#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩৩
_____________
” জীবনে চলার পথে সবসময় পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে না সাজিদ খন্দকার! জীবন টা বড় জটিল সমীকরণ! সবাই তা সমাধান করতে পারে না, আর যদি এক বার গড়মিল হয়ে যায় তখন বোঝা যায় জীবন টা ঠিক কত খানি দুর্বিষহ হতে পারে! ধরতে পারো জীবনটা একটা খেলা আর খেলার মোড় যেকোন সময় যেকোন এঙ্গেল থেকে ঘুরে যেতে পারে, কিছু ই বলা যায় না ”
কথা গুলো বলেই ভ্রু বাঁকা করে সাজিদ খন্দকারের দিকে তাকালো আরুহী। সাজিদ খন্দকার ঠায় আরুহীর সামনেই বসে আছে । মুখ দেখে বোঝায় যাচ্ছে আরুহীর বলা কথা গুলোর মর্মার্থ উদ্ধার করতে সে অক্ষম। আরুহী হাসলো, সব কথার মানে যদি সবাই বুঝতোই তাহলে আর তার এতে কষ্ট করা লাগতো নাকি!
আরুহী পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারের হাতলে কনুই রেখে মাথা হেলিয়ে হাতের তালুর উপর রাখলো, ঘাড় বাঁকিয়ে সাজিদ খন্দকার এর দিকে তাকিয়ে বলল,
” তা যায় হোক, মেয়ে গুলোকে দিয়ে কি করবে শুনি?”
সাজিদ খন্দকার খানিকটা কেশে বলল,
” তুমি যেহেতু আমার হাতে বন্দি তার উপর যেকোনো সময় উপরের টিকিট হাতে পেয়ে যাবে তাই তোমার থেকে লুকানোর কোন দরকার মনে হয় নাই,
খানিকটা ভেবে বলল,
মেয়ে গুলোকে বিদেশে পা*চার করবো আর যে গুলো বায়ারদের পছন্দ হবে না তাদের কিডনি, চোখ মানে সেই অঙ্গ গুলো বিক্রয় যোগ্য সেগুলো বিভিন্ন হসপিটালে বেঁচে দেবো ”
আরুহীর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো, কত সহজেই এতো নিকৃষ্ট একটা কথা বলে ফেলল লোকটা, ঘৃণায় শরীর টা রি রি করছে তার।
কিছু একটা ভেবে বলল,
” তুমি বেশ চালাক সাজিদ খন্দকার! মানতে ই হবে তোমার বুদ্ধি র লাজওয়াব! কিভাবে নিজের ব্যবসার অবস্থান আর কালো জগৎ একসাথে চালিয়ে যাচ্ছো আর দুটাতেই সাকসেসফুল। বাংলাদেশে খন্দকার গ্রুপ অব কোম্পানি সবাই এক নামে চিনে। আই এম ইমপ্রেস্ড! ”
সাজিদ খন্দকার লাজুক হাসলো, সে বুঝতে ও পারলো না আরুহী তাকে কি পরিমাণ তেল মারলো। সাজিদ খন্দকারের লাজুক হাসি দেখে আরুহীর ঠোঁটে ফুটে উঠলো রহস্যময় বাঁকা হাসি। যা সাজিদ খন্দকার এর অগোচরেই রয়ে গেলো।
খানিকটা অহংকার করে বলে উঠলো,
” বুঝলে আরুহী চৌধুরী, এসব কালো জগৎ চালাতে গেলে অনেক তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন হয় যা সবার থাকে না।
এই সাজিদ খন্দকার এর সাথে পাঙ্গা নেওয়া তোমার ঠিক হয় নি ”
আরুহী সাজিদ খন্দকার এর কথায় সায় জানিয়ে বলল,
” তা যা বলেছো, আসলেই অনেক বুদ্ধির দরকার, যা তোমার আছে। আমি সত্যি ই অবাক হই মাঝে মাঝে তোমাকে দেখে। আচ্ছা তোমার এই জগতে পদার্পন কত দিন হলো? ”
