শুধু_তোমায়_ভালোবেসে #পর্ব_০৮ #সাদিয়া_রহমান_হাফসা

0
381

#শুধু_তোমায়_ভালোবেসে
#পর্ব_০৮
#সাদিয়া_রহমান_হাফসা

__________________

পূর্বাকাশে জ্বলজ্বল করে নিজের অস্তিত্ব চাঁদকে জানান দিচ্ছে শুকতারা টা। অর্ধচন্দ্রের ফালি আঁধার পৃথিবীতে আলো ছড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে হেলে পড়েছে পশ্চিমাকাশে। দূর থেকে সুক্ষ্ম আওয়াজে ভেসে আসছে শ্রুতিমধুর আজান ধ্বনি। একে একে সবগুলো মসজিদে আজানের ধ্বনি শুরু হতেই খোয়ারে থাকা বদ্ধ মোরগ উচ্চস্বরে ডেকে সবার ঘুম ভাঙানোর ছোট্ট মিষ্টি প্রয়াস চালায়। মেঝেতে দুইটা জায়নামাজ বিছিয়ে অর্ধাঙ্গিনীর জন্যে অপেক্ষা করছে আদনান। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে আরাধনা ওজু সেরে বেরিয়ে আসার পর দুইজনে একসঙ্গে নামাজ আদায় করে নিলো। মোনাজাত শেষে আরাধনার মাথায় কিছু দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে কপালে ঠান্ডা শীতল উধর ছুঁইয়ে নরম স্বরে আদনান ডাকলো,

– আরাধনা?

– হুম?

– বিয়ের রাতে বউকে কিছু উপহার দিতে হয়। কিন্তু আমাদের বিয়ের রাতে আমি তোমাকে সেটা দিতে পারিনি। তাছাড়া আমি কখনো মেয়েদের কিছু গিফট করিনি। রাইদাহকে নিয়ে বেশ কয়েকবার শপিংয়ে গিয়েছি তবে যা কেনার ও নিজেই কিনেছে। তাই আমি কনফিউজড তোমাকে আসলে কি দেওয়া উচিৎ। তারথেকে বেটার তুমি বরং নিজেই মনমতো কিছু আমার থেকে চেয়ে নাও আমি তোমায় সেটা এনে দিতে একটুও সময় নষ্ট করবো না। কি চাই তোমার আরাধনা?

আরাধনা বিস্ময় ভরা চাহনিতে চেয়ে বললো,

– যা চাইবো দেবে!

– অবশ্যই দেবো! আমার সাধ্যে থাকলে তাড়াতাড়ি আর না থাকলে দেরিতে দেবো, দেবো-ই।

– অনেক অন্নেক দামী আদনান! তারপর কি আবার সেটা আমার থেকে ফিরিয়েও নেবে?

আরাধনার এমন প্রশ্ন শুনে মনে মনে হাসলো আদনান। তার মনে হচ্ছে সে কোনো বাচ্চাকে খেলনা ওফার করছে আর বাচ্চাটা সেই খেলনা পাওয়ার আগেই হারানোর ভয় পাচ্ছে। আরাধনার গালে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বললো,

– গিফট দিলে কি সেটা আবার ফিরিয়ে নেয়া যায় নাকি? সেটা তো তোমাকে দেওয়া আমার গিফট যেখানে সম্পূর্ণ এবং শুধু তোমারই অধিকার থাকবে। যা তোমার তা ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো অধিকার না আমার আছে আর না অন্যকারো।

– সত্যি দেবে!

– ওয়াদা করছি। একবার বলো কি চাই?

আদনানের দুইহাত একসাথে ধরে হাতের মিলনস্থলে উধর স্পর্শ করে আরাধনা বললো,

– তোমাকে এবং শুধুমাত্র তোমাকেই চাই।

ভোরের পাখিরা কিচিরমিচির মিষ্টি শব্দে প্রকৃতিকে মুখরিত করে তুলছে। সূর্যের হলদে আলো কাঁচের জানালা ভেদ করে এসে ঘরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই আলোয় ধীরেধীরে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে ওঠছে আরাধনার শ্যামবরণ মুখ। ওজু করার কারণে কাজল ছড়িয়ে পড়েছে চোখের নিচে। তারপরও আদনানের কাছে মন্দ লাগছে না তাকে দেখতে। আদনান মুচকি হেসে বললো,

– সেই তৃষ্ণার কি দাম রইলো যে তৃষ্ণায় মরুভূমির প্রখর সূর্যত্তাপ নেই? সেই পূর্ণতা কি পূর্ণতা যে পূর্ণতায় অপূর্ণতার ছায়া নেই!

