#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৫
___________
” আসতে পারি? ”
চির চেনা কন্ঠ শুনতে পেয়ে হাতের গতি কমে এলো আরুহীর। ল্যাপটপে তখন ও সে কাজ করছিলো, প্রথমে ভাবলো হয়তো ভুল শুনেছে তাই পুনরায় মনোযোগ দিয়ে ফাইল টা কমপ্লিট করছে।
” অনুমতি ছাড়াই কি প্রবেশ করবো নাকি রুহী? যদি ও আমি অনুমতি ছাড়া কারো রুমে প্রবেশ করি না তবুও তোমার রুমে তো আসতেই পারি, কজ ইউ আর মাই লিটল ডটার ”
আরুহী থমকে গেলো সাথে থমকে গেলো তার হাতের গতিও। স্ট্যাচু হয়ে বসে রইলো কতক্ষণ, কন্ঠের র্যাশ টা কাটতেই পিছনে ঘুরে তাকালো সে। চোখে চশমা আর কালো শাড়ি পড়া একটা অপূর্ব রমনী তার চোখের সামনে হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে।
আয়াত এক ভ্রু উঁচু করে মেয়ের ভাব গতি বোঝার চেষ্টা করছে।
” কি হলো ও ভাবে কি দেখছো রুহী? আজ কি খুব সুন্দর লাগছে নাকি আমায়?
আরুহী চমকের উপর চমক খাচ্ছে, এতো পরিমান অবাক হচ্ছে যে কথা গুলো ঠিক ভাবে হজম ও হচ্ছে না। চোখ বড়ো বড়ো করে শুধু তাকিয়ে ই রইলো মায়ের দিকে।
আয়াত ভেতরে ঢুকে বিছানার উপর বসে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
” এতো বড়ো হয়েছো এখনো নিজের রুম টাও গোছাতে শিখো নি? আবার তুমি বুঝি স্পেশাল ফোর্স অফিসার! যদিও আমি ও তেমন একটা গোছানো ছিলাম না, তোমার বাবা ই আমাকে সব শিখিয়েছে, আমার আচরণ যখন আয়ত্ব করেছো স্বভাব টাও আমার ব্যতিক্রম হবার উপায় কি! ”
আরুহী ভ্রু কুচকে মায়ের কথা শুনছে কথা বলতে যেন ভুলেই গেলো সে, হঠাৎ মায়ের কর্কশ কথার কথা মনে পরে মন টা বিষিয়ে উঠলো আরুহীর, আয়াত কে পাত্তা না দিয়েই আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো যেন রুমে সে ছাড়া আর কেউ ই নেই।
মেয়ের এমন আচরণে আয়াত হাসলো। সে জানতো এতো সহজে এই মেয়ে মানবে না, এই মেয়ের এতো জেদ যে সামান্য কিছু কথা বলার জন্য দেশ ছেড়েছে, কথা বলা বন্ধ করেছে, এমন কি দেশেও ফিরতে চায় নি।
অনেক তো হলো মান অভিমান আর কত! এবার না হয় মা হয়েই মেয়ের অভিমান ভাঙালো।
আয়াত গিয়ে আরুহীর সামনে দাঁড়ালো।
” কি ব্যাপার রুহী তুমি আমাকে ইগনোর করছো? ”
আরুহী শুনেও যেন শুনেনি, এক মনে ল্যাপটপ ঘেটেই যাচ্ছে।
” এতো ঘাড় ত্যাড়া কিভাবে হলে তুমি হুম? আমাকে দেখো আমি কি এতো ত্যাড়ামো করি? ”
আরুহী এক ভ্রু উঁচু করে মায়ের দিকে তাকালো,
” হাস্যকর ”
বলেই পুনরায় নিচে তাকালো।
“তুমি জানো তোমার এখন ও পুরোপুরি ম্যাচুরিটি আসে নি, বাচ্চা মেয়ে”
” তুমি জানো আমি একজন অফিসার? আর একটা টিম সামলালে দক্ষতা প্রয়োজন পরে, বুদ্ধি লাগে এগুলো বানের জলে ভেসে আসে না, আমার নাকি ম্যাচুরিটি আসে নি! আমি নাকি বাচ্চা! ”
রাগে ফোস ফোস করতে করতে কথা গুলো বলল আরুহী।
আয়াত হাসলো,
আরুহীর পাশে বসে তার কোল থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে বন্ধ করে পাশে রাখলো।
আরুহীর মুখটা আলতো হাতে ধরে বলল,
” মায়ের কথা মনে পরে না বুঝি? ”
আরুহী নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিলো,
আয়াত আরুহীকে মুখোমুখি বসিয়ে তার মুখ টা আজলে তুলে বলল,
” মায়ের কথা মনে পরে না? বলো? ”
আরুহী অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
” না ”
” এটা তো রুহীর মনের কথা না! আমি জানি আমার রুহী তার মা কে খুব ভালোবাসে, খুব মিস করে কিন্তু মা তো তার রুহী কে স্ট্রং দেখতে চায় সেটা কি তার রুহী জানে? ”
” জানার দরকার নেই ”
” রুহী কি বলতে পারবে রুহীর মা কেন রুহীর সাথে এতোদিন কথা বলে নি? ”
আরুহী ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকালো,
আয়াত মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
” কারণ রুহীর মা চাই রুহী তার মা কে ছাড়া থাকা শিখুক, রুহীর মা জানে তার আরোও আগেই ছোট্ট পরীর মান ভাঙানোর দরকার ছিল কিন্তু রুহীর মা তো তা করেনি, কারণ তার মেয়ে পরিবেশ অনুকূলে থাকতো যেমন শক্ত থাকতে পেরেছে তেমন পরিবেশ প্রতিকুলে থাকলেও যেন শক্ত থাকতে পারে, কিন্তু রুহী তো জানেই না তার মা তাকে কত ভালেবাসে, কত মিস করে! কিভাবে জানবে তার রুমে তো হাইড ক্যামেরা ছিলো, সেটা তো রুহী এতো বড়ো ফোর্স অফিসার হয়েও ধরতে পারে নি! রুহীর মা তো রুহী কে সর্বক্ষন চোখে চোখে রেখেছে, সে কখন কোথায় যায়, কি খায় সব দিকে খেয়াল রেখেছে কিন্তু তা তো রুহী জানেই না! ”
আরুহী চোখ বড়ো বড়ো করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো,
তার নাকের ডগা দিয়ে এতো কিছু হয়ে যায় আর সে টের ই পায় না।
আরুহী জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
” বাই এনি চান্স তুমি আমার পিছনে লোক লাগাও নি তো? আই মিন বডিগার্ড? ”
আয়াত মাথা দুলিয়ে হেসে বলল,
” লাগিয়েছি তো ”
” আমি বুঝতে ই পারি নি!”
