#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১১
______________________________
” এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি কি কখনো তোকে খাইয়ে দেই নি? নে তাড়াতাড়ি হা কর আমার আবার সময় নেই তোকে দুই তিন ঘন্টা নিয়ে খাওয়ানোর ”
মিরাজের কথা শুনে আরুহী তৎক্ষনাৎ মুখ খুলে হা করলো। মিরাজ খাবার টা মুখে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো, আরুহীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তার মুখে লেগে থাকা খাবার হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,
” তোর ছোট বেলার স্বভাব টা এখনো যায় নি আরু! খাবার সময় মুখের সাইডে খাবার লাগানো কি তোর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে নাকি? ”
আরুহী দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
” ওটা অভ্যাস না ভাইয়া, ওটা বদঅভ্যেস হবে ”
মিরাজ মুখ বেকিয়ে বলল,
” হ্যা হ্যা বুঝছি, তাড়াতাড়ি খা ”
হঠাৎ আরুহীর ফোনে কল আসায় আরুহী এক পলক মিরাজের দিকে তাকিয়ে ফোন টা পিক করলো,
” হ্যা সুলতান বলো ”
অপর পাশ থেকে সুলতান কিছু বলতেই আরুহী উঠে দাড়াতে দাঁড়াতে বলল,
” আচ্ছা তুমি বসো আমি আসছি ”
বলেই আরুহী ফোন টা কেটে মিরাজের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভাইয়া আমার এক্ষুনি যেতে হবে, একটা দরকারি কাজ আছে ”
মিরাজ কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরুহী চলে গেলো, মিরাজ নিজের খাবার নিজে মুখে নিয়ে চিবাতে চিবাতে আরুহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
” এই মেয়েটা আর ঠিক হবে না, হাতে পায়ে শুধু লম্বাই হলো স্বভাব একটুও চেঞ্জ হলো না, আগেও নিজের কথা শেষ হলে কারো কথা শুনার প্রয়োজন মনে করতো না এখনো সেই একই, আর এই জন্য কত কিছু যে সাফার করবে তার কোন ঠিক ঠিকানাই নেই! ”
বলেই চেয়ারে বসে খাবার খেতে লাগলো…
___________________
আরু গাড়ি নেওয়ার জন্য পার্কিং এড়িয়াতে এসে দাড়ালো,
হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
” যেই কাজে যাচ্ছো সেটা মোটেও সহজ নয়, নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে শিখো, সবসময় চোখ কান খোলা রাখবে আর প্রতিটি পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভেবে চিন্তে নেবে, তোমার এই ছোট্ট পদক্ষেপ যেন কারো ক্ষতির কারণ না হয়, আর সব কিছু বিবেক দিয়ে বিচার করতে যাবে না, আর নিজের হাতে আইন তুলে নিলেও প্রুভ রাখবে না, তোমার মা ও কোন কাজে প্রমান রাখতো না আশা করছি তুমি ও রাখবে না ”
পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো আরুহী। সবুজ রঙের শাড়ি পরিহিতা আয়াতকে নজরে এলো তার, চোখের গাঢ় চাহনি যেন মোটা কালো ফ্রেমের নিচে আড়াল করতে চাইছে। চুল গুলো এখনো সেই আগের মতো লম্বা। কন্ঠে সেই তেজ।
আরুহী কিছু না বলে গাড়ি তে উঠে পার্কিং এড়িয়া থেকে বের হলো।
সাইড মিরর দিয়ে এখনো আয়াতের অবয়ব স্পষ্ট।
আরুহীর একটা জিনিস ই খটকা লাগছে, সে যে কোন অপারেশন এ যাচ্ছে সেটা তার মা কি করে জানলো? তার মানে তার মা জানতো তার উপর কেউ আক্রমণ করবে! জানতই যখন কোন স্টেপ কেন নেয় নি? আরুহীর ভরসায়?
উত্তর মেলেনা..