আরাধনা কপাল কুঁচকে বললো,

– এত কঠিন কথা কেন বলছো? সহজ করে বলো!

হাসলো আদনান। আরাধনার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,

– চলো আমার সাথে।

– কোথায়?

– ছাদে।

আলো-আঁধারির সংমিশ্রণে আকাশটা চোখধাঁধানো সুন্দর লাগছে। কুয়াশার চাদর ভেদ করে দুই কপোত-কপোতী ছাদের রেলিঙের পাশে এসে দাঁড়ালো। আরাধনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধের উপর থুতনি ভর করে দাঁড়ায় আদনান।

– গত পরশু-ই আমি তোমার আর তুমি আমার নামে লেখা হয়ে গিয়েছ আরাধনা। শুধু এ পৃথিবীতে না পরপারেও তুমি আমারই থাকবে আর আমি তোমার। যা তোমার তা আমি তোমাকে কি করে দেবো বলো তো?

নিশ্চিন্ত হলো আরাধনা। খুশিমনে আদনানের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,

– এবার তাহলে বলো তোমার কি চাই?

আদনান অবাক হওয়ার ভান করে বললো,

– তুমি আমায় গিফট দেবে!?

আরাধনা শুষ্ক ঢোক গিলে বললো,

– জানি তোমাকে কিছু দেওয়ার মতো আমার সাধ্য নেই। তবে উপহার টা পাওনা রইলো। যদি কোনোদিন সাধ্য হয় তখন দেবো!

আলতো হাতে আরাধনাকে নিজের দিকে ঘোরালো আদনান।

– প্রতিবাদী আরাধনা, সাহসী আরাধনা, আত্মনির্ভরশীল আরাধনা, স্ট্রং আরাধনা, আমার সন্তানের বেস্ট মা আরাধনা। আমার চারিদিকে অনেক অনেক শত্রু ক্ষতি করার জন্যে ওঁত পেতে রয়েছে। তাই আমি চাই তুমি আমার দুর্বলতা নয় শক্তি হও। এমন এক আরাধনা যে আমি ভেঙে পড়লেও সে ভাঙবে না বরং ভাঙা আমায় মজবুত করে পুনরায় জুড়ে দেবে। দেবে আমায় এমন একটা আরাধনা!?

আরাধনা নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে আছে আর আদনান তার উত্তরের আশায় অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। অতঃপর আদনানের বুকের বাম পাশে নিজের ডান রেখে ধীর আওয়াজে আরাধনা বললো,

– মাটি ছাড়া গাছ যেমন বাঁচতে পারবে না তোমাকে ছাড়াও আমি তেমন বাঁচতে পারবো না আদনান। পানি ছাড়া প্রাণ যতটা অসহায় তুমি হীনা আমিও ঠিক ততটাই অসহায়। #শুধু_তোমায়_ভালোবেসে সব ভয়, ব্যথা কবুল। তুমি আমার সেই প্রিয়জন যার ভালোবাসার লোভে আমি সব করতে রাজি, সবকিছু।

|
|

দেওয়ালে একের পর এক কিল-ঘুষি দিয়ে চলছে শান। আঘাতে হাত ফেটে দেওয়ালে আর ফ্লোরে র/ক্ত গড়িয়ে পড়ছে টুপটাপ। সকালের ভরা মজলিসে হওয়া অপমান সে কোনোমতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। শেষমেশ সে কি-না একটা মেয়ের হাতে চড় খেয়ে আসলো।

– না না না না না! কামাল? (জোরে)

হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকলো রোগা পাতলা একটা লোক। গামছা দিয়ে মুখ মুছে বললো,

– জ্বে সাহেব?

– কোনো খবর পেয়েছিস? কে ছিলো ঐ মেয়ে?

কামাল আমতাআমতা করে বললো,

– না সাহেব। ঐ সময়ে আমরা সব্বাই আপনারে নিয়া-ই ব্যস্ত হইয়া পড়ছিলাম। ঐ মাইয়াডা কই থেইক্কা আইলো আবার কই-ই বা চইলা গেলো তাতে নজর দিবার পারি নাই। খবর কেমনে পাইতাম আমরা তো তারে ভালোমতো দেখিও নাই!

