#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৯
______________________________
” হেই মায়াবতী, কি করো? ”
ফোনের ওপাশ থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘুমের মধ্যে ও ভ্রু কুঁচকালো আরুহী। কান থেকে ফোন সরিয়ে ছোট ছোট চোখ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত প্রায় ৩ টে বাজতে চলল।
বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে এলো তার। এমনি তেই মন মেজাজ ভালো না তার উপর এই পাগল কোথাথেকে এসে জুটলো । কিছু ক্ষন আগেই আরুশ তার রুম থেকে বকবক করে গেলো, আগে খেয়াল ছিলো না! এতোদিনে উনার প্রেম যেন উতলে পড়ছে! মনে হলেই মেজাজ চারশো বিশ হয়ে যায় আরুহীর । নিজের রাগ কন্ট্রোল করে শুয়ে মাত্রই ঘুমটা চোখে ধরা দিলো।
তার উপর এত রাতে ফোনের কর্কশ শব্দ আর তিহানের ফাউ প্যাচাল! মেজাজ টা আরোও গরম হলো!
আরুহী দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল,
” রেললাইনের পাশে ঘোড়ার ঘাস কাটি? কাটবি? কাটলে কমলাপুর রেলস্টেশনে চলে আয়, শুধু শুধু আজাইরা ফাউ প্যাচাল পারবি না। মন মেজাজ ভালো না। ”
তিহান হকচকিয়ে উঠলো,
আরুহী রেগে যাবে জানে তবে এতোটা রেগে যাবে বুঝতে পারে নি।
” আহহা রেগে যাচ্ছো কেন মায়াবতী! ”
আরুহী কপাল কুঁচকে দাঁত চেপে বলল,
” তো কি করবো? রাগ করা টা কি অস্বাভাবিক? এতো রাতে একটা মেয়ে কে ফোন দিয়ে ফাউ প্যাচাল পারছেন! মিনিমাম কমনসেন্সের ও তো একটা ব্যাপার আছে ”
” আরেএএ যার জন্য করলাম চু*রি সেই বলে চোর! ”
আরুহী শোয়া থেকে উঠে বসলো,
” মানেহ!”
” আরেএ তোমার জন্য ই তো রাগ জাগা! ”
আরুহী কপাল কুঁচকালো,
” আমি কি বলছি আপনাকে রাত জাগতে? আর কি এমন অসাধ্য সাধন করলেন যে রাত জাগা লাগলো! ”
” ওহহ হে যেটার জন্য ফোন করলাম, তুমি যে ডিলের অপেক্ষা করছিলে সেটা কাল রাত ১২ টায় হবে, আমি অবশ্য পুলিশ পাহারায় রেখেছি যারা সিভিল পোশাকে বন্দরের আশেপাশে ই আছে, আশা করি সব টা প্ল্যান মোতাবেক ই এগুবে ”
আরুহীর কুঁচকানো ভ্রু জোড়া ঠিক করে বলল,
” ওহহ আচ্ছা ”
তিহান মুখ চেপে হেঁসে বলল,
” শুধুই ওহ আচ্ছা! আর কিছু বলবে না? ”
আরুহী থেমে থেমে বলল,
” আর কি বলবো? আপনার কাজ আপনি করেছেন! ”
” একটা ধন্যবাদ ও তো এটলিস্ট দিতে পারো! ”
” ধন্যবাদ! ”
” শুধু ই ধন্যবাদ! ”
” আর কিছু? ”
তিহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” নাহ্! তোমার থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করাটাই বেকার! মাঝে মাঝে মনে হয় আমি মানুষ নই রোবটের সাথে কথা বলছি! যা হোক কিছু তথ্য কালেক্ট করেছি, তোমাকে ইমেইল করে দিচ্ছি সকালে দেখে নিও, এখন ঘুমাও ”
” হুম ”
আরুহী কান থেকে ফোন নামিয়ে এক পলক ফোনের দিকে তাকালো,
ছেলেটা নিজ থেকে ই তার কাজ গুলো করে দিচ্ছে, হেল্প করছে, না বলতেই! মন্দ না ছেলেটা, ছেলেটার চোখে মুখে আরুহী যা দেখতে পায় তা যদি সত্যি হয় তবে ভবিষ্যতে ছেলেটাকে ভীষণ কষ্ট পেতে হবে, তার পক্ষে যে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না!
