#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৭
_____________
অন্তিম মুহুর্তে এমন বউ পালিয়েছে, বউ পালিয়েছে হাক ডাকে ঘুম ছুটে যায় আরুহীর। সব কাজ শেষ করে বিয়ের ব্যবস্থা করেই রুমে এসে শুয়ে ছিলো আরুহী। শুধু বউকে স্টেজে এনে বিয়ে পড়ানো টাই বাকি ছিলো। ভালো লাগছিলো না বলে আরুহী নিজের রুমে চলে এসেছিলো।
এতো হাক ডাক, শোরগোল শুনে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আরুহী । ভ্রু কুঁচকে পুনরায় কথা গুলো শোনার চেষ্টায় করলো। কিন্তু নাহ আর শোনা গেলো না তবে নিচে থেকে শোরগোল এর আওয়াজ টা এখনো আসছে। আরুহী ভ্রু কুঁচকে তার রুমে রাখা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো, বেলা এখন দুপুর গড়িয়ে তিনটে বাজতে চলল।
আরুহী দ্রুত ওয়াসরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে এলো। ড্রয়িং রুম জুড়ে অনেক মানুষের আনাগোনা। আরুহী কে দেখে রুশা দৌড়ে আসলো তার কাছে।
আরুহী ভ্রু কুঁচকে রুশার দিকে তাকালো,
রুশা আরুহীর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” দিভাই জানো কি হয়েছে? ”
আরুহী রুশার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কি? ”
রুশা মুখ টিপে হেসে উঠলো,
” বউ পালিয়েছে ”
আরুহীর ভ্রু জোড়া আরোও কুঁচকে গেলো,
” বউ পালিয়েছে মানে? ”
” মানে রুম থেকে যখন বউ আনতে গেলাম বিয়ে পড়াতোর জন্য , ওমা গিয়ে দেখি বউ নেই, ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে ”
আরুহী চিন্তিত দৃষ্টিতে চারপাশ টা এক পলক চোখ বুলালো,
কিছু টা ভেবে বলল,
” আরুশ খান কোথায়? ”
রুশা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বলল,
” কোথায় আবার? বউ খুঁজতে গেছে! তুমি জানো মামিমা বউ পালিয়েছে খবর টা শুনে কি বলেছে? ”
” কি? ”
” আলহামদুলিল্লাহ, আপদ বিদেয় হয়েছে ”
বলেই রুশা কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো। আরুহীর মুখের কোন এক্সপ্রেশন বোঝা গেলো না। আরুহী কিছু ক্ষন থম মেরে থেকে বলল,
” রুশো! ”
” হুমম দিভাই ”
” তোরা কি করে বুঝলি যে বউ পালিয়েছে? এমন ও তো হতে পারে যে সে কোথাও কাজে গিয়েছে খনিক বাদে চলে আসবে! ”
রুশা আরুহীর দিকে তাকাতেই আরুহী ভ্রু কুঁচকে বলল,
” হতে ই তো পারে”
রুশা দাঁত কেলিয়া বলল,
” না হতেই পারে না, কারণ বউ পালাবার পর ই তা মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে সে এই বিয়ে টা করতে পারবে না ”
” কাকে জানালো শুনি? আর কিভাবে জানালো? ”
” আরে আরুশ ভাই কে মেসেজ দিয়েছে যে, সে আরুশ কে বিয়ে করতে পারবে না, আরুশ ভাই কে না কি তার ভালো লাগে না, এতো দিন যা ছিলো তা নাকি শুধু ই অ্যাট্রাকশন, সে নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই তার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব হবে না, আহারে আমার ভাই টা! এতো সুদর্শন হয়ে লাভ টা কি হলো শেষ মেষ হবু বউয়ের কাছ থেকে রিজেক্টেড তকমা টা পেয়েই গেলো ”
” তা আরুশ খান কে যেহেতু মেয়ে নিজেই রিজেক্ট করেছে সেখানে মেয়েকে খুঁজতে যাওয়া টা নেহাৎ হাস্যকর না! আমার কাছে তো তাই মনে হচ্ছে ”
রুশা খানিকটা চিন্তা করে বলল,
” ঠিক ই তো! আরুশ ভাই আবার মেয়েকে খুঁজতে গেলো কেন? বাট হতেই পারে অন্য কোন কারণ!
এতো দিন এতো মেয়েকে রিজেক্ট করে শেষ মেষ বিয়ের পিরিতে নিজেই রিজেক্টেড, আহারে! বড় আফসোস হয়! ”
রুশার আফসোস কত টুকু আরুহীর কান পর্যন্ত গিয়েছে সেটা আরুহী ই বলতে পারবে, সে তো ভাবছে অন্য কথা, আদৌতেও কি পুষ্মিতা নামের মেয়েটা বিয়ে র আসর ছেড়ে পালিয়েছে নাকি এর পিছনে অন্য কোন কাহিনি আছে!
