#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২০
______________________________
সারাটা দিন চট্টগ্রাম শহরের বেশ কয়েকটি জায়গা দেখে, ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ৮ টা বেজে গেলো আরুহীর। রুমে এসে ডানে বামে না তাকিয়ে ই গোসলে ঢুকলো, শরীরে ধুলোবালির স্তুপ জমে আছে আর আরুহী জন্ম গত ই বেশ পরিষ্কার আর খুঁতখুঁতে স্বভাবের।
প্রায় পনেরো মিনিট পর গোসল শেষ করে চুল মুছতে মুছতে রুমে যেতেই আরুহীর ভ্রু কুঁচকে গেলো, বিরক্তি তে নাক মুখ কুঁচকে বিরবির করে বলল,
” দেখেছো খা*টাশ টার কান্ড! সারাদিন বালি দিয়ে দৌড়া দৌড়ি করে এসে এই গা ভর্তি ময়লা নিয়েই বিছানায় চার হাত পা চার দেশে দিয়ে দিব্বি ঘুমিয়ে আছে! শরীরের পুরো ময়লা টাই তো বিছানায় লেগে গেলো! ওফফ এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কি করবো ”
আরুহী রুশার কাছে গিয়ে গায়ে আলতো হাত বুলিয়ে ডাকতে লাগলো,
” রুশো! এই রুশো ”
রুশার কোন উত্তর নেই। আরুহী আরেকটু ঝুঁকে গায়ে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল,
” রুশা উঠনা বাবা! ধুলো বালিতে না তোর এলার্জি! এই ধুলো নিয়ে ঘুমালে সকালে উঠে দেখবি গা, মুখ, হাত, পা ফুলে লাল হয়ে গেছে তখন আবার কেঁদে কেঁদে আমার দোষ টা দিস না! ”
রুশা নড়েচড়ে উঠে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো,
ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলল,
” উফফ দি ভাই, ডিস্টার্ব করো না তো, এতো রাতে গোসল করব না ”
আরুহী ভ্রু কুচকে রুশার হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
” গোসল করবি না মানে? তাড়াতাড়ি উঠ ”
রুশা এবার বেশ বিরক্তির সাথে উঠে বসলো,
” দি ভাই! তোমার যন্ত্রণা ই কি ঘুমাতে ও পারব না নাকি,? আমার এতো মজার একটা ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলে! কাজ টা কি ঠিক করলে? ”
আরুহী বিরক্তি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আঙুল উচিয়ে বলল,
” এই শোন আমাকে ঠিক ভুল শিখাতে আসবি না, তাড়াতাড়ি কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে যা, গোসল করে তারপর ঘুমা, আমি কি মানা করছি! ”
রুশা কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো, রুশার অবস্থা দেখে আরুহী মুচকি হেসে রুশা কে ডাক দিয়ে বলে,
” রুশো দেখিস আবার, ওয়াসরুমে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘুমিয়ে যাস না কিন্তু! তোর তো আবার দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে অভ্যাস আছে! ‘
বলেই আরুহী হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত
সাড়ে আট’টা। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে তাই খাবারের টেনশন নেই, অগত্যাই সে সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। কিছু ক্ষনের মাঝে ই বেরিয়ে যেতে হবে।
আরুহী ফোন টা বের করে সুলতান কে একটা কল করে,
” আসসালামু আলাইকুম ম্যাম ”
” ওয়ালাইকুম সালাম, সুলতান ”
” কোন দরকার ছিল নাকি ম্যাম? ”
” হ্যা, কিছু ক্ষনের মাঝেই বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবো, তুমি রেডি হয়ে থেকো!
