#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৪
____________________________________
” কেমন আছো তুমি দিভাই ”
কথাটা বলেই রুশা হুর হুর করে কেদে দিলো,
আরুহীর মন টাও খারাপ হয়ে গেলো, কতদিন পর ছোট আদরের বোনটার সাথে কথা বলছে সে, এতদিন আরুহী ইচ্ছে করে ই ফোন দেয় নি কারণ এই বোন তো তার হার্টের সফ্ট কর্নার, কথা বললে তাকে দেখতে ইচ্ছে হবে, একটু ছুয়ে দিতে ইচ্ছে হবে কিন্তু আরুহী তো তা পারবে না, তাই তো এতদিন নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে গেছে, কিন্তু আজ বিবেক টা বড্ড অচল হয়ে আবেগ কে যেতে দিয়েছে,
” হুরর পুচকি, কাঁদছিস কেন? বেঁচে আছি রে বাপ মরে তো যাই নি!”
” দিদিভাই, তুই কিন্তু ভীষণ খারাপ, নিষ্ঠুর, পাষাণ একটা মানুষ! এই এতটা বছরে নিজের বোনের কথা মনে পড়লো না তোর? আবার এখন ফালতু কথা বলছিস!”
আরুহী হাসলো, তার বোনটা যে বেশ বড় হয়ে গেছে, বেশ ভালো কথা শিখেছে, যেই আরুহী চৌধুরীর সামনে বড় বড় অফিসার রা কেউ গলা উঁচু করে কথা বলতে পারে না যেখানে এই পুচকি টা ধমকে ধমকে কথা বলছে!
” কেমন আছিস তুই? ”
” ভালো। তুই? ”
” হুম বেটার। সবাই কেমন আছে? ”
” হুম মা বাবা ভালো আছে। ”
আরুহী আমতাআমতা করে বলল,
” সবাই কেমন আছে? ”
” হুম ফুপি, রোদ আপু ভালো আছে।”
” আর বাকি রা? ”
রুশা মুচকি হেসে বলল,
” আরে তুই নাম ধরে ই তো বলতে পারিস যে আরুশ ভাইয়া কেমন আছে? এত মানে মানে করার কি আছে? আর আরুশ ভাইয়া ভালোই আছে ”
” তোকে কে বলল আমি আরুশ ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করেছি! তুই বেশি বুঝিস!
রুশা হেসে বলল,
” হুমম সত্যি কথা বললেই বেশি বুঝি ”
“আচ্ছা আর বলব না বাবা, ঘুমাস নি কেন এখনোও? এত রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হবে না ঘুমা তুই, কাল দেখা হচ্ছে তোর কলেজে । ”
আরুহীর কথা শুনে রুশা গদগদ কন্ঠে বলল,
” তুই আসবি আমাদের কলেজে? ”
” হুম আসবো বাট পুচকি শোন! তুই একাই আসবি, সাথে কাউকে আনলে আমি আর তোর সাথে দেখা করব না, কাউকে আমার আসার কথা বলবি ও না ”
রুশা ছোট করে উত্তর দিলো,
” হুম ”
” গুড গার্ল, এখন ঘুমা কাল সকালে আবার কলেজ আছে। আল্লাহ হাফেজ ”
” আল্লাহ হাফেজ ”
বলেই আরুহী ফোন টা কেটে দিলো, ফোনটা বিছানার উপর রেখে লেপটপ নিয়ে মেইল গুলো চেক করতে বসলো,
মেইলে সব হসপিটালের বিষয়ক তথ্য পাঠিয়েছে সুলতান। কাল সকালে রুশার কলেজ হয়ে একটু ক্যান্টনম্যান্টে যেতে হবে তারপর হসপিটালে।
মেইল গুলো চেক করে আরুহীর বেশ ঘুম পাচ্ছে তাই সে সব অফ করে ঘুম দিলো,
