শুধু_তোমায়_ভালোবেসে #পর্ব_০৯ #সাদিয়া_রহমান_হাফসা

0
388

#শুধু_তোমায়_ভালোবেসে
#পর্ব_০৯
#সাদিয়া_রহমান_হাফসা

__________________

– এটা কি করছিলে তুমি?

– কোনটা?

আদনান একটু থেমে বললো,

– আমি যখন মিটিংয়ে ব্যস্ত তখন তুমি যেটা করলে সেটা কোথা থেকে শিখেছো তুমি?

আরাধনা নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে রইলো। আদনান রেগে গিয়ে বললো,

– আমি তোমায় কিছু জিগ্যেস করেছি আরাধনা!

আদনানের ধমকে ঘাবড়ে গেলো আরাধনা। মাথা নামিয়ে অপরাধীর ন্যায় বললো,

– র..রা..রাই বলেছিলো।

আদনান কপাল কুঁচকে বললো,

– কি বলেছিলো রাইদাহ?

– তোমাকে ও..ওভাবে ইশারা করতে ব..বলেছিলো।

কপালে আঙুল রেখে জোরে জোরে বেশ কয়েকবার নিঃশ্বাস ফেলে আরাধনার হাত ধরে বললো,

– চলো।

কাল রাতেই আদনান মীরকে ফোন করে দীঘিরপাড়ে আসতে বলে দিয়েছিলো। এখানে কিছু কাজ এখনও বাকি তারমধ্যে বাসায় তার মা-ও একা আছে তাই বাড়ির বউকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলেছেন আঁখি সাখাওয়াত। যদিও আদনান প্রথমে নাকচ করছিলো কিন্তু পরে রাজি হয়ে যায়। আরাধনাকে বাড়ি নিয়ে যেতে দুপুরের আগেই রাইদাহ-কে নিয়ে চলে আসে মীর। ওরা আসলে আরাধনাকে ওদের কাছে রেখে এলাকার সনামধন্য লোকদের নিয়ে আলোচনাসভায় বসেছিলো আদনান আর ঐ মুহুর্তেই আরাধনা এক দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলে। ফ্লাইং কিস ছুড়ে মারে আদনানের উদ্দেশ্যে যা দেখে আদনান নিশ্চিত হয় এটা আরাধনা নিজে থেকে করেনি। আর তার ধারণা-ই ঠিক হলো। এই কীর্তি তার অতি আদরের ছোট বোনের।

বাড়িতে ঢুকে দেখতে পায় মালা বেগম ড্রয়িংরুমের সাফসাফাই করছে। আদনান তাকে ডেকে বললো,

– খালা? রাইদাহকে একটু ডেকে পাঠাবেন প্লিজ!

– এক্ষুনি যাইতেছি বাবা।

মিনিট দুয়েক পর-ই রাইদাহ চলে এলো।

– ডাকছিলে ভাই?

আদনান শীতল কন্ঠে বললো,

– বস।

আরাধনার পাশে গিয়ে বসে পড়ে রাইদাহ। সে লক্ষ্য করলো আরাধনা কেমন জানি গুটিয়ে রয়েছে।

– ভাই?

– তোর পড়াশোনা কেমন চলছে?

– ভালো।

– তোর থেকে আমার একটা ফেইভার (favor) চাই। জানি তুই এখনও বাচ্চাটি-ই রয়ে গেছিস। এই বয়সেই পড়াশোনা সংসার সব একা হাতে সামলাচ্ছিস। তবুও তুই ছাড়া আমার ভরসাস্থল কেউ নেই। তুই কি পারবি বনু?

রাইদাহ কিছু সময় স্থির হয়ে চেয়ে রইলো ভাইয়ের মুখপানে। তারপর দ্রুত সোফা ছেড়ে উঠে ভাইয়ের পাশে বসে হাত ধরে বললো,

– এভাবে বলছো কেন ভাই! একশোবার পারবো। আমি একা না পারলে তুমি, ব্রো আর মীর আছো তো! বলো কি করতে হবে?