” আচ্ছা ম্যাম, আমি রেডি থাকব ”
” হুমম, ঠিক আছে, রাখি ”
” জি ম্যাম ”
আরুহী ল্যাপটপে কিছু ফাইল চেক করতে করতে দু ঘন্টার মতো সময় লাগলো। সব চেক করে সোফায় গা হেলিয়ে দিয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত সাড়ে দশটা বাজতে চলল।
বিছানা দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল সে, রুশা হাত পা মেলে গভীর ঘুমে মগ্ন।
হঠাৎ মনে হলো আজ সারাদিন সে আরুশ কে দেখে নি! কাল রাতে রুম থেকে যাওয়ার পর থেকে তার কোন খোঁজ খবর ই নেই! ব্যাপার কি?
প্রশ্ন গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আরুহী কাবার্ড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো।
প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যে ই একটা সাদা রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে বের হলো।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো ভালো করে খোঁপা করে মুখে মাস্ক লাগিয়ে আর মাথায় একটা ক্যাপ পরে কোমরে রিভলবার গুজলো।
দরজা টা বাইরে দিয়ে লক করে বেরিয়ে গেলো।
নিচে যেতেই দেখলো সুলতান নিচে দাঁড়িয়ে আছে পাশেই একটা বাইক দাড় করানো। আরুহী মুচকি হেসে বাইকে বসে চাবি লাগিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো, পিছনে সুলতান বসার সাথে সাথে ই বাইক চালানো শুরু করলো।
প্রায় আধ ঘন্টার মাঝে ই আরুহী বন্দরের কাছে এসে পৌঁছালো। মেইন জায়গা থেকে কিছু টা দুরে বাইক পার্ক করলো সে ।
রাত প্রায় সাড়ে এগারো টার উপর। আরুহী আর সুলতান সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ আরুহী খেয়াল করলো দুর থেকে কোন একটা আলো দেখা যাচ্ছে যা ক্রমশ কাছাকাছি আসছে। আরুহী খেয়াল করে দেখলো আলোটা আসলে একটা বিশাল জাহাজের।
সুলতান ও সেই দিকে ই তাকিয়ে আছে, বোঝার চেষ্টা করছে আসলে হচ্ছে টা কি!
জাহাজ টা ক্রমশ এগিয়ে এসে পাড়ে ভিড়ালো। হঠাৎ জাহাজ টার কাছে এসে একটা মাল বাহী ট্রাক আর দুটো প্রাইভেট কার এসে ব্রেক কষলো।
আরুহীর কেন জানি মনে হচ্ছে তারা কোন ফাঁদ পেতে রেখেছে কারণ যারা এসব ব্যবসা করে তাদের বুদ্ধি থাকে খুব ই সূক্ষ্ণ, এতো সহজে তাদের ধরা অসম্ভব।
সুলতান জাহাজের দিকে রিভলবার তাক করায় আরুহী তার হাত ধরে আঁটকে দিলো,
” উহুম এখন নয়, আমার মনে হচ্ছে ওদের মাথায় কিছু একটা চলছে , এতো সহজে তো ওরা ধরা দিবে না, তাই আরোও কিছু ক্ষন ওয়েট করবো ”
” কিন্তু ম্যাম.. ”
” কোন কিন্তু না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখো কি হয়! ”
কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করার পর হঠাৎ আরুহী বলে উঠলো,
” সুলতান!”
” জি ম্যাম? ”
” চলো, ওই মালবাহী ট্রাক টার কাছে ”
সুলতান ভ্রু কুঁচকে আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল ,
” ট্রাকের কাছে কেন ম্যাম? ”
” আমি ড্রাইভার আর তুমি হেল্পার ”
সুলতান খানিকটা সময় আরুহীর দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,
” কি বলছেন ম্যাম? এটা ভীষণ রিস্কের ”
আরুহী হাসলো,
” রিস্কের কাজ করছি আর রিস্ক নিতে ভয় পাচ্ছি ব্যাপার টা হাস্যকর না? আর কথা না বাড়িয়ে চলো ”
সুলতান আমতাআমতা করে বলল,
” ম্যাম আমরা তো জাহাজেও উঠতে পারি অযথা ট্রাকে কেন? “.
