হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১| #শার্লিন_হাসান

0
1666

-“ ডিয়ার হ্যান্ডসাম শুভ্র স্যার, আমি তোমার বাবুর আম্মু হতে চাই। আচ্ছা বাবুর আম্মু হওয়ার আবদার করেছি এখন কী আমার পা’প হবে জান? কিন্তু কী করবো বলো? তুমি তো এখনো আমায় বিয়েই করোনি। তোমার প্রস্তাবের আশায় থাকতে গেলে আমায় বুড়ো হয়ে যেতে হবে। সেজন্য নিজেই চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিলাম।
এখন তোমায় আমার জামাই ওরফে বাচ্চার বাবা রুপে দেখতে চাই। একমাত্র ফিউচার বউয়ের আবদার রাখো জান।”

ইতি
তোমার ফিউচার বাবুর আম্মু

চিঠিটা পড়ে মূহুর্তে চোয়াল শক্ত করে নেয় আরজিন চৌধুরী শুভ্র।

কার এতো বড় স্পর্ধা তাকে এই ধরনের চিঠি লেখার! চিঠিটা এসেছে ফাস্ট ইয়ার থেকে। একমূহর্ত না দাঁড়িয়ে ফাস্ট ইয়ারের দিকে ছুটে আরজিন চৌধুরী শুভ্র।
তখন ফাস্ট ইয়ারে ফিজিক্স ক্লাস হচ্ছে। প্রিন্সিপাল স্যারকে এভাবে আসতে দেখে ক্লাসে থাকা টিচার কিছুটা আন্দাজ করে। হয়ত কোন ভুল হয়েছে। আরজিন শুভ্র রেগেছে মানে এখন পুরো ক্লাসে একপ্রকার ঝড় যাবে। এক ধমকে সব নিরব।

আরজিন শুভ্র ক্লাসে প্রবেশ করতে সবাই দাঁড়িয়ে সন্মান জানায়। আরজিন ক্লাসে চোখ ভোলায়। কণ্ঠস্বর কিছুটা স্বাভাবিক রেখে বলে,

-“কেউ একজন আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলে আমার কাছে। সেই মহামান্য ব্যক্তি নিজ থেকে দাঁড়িয়ে মুখটা দর্শন দাও আমায়।”

সবাই এদিকওদিক তাকাচ্ছে। তখন সবার মাঝ থেকে সেরিন দাঁড়ায়। আরজিন তাকে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সেরিনের টেবিল বরাবর এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-“তাহলে তুমি আমায় আবেদন পত্র পাঠিয়েছো?”

‘হ্যাঁ’ বোধকে মাথা নাড়ায় সেরিন। কিন্তু বুঝতে পারছে না আবেদনপত্র পেয়ে কেউ এভাবে ছুটে আসে? সাধারণ ব্যপার। সেরিনের ছুটি লাগবে সেজন্য আবেদন পত্র লিখেছে। এই প্রিন্সিপালের রুলসের শেষ নেই কলেজে। এতো,এতো রুলস মনে হয় না অন্য কোন কলেজে আছে। শুধু তার ভাইয়ার জন্য এই কলেজে এডমিশন নিয়েছে নাহয় এতো রুলস, ধমকাধমকি হ্যানত্যান এসবে সেরিন কোন কালে ছিলো না আর না থাকতে চেয়েছে।

তখন শুভ্র বলে,

-“দপ্তরি এসে যখন বলবে তখন তুমি আমার রুমে যাবে।”

শুভ্র প্রস্থান করতে সেরিন বসে পড়ে। মনের মধ্যে ভয় জোকে বসেছে। সাধারণ একটা আবেদনপত্রর জন্য এতো কাহিনী? একবারে ভালো হয়েছে আরো দাও রুলস। ভাবনা চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ক্লাসে মনোযোগ আনার চেষ্টা করে সেরিন।

পরপর দু’টো ক্লাস শেষ হতে একজন দপ্তরি আসে। সেরিন ও অনুমতি নিয়ে দপ্তরির পেছনে,পেছনে যায়। আরজিনের রুমের সামনে আসতে দপ্তরি চলে যায়। সেরিন দরজায় দাঁড়িয়ে বলে,

-মে আই কাম ইন স্যার?