মুচকি হেসে রাইদাহ-র মাথায় স্নেহের হাত রেখে আদনান বললো,

– আরাধনাকে বেসিক লেসন’স, প্রয়োজনীয় ম্যানার্স, চলাফেরা এই তিনটা বিষয় শেখানোর দায়িত্ব তোর। জানি বয়স আন্দাজে এটা তোর জন্যে অনেক বড় একটা দায়িত্ব তবে তুই-ই এর জন্যে বেস্ট। আমি জানি তুই পারবি আর তোর থেকে ভালো কেউ-ই পারবে না।

আদনানের জোরের সাথে বলা কথায় আর ভরসায় উৎফুল্ল হয়ে রাইদাহ সম্মতি জানিয়ে বললো,

– পারবো ভাই। আজ থেকে আমি ভাবির টিচার৷ উফফ মীর সাহেবের সাথে এবার আমার সমানে সমানে লড়াই হবে। আমি তো খুব এক্সাইটেড!

|
|

সন্ধ্যা নামার আগেই আদনান তার নিজ বাড়ি ❝কুহেলিকা কুঞ্জে❞ আরাধনাকে রাইদাহ আর মীরের সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছে। আগামীকাল থেকেই আরাধনাকে যাবতীয় শিক্ষা দেওয়া শুরু হবে। রাইদাহ আর মীরের দায়িত্ব পড়েছে আরাধনাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার। কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা হয়েছে আদনানের। উদ্দেশ্য একবছরের মধ্যে আরাধনাকে গড়ে তোলা। বইয়ের শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কারিকুলাম এক্টিভিটিজ যেমন নাচ, গান ইত্যাদিও শেখানো হবে। আর গান শেখানোর গুরুদায়িত্ব পড়েছে নিশির উপর। আঁখি সাখাওয়াতও এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। সে তো এটাই চেয়েছিলো যে আরাধনা বাঁচার মতোন বাঁচুক।

ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা সাতটা ছুঁইছুঁই। আরাধনা আর রাইদাহকে সাথে নিয়ে হলরুমে গল্প করতে বসেছিল আঁখি। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠে। রাইদাহ যায় দরজা খুলতে কিন্তু দরজা খোলার পর দরজার বাইরের মানুষদের দেখে একরাশ বিরক্তি ফুটে ওঠে তার চোখেমুখে। রুমকি একগাল হেঁসে বললেন,

– কেমন আছিস রাইদাহ?

রাইদাহ বিরক্তিমাখা মুখেই হেসে বললো,

– ভালো আছি আন্টি। তুমি কেমন আছো?

– আমিও ভালো আছি। তোদের খুব মিস করছিলাম বিশেষ করে রেশমি তাই চলে আসলাম দেখতে।

একনাগাড়ে কথা বলতে বলতে বাড়ির ভেতর ঢুকে সিঙ্গেল সোফার উপর বসে থাকা আরাধনাকে দেখে রুমকি মুখ কালো করে তার ছোটবোন আঁখিকে জিজ্ঞেস করলেন,

– এই মেয়েটা কে রে আঁখি?

– ওর নাম আরাধনা। আমাদের আম্বিয়ার মেয়ে আর এখন

আঁখির কথার মাঝেই রেশমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

– আদনান কই আন্টি? উফফ্ আমিও না! রাতের বেলায় কোথায় থাকবে নিশ্চয়ই ওর রুমে আছে! আম্মু তুমি আন্টির সাথে বসে গল্প করো আমি আদনানের সাথে দেখা করে আসছি।

রেশমির এভাবে আদনানের নাম নেওয়া আরাধনার মনে একটা অপরিচিত নতুন অনুভূতির জন্ম দেয়। এ অনুভুতি একদমই ভালো লাগার না। এই অনুভূতি অনুভব হওয়ার পরই তার মন আনচান করতে শুরু করে। রেশমি সোজা চলে গেল দোতলায় আদনানের ঘরের উদ্দেশ্যে। কি মনে করে আরাধনা পা টিপে হেঁটে রেশমির পিছু নিলো। সিঁড়িতে উঠার আগেই আফসানের সাথে মুখোমুখি হয়ে যায় রেশমি। আফসান সানগ্লাস খুলে শিস বাজিয়ে বললো,

– কিররে! কই যাও?

