#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#অন্তিম_পর্ব
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে অরিন। মনটা বড্ড খারাপ। তারও বিয়ে! হ্যাঁ তার বিয়ে। তাও ধূসর নামক লোকটির সাথে। যার সাথে দুমিনিট থাকলেই তার ঝগড়া বাদে। সে কিভাবে সারাটা জীবন থাকবে লোকটির সাথে। এটাই সে ভেবে পায় না। তবে তার আব্বু আম্মু যা ঠিক করেছে তাতেই সে খুশি। মত দিয়েছে বিয়েতে সে। ধূসরকে তার ততোটাও খারাপ লাগে না। লোকটা খারাপ নয়। ভালোই। ধূসর ছাদে উঠে দেখে অরিন দাঁড়িয়ে নিজের ভাবনায় বিভোর। অরিন কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে পাশ ফিরে চাইলো ধূসরকে দেখলো তবে কোনো প্রতিক্রিয়া করলো নাহ।
“তোমার আমাকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই তো প্রিটি গার্ল”
অষ্টাদশী চোখ তুলে তাকালো। সুদর্শন পুরুষটির সাথে চোখাচোখি হলো। অষ্টাদশী দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। পুরুষটি তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
সে তেজী কন্ঠে বলল,,,
“প্রিটি গার্ল কি হ্যাঁ?নাম আছে আমার একটা সেইটা বলে ডাকুন। আর বিয়ে! আব্বু রাজি বিধায় আমি রাজি হয়েছি না হলে আপনার মতো বিদেশী বাদুড়কে আমি বিয়ে করতাম নাহ”
মেয়েটি উল্টো ঘুরে হাঁটা ধরলো। যার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাসলো ধূসর । রমনীকে রাগলে একটু বেশিই সুন্দর লাগে। তার জন্যই ধূসর বারবার তাকে এটা ওটা বলে রাগিয়ে দেয়।
“বোম্বায় মরিচ তোমাকে রাগলে আসলেই অনেক প্রিটি লাগে।”
অরিন সোজা নিচে নামলো। অনামিকা ইসলাম তাকে দেখে কাছে ডাকলেন। অরিন ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেলো। অনামিকা ইসলাম ইশারায় পাশে বসতে বললো। অরিন পাশে বসতেই অনামিকা ইসলাম বললেন,,,
“অরিন মা তুই তো শুনেছিস সব। তোর কি বিয়েতে মত আছে?”
“ফুপি তোমরা যা করবে তা আমার ভালোর জন্যই করবে। যেখানে সবাই রাজি সেখানে না বলার কোনো প্রশ্নই উঠছে না”
“আলহামদুলিল্লাহ। ছোটখাটো আয়োজন করে শুক্রবারেই তোদের বিয়েটা হয়ে যাক তাহলে। এ কদিন দুজন দু’জনকে চিনেও নে কিছুটা”
অরিন সম্মতি জানায়। অরিন নিজের রুমে চলে আসে। ফোন বাজছে অরিনের। রাহিয়া কল করেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে কলটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে রাহিয়া বলে উঠলো,,,
“কি রে নতুন বউ দেখলি তো সেই ধূসর ভাইয়ের সঙ্গেই তোর বিয়ে হচ্ছে। আমি যখন বলেছিলাম তখন তো কত কথা বললি”
“ভাগ্যে ছিলো সে আমার তাই তাকে পাচ্ছি। আমি ভাগ্যে খুব করে বিশ্বাসী। আল্লাহ তায়ালা আমায় তার জন্য তৈরি করেছেন তাই আমি তার হচ্ছি বুঝেছিস?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ খুব বুঝেছি। তা তুমি এতো বুঝদার কবে থেকে হলে ধূসর ভাইয়ার বোম্বায় মরিচ?”
“রাহিয়া এখন তুই শুরু করিস না দয়া করে। এমনিতেও মনটা খারাপ। নিজ বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে। নতুন জায়গায় কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিবো কে জানে!”
“আচ্ছা কল কাট জাহিন ভাইয়া গ্রুপ কল করেছে সেইটা রিসিভ কর”
অরিন সম্মতি জানিয়ে কল কেটে গ্রুপ কলে যোগ দেয়। সবাই এটা ওটা বলে অরিনকে বড্ড জ্বালাচ্ছে। না পেরে সে কল কেটে দেয়। অরিন ধপাশ করে শুয়ে পরে। অন্যদিকে সবাই অরিনকে নিয়ে বেশ হাসাহাসি করলো। মেয়েটাকে জ্বালাতে তাদের ভালোই লাগছিলো। অরিনের মাথায় হাজার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে কি আদেও পারবে ধূসরের সাথে মানিয়ে নিতে। সে বড় হয়েছে দেশে গ্রামের মাটিতে আর ধূসর সে তো বিদেশে বড় হয়েছে। আচ্ছা আদেও ধূসর কি রাজি বিয়েতে?
