে গেলে তার রুম থেকে গুঙানোর শব্দ শুনে ঘাবড়ে ছিলাম। কারণ মেয়েটা একলা রুমে থাকছিল। সেই হিসেবে দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পাচ্ছে কিনা চেক করতে ভেতরে ঢুকে পড়ি। সে কম্বল জড়িয়ে রেখে ভয়ে কাঁপছিল। তার কণ্ঠস্বরও অল্প করে শোনা যাচ্ছিল। স্পষ্ট শোনতে পাচ্ছিলাম মেয়েটা গুঙিয়ে বলছিল,’দাদু প্লিজ ছেড়ে দাও না আর খেয়ো না আম্মুকে। আম্মুর শরীরে আর র’ক্ত নেই দাদু।’ হঠাৎ মেয়েটা নিজের থেকে কেঁপে,কেঁপে উঠে তার নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে কেমন একটা আচরণ প্রদর্শন করছিল। দেখতে মনে হচ্ছিল নিজের শরীর থেকে কারো থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করছিল। আমার মনোভাব সত্যও হলো। নাজীবা ঘুমের ঘোরে কেঁদে বলছিল,’দাদু আমার কামিজ ছেড়ে দাও প্লিজ। আহ্ দাদু প্লাজু ছেড়ে দাও না দাদু। নিচে হাত কেনো দিচ্ছো দাদু প্লিজ।’ মেয়েটার কান্নায় বুক ভেঙে আসছিল আমার। নিজের কাছে অসহায় লাগছিল। যদি তাকে বুকে না চেপে ধরতাম তখন তার আবারো ড্রাক নিতে হতো। কিন্তু আল্লাহর অশেষ ক্রিয়ায় আমার চোখে তার অপ্রকৃত আচরণের কারণও চলে এলো। তার ঘুমের ঘোরে করা আচরণে স্পষ্ট অনুভব করলাম মেয়েটা জঘন্য অতীত কে ভুলতে পারেনি। রাতের আঁধারে পাখির বাচ্চার মত আমার বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে গেল বিবিজান। এসব দেখে রাফিন-কে কাজে লাগিয়ে দিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল ফেনীতে হানিমুন ট্যুর দিয়ে কাজের সমাপ্তি ঘটানোর। তবে……।”
চলবে…..
(অনেক দুঃখিত সবাইকে। বাসায় হঠাৎ মেহমান আসায় ব্যস্ত ছিলাম। সবাই-কে অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। ইন শা আল্লাহ কালকে এর দ্বিতীয়াংশ দেব। আজকে অর্ধরহস্য দেওয়া হয়েছে।)