– কালো বিড়ালের মতো আমার পথ আটকে দাঁড়ালি কেন? সর সামনে থেকে।

আফসান টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,

– ভুল বললে রেশমিপু! আমি কালো বিড়ালের মতো তোমার সামনে আসিনি উল্টো তুমিই উড়ে এসে আমার সামনে খাম্বার মতো দাঁড়িয়েছ। প্লিজ সরে দাড়াও আমার হসপিটালে তাড়া আছে।

রেশমি মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে দাঁত কটমট করে উপরে চলে গেলো৷ যখনই সে আদনানের ঘরে ঢুকতে যাবে তার আগেই আরাধনা এক প্রকার ছুটে গিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। তার এমন আগমনে রেশমি কপাল কুঁচকে বললো,

– কি ব্যাপার? এখন আবার তুমি এভাবে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ালে কেন? কি সমস্যা?

– কে তুমি?

আরাধনার প্রশ্নে মেজাজ চওড়া হয়ে গেলো রেশমির। আরাধনার কাঁধ বরাবর হালকা ধাক্কা দিয়ে ধমকে বললো,

– তুমি কে আমাকে এই প্রশ্ন করার? আর তোমার সাহস কি করে হলো আমার পথ আটকে আমাকে বাঁধা দেওয়ার?

উঁচু আওয়াজে কথা শুনে কিছুটা চুপসে যায় আরাধনা তবুও নিজেকে যথাসাধ্য সামলে নিয়ে বললো,

– এটা আমার ঘর। আমার ঘরে আমি তোমাকে যেতে দেবো না। দূরে যাও তুমি!

দুই হাত দিয়ে দূরে যাওয়ার ইশারা করে কথাগুলো বলছিলো ও। রেশমি তৎক্ষনাৎ আরাধনার এক হাত শক্ত করে খামচে ধরে বললো,

– বুঝেছি তোমাকে শিক্ষা দিতে হবে। আজ এমন শিক্ষা দেবো না মরার আগ পর্যন্ত মনে রাখবে। মরার পর তোমার ভূতও আমার সাথে পাঙ্গা নিতে ভয়ে কাপবে।

আর একটা শব্দ ব্যয় না করে আরাধনাকে টেনে হিঁচড়ে নিচে হলরুমে নিয়ে যেতে লাগলো রেশমি। খামচে ধরার কারণে রেশমির বড়-বড় ধারালো নখ এবং শক্ত করে ধরার কারণে হাতে পড়া কাচের চুরি ভেঙে গেঁথে যায় আরাধনার মোলায়েম হাতে। যার ফলে মুহুর্তেই মাংস ফেটে তরল র/ক্ত বেরিয়ে আসে হাত বেয়ে। আরাধনা ব্যথায় কুকিয়ে ওঠে অন্য হাত দিয়ে ধরে রাখা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু রেশমির সাথে সে পেরে ওঠে না। বাইরের সদর দরজার সামনে এনে আরাধনাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রেশমি চিৎকার করে বললো,

– আর যদি কখনো আমার পথের কাটা হয়ে দাড়াও এভাবে উপড়ে ফেলবো তোমায়।

স্বচক্ষে এমন দৃশ্য দেখে তাহেরা বানু চিৎকার করে বাড়ির সকলকে জোড় করে ফেলে হলরুমে। চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে দৌড়ে নিজ রুম থেকে বেরিয়ে আসে রাইদাহ। দরজার সামনে আরাধনাকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে আঁখি আঁতকে উঠলো। দ্রুত গিয়ে তুলে দাঁড় করায় আরাধনাকে। র/ক্তা/ক্ত মুখশ্রী দেখে আরেক দফা চমকে উঠলো আঁখি সাখাওয়াত আর রাইদাহ। দরজার চৌকাঠের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গভীরভাবে আই-ভ্রূয়ের একপাশ আর ঠোঁটের কোণ কেটে র/ক্ত গড়িয়ে পড়ছে আরাধনার শ্যামলা চেহারা বেয়ে। রাইদাহ তাড়াতাড়ি আরাধনার কাছে এসে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে আঁখিকে বললো,