সাজিদ খানিকটা ভেবে বলল,
” এই বছর তিনেক হবে ”
” বাহ্ এই কয়দিনে এতো বড় একটা আস্তানা করে ফেললে! সত্যি অবাক হলাম আমি ”
আরুহী কে থামিয়ে দিয়ে সাজিদ বলে উঠলো,
” আরে এটা কি বলো, এই আস্তানা তো আমার সবচেয়ে ছোট আস্তানা, পুরো দেশে এরকম প্রায় পাচঁটা আস্তানা আছে ”
আরুহী চমকে যাওয়ার ভান করে বলল,
” পাচঁটা? তাও বড়ো বড়ো? ”
” হুমম, সেখানে তো আরো অনেক মানুষ ও আছে ”
” তা নিশ্চয়ই হাইড প্ল্যাস আই মিন জঙ্গলে হবে তাই না? ”
সাজিদ খানিকটা হেসে বলে উঠলো,
” তুমি আসলে ই বোকা আরুহী চৌধুরী। তোমাকে কিভাবে ফোর্সে নিলো সেটাই ভাববার বিষয়, হাইড প্ল্যাসে আস্তানা করলে সরকার সহজে ই ধরে ফেলবে! ”
আরুহী খানিকটা চিন্তিত কন্ঠে বলল,
” তাহলে? ”
” আমার আস্তানা সব জনসমাগমে, যেমন ধরো আমার সবচেয়ে বড়ো আস্তানা হলো চট্টগ্রাম বন্দরের ঠিক পাশেই একটা বাজার আছে। তার পশ্চিম পাশে কিছু ঘর সবসময় তালা বদ্ধ থাকে ওখানেই”
আরুহী চমকে উঠে বলল,
” যদি মানুষ ধরে ফেলে? ”
সাজিদ শব্দ করে হেঁসে বললো,
” আমাকে কি এতো বোকা মনে হয়? আমি আমার সব আস্তানা মাটির নিচে করেছি, মানুষ কেন কাক পক্ষি ও টের পাবে না ”
আরুহী মুচকি হাসলো তবে তা মাস্কের আড়ালে।,
” তা বাকি গুলো ও কি চট্টগ্রাম ই? “..
সাজিদ খন্দকার মুচকি হাসলো,
” আরে না, পরের টা মংলা বন্দরের পাশে যে বাজার জমে ওখানে ই, ঢাকা তে আছে তিনটা, একটা সদর ঘাটের কাছে, একটা ধানমন্ডি লেকের কাছে আরেকটা যেখানে আপাতত তুমি বসে আছো ”
আরুহী বলে উঠলো,
” এতো বড়ো একজন ব্যবসায়িক কি শুধু কি মেয়ে পা*চার ই করো নাকি? ”
সাজিদ হেঁসে বললো,
” তোমার তো বেশ কৌতুহল আরুহী চৌধুরী! তা বেশ ভালো। জীবনে আর জিজ্ঞেস করতে পারো কি না পারো বলা তো আর যায় না, হয়তো এই মূহুর্তে তোমার প্রান নিয়ে নিতেও পারি ”
আরুহী শব্দ করে হেঁসে বললো,
” তা তো জানিই, মৃত্যু যে আমার দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে ”
” তারমানে তুমি স্বীকার করছো আমি তোমাকে মারার ক্ষমতা রাখি? ”
” আলবাত রাখো, এতো বড়ো বড়ো কাজ করতে পারলা আর আমার মতো একজন নগন্য মানুষ কে মারা তো তোমার বা হাতের কাজ ”
সাজিদ খন্দকার আবারো শব্দ করে হাসলো, হাসি যেন তার মুখ থেকে সরছে ই না।
” তা ভালো বলেছো ”
” ধরতে পারো এটা আমার মৃত্যুর পূর্ব বর্তী ইচ্ছে, বলো তো শুধু কি নারী পা*চার করো? ”
” নাহ শুধু নারী না সাথে শিশু ও আছে, সাথে সমস্ত প্রকার বেআইনি ড্রা*গস আমদানি রপ্তানি তো হয়ই ”
আরুহী চমকে উঠে বলল,
” ড্রা*গস? কি রকম আর কতদিন ধরে? ”