শুভ্র হাতের পেপার থেকে নজর সরিয়ে অনুমতি দেয় ভেতরে আসার। সেরিন তখন বলে,

– “কোন প্রয়োজন স্যার?”

-“আবেদন পত্রের জায়গায় প্রেমপত্র লিখতে শিখে গেছো দেখছি। বাংলা ম্যামকে বলবো আবেদন পত্র কোনটা আর প্রেমপত্র কোনটা সেটার পার্থক্য বুঝাতে?”

-“প্রেমপত্র?”

-“আমায় জিজ্ঞেস করছো?”

-হ্যাঁ আপনাকেই জিজ্ঞেস করছি।”

-“কী জেনো নাম তোমার?”

-“সেরিন পাটওয়ারী মিশাত।”

-“মাহির বোন?”

-“হ্যাঁ,হ্যাঁ।”

-“বেয়াদব মেয়ে পারিবারিক শিক্ষার বড্ড অভাব তোমার। আমি তোমার কে হই ভুলে গেছো? কত বড় দুঃসাহস তুমি দেখিয়েছো যা তোমার কল্পনার বাইরে।আমার ডায়েরিতে একবার যে স্টুডেন্ট এর নাম উঠে তার অবস্থা এক্সাম অব্দি রফাদফা করে দেই।”

ধমক দিয়ে বলে আরজিন চৌধুরী শুভ্র। সেরিন কিছুটা কেঁপে উঠে।

কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
-“ক..কী দুঃসাহস দেখিয়েছি স্যার?”

-“আরে তোমার মাথায় ব্রেইন আছে তো? আমার মনে হয় তোমার ব্রেইন মাথায় না হাঁটুতে। আর মাথায় যেটা আছে সেটা হলো পঁচা আলু।”

সেরিন কিছু বলেনা। শুভ্র কড়া গলায় বলে,
-“আমার ডায়েরিতে তোমার নামটা উঠে গেছে সেরিন পাটওয়ারী। এবার কত ধানে কত চাল টের পাবে। যেই বেয়াদবি তুমি করেছো তোমার বাবার কাছে কমপ্লেন না দিয়েছি।”

-“আরে ভাই এমন ভ্যাঁ, ভ্যাঁ না করে ক্লিয়ার করে বল কী করেছি আমি। সেই কখন থেকে দুঃসাহস, ব্রেইন নাই যা তা বলেই যাচ্ছিস। তোর আছেনি ব্রেইন? দু’দিন পর পর নতুন,নতুন রুলস বের করে ভাষন দেস। কোন কলেজে পিটি করায়? একমাত্র তোর বলদমার্কা আইডিয়া আর বলদ মার্কা কলেজেই এসব সম্ভব। তাও হতো কিন্তু কড়া রোদে মাঠের বসিয়ে রেখে যে ভাষণ গুলো ডেইলি দেছ ওগুলোর জন্যও হাজারটা অভিশাপ তোকে দান করি। তাও দেখ কাজে লাগে না। আস্ত মডুলাস। বাপের ক্ষমতা দেখে প্রিন্সিপাল হয়েছিস নাহলে তোর মতো পাগলকে প্রিন্সিপাল কেন কলেজ গেটের সামনে ভিক্ষার থালা নিয়ে বসার অনুমতি কেউ দিতো না।”

মনে, মনে যত ক্ষোভ আছে শুভ্রর প্রতি সব তুলে নিয়েছে সেরিন। এসব কথা একবার মুখ ফসকে বাইরে বের হলে এই কলেজে জায়গা তো হবে না। আজিমপুরের কবরস্থানেও না।

তখন শুভ্র ধমকে বলে,
-“যাও ক্লাসে যাও। শিক্ষাদীক্ষা ভালোভাবে গ্রহণ করে আমার কলেজে পা রাখবে। একসপ্তাহ তোমার কলজের আশে-পাশে আসা নিষেধ। ভাগ্য ভালো টিসি দিয়ে বের করে দেইনি।”