________________________________________
খান ম্যানসনের দোতলার সবচেয়ে কর্নারের রুমে দরজা বন্ধ, অন্ধকারাচ্ছন্ন চারপাশ, শুধু মাত্র একটা বড় জল রঙে আকা ছবির সামনে একটু মৃদু আলোর রেস দেখা যাচ্ছে। তারই সামনে টি শার্ট আট থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে পকেটে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে আরুশ।
ছবিটা মূলত একটা বাচ্চা মেয়ের, বয়স টা ঠিক ১০ বছর, মেয়ে টা তার কোমড়ে দুই হাত রেখে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, যা দেখে আরুশ আনমনে ই বলল,
” এতো অভিমান কেন তোর আরু? মানলাম ওই দিন সবাই তোকে একটু বেশি ই বকেছিলো, ফুপি তোকে একটা থাপ্পড় ই তো মেরে ছিলো, আমি বকেছিলাম তোকে! কিন্তু তুই কি জানতি না! আমি তোকে ছাড়া একটা মূহুর্ত ও থাকতে পারতাম না! তোকে একবার দেখার জন্য কত পাগলামি ই না করতাম! তোকে ছেড়ে যাবো না বলে কত স্কলার সিপ ই রিজেক্ট করেছি, আর সেই তুই অভিমান করে আমার থেকে দুরেই চলে গেলি, একবার ও তোর মনে হয় নি আমার কথা? সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিলি। মনে হয় নি তোর আমার কথা? কি করে থাকব আমি? হুমম থেকেছি তো, দীর্ঘ ন’বছর কাটিয়ে দিলাম, কিন্তু তোর স্মৃতি থেকে তো একবিন্দু ও শান্তি নেই আমার, তিলে তিলে শেষ করছে সব কিছু, কি করব আমি? বলে দে না! ”
কথা বলতে বলতেই আরুশের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে, হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ মুছে পিছনে তাকালো আরুশ, রৌদসী দাঁড়িয়ে, এই ঘরে এই সময় রৌদসী আর আরাফ মানে তার বাবা ছাড়া আর কেউই আসে না।
” কাঁদছিস তুই ভাইয়া? ”
আরুশ চোখ মুছে হাসলো,
” কাঁদবো কেন বোকা? ঘুমাস নি কেন তুই? ”
” আমার সাথে ও মিথ্যা বলছিস? আরুকে ভীষণ মিস করছিস তাই না ভাইয়া? মেয়েটা যে এত জেদি! ”
আরুশ কিছু বলল না, ঘাড় ঘুরিয়ে ছবিটার দিকে তাকালো, রৌদসী আরুশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
যেই ছেলে সবার সাথে এ্যাটিটিউড নিয়ে চলে, সবাই যাকে রাগী আর সাইকো ডক্টর বলে জানে, যেই ডক্টর কে হার্টলেস বলে সবাই এক নামে চেনে সেই ছেলে কিনা দিন শেষে নিজের আবেগ কন্ট্রোল করতে ব্যর্থ! সেও কাঁদে, কষ্ট পায় একটা মেয়ের জন্য! হাইরে নিয়তি!
” ঘুমাবি না ভাইয়া? ”
আরুশ ছোট্ট করে উত্তর দিলো,
” হুম ”
” তাহলে চল ”
বলেই রৌদসী যেতে নিলে আরুশ তাকে ডেকে উঠে,
” রোদ?”
” হুম ভাইয়া বলো”
” সাফাদ কি বলল? ফোন করেছিলো?”
রৌদসী থমকে গেলো, সাফাদের সাথে তার সম্পর্ক ছয় বছরের ও অধিক, কিন্তু রৌদসীর এক কথা আরু না এলে সে বিয়ে করবে না, আরু ছাড়া তার বিয়ে অসম্পূর্ণ থাকবে, তা নিয়ে বাড়ির কেউ ই তাকে জোর করে নি, সাফাদ ও কিছু বলে নি, তবে বয়স তো আর থেমে থাকে না, বয়স তো বাড়ছে!
