#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১২|
#শার্লিন_হাসান
আর্থর রুমে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে শুভ্র। আর্থর সেদিকে খেয়াল নেই। আর যাই হোক শশীকে প্রয়োজনে পালিয়ে নিয়ে আসবে। তবুও অক্ষরের হাতে দিবে না। শুভ্রর তো সেই রাইট নেই। সেরিনের হাত ধরায় একবার দিলো চ’ড় এবার পালিয়ে যাওয়ার জন্য কোলে তুলে দৌড় দিতে গেলে গলাটাই চেপে ধরবে। এমনিতে মেয়েটা বেশ ঝগড়ুটে। শুভ্রর আপাতত মাথা কাজ করছে না। তার ভাইয়ের চিন্তা নেই অথচ তার যত চিন্তা। শুভ্র সবসময় মানুষকে চিন্তায় রাখতে পছন্দ করে আর নিজে ফ্রেশ। বাট এই অক্ষরের জন্য পুরো উল্টে গেলো নিয়ম। তারউপর চিঠি দাতাকে ধরতে পারলো না।
আর্থর থেকে আর পরামর্শ নেয়নি শুভ্র। সোজা রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবে। কী জানি কী হয়? আচ্ছা অক্ষর এখন বিডি না আসলে হয়না? শুভ্র ভাবছে তার চাচ্চুকে দিয়ে পাওয়ারী বাড়ীতে প্রস্তাব পাঠাবে। হিতাহিত এটাই মাথা আসলো। শুভ্র চটজলদি তার চাচ্চুর রুমে চলে যায়। শুভ্রকে দেখে আয়মান চৌধুরী হাসেন। ডেকে তার পাশে বসিয়ে বলেন,
‘আজকাল চিন্তিত লাগছে। কী ব্যপার শুভ্র?’
‘ওই চাচ্চু! তুমি আগামী কালকে একটা কাজ করে দিতে পারবে?’
‘কী কাজ?’
‘পাওয়ারী বাড়িতে যাবে। আমার বাবুর আম্মুকে আমার বাড়ীতে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিতে।’
‘মানে?’
‘সেরিন পাটওয়ারীর বিয়ের জন্য। বলবে শুভ্র তাকে বিয়ে করতে চায় ফ্যামিলিগত ভাবে।’
‘ওনাদের মেয়ে ছোট এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে না।’
‘ওর এইজ তো আঠারো। আচ্ছা সমস্যা নেই পড়াশোনা সব কন্টিনিউ করবে বিয়ের পর। আমি কোন চাপ দেবো না।….
‘বাবুর আম্মুকে ও প্রেগন্যান্ট বানাবে না এতো তাড়াতাড়ি। এটা বাদ রাখলে কেন? বলে দাও!’
শুভ্রর কথায় পোড়ন কেটে আর্থ বলে। শুভ্র লজ্জায় দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। আর্থকে মনে,মনে কয়টা গা’লি দান করে। আর্থ হেলেদুলে হেঁটে এসে তাঁদের দু’জনের মাঝখানে বসে পড়ে। দু’জনের কাঁধে দুই হাত রেখে বলে,
‘শুভ্র বাবু এখন বিয়ে করবে। তার বউ বড় হবে,প্রাইমারি পাশ করলে তখন বউ হওয়ার উপযুক্ত হবে। এখন তেমন কোন চাপ কিছুই দিবে না। এই আরকী….’
‘আমাকে না পচালে হয় না তোর? আচ্ছা তুই যেটা বলেছিস এটাও ঠিক আছে। করবো না বাসর! সমস্যা কী?’
‘আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো তুমি ভাইয়া? চাচ্চুর সামনে এসবে বাসরের কথা বলছো।’
আর্থর কথায় শুভ্র দাঁড়িয়ে মাথায় কয়টা থাপ্পর লাগায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘তোর সবসময় ফান না করলে হয়না? আমি সিরিয়াস! যাহ আমারটা আমি ঠিকই নিয়ে আসবো দেখবি শেষসময়ে তোরটা নিয়ে টানাটানি হবে।’
‘গু’লি মেরে খুলি উড়িয়ে দিলে কী হবে?’