– মামনী জলদি হসপিটালে চলো। আমি ব্রো কে কল করে জানিয়ে দিচ্ছি সব ব্যবস্থা করতে। জলদি চলো অনেক রক্ত বের হচ্ছে!

পুরো বাড়িতে এখন শুধু রুমকি, তার মেয়ে রেশমি আর তাহেরা বানু রয়েছে। বাকি সবাই আরাধনাকে নিয়ে হসপিটালে চলে গিয়েছে। রুমকি কিছুটা ধমকের সুরে মেয়েকে বললেন,

– এসেই কি করলি এটা? শুনলি না ও আদনানের কাজিন। আদনান যদি এসব শুনে তখন তোর সম্পর্কে কি ভাববে বলতো?

– চিল মা! আমি কিছু একটা বলে ম্যানেজ করে নেব। তুমি ঘরে গিয়ে রেস্ট করো ততক্ষণে আমি আদনানের সাথে মিট করে আসছি।

ঘরের লাইট অন করেই থমকে গেলো রেশমি। তার বিষ্ময় ভরা দৃষ্টিজোড়া আবদ্ধ বিছানার পেছনের দেওয়ালের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অবধি টাঙানো বিশাল ছবিটির উপরে। যে ছবিতে মেজেন্টা রঙের শাড়ি পরিহিতা আরাধনার চুলের খোঁপায় একই রঙের পাঞ্জাবি গায়ে আদনান খুব যত্ন করে ফুলের গাজরা পড়িয়ে দিচ্ছে। এতটাই যত্ন করে পড়িয়ে দিচ্ছে যাতে আরাধনার চুলও ব্যথা না পায়। অন্যদিকে আরাধনা তার হাতে পড়ানো গাজরা নাকের সামনে এনে চোখ বুঁজে ফুলের সুভাস নেওয়ায় বিভোর। কিছুক্ষণ আগের দেখা আরাধনাকে ছবিতে আদনানের পাশে পরীর ন্যায় পরিপূর্ণ লাগছে। আদনানের বেডরুমে এমন একটা ছবি দেখে মাথা হ্যাঙ হয়ে আসে রেশমির।

|
|

কালো রঙের একটা টি-শার্ট পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় আদনান। টি-টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে চলে গেলো বেলকনিতে। সারাদিন এতোটাই ব্যস্ত ছিলো যে আরাধনা চলে যাওয়ার সময় তার সাথে দেখাও করতে পারেনি সে। তাই ঠিক করেছে ভিডিও কলে কথা বলে হালচাল জানবে।

ফোনের লক স্ক্রিন খোলার সাথে-সাথেই ভেসে ওঠে ২৪+ মিসড্ কল’স। বাসা থেকে এতোগুলা কল এসেছে দেখে ঘাবড়ে গেলো আদনান। তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করার আগেই পুনরায় ফোন বেজে উঠে। স্ক্রিনে বড়বড় করে লিখা রাইদাহ-র নাম। ফোন রিসিভ করার পরই ওপাশ থেকে ভেসে আসে রাইদাহ-র কান্না মিশ্রিত কন্ঠস্বর।

✆ – ভাই? ভাবির প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। কপালে দুইটা সেলাই লেগেছে। বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।



চলবে…

(শব্দসংখ্যা~১৩৪৭। মাইগ্রেনের ব্যথার কারণে লিখতে পারছিলাম না। এবার থেকে আবার নিয়মিত দিবো ইনশাআল্লাহ। ভুলগুলিও ধরিয়ে দিবেন আমি সুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো। বানান সংক্রান্ত অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং🐚🐌)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here