মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_১৩ ( বর্ধিতাংশ)

0
765

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১৩ ( বর্ধিতাংশ)
______________________________

বিয়ে বাড়ি, চারপাশে মানুষে গিজগিজ করছে তার উপর খান বাড়ির বিয়ে বলে কথা আয়োজনের তো আর কমতি নেই। মানুষের কোলাহল আরুহীর বরাবর ই অসহ্য লাগে, আরুহী যতটুকু সম্ভব এভয়েড করার চেষ্টা করে।

নিজের জন্য বরাদ্দ করা রুমেই দরজা লাগিয়ে সে বসে আছে। আপাতত বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছে বা আগ্রহ তার নেই, কিন্তু বেলা তো আর বসে থাকবে না, দুপুর হয়ে এসেছে হয়তো ঘন্টার খানেক এর মাঝে ই বরযাত্রী চলে আসবে অথচ সে এখানো রেডি ই হয় নি, আরুহী দোটানায় আছে সে কি শাড়ি পড়বে নাকি ফরমাল ড্রেসআপ করবে?

এত মানুষের ভীড়ে এমনি তেই তো শাড়ি তে অভ্যাস নেই তার আর তার উপর এতো মানুষ। সাদা রঙের শাড়িটা কাবার্ড থেকে বের করে ও আবার রেখে দিয়ে সাদা রঙের লং শার্ট আর কালো প্যান্ট বের করলো।

ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে সেই শার্ট আর প্যান্ট পরে নিলো, চুল গুলো মাঝ বরাবর সিঁথি করে পিছনে খোঁপা করে মুখে মাস্ক লাগালো।

নিজের ব্যগ টা গুছিয়ে রাখলো যেন বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতেই সে তার গন্তব্যে চলে যেতে পারে শুধু মাত্র রৌদসী কে দেওয়া কথার জন্য সে সব কিছু দেখেও চুপ করে আছে নয়তো এত ভালো সে কোন কালেই ছিলো না।

আরুহী বিছানার উপর বসে চিন্তা করতে লাগলো সে দিন রাতের কথা গুলো যেদিন আরুহী খান মেনশনে এসেছিলো,

_________________

” আরু শোন, আমার একটা কথা রাখবি? ”

আরুহী বিছানায় বসে ভ্রু কুঁচকে তাকালো রৌদসীর দিকে,

” হুম বলো ”

” প্রমিস কর রাখবি? ”

” ঠিক আছে রাখবো, বলো এবার ”

রৌদসী জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে লাগলো,

” দেখ আরু, আমি জানি তোর সবার উপর ই রাগ এমন কি আমার উপর ও, কিন্তু এই দুটো দিন প্লিজ তুই মানিয়ে চলিস! যে যা বলে মেনে নিস! আমি চাই না কোন অশান্তি হোক বাড়ি তে, জানি আমি তুই আরুশ ভাইয়ার উপর ভীষণ নারাজ, তবে এই দু’দিন একটু ভালো বিহেভ করিস ভাইয়ের সাথে, এটা তোর কাছে আবদার বা অনুরোধ যায় বলিস সেটাই! ”

” তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি অশান্তি করি? ”

” নাহহ্, তবে এটা তুই ও জানিস তুই খুব বদরাগী আর বদমেজাজি, প্লিজ বোন একটু সামলে নিস ”

আরুহী ইচ্ছে না থাকা সত্যেও মেনে নিয়ে ছিলো রৌদসীর কথা, অমান্য করে নি কারো কিছু!

গত রাতে আরুশ যখন তার রুমে এসেছিলো তখন সে জেগেই ছিলো কিন্তু কোন কথা বলে নি কারণ সে চায় নি আরুশ বুঝোক সে জেগে আছে। আরুশ যদি বুঝতে পারতো সে জেগে আছে তাহলে তার এক্সপেক্টেশন বেড়ে যেত কিন্তু এখন আরুশ জানে না যে আরুহী তখন জেগে ছিলো তাই সে আরুহীর সেন্সে থাকা অবস্থায় কাছে আসার চেষ্টা বা সাহস কোনটায় করবে না। না হলে কখনোই আরুশ কে তার ধারে কাছে আসার চান্স দিতো না।

আর সকালের ব্যাপার টাও ঠিক একই কারণে আরুহী চাই নি সকাল সকাল কারো মুড খারাপ হোক সে বললে অনেক কথাই বলতে পারতো কিন্তু সে বলে নি কারণ সেই মূহুর্তে তার কথা গুলো কারোর ই ভালো লাগতো না আর আরুহী চায় নি বিয়ে বাড়ি তে কারো মুড খারাপ করতে তাই সে মেনে নিয়ে ছিলো আরুশের কথা, তবে এটাই ফাস্ট এবং এটাই লাস্ট।

আরুহী বিয়ের পর্ব শেষ করে ই পারি জমাবে চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে, সকালেই সে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে যেটার সূত্র পাত চট্টগ্রাম বন্দরের কাছাকাছি। তাই আজ রাতেই তাকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে হবে।

তার হাতে মাত্র দু’টো মাস সময় আছে তার মধ্যে ই সকল কালপ্রিট বের করতে হবে তবেই তার প্রমোশন কনফার্ম। এমনি তেই তার পিছনে কত শত্রু আর সমালোচনা করার মানুষের অভাব নেই তার উপর আজ পর্যন্ত সে কোন কাজেই ব্যর্থ হয় নি, আরুহীর কনফিডেন্ট লেভেল ভীষণ হাই, নিজের উপর প্রবল বিশ্বাস সে যেই কাজে হাত দেয় সেখানে সে সফল হবেই।

আরুহী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছিলো হঠাৎ ই বাহির থেকে শোরগোল শোনা যাচ্ছে, সবার মুখে একটি কথায় ” বর এসেছে, বর এসেছে ”

আরুহী দরজা খুলে বের হলো, মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখে সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে, সবার মাঝে নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে তার!

কোথা থেকে রুশা দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

” দি ভাই? ”

আরুহী রুশার দিকে তাকিয়ে পকেটে ফোন ঢুকাতে ঢুকার বলল,

” কি সমস্যা এতো দৌড়াচ্ছিস কেন রুশা? কুকুর তাড়া করেছে? ”

রুশা ঢুক গিলে বলল,

” আরে না, কুকুরে আমাকে তাড়া করে না উল্টো আমি ই কুকুর কে তাড়া করি ”

বলেই রুশা শব্দ করে হেসে দিলো, আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেললো, সে তো ভুলেই গিয়েছিলো তার বোন তো আর পৃথিবীর প্রানী না সে তো ভিন গ্রহের এলিয়েন নয়তো এতো লাফালাফি কোন মানুষ করে? এক দন্ড কোথাও বসার সুযোগ বা সময় কোন টাই তার কাছে নেই।

” সে যাই হোক তুমি এই ড্রেস পরছো কেন? তোমার শাড়ি কই? ”

আরুহী বাহিরে যেতে যেতে বলল,

” এজ মাই উইস ”

রুশা আরুহীর পিছনে পিছনে হাটতে হাটতে বলল,

” ঠিক আছে, তুমি শাড়ি পরো বা শার্ট দুটোতেই তোমাকে ঝাক্কাস লাগে দি ভাই, এক্কেবারে হলিউডের খলনাইকা ”

আরুহী থেমে গেলো, হঠাৎ থামাতে রুশা হকচকিয়ে উঠে আরুহীর পিঠে গিয়ে ধাক্কা খেলা কারণ এতক্ষণ সে আরুহীর পিছনে পিছনে তাকে ফলো করেই আসছিলো কিন্তু হঠাৎ থেমে যাওয়াই সে ব্যালেন্স রাখতে পারে নি।

আরুহী পিছনে ঘুরে রুশার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আমাকে দেখতে খলনাইকা আই মিন ভিলেন মনে হয় ? ”

আরুহীর কথায় রুশা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,

” তুমি দেখো না দি ভাই! প্রতিটি মুভি তে নাইকা থেকে খল নাইকা বা ভিলেন বেশি কিউট আর সুন্দর থাকে আমি তো প্রতিবার ই নায়ক রেখে ভিলেন এর উপর ক্রাস খাই ”

আরুহী সামনে ঘুরে মুচকি হাসলো, বিরবির করে বলল,

” আসলেই, আমার গল্পে আমি ই ভিলেন! ”

আরুহী বাইরে এসে বাগানের একটা কর্নারে ফাঁকা জায়গায় বসে বিভিন্ন তথ্য দেখছে চট্টগ্রাম শহরের। আরুহী সবসময় ই যেখানে যাবে সে বিষয়ে আগেই সে ঘাটাঘাটি করে জেনে নেয় যেন গিয়ে কোন প্রবলেমে না পড়তে হয়।

” হাই আমি তিহান, তিহান রেহমান। আপনি? ”

নিজের সামনে কারো হাতের অস্তিত্ব পেয়ে চোখ তুলে তাকালো আরুহী। অপরিচিত কোন ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। ছেলেটি হ্যান্ড শেক করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়ালো কিন্তু আরুহীর মাঝে হাত মিলানোর কোন আগ্রহ দেখা গেলো না।

আরুহী পুনরায় মোবাইল দেখাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো,

তিহান বেশ হকচকিয়ে গেলো, এই প্রথম কোন মেয়ে তাকে ইনগোর করলো ব্যাপার টা তার কাছে বিরক্ত হবার বদলে বেশ ইন্টারেস্টিং ই মনে হলো।

সে নিজের হাত গুটিয়ে না নিয়ে উল্টো আরেকটু সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলল,

” হ্যালো আমি তিহান রেহমান, আপনার নাম টা কি জানতে পারি? ”

আরুহী এবারেও হাত মিলানোর কোন আগ্রহ দেখালো না, তিহান নিজের হাত টা সরিয়ে সেখানে থেকে চলে গেলো। আরুহী তিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার পুনরায় মোবাইল দেখাই মনোযোগ দিলো যেন এই মূহুর্তে মোবাইল দেখা থেকে ইম্পোর্টেন্ট আর কিছু ই না।

হঠাৎ নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পাশে তাকালো আরুহী। তখন কার সেই ছেলেকে নিজের দিকে গালে হাত দিয়ে ডেব ডেব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হবার বদলে বেশ রাগ এবং বিরক্ত হলো সে।

চলবে…

[ রেসপন্স করবেন সবাই..
আর যারা অতিরিক্ত পর্বের জন্য দাবি করেছিলেন তাদের জন্য পর্ব ১৩ এর পরবর্তী অংশ দিয়ে দিলাম, একটা ধন্যবাদ তো প্রাপ্য তাই না? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here