‘চুপ থাক চাপাবাজ।’
শুভ্র প্রস্থান করতে আর্থ আর আয়মান চৌধুরী হেঁসে উঠে। আয়মান চৌধুরী আর্থর দিকে তাকিয়ে বলেন,
‘না আগামী কালকেই প্রস্তাব পাঠাচ্ছি।’
‘তাহলে আমার টাও নিয়ে যাও। দুই ভাই একসাথে বিয়ে করবো।’
*********
কলম আঙুলের ফাঁকে নিয়ে ঘুরাচ্ছে আর ঠোঁট কামড়ে ভাবছে সেরিন। শশী বেঁচে গেলেও সে তো বাঁচতে পারবে না তার ফুফির থেকে। নাহ! এমনিতে অনেক ধরা খেয়েছে আর খেতে চায়না সেরিন। টিসি নিয়ে ঢাকায় চলে যাবে। সেখানে তার আন্টির বাসায় থাকবে অন্য কলেজে এডমিশন নিয়ে নিবে। সেখান থেকে গানের একটা প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হবে। রিহার্সেল হবে গান! বিন্দাস লাইফ কাটবে।
এমনিতেও এখানে থাকতে না সেরিন। শুধু তার ভাই আর চাচ্চুর জন্য। তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এমপির কলেজ। তারউপর শুভ্র!
সেরিন তার বাবা সিহান পাটওয়ারীর কাছে যায়। তার বাবা তখন বই পড়ছিলো। সেরিনকে দেখে বই রেখে দেন সিহান পাটওয়ারী। মৌনতা বজায় রেখে সেরিন বলে,
‘বাবা আমি টিসি নিয়ে নিতে চাই। আন্টির কাছে চলে যাবো। পড়াশোনার পাশাপাশি গান ও কভার করবো। এখানে আমার কিছুই হচ্ছে না।’
‘তোমার যেটা ভালো মনে হয়। আমি চাই আমার সেরিন একদিন অনেক বড় হবে। হাতে মাইক ধরে গান গাইবে। তার অনেক ভক্ত থাকবে। আমি তোমার গান গাওয়াটা সাপোর্ট করি মা। আল্লাহ তোমায় এই গুনটা দান করেছে যেটা সবাইকে দেন না।’
‘ধন্যবাদ বাবাই! লাভিউ, তুমি আমায় এতো সহজে বুঝো।’
সিহান পাটওয়ারী সেরিনের কপালে চুমু আঁকেন। দু গালে হাত রেখে বলেন,
‘আমার সব একদিকে আর আমার মেয়ে একদিকে। আমার মায়ের আবদার আমি পূরণ করবো না?’
সেরিন কিছুক্ষণ তার বাবার বুকে মাথা রেখে বসে থাকে। তার পরম শান্তির স্থান। তার আম্মু সাইয়ারা আসে। বাবা মেয়ের এমন আহ্লাদ দেখপ তিনি বলেন,
‘থাক আমার ছেলে আছে। আমার ছেলে আমায় ভালোবাসে মেয়েরটা লাগবে না।’
সাইয়ারা ইসলামের কথায় সিহান পাটওয়ারী হেঁসে দেয়। তখন সেরিন বলে,
‘বাবার জন্য মেয়ের একটা আলাদা টান থাকে জানো না? কারণ বাবারা তার মেয়েকে ‘মা’ বলে ডাকে। ডাকটায় অন্যরকম ভালোবাসা প্রকাশ পায়। আমি আমার বাবাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি এটা সবাই জানে। সো তুমি জেলার্স হলেও আমি আমার বাবাকেই বেশী ভালোবাাবো।’
‘হয়েছে আমার বুঝদার মেয়ে। বাপের দলেই থাকিস। আমার ছেলে আছে আমার জন্য।’
‘যাও তেমার আদরের ছেলের কাছে।’
মা মেয়ের এমন দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া সিহান পাটওয়ারী বেশ উপভোগ করেন।
*******
পরের দিন আরো চার চারটা চিঠি আসে শুভ্রর নামে। চিঠি পেয়ে শুভ্র বেশ খুশি। তার টেবিলের উপরে! সিসি ক্যামেরায় এবার তো আসল চিঠি দাতা ধরা খাবেই খাবে। শুভ্র তড়িঘড়ি চিঠি খোলে। প্রথমটায় লেখা,