” আহারে এতো এতো আয়োজন ভেস্তে গেলো, মেয়েটার বুঝি কাণ্ডজ্ঞান নেই! ”
” বিয়ে যখন করবেই না অযথা ছেলেটার মন নিয়ে খেললো কেন? বলি হারি ভাই! ”
” মান সম্মান বুঝি আর কিছু ই রইলো না ”
এমন অনেক কথায় চারপাশে থেকে আরুহীর কানে এলো।
______________
” আমাকে এভাবে আটকে রেখেছো কেন আরুশ? একটু পর তো তোমার আর আমার বিয়ে তাই না? ”
কথাটা বলেই প্রশ্ন বিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো পুষ্মিতা আরুশের দিকে। আরুশ তার সামনেই বসা তবে কথা টা কতটুকু তার কান অব্দি পৌঁছাতে পেরেছে সেটা সেই বলতে পারবে কারণ আপাতত আরুশের কানে হেডফোন গুঁজে দেওয়া। চোখ বন্ধ করে পিছনে হেলান দিয়ে আছে। এক মনে গান শুনছে হয়তো।
একটা পুরাতন ভাঙা দোতলা বাড়িতে একটা শক্ত পোক্ত চেয়ারের সাথে বাঁধা পুষ্মিতা। বাঁধা বললে ভুল হবে শুধু পেঁচিয়ে রাখা। আরুশ জানে পুষ্মিতা বড় লোক বাবার দুলালী, এই টুকু ই গিট ও সে খুলতে পারবে না, পুষ্মিতার জায়গায় আরুহী থাকলে ব্যাপার টা অন্য রকম হতো, আরুহীর ক্ষেত্রে ৩ টা দড়ি দিয়ে শক্ত বাঁধন দিলেও আরুহীকে বিশ্বাস নেই।
” তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো আরুশ? আমি তোমাকে কিছু বলছি, ”
পুষ্মিতা খানিকটা জোরে বলায় আরুশ চোখ খুলে তাকালো। পুষ্মিতার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
” আমাকে কিছু বলছো? ”
পুষ্মিতা এবার ছোটার জন্য নড়াচড়া করতে করতে বলল,
” আমাকে এভাবে বেঁধে রেখেছো কেন? আমাকে বেঁধে রাখার কারণ টা জানতে চাচ্ছি ”
আরুশ সোজা হয়ে বসলো,
” তোমার সাথে আমার ঠিক কি ধরনের কথা হয়েছিল? ”
পুষ্মিতা আমতাআমতা করে কিছু বলতে নেবে তৎক্ষণাৎ আরুশ সোজা হয়ে বসে বলল,
” থাক তোমার আর কষ্ট করে বলতে হবে না, আমি ই বলছি,
তোমাকে বলেছিলাম বিয়ের দিন সকালে বাড়ি থেকে বের হ’য়ে যেতে কিন্তু তুমি কি করলে! আমাকে উল্টো ফাঁসানোর চেষ্টা করলে!
কিছু টা থেমে পুষ্মিতার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
বাট তুমি হয়তো ভুলে গেছো তুমি কার কথার অবাধ্য হচ্ছো, আরুশ খান অবাধ্যতা একদম পছন্দ করে না মিস পুষ্মিতা!
আমাকে বিয়ে করার এতো শখ! আমার চালে আমাকেই বাজিমাত করবে! ভাবলে কি করে! ”
পুষ্মিতা বেশ ভয় পেয়ে গেছে তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে আরুশের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমাকে ক্ষমা করে দাও আরুশ, আমি বুঝতে পারি নি, তুমি আরুহী কে এতো টা ভালেবাসো আসলেই আমি বুঝতে পারি নি, ক্ষমা করো আর ছেড়ে দাও প্লিজ! ”
আরুশ চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,
” হুম হুম ছাড়বো ছাড়বো। ছেড়ে তো দিব ই আগে বিয়েটা করি তার পর না হয় ভেবে দেখবো, তুমি আমাকে সাহায্য করেছো তাই আজ তোমাকে বাঁচিয়ে রাখলাম নয়তো আরুশ খান কি করতে পারে সেটা বুঝিয়ে দিতাম, উপরে যাওয়ার টিকিট টা হয়তো পেয়েই যেতে, ভাগ্য সু প্রসন্ন তোমার। আজ বরং এখানেই রেস্ট নাও, আল্লাহ হাফেজ ”
বলেই আরুশ গটগট পায়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো।
____________
আরুহীর চোখ গেলো সদর দরজার দিকে, আরুশ ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করেছে, আরুহী আরুশের মুখ ভঙ্গি খেয়াল করলো কিন্তু কিছু ই বুঝতে পারছে না, আরুশের মুখে খুশি বা কষ্ট কোন ভাবই যেন প্রকাশ পাচ্ছে না, আরুহী পড়ে গেলো দোটানায়।
আরুহী এক পলক সবার দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো, শত হোক তার পরিবার ই তো! মান সম্মানের কথাও তাকে ও ভাবতে হবে!
রুমে গিয়ে আরুহী দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসলো,
মাথা কাজ করছে না, আরুহী এখনো ভাবছে এটা কি আরুশের কাজ নাকি সত্যি ই এমন হলো।
লোকের মুখ তো আর বন্ধ করা যায় না, নানান মানুষ নানান কথা বলছে,,
কি করবে সে!
চলবে….
[ সবাই প্লিজ গঠন গত মন্তব্য করবেন, আর আমার কাছে কোম ফোন নেই, আম্মুর ফোন দিয়ে লিখি তাও একটু একটু করে, তাই দেরি হয়, কেও প্লিজ বকা দিয়েন না! ]