দীর্ঘ শ্বাস ফেলল আরুহী ।
____________________________
আরুহী সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হলো। পরবর্তী তে ল্যাপটপে ইমেইল চেক করতে বসলো,
আরুহী যেই দিন চট্টগ্রাম আসলো সেই দিন রাতেই ডিল টা করার কথা ছিলো আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতো আরুহী, কিন্তু পা*চারকারী চক্র মনে হয় কোন ভাবে জেনে গেছে যে তাদের ডিলের ব্যাপার টা পুলিশের কান পর্যন্ত চলে গিয়েছে তাই তারা সেদিন আর ডিল করেনি আর না বন্দরে কোন জাহাজ ভিড়িয়েছে! বেশ ধুরন্ধর লোক গুলো।
হঠাৎ দরজায় কারো শব্দ শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সে দিকে,
” দরজা খোলায় আছে সুলতান, ভেতরে আসো ”
সুলতান ভেতরে ঢুকে অবাক দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকালো,
” ম্যাম আপনি কি করে বুঝলেন আমি থাকবো? ”
আরুহী ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ই হাসলো,
” তোমাকে আমি চিনি এক দুই দিন নয় সুলতান অনেক বছর! আর ভাইয়ের উপস্থিতি বুঝব না তা কি করে হয়! ”
সুলতান ছলছল দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকালো,
কেউ যে চাকর কে নিজের ভাই বলে সম্বোধন করে আজ সে প্রথম দেখলো আসলে সে আগে থেকে ই দেখে এসেছে তার কোন কিছু লাগলে মুখ ফুটে বলার আগেই আরুহী তাকে এনে দেয়, তার কোন কিছু চাইতে হয় না! মেয়েটা বেশ ভালোবাসে তাকে! এত ব্যস্ততার মধ্যে ও তার কথা ভাবে!
চোখ দুটো ভিজে উঠলো সুলতানের।
আরুহী ল্যাপটপ টা সুলতানের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বলল,
” আমি ইমেইল টা চেক করলাম আর কিছু কারেকশন ও করলাম তুমি তোমার রুমে গিয়ে দেখে নাও আর বুঝে নাও আমি ফ্রেস হয়ে আসছি, আজকে আমি আর তুমি এক সাথে বেরুবো ”
সুলতান মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো, আরুহী মুচকি হেসে ল্যাপটপ টা সুলতানের হাতে দিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকলো, সুলতান নিজের রুমে চলে গেলো।
প্রায় দশ মিনিটের মাথায় আরুহী বের হলো অ্যাশ রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়ে।
ওয়াসরুম থেকে বের হতেই চোখের সামনে দৃশ্য মান হলো রুশার ঝলমলে হাস্যোজ্জল মুখ।
” গুড মর্নিং দিভাই! ”
বলেই ব্যাগ ট্যাগ ফেলে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো আরুহী কে। হুট করে এমন হওয়াতে বেশ চমকে উঠে কোন ভাবে দেয়ালে ধরে পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো আরুহী ।
আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, এতো বড় হয়েছে মেয়ে এখনো বাচ্চা দের মতো লাফালাফি যায় নি। যদি এখন পড়ে গিয়ে হাড় গুর ভা*ঙ্গতো তখন! এই বিষয়ে কোন চিন্তা আছে নাকি মেয়েটার!
এই কথা বলতে বলতে আরুহীর নিজেকেই নিজের কাছে বে*হায়া মনে হয় কিন্তু যাকে বলে তার তো গায়েই লাগে না!
” মাত্র গোসল সেরে আসলাম আর তুই এই জীবানু ভর্তি শরীর নিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলি রুশো? আর এতো সকালে এখানে কি করিস তুই? কার সাথে এসেছিস? রাস্তায় সমস্যা হয় নি তো? সকালে নিশ্চয়ই কিছু খাস নি? বেস সাহস বেরেছে না তোর! না জানিয়ে চলে এলি! আমার ঠিকানা জানলি কি করে? ”
রুশা আরুহী কে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ালো, আশেপাশে কিছু একটা খুজে দৌড়ে গিয়ে পানির গ্লাস এনে আরুহীর সামনে ধরে বলল,
” নাও পানি খাও, আর প্রশ্ন গুলো এটু ধীরে ধীরে করলে কি হতো? আর মাঝে মাঝে জীবানু গায়ে মাখলে কিছু হয় না দি ভাই! এখানে এসেছি তোমার সাথে ঘুরতে আর একাই এসেছি! আমি কি বাচ্চা নাকি যে আমাকে কেউ নিয়ে আসবে! সকালে আমি কিছু ই খাই নি, রাস্তায় আসতে প্রবলেম ও হয় নি।
আর কি যেন বললে…
উমমমম…
কিছু একটা ভেবে,
ওহ হ্যা মনে পরেছে সাহস! সাহস তো আমার বরাবরই বেশি। আর তোমার ঠিকানা জানা লাগবে নাকি! মনের একটা টান আছে না কি বলো?