–
গোধূলি রাঙা বিকাল। অরিন আর ধূসর বের হয়েছে ঘুরতে। মূলত তাদের জোড় করে পাঠানো হয়েছে এক কথায়! দু’জন ভ্যানে চড়ে মেলায় আসলো প্রথমে। মেলাটা ঘুরলো দু’জন তবে একটা আশ্চর্যের কথা হচ্ছে আজকে তাদের ঝগড়া হয়নি। এখানে আসার আগেও হয়নি, এখনও হচ্ছে নাহ। হুট করে ধূসর তার হাত ধরে টান দেয়। অরিন হকচকিয়ে যায়। ধূসর তাকে নিয়ে একটা চুড়ির দোকানে এসেছে। ধূসর এক সেট নীল রঙা চুড়ি হাতে নিয়ে দেখলো প্রথমে অতঃপর অরিনের বাম হাতটিতে চুড়ি গুলো পরিয়ে দিলো। অরিন অবাক চোখে দেখছে ধূসরকে। ধূসরকে আগে সে এমন রূপে কখনো দেখেনি।
“কি দেখছো তুমি এইভাবে বোম্বায় মরিচ?”
“আপনাকে আজকে আপনাকে একটু অন্যরকম লাগছে! কি হয়েছে কি আপনার?”
“ও তুমি বুঝবে না। ঝগড়া বাদ দিয়ে প্রেমে পরো আগে তারপর বুঝবে। তবে আমার প্রেমেই পরো কিন্তু বোম্বায় মরিচ!”
“প্রেমে তাও আপনার স্বপ্ন দেখুন”
“পরবে তো তুমি অবশ্যই। ভীষণ ভালোবাসবে আমায় দেখে নিও”
অরিন কথা বাড়ালো না। ধূসরের বলা কথাটা সত্য। বিয়ে যখন হবে তখন অবশ্যই সে ভালোবাসবে ধূসরকে। তবে ধূসর কি তাকে পছন্দ করে। ততক্ষণে ধূসর চুড়ির দাম পরিশোধ করে তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চলতে শুরু করেছে। অরিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে ধূসরকে। এই ধূসর তার বড্ড অচেনা। ধূসর মৃদু হেসে শুধায়,,
“এভাবে তাকিয়ে থেকো না বোম্বায় মরিচ প্রেমে পরে যাবে তো”
অরিন দ্রুত চোখ সরালো। দু’জন হাঁটছে পাশাপাশি তবে কারো সাথে কেউ কথা বলছে না। অরিন নিরবতা ভেঙে বলল,,
“আপনি কি আমায় পছন্দ করেন বিদেশী বাদুড়?”
ধূসর তাকালো অরিনের দিকে। অরিন চোখ সরিয়ে নিলো। ধূসর অরিনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে শুধালো,,“আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে জানি নাহ। এতো টুকু জানি তোমায় ভালো লাগে। তোমার রাগান্বিত চেহারা দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। জীবনে কম মেয়ে দেখিনি আমি তবে তুমি আলাদা ভীষণ আলাদা। এর জন্যই হয়তো তোমার প্রতি অনুভূতি জন্মেছে আমার”
অরিন নিরবে শুনে গেলো। ধূসর তাকে পছন্দ করে! কিন্তু কিভাবে। সে তো কখনো ধূসরের সাথে ঠিকমতো কথাই বলেনি। সেই ধূসর তাকে ভালোবাসে। এটাও সম্ভব। সে আচমকা প্রশ্ন করেই বসলো,,,
“কিন্তু কিভাবে সম্ভব আপনার সাথে তো আমি ভালো মতো কথাও বলেনি শুধু ঝগড়াই করেছি”
“সম্ভব বোম্বায় মরিচ। বলতে গেলে তোমার ঝগড়ার প্রেমেই পরেছি আমি। এগুলো তোমার ছোট মাথায় ঢুকবে নাহ বাদ দাও”
–
দু বছর পার হয়েছে। সময় কিভাবে যায় বলা যায় না। অরিন, ধূসর, রাহিয়া, জাহিন, রাফা, মিহান সবাই ট্রেনে করে যাচ্ছে তাদের গ্রামে। সবাই হাসি ঠাট্টা করছে। জাহিন রাহিয়ার বিয়ে হয়েছে ছ’মাস হলো। সবাই সুখে আছে। হ্যাঁ ধূসর অরিন ও সুখে আছে। তাদের গন্তব্যে এসে ট্রেন থামলো। সবাই ধীরে ধীরে ট্রেন থেকে নামলো। কুয়াশা ঢাকা চারপাশ। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়। ধূসর একটা চাদর অরিনকে পরিয়ে দিয়ে বলে,,
“কি করো বলো তো! এই ঠান্ডায় কিছু না জড়িয়ে কেনো নেমেছো?”