কামালের শার্টের কলার টেনে তাকে মাটি থেকে উঁচুতে তুলে ধরে শান মুখ বিকৃত করে চেচিয়ে বললো,

– নিষ্কর্মার দল! বসে বসে গেলার জন্যে টাকা দিয়ে পুষছি তোদের!? এতশত ক্যামেরা ছিলো ওখানে সেগুলো দেখে যেভাবে পারিস খুঁজে বের কর। সবার আগে ওরে শেষ করবো আমি!

|
|

সবে মাত্র কনসার্ট শেষ হলো। নিশি এখনও স্টেজ থেকে নামেনি। কালো হুডি আর মাস্ক পড়ে সবার সামনের সারণীতেই দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্র। এলাকার এক বন্ধুর থেকে খবর পেয়েছিলো এই কনসার্টে আজ নিশি আসবে। সেই রাতে তেমন ভালো করে দেখতে পারেনি নিশিকে তাই আজ এসেছে দু-চোখ ভরে দেখবে বলে। কিন্তু কেন দেখতে এসেছে সেটা সে নিজেও জানে না। মেয়েটি এখনো আগের মতোই আছে। সেই বাচ্চা বাচ্চা চেহারা, কাঁধ অবধি চুল, মায়াবী ঘোলা চোখ। শুধু হাসিটা আগের মতো নেই। আগে যেমন প্রানখুলে হাসতো এখন আর সেভাবে হাসে না। আর এর কারণ রৌদ্র নিজে এটা ভাবতেই রৌদ্রের বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হতে লাগে। আবারো চোখের আড়াল হয়ে গেলো নিশি। এদিক-ওদিক খুঁজেও রৌদ্র আর কোথাও পেলো না তাকে।

স্টেজের পর্দার আড়াল থেকে রৌদ্রের ব্যাকুলতা দেখে মলিন হেসে নিশি বললো,

– যদি আপনার হৃদয়ের এই রূপ সেদিনই আপনি দেখতে পারতেন তাহলে আজ আমাদের গল্পটা অন্যরকম হতো! আপনি বড্ড বোকা রৌদ্র ভাই। সব আড়াল করলেন অথচ নিজের চোখ দুটোই আড়াল করতে ভুলে গেলেন!? আপনার ঐ চোখ দু’টোই যে আমার আজকের সর্বনাশের কারণ! এ চোখকে আমি কি করে না চিনতে পারি!?


বাইরের বৈঠকখানায় গ্রামের সকল সনামধন্য লোকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসেছে আদনান। দূর থেকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেদিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছে আরাধনা। আদনানের কথা বলা, মনোযোগ দিয়ে শোনা, থুতনিতে ভর দিয়ে চিন্তা করা সবকিছু মন দিয়ে দেখছে সে। কথাবলার এক পর্যায়ে আদনানের চোখ চলে গেলো আরাধনার মুখপানে। আদনান তাকাতেই আরাধনা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারে আদনানের উদ্দেশ্যে যা দেখা মাত্রই আদনান বড়সড় এক বিষম খায়। আদনানের হাল বেহাল হতে দেখে মুবিন তাড়াতাড়ি পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে চিন্তিত হয়ে বললো,

– বাবা আপনি ঠিক আছেন?

ঢকঢক করে বোতলের অর্ধেক পানি খেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে আদনান বিরবির করে বললো,

– সর্বনাশ হয়েছে আদি! তোর লজ্জাবতী বউয়ের লাজ হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। এটা যে মোটেও ভালো লক্ষণ নয়!



চলবে…

[বিদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম মাই ডিয়ার রিডার্স🤍গল্প একদিন পরপর আসে রাত্রিবেলা। যদি কখনো গ্যাপ বেশি হয়ে যায় তবে সেটা অনিচ্ছাকৃত এবং এর জন্যে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। যেহেতু এটা আমার দ্বিতীয় লেখনী এখনো অপরিপক্ব তাই গুছিয়ে লিখতে একটু সময় লাগে।]

(শব্দসংখ্যা~১০৭৫। কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে পর্বটা ছোট এবং খাপছাড়া হয়েছে এর জন্যে আমি মন থেকে দুঃখিত । লেখায় বিদ্যমান ভুলগুলি ধরিয়ে দিবেন আমি সুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো। অনাকাঙ্ক্ষিত বানান সংক্রান্ত ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং🐦🪶)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here