” বললাম না তোমার সেই বুদ্ধি এখনো হয় নি। রুহী যে তার মায়ের জন্য মন খারাপ করে পুতুলের সাথে, চাঁদের সাথে কথা বলতো তাও কিন্তু রুহীর মা জানে ”
আরুহী কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে আয়াতের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো,
আয়াত মুচকি হেসে আরুহীর মাথা টেনে বুকে জরিয়ে ধরলো, এমন ভাবে যেন আরুহী ছুটতে না পারে।
আরুহী কিছু ক্ষন ছোটার জন্য চেষ্টা করে পরে স্থির হয়ে মায়ের বুকে সেটে রইলো,
মিনমিনে কন্ঠে বলল,
” তুমি জানো তুমি খুব খারাপ মা ”
আয়াত আরুহী কে আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল,
” হুম জানি তো, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মা ”
” খুব খারাপ! ”
” হুম রুহীর মা খুব খারাপ ”
বেশ অনেকক্ষণ পরে আরুহী মুখ তুলে তার মায়ের দিকে তাকালো,
” আম্মু জানো? ”
” না তো জানি না ”
আরুহী ফিক করে হেসে দিলো, ছোট বেলায় ও আরুহী যখন আয়াত কে বলতো আম্মু জানো! তখন আয়াত একই কথা বলতো,
আরুহী মিটমিট করে হেসে বলল,
” না বললে জানবে কি করে? ”
আয়াত মুচকি হেসে বলল,
” সেটা তো আমার ও কথা না বললে জানবো কি করে? ”
আরুহী মুখ টা সিরিয়াস ভাব করে বলল,
” আমি না একটা বিষয়ে বেশ কনফিউজড আম্মু ”
” কোনটা? আরুশের বিষয়ে? ”
আরুহী চমকে তাকালে মায়ের দিকে, আজ পর্যন্ত সব কথায় যেন তার আগে তার মা বুঝে ফেলে,
” তুমি কি করে বুঝলে? আমি এই বিষয়ে কথা বলবো? ”
” আমি তোমার মা, তুমি আমার মা নও তুমি আমার মেয়ে, তাই তোমার মনে কখন কি চলে তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারি ”
” হুমম ”
” আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করব না কি হয়েছে, তবে এই টুকু বলতে পারি, যা করবে ভেবে করবে, যে ভুল করে তাকে ক্ষমা করা যায় তবে যে অন্যায় করে তাকে না, যদি তুমি একান্ত ই কিছু চাও আর সেটা তোমাকে তোমার সঠিক মূল্য না দেয় কিংবা আগের করা ভুলের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চায় তবে তুমি বুদ্ধি খাটিয়ে ওকে শাস্তি দিবে, আমি বলি নি তাকে তুমি ক্ষমা করো তবে তোমার ইচ্ছে যদি শাস্তি দিয়ে ক্ষমা করতে চাও করতে পারো, তোমার যদি মনে হয় একবার যে অন্যায় সে করেছে সেই অন্যায় সে বারবার করতে পারে তবে তুমি সেই বিষয়ে নিশ্চিত হও যে সে সত্যি সত্যি ই অনুতপ্ত তারপর পদক্ষেপ নাও, আই থিংক তুমি বুঝতে পেরেছো? ”
আরুহী কিছু ক্ষন মায়ের কথা টা ভেবে চোখ মুখ চকচক করে উঠলো, মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” সবাই ঠিক ই বলে, পৃথিবীর সকল সমস্যার সমাধান এক মাত্র মায়ের কাছেই পা-ওয়া যায় ”
চলবে…
[ আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবেন, আর কেউ বলবেন না যে আরুহী এতো তাড়াতাড়ি মা কে ক্ষমা করে দিলো কেন? আর যায় হোক মেয়ে কখনো তার মায়ের উপর রাগ করে থাকতে পারে না, আরুহী ও পারে নি! “]