#প্রেম_রাঙানো_ক্যানভাস💜
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৯
সন্ধ্যা নেমেছে পৃথিবীর জুড়ে। একতলার ছাদ জুড়ে রঙ বেরঙের বাতি জ্বালানো। কি সুন্দর সাজানো। বিয়ে বাড়িতে তো সাজানোই থাকবে। হলুদ সন্ধ্যা আজ। রাফা তৈরি হচ্ছে। ধূসর এক সাইডে বসে ফোন দেখছে। তার কোনো কাজ নেই। কেউ একটা কাজও করতে দিচ্ছে না তাকে। অরিনও ভীষণ ব্যস্ত। রাফাকে সাজাচ্ছে রাহিয়া। জাহিন নিজের কাজে ব্যস্ত। কিছুক্ষণের মাঝে বউয়ের এন্ট্রি হয়। কাজিনরা সবাই এক সাথে নেচেছে তারপর সবার শেষে রাফা। রাফাকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হয়। রাফার পরনে হলুদ রঙা লেহেঙ্গা। হলুদ গাজরা দিয়ে তাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। জাহিন দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে রাহিয়াকে। কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।
“কি জাহিন ভাইয়া তুমি তো দেখছি তলে তলে টেম্পো চালিয়ে অনেক দূর চলে এসেছো”
জাহিন হকচকিয়ে উঠে। অরিন ফিক করে হেসে দেয়। অরিনকে দেখে জাহিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। জাহিন অরিনের মাথায় হালকা করে টোকা দিয়ে বলে,,,“তুমি তো আমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে অরিন। আরেকটু হলে হার্ট অ্যাটাক করতাম আমি”
অরিন দাঁত কেলিয়ে বলল,,,“ভাই তুমি হার্ট অ্যাটাক করলেও তোমার ঔষধ দিয়ে আমরা তোমাকে ঠিক করে দিতাম। ওই যে সামনে তোমার হলুদ ঔষধ।”
“আস্তে বলো অরিন। কেউ শুনলে কি হবে”
অরিন হাসতে হাসতে বলে,, “ভাই কেউ শুনবে না তুমি চিন্তা করো নাহ। কিন্তু তলে তলে টেম্পো চালিয়েছো আর আমরা কেউ ধরতেও পারলাম নাহ।”
“অরিন তোমাকে আমি পরে সব বলবো বইন এখন চুপ যাও। এটা যদি খালামনির কানে যায় তাহলে তিনি আরেক তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলবেন”
“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আর বলছি না। তুমি এখন এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে কাজে যাও”
ধূসর বসে অরিন আর জাহিনের ফুসুরফাসুর করা দেখছে। তার বড্ড ইচ্ছে করছে এভাবে ভাই বোনদের সাথে কথা বলার। তবে তার সাথে কেউ এতো ক্লোজ না। চাইলেও কেউ এভাবে কথা বলবে না। অরিনরা সবাই নিজেদের নাচের জন্য তৈরি হতে থাকলো। ধূসর পর্যবেক্ষণ করছে সব কিছু। সবাই নাচলো। এরপর ছেলের বাড়ির থেকে লোকজন এসেও বউকে হলুদ লাগিয়ে যায়। অনামিকা ইসলাম ধূসরকেও সবার সাথে এনজয় করতে বলে।
রাত বারোটা। মুরব্বিরা সবাই চলে গিয়েছে ঘুমাতে। রাফা, রাহিয়া অরিনও সাজগোছ উঠিয়ে, জামা চেঞ্জ করতে এসেছে। অরিন রাহিয়া, রাফাকে বলে,,,
“চল ছাদে গিয়ে আড্ডা দেই”
“হ্যাঁ চল”
“কিন্তু জাহিন ভাইয়া আর ধূসর ভাইয়াকে কে ডাকবে?”
অরিন বলে,,,“রাহিয়া যা ডেকে নিয়ে আয়”
“আমি আর রাফা উপরে যাচ্ছি তুই ডেকে নিয়ে আয়”
অগত্যা অরিনেরই যেতে হয় দু’জনকে ডাকতে। জাহিন আর ধূসরের রুমের সামনে এসে দরজায় টোকা দেয় অরিন তবে খোলে না কেউ। হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে যায় দরজা। সে ভেতরে প্রবেশ করে। তবে কাউকেই দেখতে পায় না। তখনই ধূসর ওয়াশরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়। অরিন অপ্রস্তুত হয়ে পরে। প্রথম দিনের ঘটনা মনে পরে যায়। কি করেছিলো সে। ইশ কি লজ্জা জনক পরিস্থিতি ছিলো সেইটা। আজ লজ্জা লাগছে না। অস্বস্তি কাটিয়ে সে বলল,,,
“আপনি কি ছাদে আসবেন আমরা আড্ডা দিবো। আর জাহিন ভাইয়া কেথায়?”
ধূসর তোয়ালে রাখতে রাখতে বলল,,,“হ্যাঁ যাবো না কেনো। অবশ্যই যাবো। জাহিন তো এখনো রুমে আসেনি। আছে হয়তো আসে পাশে চলো”
দু’জন উপরে আসে। উপরে আসতেই জাহিনকেও নজরে পরে। আগে থেকেই ছিলো জাহিন। অরিন একটু অবাক হয়। তবুও কিছু বলে নাহ। ধূসর এবং অরিন এসে বসে পরে ওদের সাথে। রাহিয়া মনে মনে হাসে। সে আগেই জানতো জাহিন নেই রুমে। তবে জাহিন নেই জানলে সে কখনোই ডাকতে যেতে নাহ। জাহিন যে আগেই ছাদে ছিলো তা খুব ভালো করেই জানতো রাহিয়া। সে চাই ধূসরের সাথে যেনো অরিনের লাইন ঘাট হয়ে যায়। যদিও সে একটু একটু জানে যে দুজন এক জায়গায় থাকলেই ঝগড়া লাগে। তবুও ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সবাই এটা ওটা নিয়ে গল্প করছে। রাহিয়া ধূসরকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“ধূসর ভাইয়া চুপ করে আছো কেনো? কিছু বলো। কানাডায় থাকতে কি কি করেছো বলো তো?”