সেরিন আর কথা বাড়ায়নি। রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা দ্বিতীয় ভবনের থার্ড ফ্লোরে যায়। লাস্ট ক্লাসটা কোনরকম করে। ছুটি হতে তার বেস্টফ্রেন্ড নিশাতের সাথে বেড়িয়ে আসে। ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে বসে দু’জন। একটু পর সেরিনের ভাই, নিশাতের বয়ফ্রেন্ড সাফিন পাটওয়ারী মাহি আসবে। তাঁদের দু’জনকে পিক করে নিয়ে যেতে। সেরিন কিছুটা মন মরা হয়ে বসে আছে।

মাহি গাড়ী নিয়ে কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তখন আবার শুভ্র আসে। মাহিকে দেখে সেও গাড়ীতে উঠে বসে। আজকে মাহিদের বাসায় যাবে। তাঁর বাবা মা, জেঠু,জেঠিমা বাকী সদস্যরাও আজকে গিয়েছে। তাঁদের ইনভাইট ছিলো। মাহি গাড়ী স্টার্ট দিয়ে শুভ্রদের বাড়ীর গেটের সামনে এনে থামায়। সেরিনের জন্য অপেক্ষা করছে সে।
শুভ্র ফোন স্ক্রোল করে।
তাঁদের বাড়ী আর কলেজ রাস্তার এপাশ আর ওপাশ। কলেজের চত্বর শেষে তাঁদের বাড়ীর চত্বর শুরু।
নিরবতা বজায় রেখে মাহি বলে,
-“দিনকাল কেমন যাচ্ছে শুভ্র?”

-“যেমন যাওয়ার।খুব প্রেশারে নিজেও আছি প্লাস স্টুডেন্টদের ও দিচ্ছি। কলেজটা তো বরবাদ হয়ে যাচ্ছিলো। এখনো প্রচুর স্টুডেন্ট আমায় গা’লি দেয় আমার এসব আউলা ঝাউলা রুলসের জন্য।”

-“আসলেই আউলা ঝাউলা মার্কা রুলস তোর।”

তখন সেরিন পানির বোতল নিয়ে গাড়ীতে বসে। নিশাত ও তার পাশের সীটে বসে। আরজিন যে গাড়ীতে বসে আছে সেসব তাদের খেয়াল নেই। সেরিনের মেজাজ বিগড়ে আছে। নিশান আরজিনের কথা তোলার সাহস পাচ্ছে না। তবুও বলে,
-“সেরিন আরজিন চৌধুরী শুভ্র স্যার আজকে তোকে কেনো ডেকেছে?”

-“শা’লা তার নিজের আছেনি ব্রেইন? আবার আসে আমায় বলতে। কথা ক্লিয়ার ভাবে না বলে আমার পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বা’লের একটা কলেজ। ভাগ্যিস তার বাপ এমপি, তাদের কলেজ নাহলে একে কলেজের প্রিন্সিপাল কেন পাগ’ল মনে করেও কেউ কলেজ গেটে ভিক্ষা করার জন্য বসতে দিতো না। দেখনা দুইদিন পর পর কড়া রোদে বসিয়ে রেখে চুলের ভাষণ দেয়। মানুষ অসুস্থ থাকতে পারে,পারিপার্শ্বিক প্রব্লেম থাকতে পারে। কল দিয়ে বললে ছুটি দেওয়া যায় না? আবেদন পত্র লাগবে তাও তার কাছে আবেদন! কত ঢং দেখলাম। শুধু সাফিনের জন্য নাহলে এসব কলেজে সেরিন পদধূলি ও দেয়না।”

-“দেখবি সাফিন আবার ওই মাথামোটা স্যারের কাছে সব লাগিয়েও দিয়েছে। সাফিন কোন কথা বাইরে গেলে খবর আছে। সেরিন ঠিকই বলেছে। ওই প্রিন্সিপালের মাথায় সমস্যা আছে।”

-“সমস্যা মানে পুরাই সমস্যা। ওনার নাম আরজিন না আস্ত একটা জিন।”

তখন আরজিন গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“হ্যাঁ,হ্যাঁ আমি জিন। আর তুমি হলে পেত্নী।”

আরজিনের কন্ঠ শোনে সেরিন বলে,
-“ভাই সত্যি মনে হয় প্রিন্সিবা’ল একটা জিন। দেখ তার নামে বদনাম করছি তো তার জিন তার হয়ে কথা বলছে। আল্লাহ একে কবিরাজ দেখানো উচিত। নাহলে বাকী দুই বছরে আমাদের লা’*শ বানিয়ে দিবে।”