বলেই আরুহীর দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। আরুহী চোখ ছোট ছোট করে রুশার কান টেনে বলল,
” বেশি পেকে গেছো না তুমি! পাঁকা পাঁকা কথা শিখেছো!
রুশা আরুহীর কাছ থেকে কান টা ছাড়িয়ে নিয়ে কাল ডলতে ডলতে বলল,
” ওফফ দিভাই! লাগলো তো! ”
” লাগার জন্য ই তো দিলাম! ”
আরুহী মুচকি হেসে বলল,
“চল নাস্তা করবি ..”
বলেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল গুলো উঁচু করে ঝুটি করে মুখে মাস্ক আর কোমড়ে রিভলবার গুজে বেরিয়ে গেলো আরুহী আর তার পিছনে পিছনে রুশা, রুশার পরনে একটা টপস আর সাথে জিন্স।
___________
” দি ভাই! ও দিভাই! ”
” হুম বল ”
” ড্রাইভ কি তুমি করবে? ”
” না কেন?
আরুহী ভ্রু কুঁচকে রুশা দিকে তাকালো,
রুশা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
” আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ রহমত করছে ”
আরুহী তার ভ্রু জোড়া আরোও কুঁচকে বলল ,
” কেন আমি ড্রাইভ করলে সমস্যা কোথায়? আমি কি ড্রাইভ করতে পারি না নাকি? ”
রুশা ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
” ওমা আমি সে কথা কখন বললাম! তুমি ড্রাইভ করতে পারো না বললে তো পাপ হবে! তুমি তো অবশ্য ই ড্রাইভ পারো তবে সেটা জঘন্য! এতো রুডলি গাড়ি কি কেউ হাইওয়ে তে চালায়! আমার তো আত্মা কাপে! ”
আরুহী চোখ ছোট ছোট করে রুশার দিকে এক পলক তাকিয়ে পাশ ফিরে সুলতানের দিকে তাকালো,
সুলতান মুখ টিপে হাসছে।
আরুহী কিছু না বলে গাড়ির সামনের সিটে উঠে বসলো,
রুশা বসলো পিছনে। সবাই ঠিক ঠাক বসার পর সুলতান যেই না গাড়ি স্টার্ট করতে যাবে হঠাৎ হুড়মুড় করে গাড়ির ভেতরে ঢুকলো তিহান।
হঠাৎ এমন হওয়াতে লাফ দিয়ে দরজার সাথে সেটে গেলো রুশা, চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইলো তিহানের দিকে।
ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছে তবে মনে পড়ছে না কোথায় দেখেছে।
” এইই আপনি কে বলুন তো, এমন জিনের মতো কোথ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলেন! ”
তিহান ছোট ছোট চোখ করে রুশা কে এক পলক পর্যবেক্ষন করে বলল,
” তুমি কে? ”
রুশা খানিকটা ভাব নিয়ে বলল,
” আমি রুশা চৌধুরী, ডটার অফ আবরার চৌধুরী ”
তিহান ভ্রু জোড়া ঠিক করো বলল,
” ওহহ হ্যা, তাই তো এতো চেনা চেনা লাগছে, আর আমি তিহান রেহমান, তোমার রৌদসী আপুর একমাত্র দেবর ”
রুশা ভ্রু উঁচু করে বলল,
“ওহ”
আরুহী দীর্ঘ ফেলল, এই দুই বকবকানী এক সাথে হলে তো তার মাথা আজকে শেষ! রুশা যেই বকবক করতে পারে! আর তিহানের কথা তো বাদ ই দিলো!
” রুশো! ”
রুশা সামনে তাকালো,
” হুম দিভাই বলো ”
” তুই একা আসতে গেলি কেন? মিরাজ ভাই কে বললেই তো নিয়ে আসতো ”
রুশা মুখ বেঁকালো,
” হেএএহেএ, ওই হলো আর কি! ওই মাছ ব্যবসায়ী নিয়ে আসবে আমাকে! তাও আবার ঘুরতে! দিবা স্বপ্ন দেখো নাকি? ”
আরুহী মিরর দিয়ে রুশার দিকে তাকালো,
” মাছ ব্যবসায়ী? মিরাজ ভাই আবার মাছের ব্যবসা শুরু করলো কবে থেকে ? ”
” আররে এই মাছ ব্যবসা সেই মাছ ব্যবসা না, আই মিন ” সেলফিশ ” ”
আরুহী বিরবির করে বলল,
” সেলফিশ! মানে মাছের ব্যবসা! অদ্ভুত! ”
চলবে..
[ আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবেন প্লিজ! ]