আরুহী একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরালো।
নিজের এপার্টমেন্ট এর সামনে এসে পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে আশপাশে তাকিয়ে মোবাইলে কারো নম্বর ডায়াল করতে করতে ভেতরে ঢুকলো।
ফোনটা লাউডস্পিকার এ দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা কালো রঙের লং শার্ট আর কালো প্যান্ট বের করলো,
” হ্যালো ”
” জি ম্যাম ”
” পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার বাইক টা এপার্টমেন্ট এর সামনে দেখতে চাই, এট এনি কস্ট ”
” জি ম্যাম, আমি এক্ষুনি বের করছি ”
” হুম ”
বলেই আরুহী ফোন রেখে ওয়াস রুমে ঢুকে পড়লো,
শার্ট আর প্যান্ট পরে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো শক্ত করে খোঁপা করে মুখে মাস্ক লাগালো, হাতে হ্যান্ড গ্লাভস আর পায়ে লেডিস ব্ল্যাক সু। আয়নাতে এক পলক দেখে বিরবির করে বলল, ” কমপ্লিট! ”
এপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে নিচে আসতেই দেখলো সাইডে একটা কালো রঙের বাইক দাড় করানো, এর উপর চাবি ঝুলছে।
আরুহী আর কিছু না ভেবে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিলো,
প্রায় ২০ মিনিটের মাথায় আরুহীর বাইক এসে থামলো একটা পুরনো বাড়ির সামনে। পুরান ঢাকার ভেতরে হওয়াই আশেপাশে অনেক পুরানো বাড়িই আছে।
আরুহী বাইক পার্ক করে চাবি টা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে ভেতরে ঢুকলো,
লাল টাইটের নিচে চেয়ারে হাত পা সাথে মুখ ও বাধা একটা ২৮ কি ২৯ বছরের যুবক। আরুহী ভ্রু কুঁচকে আশেপাশে তাকালো, রুমে সুলতান আর তার আন্ডারের ই দু একজন লোক আছে, আরুহী সুলতান কে ইশারা করতেই সুলতান তার হাতে থাকা রিভলবার টা আরুহীর হাতে দিলো।
আরুহী রিভলবার এর গুলির সংখ্যা যাচাই করে রিভলবার টা স্টার্ট করে ছেলেটার সামনে বসে রিভলবার কপালে ঘষতে ঘষতে তার মুখ থেকে টেপ টা খুলল।
সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ছেলেটা নেতিয়ে যাওয়া চোখ খুলে তাকালো আরুহীর দিকে।
” কার আদেশে মাহাবীন খান আয়াতের উপর হামলার পরিকল্পনা করেছিস? ”
আয়াতের হুংকারে ছেলেটা খানিকটা কেঁপে উঠলো, কিন্তু কিছু ই বলল না,
আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,
” কি হলো কথা বল, কে আদেশ করেছে তোকে মাহাবীন খান আয়াত কে মেরে ফেলতে? ”
” জানি না ”
” জানিস তুই, আমাকে বললে আমি তোকে জানে মারব না, আর যদি না বলিস.. ”
ছেলেটা ফুফাতে ফুফাতে বলল,
” বলব না আমি, কিছু বলব না, মেরে ফেললে ও না ”
আরুহী হাসলো,
” বাহ্ জেদ দেখছি ভালোই আছে, কিন্তু আমার সাথে জেদ আমার একদম পছন্দ না, আমাকে চিনিস তুই? ”
” না চিনি না, চিনতেও চাই না, ওই আয়াত কে মেরে ফেললে তোর কি? তোর তো কিছু হয় না আয়াত! ”
আরুহী চেয়ারে আরাম করে গা হেলিয়ে দিয়ে বলল,
” হুমম তোর ধারনা একদম ই সঠিক নয় , আমাকে তুই চিনিস না এটা ঠিক, আমার পরিচয় টাই আগে দেই তোকে, আমি আরুহী চৌধুরী, স্পেশাল ফোর্স অফিসার আর আমার দ্বিতীয় পরিচয় আমি মাহাবীন খান আয়াত আর আবরার চৌধুরীর বড় মেয়ে , আমার সামনে আমার মা কে মারার পরিকল্পনা করবি আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে মজা দেখবো সেটা কি করে হয়? ”
ছেলেটা নিভু নিভু চোখে আরুহীর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” আপনি মাহাবীন খান আয়াতের মেয়ে? ”
আরুহী মুচকি হেসে বলল,
” বাহ্ সোজা তুই থেকে আপনি? ইন্টারেস্টিং ”
” কিন্তু আমরা তো সব খবর নিয়েই আসলাম, তার বড় মেয়ে তো বিদেশে থাকে, অনেক বছর যাবত দেশে আসে না সে, বাড়ি তে শুধু ছোট মেয়েই থাকে, তাহলে? ”
আরুহী বেশ শব্দ করে ই হাসলো,
” হুম তোরা যা তথ্য কালেক্ট করেছিস সেটা যে পুরোপুরি ভাবে মিথ্যা তা কিন্তু না তবে এখন তোর সামনে মাহাবীন খানের মেয়ে বসে আছে সেটাও কিন্তু মিথ্যা না, সোও মরতে না চাইলে নাম টা ফটাফট বলে দে ”
ছেলেটার কপাল বেয়ে র*ক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।
আমি শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
” বাঁচতে চাইলে সত্যি টা বলে দে,
তোর কাছে অনলি দুটি অপশন আছে।
এক, সত্যি টা বলে দে তোকে ছেড়ে দিবো আর
দুই আমার হাতের বন্দুকের তিনটা গুলি ই তোর নামে করে দিবো। অপশন আমার কাছে চয়েস তোর ”
ছেলেটা খানিকটা ভয় পেয়ে গেলো, আমতাআমতা করে বলল,
” আমাকে যে পাঠাইছে তার সাথে তো আপনার কোন শত্রুতা নেই আছে আপনার মায়ের সাথে, অযথা নিজের শত্রু বাড়াচ্ছেন কেন? ”
এবার আরুহীর বেশ রাগ হলো, রিভলবার কপালে ঘষতে ঘষতে হুট করে ই ছেলেটার পায়ে শু*ট করে দিলো,
ছেলেটা গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো,
এদিকে সুলতানের অবস্থা নাজেহাল, আরুহীকে কখনো এতটা রেগে যেতে কিংবা কখনো কারো উপর শুট করতে সে দেখেনি।
সুলতান আর যায় হোক এতটুকু বুঝতে পারছে আরুহীর কাছে তার মা কতটা প্রিয়…
চলবে…
[ গঠন গত মন্তব্য আশা করছি ]