-“মাহি গাড়ীটা থামা তো।”

শুভ্রর কথায় মাহিম ব্রেক কষে। সেরিন আর নিশাত দু’জন দু’জনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। তখন নিশাত বলে,
-“আয় গাড়ী থেকে নেমে যাই। আসলেই জ্বী’ন আছে।”

তখন সেরিন বলে,

-“না,না জ্বী’নকে আমি ভয় পাবো নাকী? দোয়া দরুদ পড়লে জিন চলে যাবে।”

-“ওটা হাওয়ায় ভাসা জিন না আরজিন। আরজিন চৌধুরী শুভ্র।একবারে স্ব শরীরে উপস্থিত এখানে। কথা বলার সময় তো হুঁশ থাকে না দুজনের। আমার কলেজ,আমার নামে এতো,এতো বদনাম। একসপ্তাহ না দুইমাস কলেজের চত্বরের আসেপাশে দেখলে ঠ্যাং ভে’ঙে দেবো।”

-“এখন তো আপনি আমার ভাইয়ার গেস্ট। প্রিন্সিপাল না। আপনার কলেজে বসে আপনার নামে কিছু বললে তখন নাহয় একশন নিতেন। এখন তো আমরা কলেজের বাইরে প্রিন্সিপালকে নিয়ে কথা বলছি। চাইলে আপনিও আমাদের সাথে যোগ দিয়ে তার নামে কিছু বলতে পারেন।”

-“আমার বয়ে গেছে নিজের নামে নিজে বলতে।”

-“তাহলে চুপচাপ শুনুন আর আমাদের বলতে দিন।”

-“নিজের নামে বদনাম নিজে বসে,বসে শোনবো?”

-“সেটা আপনার ইচ্ছা।”

তখন সাফিন বলে,
-“আসল ঘটনাটা কেউ আমায় খুলে বলবি? কী নিয়ে এতো বকা-ঝকা?”

-“আসল ঘটনাটা আমি জানলে তো বলবো ভাইয়া। শুভ্র স্যার আমায় কী জন্য বকা-ঝকা করেছে জানি না। আমি ছুটির জন্য আবেদনপত্র লিখেছি আর উনি কীসব প্রেমপত্রের কথা বলছে।”

-“ছিঃ বন্ধু ছিঃ! আমার বোনের আবেদনপত্রকে তুই প্রেমপত্র বানিয়ে দিলি?”

-“মাহি ওটা আবেদনপত্র হলে আমি আবেদনপত্রই বলতাম। তোর বোনের জামাই দরকার সেজন্য আমায় প্রেমপত্র দিয়ে ডিস্টার্ব করছে।”

-“বয়ে গেছে আমার আধবুড়ো লোককে ডিস্টার্ব করতে। আমার ও বাপ ভাই,পার্সোনাল লোক আছে। সেরিন কাউকে প্রেমপত্র দেয়না। উল্টো ছেলেরা তাকে দেয়।”

-“এসবের কিছুই আমি জানতে চাইনি। মুখটা বন্ধ রাখো। সব কথায় ঝড়ের গতিতে উত্তর দিতে হয়না। মাঝেমধ্যে চুপ থাকতে হয়। ধৈর্য তো নাই মনে হয় আর না আছে শালিনতা। কথায়,কথায় উত্তর দেওয়া লাগে।”

সেরিনকে ধমক দিয়ে বলে আরজিন। সেরিন নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো ধমকা ধমকি তার পছন্দ না। কিন্তু শুভ্র তাকে ধমকের উপরেই রাখছে।

#চলবে

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১|
#শার্লিন_হাসান

(টোটাল শব্দসংখ্যা:১৩৬০+)

( আসসালামু আলাইকুম। নতুন চরিত্র নিয়ে নতুন কিছু সাজানোর চেষ্টা। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পের নাম মনে রাখবেন তাহলে পরবর্তী পার্ট পেতে সুবিধা হবে। আরজিন চরিত্রটা অনেকটা বাস্তবে কোন একজনের চরিত্র থেকে নেওয়া।❤️)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here