ধূসর হেসে বলা শুরু করলো। সবাই শুনছে তার কথা। অরিন কিছুক্ষণের মাঝেই বোরিং ফিল করলো। কারণ ধূসর ভার্সিটি লাইফে কি করেছে কোথায় কোথায় ঘুরেছে এগুলোই বলছে। যা শুনতে মোটেও তার ইচ্ছে করছে নাহ। ঘুম আসছে তার। রাহিয়া খেয়াল করলো বিষয়টা। সে ধূসরকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,
“আচ্ছা ভাইয়া আজকে থাক। অন্য আরেকদিন শুনবো। এখন বরং আমরা সবাই কিছু খেলি”
জাহিন বলে “হ্যাঁ চলো গানের কলি খেলি”
সবাই সম্মতি দেয়। জাহিন শুরু করে। জাহিনের পরে একেক করে সবাই গান গায়। অরিনের গলা তেমন একটা ভালো নাহ তবে খারাপ ও নাহ। ধূসরের পালা এবার যদিও সবাই ভেবেছে ধূসর পারে না পারলেও ইংরেজি গানগুলোই পারে। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ধূসর গেয়ে ওঠে,,,
যদি বারে বারে একি সুরে,
প্রেম তোমায় কাঁদায় তবে
প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়!
সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনেছে। সামান্য তিনটা লাইন গেয়েছে তবে ধূসরের কন্ঠ এতো সুন্দর বলার বাইরে। তারা কেউই ভাবেনি ধূসরের কন্ঠ এতো সুন্দর হবে। জাহিন বলে উঠে,,
“ব্রো তুমি এতো ভালো বাংলা গান পারো কিভাবে?”
“আমি তো বাংলা গান শুনি। আমার বাংলা গান প্রচন্ড ভালো লাগে”
সবাই আরও কিছুক্ষণ প্রশংসা করলো ধূসরের গানের গলার। তবে অরিন কিছুই বলেনি। ধূসর আশা ও করে না অরিনের থেকে কিছু। সবাই একটা পর্যন্ত গল্প, আড্ডা দিয়ে নিজেদের রুমে চলে আসে। রাহিয়া রুমে এসে বলে,,,
“ ধূসর ভাইয়ার গলা কিন্তু বেশ ভালো। কি সুন্দর করে গান গাইলো। আমার দারুন লেগেছে তার কন্ঠ”
রাফাও রাহিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলল,,,“হ্যাঁ আসলেই অনেক সুন্দর। আমার ও খুব ভালো লেগেছে।”
অরিন বিরক্ত হয়ে বলে,,,“থামবি তোরা। কি এমন গলা যা নিয়ে এতো মাতামাতি করছিস আমাকে বোঝা একটু। উনার কন্ঠ ততোটাও সুন্দর নয়”
রাফা ভ্রু কুঁচকে বলে,,,„“কি বলিস তুই। মাথা খারাপ তোর। ভাইয়ার গলা দারুন।”
অরিন উত্তর না দিয়ে শুয়ে পরলো। রাফা রাহিয়া কিছুক্ষণ অরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেরাও শুয়ে পরবে। এই মেয়ে কখনোই কারো কথা শুনে না। আর ধূসরকে তো পছন্দই করে নাহ। আবার তার সম্পর্কে কিভাবে ভালো কথা বলবে বা প্রশংসা করবে।
–
সকাল সকাল বাড়িটা কোলাহল পূর্ন। সবাই ব্যস্ত যার যার কাজে। সকাল থেকে রাফার মনটা বড্ড খারাপ। আজকে থেকে সে অন্যকারো হয়ে যাবে। চেনা পরিচিত সব ছেড়ে নতুন জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। তার বর কেমন হবে এটা নিয়েও চিন্তিত সে। রাহিয়া সকাল থেকে এ নিয়ে তাকে বুঝিয়ে যাচ্ছে। তবুও কোনো কথা কানে নিচ্ছে না সে। তখনই তার হবু বর মিহান ফোন করে। রাহিয়া দেখে বলে,,,
“ভাইয়া ফোন করেছে রিসিভ করে কথা বল”
রাফা নিজেকে স্বাভাবিক করে ফোন রিসিভ করে বলল,,,
“হ্যাঁ বলুন?”
“কি করছো? মন খারাপ তোমার?”
“হ্যাঁ একটু”
“মন খারাপ করো না। আমি তোমার পাশে আছি তো”
রাফা বউ সেজে বসে আছে। কিছুক্ষনের মাঝেই বর চলে আসবে। সকালে রাফা মিহানের সাথে কথা বলার পর মন খারাপ একটু কমেছে। সবাই রেডি হয়ে নিয়েছে। গেট ধরার জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েপক্ষ ঝগড়া করে তাদের হক আদায় করে নিয়েছে। অতঃপর তাদের বিবাহ সম্পূর্ণ হয় ভালোভাবে।
#চলবে~
আসসালামু আলাইকুম। দুঃখিত এতোদিন গল্প না দেওয়ার জন্য। আমি অসুস্থ ছিলাম বেশ। তারপর পড়াশোনার ব্যস্ততা। রাইটিং ব্লকেও পরেছি হুট করে। এসব মিলিয়ে প্রচন্ড বাজে অবস্থা আমার। দুঃখিত দেরি করার জন্য। আমি দ্রুত শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করবো গল্পটা।