” এই ধরো ফে*নসিডিল, ই*য়াবা, তারপর বিদেশি ম*দ, বিশেষ করে নি*ষিদ্ধ যেই ম*দ গুলো। তারপর বেআইনি মা*দক তো আছেই, সব গুলো এনে আমার আস্তানায় রাখি, আমিই চেক আউট করি তার পর বিভিন্ন আস্তানায় পাঠাই, সেখান থেকে সেল হয় চড়া দামে ”
” এতো কিছু যে করো, দেশের বর্ডার পেরোও কিভাবে? ”
” বড়ো বড়ো ক্ষমতাবানদের সাথে হাত থাকলে সবই সম্ভব! ”
” মানেহ ”
” মানে হলে দেশের কিছু এমপি মন্ত্রী আছে যারা এসবে হাত আছে, মোটা অঙ্কের টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করে দেয় আর কি, তাদের সহায়তায় আনি”
আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,
” ঠিক কাদের কথা বলছো বুঝতে পারছি না ”
সাজিদ খন্দকার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো আরুহী র দিকে,
” তুমি ঠিক কি জানতে চাচ্ছো আরুহী চৌধুরী? ”
” মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছে পূরন আর কি ”
” মন্ত্রী শাখাওয়াত শেখ আছে ”
আরুহী হেসে সোজা হয়ে বসলো, যা জানার তার জানা হয়ে গেছে, কিছু মানুষ নিজেকে এতোটাই চালাক মনে করে যে সে ছাড়া হয়তো পৃথিবীতে চালাক বলে আর কেউ নেই। অথচ তারাই মাঝে মাঝে সবচেয়ে বোকার মতো কাজ করে বসে। তেমন ই সাজিদ খন্দকার নামক লোকটা। নিজের গুন গান গাইতে এতোই ব্যস্ত যে তার গোপন তথ্য ফাঁস করতে ও একটুও কার্পন্য করেনি।
মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে উঠে দাঁড়ালো আরুহী , সাজিদ খন্দকার এর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলল,
” মেয়েদের গায়ে হাত তুলেছে কে? ”
সাজিদ খন্দকার নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,
” আমার লোকেরা মেরেছে”
আরুহী ঘুরতে ঘুরতে সাজিদ খন্দকার এর ঠিক পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে পকেটে থেকে নিঃশব্দে একটা ধা*রালো ব্লে*ড জাতীয় কিছু বের করে সাজিদ খন্দকার এর গলায় চেপে ধরতেই সাজিদ থমকে গেলো।
আরুহীর ঠান্ডা গলায় বলল,
” কেন মেরেছিস? কি অপরাধ তাদের? কি ক্ষতি করেছে তারা তোর? ”
সাজিদ ভয়ে কথা বের হচ্ছে না তার উপর গলায় এমন ধারালো অস্ত্র। এই মেয়ের ঠিক কত রুপ আছে ভেবে পায় না সাজিদ খন্দকার। এই তো মাত্রই এতো ভালো ভালো কথা আবার এখনি আরেক রুপ!
অ*স্ত্র টা যেভাবে ধরেছে একটু এদিক সেদিক হলেই সোজা উপরের টিকিট হাতে দিয়ে দিবে।
সাজিদের উত্তর না শুনে যেনো আরুহীর শরীরের রগ গুলো ধপধপ করে জ্বলে উঠছে। আরুহী বেশ জোরে গলায় ছুড়িটা আরেকটু চেপে ধরতেই বলে উঠলো,
” কেন মেরেছিস? কি ক্ষতি হচ্ছে তারা তোর? কি শত্রুতা আছে তাদের সাথে? ”
গলা হালকা একটু কেটে চুইয়ে চুইয়ে র*ক্ত পড়ছে। আরুহীর যেন সেই দিকে কোন খেয়াল ই নেই।
চলবে..
[ আজকের পর্ব টা কেমন লাগলো গঠন গত মন্তব্য করবেন কিন্তু! [