‘বাবুর পাপা’ বাবুর মাম্মাম আর বলবে না তাকে বাবুর আম্মু বানাতে। সে অভিমান করেছে বাবুর পাপার উপর। কেন ভাই? আমি কী তোর খারাপ চাই? আচ্ছা আমি কী তোর একটা কিডনি চেয়েছি? চাইনি! শুধু বাবুর আম্মু হওয়ার আবদার করেছি।’
শুভ্র চিঠি পড়ে হাসে। দ্যান দ্বিতীয় চিঠিটা পড়ে,
‘ভালোবাসি বাবুর আব্বু।’
তৃতীয় চিঠিটায় লেখা,
‘বাবুর আব্বু’
‘তুমি জানতে চাওনি বলে কত না বলা কথা আড়ালেই থেকে গেছে। তুমি বুঝতে চাওনি বলে কত অনুভূতিরা মৃ’ত্যুবরণ করেছে। তুমি ‘ভালোবাসোনি’ তাই তো হৃদয় সায়রে একটা আক্ষেপ থেকে গেছে। তাই তো শুধাই, ‘আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়……’
লেখা:#শার্লিন_হাসান
চতুর্থ চিঠিটা,
‘এই মিস্টার চিঠিগুলো কী মজা মনে হয় আপনার? অ্যাম সিরিয়াস! ভালোবাসি আপনায়।’
শুভ্র চিঠিগুলো পড়ে চিন্তায় পড়ে যায়। এটা কী হলো? সে ভালোবাসে একজনকে আর এই বাবুর আম্মু তাকে। কিন্তু এটা তে সম্ভব না। বাবুর আম্মু তুমি আড়ালে রয়েছে আড়ালেই থাকো। দর্শন দিয়েও লাভ হবে না শুভ্র তোমায় গ্রহণ করবে না। অলরেডি শুভ্র একজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
শুভ্র সবগুলো চিঠি ভাজ করে রেখে দেয়। যেই চিঠিগুলো লিখেছে তার লেখা সুন্দর ভালো। গুছিয়ে লেখতে পারে। অভিমানী, চঞ্চল, গোছানো লেখা এই তিনটা কথায় তার কমপ্লিমেন্ট দেওয়া যায়।
সেরিন টিসি নিয়ে চলে যাবে কথাটা নিশাত শোনতে অবাক হয়। হুটহাট সেরিনের এমন সিদ্ধান্ত নিশাত মানতে পারছে না। মনমরা হয়ে ক্লাসগুলো করছে নিশাত। সেরিন তাকে এটা ওটা বলছে তাতেও কাজ হচ্ছে না। সেরিনের ভালোই লাগছে এই কলেজ ছেড়ে যাবে। সে আজকের ক্লাস বেশ উপভোগ করছে। আছেই বা আর কয়দিন।
সাংস্কৃতিক পরিচালনা করা ম্যামের কানেও খবর গেছে তাদের কলেজের সেরিন চলে যাবে। মেয়েটাকে তার পার্সোনালি পছন্দ ছিলো। সামনে যেহেতু তাদের জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠান আছে সেখানে সেরিন চলে যাবে। ব্যপারটা নিয়ে সোজা প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যান তিনি। শুভ্র তখন কিছু পেপার্স ঘাটাঘাটি করছিলো। সাংস্কৃতিক ম্যাম মিসেস লিয়ানাকে দেখে বলেন,
‘কোন আর্জেন্ট আছে ম্যাম?’
‘স্যার শোনলাম সেরিন পাটওয়ারী টিসি নিয়ে চলে যাবে। হয়ত আপনার কাছে আসবে দু একের ভেতর। আমি আগেই খবর পেলাম।’
#চলবে
(শুভ্রর রিয়েকশন কী হবে ভাবুন তো? বিশেষবার্তাঃ- আমার আগামী কাল থেকে ক্লাস শুরু। জানুয়ারি থেকে প্রাইভেট ও শুরু।দশদিন পর এক্সাম ও শুরু। সেখানে এক্সামের পড়া,ক্লাসওয়ার্ক, প্রেকটিক্যাল, প্রাইভেটের হোমওয়ার্ক ইত্যাদি,ইত্যাদি সাথে আমার নিজেরও পার্সোনাল একটা লাইফ আছে। গল্প হয়ত একদিন পর পর পাবেন। জানুয়ারি মাসটা একটু এমন হবে। এরপর থেকে আমি নিয়মিত হবো ইনশাআল্লাহ। আমার ব্যস্ত লাইফ শুরু হলে আমার পরিবারকেও সময় দিতে পারি না আমি। সেখানে ভার্চুয়াল,গল্প! অনেক পরের হিসাব।আশা করি আনার সমস্যা বুঝতে পেরেছেন। আমি আশাবাদী আপনাদের আগের মতো সাপোর্ট ভালোবাসা পাবো।❤️🩹)