” হুম করেছিলো”
” কি বলল? ”
” তেমন কিছু ই বলে নি! ”
” তুই কেন এই পাগলামী করছিস রোদ? ওই হার্টলেস মেয়ের জন্য তুই নিজের সময় কেন অপচয় করছিস রোদ, সাফাদ ভালো ছেলে, বিয়ে টা করে নে ”
আরুশের কথা শুনে রৌদসী হাসলো, ভ্রু কুচকে বলল,
” তুই এই কথা বলছিস ভাইয়া? তাহলে তুই ওই হার্ট লেস মেয়ের জন্য কাঁদছিস কেন? ”
রোদের কথায় আরুশ চুপ করে গেলো, কি জবাব দেবে তাকে? ওই হার্ট লেস মেয়েটাই তো তার হার্ট নিয়ে বসে আছে, কেউ যদি এই কথা জানে যে হার্টের ডক্টরের নিজের হার্ট ই অন্য একজনের কাছে তাহলে কি কেন রুগী আসবে তার কাছে? বলবে, হার্টের ডক্টর এর তো নিজের ই হার্ট নাই!
রোদ হেসে এক পলক আরুশ কে দেখে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো,
আরুশ সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
_____________________________________
পরদিন সকালে,
ফরমাল ড্রেসআপ এ ঢাকা গভার্নমেন্ট কলেজ এর সামনে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে এক মনে মোবাইল ঘাটছে আরুহী,
মুখে মাস্ক পড়া আর চুল গুলো কোমড় পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া, আরুহী চুল গুলো পেয়েছে একদম আয়াতের মতো,
কলেজের সকল স্টুডেন্ট অনেক টায় ভীড় জমে আছে আরুহীর সামনে কারণ সে যেই গাড়ি দিয়ে এসেছে সেটা সরকারি গাড়ি যার সামনে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা ” স্পেশাল ফোর্স অফিসার “।
” দিদিভাইইই”
বলে কেউ জোরে চিৎকার করতেই আরুহী চোখ তুলে সামনের দিকে তাকালো, রুশা ভীড় ঠেলে দৌড়ে তার দিকেই আসছে, আরুহী মোবাইল পকেটে রেখে সোজা হয়ে দাড়ালো,
রুশা দৌড়ে এসে এক প্রকার ঝাপিয়ে পড়লো আরুহীর উপর,
বিরবির করে বলতে লাগলো,
” লাভ ইউ দিভাই! লাভ ইউ সোও মাচ এন্ড আই অলসো মিস ইউ! ”
আরুহী মুচকি হেসে বলল,
” লাভ ইউ অলসো মাই সিস্টার! ”
চলবে….
[ কালকের পর্বে দেখলাম অনেকেই দিভাই নাম টা নিয়ে বেশ কথা বললেন, দিভাই নাম টা আমার ভীষণ পছন্দের, আমার বোন ও আমাকে দিদিভাই ই ডাকে, আপনাদের যদি ভালো না লাগে তাহলে কাল থেকে দিভাই নাম টা আর দিবো না,
সংক্ষিপ্ত করে পরিচয় টা দিয়ে দিচ্ছি,
সিজন ২ এর মূল ক্যারেক্টার আরুহী চৌধুরী , তার বাবা আবরার চৌধুরী আর মা মাহাবীন খান আয়াত, আরুহীর বোন রুশা চৌধুরী , রৌদসী আরুহীর ফুফাতো বোন, আরুশ খান আর মিরাজ খান তার মামাতো ভাই, আরুশের বাবা আরাফ আর মায়ের নাম মিরা, রৌদসীর মায়ের নাম রাইসা চৌধুরী আর বাবা মাহির। আর কোথাও সমস্যা হলে অবশ্যই জানাবেন!
হ্যাপি রিডিং ]