“এই যে বিদেশী বাদুড় আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আমি এই গ্রামের মেয়ে। আমার এসবে অভ্যাস আছে। আপনি বরং আরো একটা সোয়েটার পরে নিন। আপনি যা শীতকাতুরে লোক”
ধূসর অরিনের কানে কানে বলে,,,“তোমায় জড়িয়ে ধরলে আর সোয়েটার লাগবে না বোম্বায় মরিচ।”
অরিন ধূসরের বুকে থাপ্পড় মেরে বলল,,
“আপনি জীবনেও ভালো হবেন না? এখনো বোম্বায় মরিচ বলে ডাকতে হবে?”
“তুমি আমার সব বোম্বায় মরিচ। তোমাকে আমি সব নামে ডাকবো। তার অধিকার কিন্তু দুবছর আগেই পেয়ে গিয়েছি আমি”
মিহান এগিয়ে এসে বলে,,,“কি গো শালা শালি তোমরা এতো ফিসফিস করছো কেনো? আমাদের ও বলো আমরাও শুনি”
ধূসর হেসে বলে,,,“তেমন কিছু না ভাইয়া। চলো চা খাই সবাই”
সবাই চা খেলো। এরপর সেই আগের মতো ভ্যান ঠিক করা হলো। তিন জোড়া দম্পতি তিনটা ভ্যানে উঠলো। অরিনকে একহাতে জড়িয়ে ধরলো ধূসর। অরিন শান্তিতে কাঁধে মাথা রাখলো। এই মানুষটাকে দু’বছর আগেও সে পছন্দ করতো নাহ আর এখন অনেক বেশিই ভালোবাসে। প্রথম প্রথম ধূসর তাকে অনেক বেশিই জ্বালাতো, এখন যে জ্বালায় না তা নয়। তবে এখন অরিন বুঝে ধূসর তাকে ভালোবেসেই জ্বালায়। ধীরে ধীরে সেও ভালোবেসে ফেললো ধূসর নামক পুরুষটিকে।
–
অরিন বসে আছে নিজের চিলেকোঠা রুমটায়। এখনও সেই আগের মতো রয়েছে সব। তার আম্মু সব পরিষ্কার করে রাখে। তার আঁকা ছবিগুলো ঠিক আগের মতোই আছে। আপন মনে কিছু একটা আঁকলো সে। আঁকা শেষ হতে না হতেই দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো। অরিন বুঝলো কে এসেছে। সে দরজাটা খুলে দিলো। ধূসর অরিনকে দেখে মৃদু হেসে বলে,,,
“ম্যাম আমি কি এখন এই রুমে আসতে পারি?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন কেনো আসবেন না? আপনি তো এখন এই রুমের মালিকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন আর এই রুমটা কি তাহলে। এটাতে আসার অধিকার তো আপনারও আছে তাই নয়কি?”
ধূসর ভেতরে প্রবেশ করে বলে,,,
“হ্যাঁ ম্যাম আপনি ঠিক বলেছেন এই রুমটাও আমার এবং মালকিনও। তাকে তো দু’বছর আগেই পেয়ে গিয়েছি।”
অরিন ধূসরকে তার মাত্র আঁকা ছবিটার সামনে দাঁড় করিয়ে বললো,,,“মনে আছে এই দিনটার কথা?”
“মনে কেনো থাকবে না। এইটা সেই মুহুর্ত যখন আমি তোমায় চুড়ি পরিয়ে দিচ্ছিলাম আর তুমি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে”
“হ্যাঁ আপনার মনে আছে?”
“মনে থাকবে না কেনো। এই দিনেই তো আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি তোমায় পছন্দ করি”
“হুম। শুনুন বিদেশী বাদুড় আপনি আমার রঙহীন জীবনের রঙ। আমার ক্যানভাসটাকে প্রেম রঙে রাঙিয়েছেন, আমায় ভালোবেসেছেন, আগলে রেখেছেন তার জন্য ধন্যবাদ। প্রেম রাঙানো ক্যানভাসটাতে শুধু আপনি আর আমি”
“ভালোবাসি বোম্বায় মরিচ”
অরিন মুচকি হেসে বলল,,,“আমিও ভালোবাসি আমার ছাইকে”
#সমাপ্ত
আসসালামু আলাইকুম। দুঃখিত এভাবে শেষ করে দেওয়ার জন্য। রাইটিং ব্লকে খুব ভালোভাবেই জড়িয়ে পরেছি। চারদিন ধরে এতোটুকু লিখেছি। আবারও বলছি দুঃখিত এত তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য। আবারও হয়তো কখনো আসবে আপনাদের মাঝে ধূসর অরিন। নতুন রূপে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ।