#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১২
______________________________
” তুমি কি ভাবছো তুমি আমাকে কিছু না বললে তোমাকে আমি মেরে ফেলব? যদি এটাই তোমার ধারণা হয়ে থাকে তবে আফসোস তোমার ধারণা পুরোপুরি ভাবে ই ভুল, আমি মোটেও তোমাকে প্রানে মারব না, আরুহী চৌধুরী এত সহজ শাস্তি কাউকে দেয় না ”
আরুহীর কথা শুনে ছেলেটি অবাক দৃষ্টিতে তাকালো, হয়তো ভাবছে মেয়েটার মাথায় মনে হয় কোন সমস্যা আছে নয়তো এতক্ষণ তুই তুই করে হঠাৎ তুমি তে গেলো কেন? আর মৃত্যু কি কোন ভাবে সহজ শাস্তি নাকি?
ছেলেটার দৃষ্টি লক্ষ্য করে আরুহী মুচকি হাসলো,
” আমি তুই বলি কিংবা তুমি সেটা ব্যাপার না, আর জানো তো পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড, মরলে তো সবকিছু ই শেষ, তার তো সব কিছু থেকেই মুক্তি। সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তি হলো এই মৃত্যু , আর আমি কি করে তোমাকে এত তাড়াতাড়ি মুক্তি দিতে পারি বলো তো, বিবেক বলেও তো একটা কথা আছে! ”
কিছু টা থেমে,
” তোমাকে আমি একেবারে মারব না, তিলে তিলে শেষ করব সব কিছু, আজ তাহলে আসি কেমন? ”
বলেই আরুহী বসা থেকে উঠে সুলতানের দিকে তাকালো,
” সুলতান, ওকে দিনে তিন বেলা থেকে এক বেলা শুকনো দুটো রুটি খাবার দিবে সাথে হাফ গ্লাস পানি,
পিছনে দিকে ঘুরে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
“আমি আবার মাহাবীন খান এর মতো এত নিষ্ঠুর না। আমার আবার দয়া মায়া অনেক বেশি। ”
বলেই গটগট করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। সুলতান আরুহীর যাওয়ার দিকেই হা তাকিয়ে আছে, সারাদিনে মাত্র দুটো শুকনো রুটি আর হাফ গ্লাস পানি দিতে বলছে আবার নিজেকে মানব দরদি বলেও ট্যাগ লাগাচ্ছে! ব্যপার টা হাস্যকর না! সুলতাম ভেবে পায় না মেয়েটা আসলে কি?
আরুহী ঘর থেকে বের হয়ে পকেটে হাত দিয়ে চাবি বের করে বাইকে লাগালো, হঠাৎ পকেটে ফোন টা বায়োব্রেট মুডে বেজে উঠলো।
আরুহী ভ্রু কুঁচকে পকেটে থেকে ফোন টা বের করে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো সেখানে জ্বলজ্বল করছে রোদ আপু নাম টা, আরুহীর ভ্রু জোড়া আরোও কুঁচকে গেলো, এক ঘন্টাও হয় নি আরুহী খান বাড়ি থেকে বের হয়েছে তার আগেই মাইয়া টা ফোন দেওয়া শুরু করলো!
আরুহী একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোন টা পিক করলো,
” হ্যা বলো ”
” কিরে আরু কই তুই? সারা বাড়ি চিরুনি তল্লাশি করে ও তোকে খুঁজে পেলাম না, নাটক করিস আমার সাথে? যেখানে ই আছিস অনলি টেন মিনিট, অনলি টেন মিনিটের মধ্যে আমি তোকে আমার সামনে দেখতে চাই! এট এনি কস্ট! ”
বলেই ঠাস করে ফোন টা কেটে দিলো। আরুহী নিজের কান থেকে ফোন টা নামিয়ে চোখ ছোট ছোট করে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো, আনমনে বলে উঠলো,
“সাম হাউ রোদ আপু কি আমাকে থ্রেট দিলো? আমি দেই সবাই কে থ্রেট আর উনি আমাকে? হাউউ? ”
আরুহীর হঠাৎ মনে হলো রোদ তাকে দশ মিনিট টাইম দিয়েছে কিন্তু আপাতত আরুহী যেখানে আছে সেখানে থেকে উড়াল দিয়ে গেলেও দশ মিনিট এ যাওয়া অসম্ভব!
আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাইক স্টার্ট দিলো,
প্রায় ৪০ মিনিটের মাথায় আরুহী এসে পৌঁছালো খান মেনশনে। আরুহী বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে ভেতর ঢুকে সোজা রৌদসীর রুমে।
আরুহী রৌদসীর রুমে ঢুকতে ঢুকতে মাস্ক খুলল। গরম লাগছে প্রচুর।
আরুহী কে দেখে রুমে যারা ছিল ছোট বড়ো সবাই বের হয়ে গেলো, কোন এক কারণে আরুহী প্রায় সবাই ই অন্য নজরে দেখে অনেক টা ভয় পায় তাকে, তা নিয়ে আরুহীর কোন মাথা ব্যথা নেই।
রৌদসী তখন বসে বসে নিজের হাতের মেহেদি পর্যবেক্ষণ করছে, আরুহী কে দেখে সে উঠে দাড়ালো।
ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিরে এমন গুন্ডা সেজে আসছিস কেন? আর আধা ঘণ্টা লেট! ”
রৌদসীর কথা শুনে আরুহী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” তোমার সাত পুরুষের ভাগ্য হাতে রিভলবার নিয়ে ঢুকি নি আর তোমার জামাই আমার জন্য এয়ারপ্লেন কিনে দেই নি যে তুমি যখন বলবা উড়ে উড়ে তোমার কাছে চলে আসবো ”
” আহহা চটছিস কেন? আমি কি করলাম? ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে রৌদসীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি জন্য আসতে বলেছো সেটা বলো! ”
রৌদসী নিজের হাত আরুহীর মুখের সামনে ধরে বলল,
” মেহেদী দিয়েছি বলতো কেমন হয়েছে? ”
আরুহী বিরক্ত হলো, এই মেহেদী দেখানোর জন্য এত জরুরি তলব।
বিরক্তি দৃষ্টিতে তাকালো সে রৌদসীর দিকে, আরুহীর তাকানো দেখে হয়তো রৌদসী বুঝতে পারলো সে এখন বেশি বেশি করছে তাই আরুহীর দিকে তাকিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে বলল,
” আরু তুই বরং বস, আমি দেখি আমার জামাই টা খাইছে নাকি!”
বলেই তড়িঘড়ি করে বারান্দায় যেতে যেতে মনে মনে বলল, বড় বোন হয়ে ছোট বোনের দৃষ্টিকেই ভয় পায় এমন পিছ মনে হয় এই পৃথিবীতে আমি ই একমাত্র।
আরুহী রৌদসীর যাওয়া দেখে কিছু বলতে পারলো না, ক্লান্ত সে ভীষণ।
রুম থেকে বের হয়ে কিছু দুর হাটতেই নজরে এলো তার বাবার অবস্থান। ড্রয়িং রুমের এক পাশে চেয়ার টেনে বসে বসে মোবাইল ঘাটছে হয়তো গেইম খেলছে আবরার ! বুড়ো হচ্ছে অথচ গেইমের এতো নে*শা! ঠিক এই কারণে আয়াত যে কত ‘শ মোবাইল ভাঙছে তা আল্লাহ ই জানে!
আরুহী নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো আবরারের দিকে।
পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো কিন্তু আবরারের কি আর সেই দিকে খেয়াল আছে?
আরুহী বসে বসে তার বাবার গেইম খেলা ই দেখছে আর বোঝার চেষ্টা করছে আসলে এই গেইমের মধ্যে আছে টা কি যা তে এতো নে*শা!