” আমার মনে হচ্ছে জাহাজে কোন একটা ঘাপলা আছে তাই ট্রাকেই যাবো ”
আরুহী আর কথা বা বাড়িয়ে ট্রাকের দিকে চলতে লাগলো,
ট্রাক টা বেশ অন্ধকারে দাড় করানো,
আরুহী গিয়ে ট্রাকটার দরজায় ধাক্কা দিলো,
উপর থেকে কেউ ভরাট কন্ঠে উত্তর দিলো,
” কন? ”
সুলতান গলা টা পরিষ্কার করে বলল,
” নিচে আসো ”
গাড়ির ভেতরে থাকা লোকটা গলা উচিয়ে জানলা দিয়ে মাথা বের করে বলল,
” আপ কন হো? ”
” তোমার মালিক পাঠিয়েছে একটা জিনিস বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ”
লোকটা দরজা খুলে লাফ দিয়ে নিচে নেমে এক পলক আরুহী আর সুলতানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” মুঝছে বাঙালা নেহি আতি হে! ”
সুলতান হাসি হাসি মুখ করে লোকটার ঘাড়ে হাত দিয়ে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় ধরে চাপ প্রয়োগ করার ফলে লোকটি সুলতানের দিকে ঢলে পড়লো। আরো সেফটির জন্য একটা ক্লো*রো*ফোম রুমালে দিয়ে লোকটার নাকে চেপে ধরলো, লোকটার হাত পা বেঁধে পাশেই একটা ঝোপের ভেতর ফেলে রেখে আরুহী আর সুলতান গাড়ির ভেতরে উঠে পড়লো। আরুহীর হাতে আপাতত লোকটার ফোন।
হঠাৎ লোকটার ফোন বেজে উঠতেই আরুহী চমকে উঠে সুলতানের দিকে তাকালো।
ফোনটা রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিলো আরুহী ,
ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,
” হেই টিট্টু ট্রাক টা নিয়ে কিছু টা পিছনে যা, আর কিছু ক্ষনের মাঝেই প্রাইবেট কারের সামনের টা ব্লাস্ট হবে, আর ব্লাস্ট হবার সাথে সাথে ই লোকেশন অনুযায়ী চলে আসবি, দেখ তোকে একটা লোকেশন পাঠিয়েছি ”
সুলতান এক পলক আরুহীর দিকে তাকিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল,
“মুঝছে বাঙালা নেহি আতি হে! ”
” উফফ তুই আমার সাথে ও নাটক করবি, আমি বলছি অন্য কারো সাথে কথা বললে এভাবে বলতে আমার সাথে না, আমি হিন্দি ভালো বুঝি না বাংলায় বল ”
” আচ্ছা ঠিক আছে পিছনে নিয়ে যাচ্ছি ”
” তোর কন্ঠ টা কেমন জানি অচেনা লাগছে! ”
” আরে ঠান্ডায় গলা বসে গেছে ”
” ওহ আচ্ছা, আর কিছু ক্ষনের মাঝেই রওনা হবো ”
” মাল কোথায়? ”
” আরে হাঁদারাম ভুলে গেলি নাকি? মাল তো এই বন্দরে না আরেকটু দুর ”
” আচ্ছা ”
বলেই ফোন টা কেটে ট্রাকটা পিছনে নিয়ে গেলো,
কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রথম প্রাইবেট কারটা ব্লাস্ট হয়ে গেলো, কালো কালো ধোঁয়ায়ে চারদিকে অন্ধকারে ছেয়ে গেলো, আরুহী লোকেশন অনুযায়ী ট্রাক চালানো শুরু করলো।
কে বলতে পারে? সামনে তার জন্য নতুন কি বিপদ অপেক্ষা করছে….
চলবে…
[ আজকের পর্বটা কেমন হ’য়েছে জানাবেন, আর একটা দুটো পর্বের পর থেকে রোমান্টিক কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবো,
হ্যাপি রিডিং.. ]