প্রায় মিনিট পাচেঁক পরে আবরারের আরেক পাশে এসে বসলো আয়াত, আবরারের তাও কোন খেয়াল নেই!
আরুহী আবরারের কাঁধে মাথা রাখতেই আবরারের হুস এলো, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সে দিকে, নিজের কাঁধের উপর মেয়ের মাথা দেখে মুচকি হাসলো,
মোবাইল অফ করে এক হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
” কখন এলি? ”
আরুহী কাধেঁ মাথা রেখেই উত্তর দিলো,
” তুমি যখন গেইম খেলায় ব্যস্ত তখন ”
আবরার হাসলো, তার অপর পাশে তাকাতেই নজরে এলো প্রিয়তমার মুখ। আয়াত বসে বসে মোবাইলে কিছু একটা দেখছে।
” তুমি এখানে? ”
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আয়াত।
” কেন আসা বারণ নাকি? ”
” উহুম, উল্টো বুঝো কেন? ”
আয়াত খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” আবরার চৌধুরী তোমার মেয়েকে বলো টেবিলে খাবার বাড়া আছে খেয়ে নিতে ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে উঠে বসলো,
আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,
” বাবা তোমার বউ কে বলে দাও আরুহী কারো কাছে খাবার চায় নি! যদি কারো এত ই দরদ হয় সে যেন খাইয়ে দেয়, আই ডোন্ট মাইন্ড! ”
” আবরার তোমার মেয়েকে বলে দাও, কারো এতো ঠেকা পড়ে নি, কোন গুন্ডা মেয়েকে খাইয়ে দিতে ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,
” বাবা তোমার বউ কে বলে দাও, নিজের মায়ের সেফটির জন্য গুন্ডামী করলেও এটাকে গুন্ডামী বলা যায় না, এটা সন্তান হিসেবে কর্তব্য ”
আয়াত মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে বলল,
” আবরার তোমার মেয়েকে বলে দাও, নিজের জীবন রিস্কে রেখে অন্যকে বাঁচানোর দরকার নেই, যার জন্য করছে সে নিজেই নিজের সেইফটি মেইন টেইন করতে পারে ”
এই মা মেয়ের কথা বার্তা সব আবরারের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে বেচারা একবার বউয়ের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক বার মেয়ের দিকে, এদের এমন ঠেলাঠেলি তে আবরার হতভম্ব হয়ে গেলো,
এবার আর শুনতে না পেরে সে নিজেই বলে উঠলো,
” উফফ কি শুরু করলে তোমরা মা মেয়ে, ঝগড়া করতে হলে নিজেদের মধ্যে করো না! মধ্যে দিয়ে আমাকে টানো কেন? ”
আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” আরুহী তুই কি এখনো খাস নি? ”
আরুহী চুপ করে রইলো,
আবরার আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুমি ও নিশ্চয়ই খাও নি আয়াত? ”
আয়াত শুনেও যেন না শোনার ভান করে রইলো,
আবরার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” চুপচাপ এখানে বসে থাকো দুজন আমি আসছি ”
বলেই চেয়ার উঠে খাবার আনতে চলে গেলো। আয়াত আড় চোখে আরুহীর দিকে তাকালো ঠিক একই মুহূর্তে আরুহী ও আয়াতের দিকে তাকালো,
দুজনের চোখে চোখ পড়তেই দুজনই চোখ সরিয়ে নিলো মানে কোন ভাবেই কথা বলবে না।
প্রায় মিনিট পাঁচেক এর মধ্যে ই আবরার এক প্লেট খাবার নিয়ে হাজির, চেয়ার টেনে দুজনের মুখোমুখি বসে নিজ হাতে মেখে প্রথমে আরুহীর মুখে দিলো আরুহী ও ভদ্র মেয়ের মতো মুখে তুলে নিলো পরবর্তী তে আয়াতের মুখে দিলো,
কে বলবে এরা মা আর মেয়ে?
খাবার পর্ব শেষ করে আবরার দুজনের মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
” এই বুড়ো বয়সেও যদি আমার এমন দামড়া দামড়া দু দুটো বাচ্চা পালতে হয় তাহলে আমাকে কি আর ক’দিন পরে আর পাওয়া যাবে? ভাগ্য ভালো তো ছোট টা এখানে নেই নাহলে তো সে ও এসে হা করে বসে থাকতো! ”
আয়াত ভ্রু কুঁচকে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুমি কি কোন ভাবে আমাকে বাচ্চা বললে? ”
আবরার ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
” আরে না তুমি বাচ্চা হবে কেন? তুমি তো আমার বাচ্চাদের আম্মু, তোমাকে কি বাচ্চা বলা চলে নাকি? দিন যাচ্ছে আর তুমি তো বুড়ী হচ্ছো ”
আরুহী মা বাবার এমন খুনসুটির মূহুর্ত টা নষ্ট না করে নিঃশব্দে চলে এলো।
দোতলায় উঠতেই সামনে পড়লো রৌদসী হাতে একটা ওয়ান পিছ সুতি টপস , সে বোধ হয় এদিকে ই আসছিলো, আরুকে দেখা মাত্র ই রৌদসী বলে উঠলো,
” আরু তোকেই খুজছিলাম, তুই এই গুন্ডা মার্কা লেবাস ছেড়ে এটা পরে নে আর রেস্ট কর, মিরাজ ভাইয়ার পাশের রুম টা গোছানো আছে ওটাতেই চলে যা ”
” আমি আমার এপার্টমেন্টেই চলে গেলে ভালো হতো না? ”
রৌদসী বিরক্তিকর দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” রাগাস না তো আরু, যা বলছি তাই কর, আর তোকে বললে ও তুই মেহেদী দিবি না তাই অযথা মুখ খরচ করে লাভ নাই, যা গিয়ে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে থাক ”
বলেই হাতে কাপড় টা গুঁজে দিয়ে রৌদসী চলে গেলো, আরুহী এক নজর চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিলো,
সেই সন্ধ্যায় আয়ুশ কে দেখেছিলো তারপর থেকে সে লাপাত্তা। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না, কে জানে কে আবার কি মনে করে বসে থাকে যদিও আরুহী কারো কথার ধার ধারে না।
আরুহী আর কিছু না ভেবে মিরাজের পাশের রুম টা ই চলে এলো,
রুম টা আসলেই বেশ গোছানো। একটা বিছানা, একটা রিডিং টেবিল, কাবার্ড আর একটা ড্রেসিং টেবিল ছাড়া আর কেন আসবাব পত্র নেই রুম টায়, বেশ ছিমছাম।
আরুহী হাতে টপস না নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো,
প্রায় মিনিট পনেরো পর গোসল শেষ করে বের হয়ে দেখলো বিছানার উপর বিভিন্ন শপিং ব্যাগ রাখা। আরুহী চুল টা ভালো ভাবে মুছে বিছানায় বসে শপিং ব্যগ খুলল।
শপিং ব্যাগের ভেতরে তার সব অনুষ্ঠানের পরার শাড়ি যা সে এপার্টমেন্টের কাবার্ডে রেখেছিলো,
আরুহী ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগলো,
এগুলো আনলো কে? চাবি যদিও রিসিপশনে আছে! মনে হয় রোদ আপু! তাছাড়া আর কে?
আরুহী ধরেই নিলো এসব রৌদসীর কাজ। সে সব কিছু কাবার্ডে রেখে লাইট অফ করে বিছানায় শুতে গেলো।
শোয়া মাত্র ই তার চোখে ভর করলো শত রাজ্যের ঘুম, হঠাৎ তার ঘুম থেকে ই মনে হলো দরজা খোলার আওয়াজ পেলো..
কে আসলো এই অসময় এ ঘরে? ..
চলবে..
[ দেরি হবার জন্য আমি আসলেই দুঃখীত, আমি ইচ্ছে করে দেরি করি নি, তবুও সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী..
হ্যাপি রিডিং ]